মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
দামেশ্কী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা
১। রাসূল প্রেম ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অবশ্য কর্তব্য
আল্লাহ্ তা’লার তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছেন তিনি যেন তাঁর উম্মাতকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন যে যারা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করে তাদের প্রতি রাসূসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোবাসাও অবশ্যকর্তব্য হয়েছে। এরশাদ হয়েছে-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ
تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ
ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ.
-
হে মাহবুব, আপনি
বলে দিন: ওহে মানবকুল! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার
অনুগত হও, আল্লাহ
তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। [১]
মহানবী (দ:)-কে ভালোবাসার এই অবশ্যকর্তব্য
বিষয়টির মানে হলো তাঁকে মান্য করা, তাঁর স্মরণ (যিকর) করা, তাঁর
আনুগত্য করা এবং তাঁকে নিয়ে গর্ব করা, যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা’লা
তাঁকে নিয়ে গর্ব করেছেন তাঁরই পবিত্র কেতাবে-
وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ.
-
নিশ্চয় আপনার চরিত্র মহা
মর্যাদাময়।[২]
মু'মিন
মুসলমানদের ঈমানের পূর্ণতা রাসূলপ্রেমের ওপর নির্ভরশীল। বোখারী ও মুসলিম
শরীফে উদ্ধৃত একটি সহীহ হাসীসে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
ফরমান-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ
حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ، وَوَالِدَيْهِ، وَالنَّاسِ
أَجْمَعِينَ.
-
তোমাদের মধ্যে কেউ
ঈমানদার মুসলমান হতে পারবে না, যতোক্ষণ না আমি তোমাদের পুত্র, পিতা ও
সকল মানবজাতির চেয়ে তোমাদের কাছে প্রিয়ভাজন হই।[৩]
বোখারী শরীফে
উদ্ধৃত অপর এক হাসীসে তিনি বলেন-
حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ
إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ.
-
তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে
না, যতক্ষণ
না আমি তোমাদের কাছে তোমাদের আপন সত্তার চেয়েও প্রিয় পাত্র হই।[৪]
ঈমানের
পূর্ণতা রাসূলপ্রেমের ওপর নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ্ তা’লা ও ফেরেশতাকুল
নিরন্তর তাঁর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করছেন, যেমনিভাবে কালামে
পাকে ঘোষিত হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ
وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ.
-
নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর
ফেরেশতাবৃন্দ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
প্রতি সালাত-সালাম তথা দুরূদ প্রেরণ করেন। [৫]
অতঃপর খোদায়ী আদেশ জারি হয়েছে একই
আয়াতে করীমায়-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
-
ওহে ঈমানদারবর্গ! তোমরাও পূর্ণ
সম্মানসহ তাঁর প্রতি দুরূদ প্রেরণ করো ।[৬]
এ আয়াতে
প্রতিভাত হয় যে মো’মেন
মুসলমান হবার বৈশিষ্ট্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ-সালাম
প্রেরণের ওপর নির্ভরশীল এবং এর দ্বারাই প্রকাশমান। হে আল্লাহ! বিশ্বনবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর আহল তথা পরিবার
সদস্যবৃন্দ ও আসহাবে কেরাম (সম্মানিত সঙ্গী)-বৃন্দের প্রতি
শান্তি ও আশীর্বাদ বর্ষণ করুন, আমীন।
২। আল্লাহ্ তা’লা
ফরমান: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ পড়ো
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ পাঠাতে এবং তাঁর প্রশংসা করতে আমাদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে নিচের আয়াতে কারীমায়, যা আমাদের প্রতি অবশ্যকর্তব্যও করা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
-
হে ঈমানদার মুসলমান সকল!
তোমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি পূর্ণ সম্মানসহ
সালাত-সালাম পাঠাও এবং তাঁর প্রশংসা করো ।[৭]
৩। আল্লাহ এরশাদ ফরমান: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
শুভাগমনে খুশি উদযাপন করো!
এ বিশ্ব জগতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
শুভাগমন উপলক্ষে আমাদের খুশি উদযাপন করতে আদেশ করা হয়েছে; এরশাদ
হয়েছে-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ
وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ.
-
হে রাসূল, বলুন:
আ্ল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা (রহমত)-প্রাপ্তিতে
মানবজাতির উচিৎ খুশি উদযাপন করা । [৮]
এই আদেশ জারি করা হয়েছে এ কারণে যে, খুশি উদযাপন দ্বারা আল্লাহর করুণার প্রতি আন্তরিক
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। আর আল্লাহ্ তা’লার সর্বশ্রেষ্ঠ
করুণা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া কী হতে পারে? যেমন
এরশাদ হয়েছে,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا
رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ.
-
এবং আমি আপনাকে প্রেরণ
করিনি কিন্তু বিশ্ব জগতের জন্যে রহমত করে (পাঠিয়েছি)।[৯]
যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমগ্র
মানবজাতির জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে, সেহেতু শুধু মুসলমান
সম্প্রদায়ই নয় বরং সমস্ত মানুষের প্রতি তাঁর সত্তা মোবারকের
ওপর খুশি উদযাপন করা অবশ্যকর্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বর্তমানকালে
এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহ্ তা’লার এই আদেশ অমান্য
করে খুশি উদযাপনে বিরত থাকছে।
৪। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত সম্পর্কে
জানা ও তাঁকে অনুকরণ-অনুসরণের বাধ্যবাধকতা
আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানতে, তাঁর পবিত্র জীবন, মো’জেযা
তথা আলৌকিক ঘটনাবলী, বেলাদত
(ধরাধামে শুভাগমন), আচার-ব্যবহার (আদব-কায়দা), ধর্মবিশ্বাস, নিদর্শনসমূহ
(আয়াত ওয়া দালায়েল), নির্জন
সাধনা, এবাদত-বন্দেগী
ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে। এই জ্ঞান অর্জন করা কি প্রত্যেক মো’মেন
মুসলমানের জন্যে ফরয (অবশ্যকর্তব্য) নয়? তাঁর পবিত্র জীবন
সম্পর্কে জ্ঞান
অর্জনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কী হতে পারে? এ পন্থায় আল্লাহ্ আমাদের প্রতি
সন্তুষ্ট ও খুশি হবেন; কেননা
এতে করে আমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরও ভালোভাবে
জানতে পারবো এবং তাঁকে আমাদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে
পারবো, আর
নিজেদের পরিশুদ্ধ করতেও পারবো; ফলশ্রুতিতে আমরা দু’জাহানের কামিয়াবীও
অর্জন করতে সক্ষম হবো।
৫। আমাদের প্রিয়নবী কে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম শারীরিকভাবে খুব লম্বাও নন, আবার বেঁটেও নন; বরং
মধ্যম আকৃতির।
চেহারার বর্ণ ধবধবে সাদাও নয়, আবার এমন কালো বা বাদামি
রংও নয় যা কালোতে
পরিণত হয়ে থাকে; তাঁর
চেহারা মোবারক উজ্জ্বল যা চাঁদের মাসের ১৪ তারিখের রাতের পূর্ণ
চন্দ্রের চেয়েও উজ্জ্বল দেখা যেতো। তাঁর চুল সোজাও নয়, আবার
কোঁকড়াও নয়, বরং
সামান্য কুঞ্চিত। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে নবুয়্যুত
দান করেন। তিনি দশ বছর মক্কা মোকাররমায় ও আরও দশ বছর মদীনা মোনাওয়ারায়
বসবাস করেন। ৬৩ বছর বয়সে তিনি বেসাল (আল্লাহর সাথে পরপারে মিলন)-প্রাপ্ত
হন। ওই সময় তাঁর চুল ও দাড়ি মোবারক ২০টিরও বেশি পাকে নি, যা হযরত
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন।
৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করার বিপদ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করা ও তাঁর সুন্নাহ পাল্টে ফেলা হলো পথভ্রষ্টতা ও বেদআত। এটাকে আল্লাহ তা’লা চরম শাস্তি দেবার ও এতে সমস্ত কিছু হারাবার ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। তিনি এরশাদ ফরমান-
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ
مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ
الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا.
-
আর যে ব্যক্তি সঠিক পথ
তাঁর সামনে সুস্পষ্ট
হবার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা করে এবং মুসলমানদের পথ
থেকে আলাদা
পথে চলে, আমি
তাকে তার অবস্থাতেই ছেড়ে দেবো এবং দোযখে প্রবেশ করাবো; এটি
কতোই না মন্দ স্থান প্রত্যাবর্তনের![১০]
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
وَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي
فَلَيْسَ مِنِّي.
-
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত
(রীতি-নীতি)-কে প্রত্যাখ্যান করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।[১১]
৭। অতিরিক্ত প্রামাণ্য দলিল
(১)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা
মুসলিম উলামায়ে কেরামের মাঝে এ মর্মে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার সদস্যবৃন্দ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের শান-মান বৃদ্ধি করা এবং তাঁদের উচ্চসিত প্রশংসা করা অবশ্যকর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যখনই স্মরণ করা হতো, পূর্ববর্তী পুণ্যবান বুযূর্গানে দ্বীন ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনবৃন্দ শ্রদ্ধাবনত হতেন; এই আচার তাঁরা অনুশীলন করতেন সর্বদা। হযরত জা’ফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব (ইমাম জাফর সাদেক-রহমতুল্লাহি আলাইহি) যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্মরণ করা হতো, তখনই ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতেন। ওযু ছাড়া ইমাম মালেক (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কখনো হাদীস বর্ণনা করতেন না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্মরণ করা হলে আবদুর রহমান ইবনে কাসেম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর সিদ্দিক (রহমতুল্লাহি আলাইহি) ভয়ে লাল বর্ণ ধারণ করতেন এবং তোতলাতেন। প্রাথমিক যুগের সূফীবৃন্দের অন্যতম হযরত আমীর ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াল আল-আসাদী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এতো কাঁদতেন যে চোখের পানিও শুকিয়ে যেতো। এ সকল বুযূর্গের সামনে কোনো হাদীস বর্ণনাকালে তাঁদের কণ্ঠস্বর তাঁরা নিচু করতেন। ইমাম মালেক (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,
-
বেসালের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুরমাত (পবিত্রতা, শান) তেমনি
আছে, যেমনটি তাঁর হায়াতে জিন্দেগীর সময় ছিল অনতিক্রমনীয়।
গণিতবিদ আবু আব্বাস আহমদ ইবনে খতীব, যিনি
ইবনে কুনফুয আল কুসানতিনী আল মালেকী (ইন্তেকাল ৮১০ হিজরী)
নামেও সমধিক প্রসিদ্ধ, তিনি
একটি বই লিখেছেন এ প্রসঙ্গে
وَسِيْلَةُ
الإِسْلاَمِ بِالنَّبيِّ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالْسَّلاَمُ/ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে
ইসলাম, বৈরুত:দারুল
গারব্ আল্ ইসলামী ১৪০৪ হিজরী/১৯৮৪ইং ১৪৫-১৪৬ পৃষ্ঠা]।
(২) সাহাবীদের প্রতি ভালোবাসাও ঈমানের লক্ষণ
সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালোবাসাও ঈমানের লক্ষণ যা হাদীস শরীফে সমর্থিত হয়েছে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আল্লাহ পাক আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে ঈমানদারদের কাছে প্রিয়পাত্র করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মায়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বর্ণনা দিয়েছেন যা নিচে উদ্ধৃত হলো:
كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الْإِسْلَامِ
وَهِيَ مُشْرِكَةٌ، فَدَعَوْتُهَا يَوْمًا فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَكْرَهُ، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَبْكِي، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي
كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الْإِسْلَامِ فَتَأْبَى عَلَيَّ، فَدَعَوْتُهَا
الْيَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ، فَادْعُ اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ
أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«اللهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ» فَخَرَجْتُ مُسْتَبْشِرًا بِدَعْوَةِ
نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا جِئْتُ فَصِرْتُ إِلَى
الْبَابِ، فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ، فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ قَدَمَيَّ، فَقَالَتْ:
مَكَانَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ الْمَاءِ، قَالَ:
فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا، فَفَتَحَتِ
الْبَابَ، ثُمَّ قَالَتْ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا
اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، قَالَ فَرَجَعْتُ إِلَى
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا أَبْكِي
مِنَ الْفَرَحِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَبْشِرْ قَدِ اسْتَجَابَ اللهُ
دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ
وَقَالَ خَيْرًا، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ ادْعُ اللهَ أَنْ يُحَبِّبَنِي
أَنَا وَأُمِّي إِلَى عِبَادِهِ الْمُؤْمِنِينَ، وَيُحَبِّبَهُمْ إِلَيْنَا،
قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ حَبِّبْ
عُبَيْدَكَ هَذَا - يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ - وَأُمَّهُ إِلَى عِبَادِكَ
الْمُؤْمِنِينَ، وَحَبِّبْ إِلَيْهِمِ الْمُؤْمِنِينَ» فَمَا خُلِقَ مُؤْمِنٌ
يَسْمَعُ بِي وَلَا يَرَانِي إِلَّا أَحَبَّنِي.
-
একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে কাঁদতে কাঁদতে হাজির হলাম এবং আরয করলাম:
“ইয়া
রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এ যাবৎ আমার মাকে ইসলাম ধর্মের
প্রতি আহ্বান
জানিয়ে আসছি, কিন্তু
তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন। আজও আমি তাঁকে এ ব্যাপারে অনুরোধ
করি; তিনি
আপনার সম্পর্কে এমন কথা বলেন যা শুনতে আমি ঘৃণা করি। দয়া করে
আল্লাহর কাছে আরয করুন যাতে আবু হুরায়রার মা হেদায়াত পান।” এর
পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করলেন, “ইয়া
আল্লাহ্! আবু হুরায়রার
মাকে আপনি হেদায়াত দিন!” অতঃপর
আমি হুজুর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়ার কারণে
উৎফুল্ল চিত্তে ঘরে ফিরলাম। ফিরে দেখি দরজা বন্ধ। আমার পায়ের শব্দ শুনে
মা ভেতর থেকে আমাকে বল্লেন, “আবু
হুরায়রা, এখন
ঘরে প্রবেশ করো না।” আমি
পানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ওযু করলেন এবং চাদর গায়ে দিলেন, আর মাথায়
কাপড়ও পরলেন; অতঃপর
তিনি দরজা খুলে বল্লেন: “আবু
হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর হাবীব (প্রিয় বান্দা) ও প্রেরিত রাসূল!” আমি
তৎক্ষণাৎ খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দরবারে আবার হাজির হলাম
এবং আরয করলাম, “ইয়া
রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সুসংবাদ! আল্লাহ তা’লা
আপনার দোয়া
কবুল করে আমার মাকে হেদায়াত দিয়েছেন।” তিনি
আল্লাহ তা’লার
কাছে শুকরিয়া
আদায় করলেন, আর
তাঁর প্রশংসাও করলেন। আমি আবার আরয করলাম: ’হে রাসূলে
খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে তিনি আমাকে ও
আমার মাকে ঈমানদারদের
প্রিয়পাত্র করে দেন এবং তাদেরকেও আমাদের কাছে প্রিয়ভাজন করেন!” অতঃপর
হুজুর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেন, “ইয়া
আল্লাহ, আপনি
আপনার এই ছোট বান্দা
(আবু হুরায়রা) ও তাঁর মাকে ঈমানদারদের কাছে প্রিয় করে দিন এবং তাদেরকেও
এই দু’জনের
কাছে প্রিয় করে দিন!” আবু
হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “কোনো ঈমানদার ব্যক্তিই
অস্তিত্ব পাবার পর আমাকে না দেখা সত্ত্বেও আমার সম্পর্কে না
শুনে ও আমাকে না ভালোবেসে পারেন না।[১২]
এ বর্ণনাটি
মুসলিম ও ইমাম আহমদের এবং ইবনে হাজরেরও, তাঁর আল্ ইসাবা গ্রন্থে (৭:৩৪৫, ৭:৫১২)।
এ ছাড়াও অন্যান্যরা এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি অপর এক বিশুদ্ধ
হাদীসের মতোই, যেখানে
খলীফাতুল মো’মেনীন
হযরত আলী ইবনে আবি তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
لاَ يُحِبُّكَ إِلاَّ
مُؤْمِنٌ ، وَلا يُبْغِضُكَ إِلاَّ مُنَافِقٌ.
-
মো’মেন
বান্দারা ছাড়া কেউই তোমাকে ভালোবাসে না, আর
মোনাফেকরা ছাড়া কেউই তোমাকে ঘৃণা করে না।[১৩]
(৩)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির সমর্থনে আরেকটি হাদীস
কোনো এক ব্যক্তি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ
يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا قَالَ لَا إِلَّا
أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ قَالَ فَإِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ
أَنَسٌ فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ بَعْدَ الْإِسْلَامِ فَرَحَنَا بِقَوْلِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ
فَأَنَا أُحِبُّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا
بَكْرٍ وَعُمَرَ وَأَنَا أَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ لِحُبِّي إِيَّاهُمْ
وَإِنْ كُنْتُ لَا أَعْمَلُ بِعَمَلِهِمْ.
-
ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! শেষ বিচার দিবস কখন হবে”? তিনি
পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “তুমি
এর জন্য কী প্রস্তুতি
গ্রহণ করেছো”? ওই
ব্যক্তি জবাব দিলেন, “তেমন কিছুই
না; তবে
আমি আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলকে ভালোবাসি।” অতঃপর
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমালেন- “তুমি
যাঁদের ভালোবাস, তাঁদের
সাথে থাকবে।” এই
হাদীসের রওয়ায়াতকারী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসূলে
খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওই কথা শুনে আমরা যতো খুশি হয়েছিলাম তার
চেয়ে বেশি
খুশি আগে কখনো হই নি। অতএব, আমি
হুজুর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে ভালোবাসি এবং আশা করি যে এর ফলে আমি
তাঁদের সঙ্গে
থাকবো, যদিও
আমার আমল তাঁদের মতো নয়।[১৪] [বঙ্গানুবাদকের নোট: হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ (দ:) ওই সাহাবী (রা:)-কে পাল্টা জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি এর জন্যে কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো?” উত্তরে সাহাবী (রা:) জানান, “তেমন কিছুই না।” এর মানে তিনি আমলের বাহাদুরি করেননি, বরং নিজেকে বে-আমল, দীন-হীন হিসেবে পেশ করেছেন। আরেক কথায়, তাঁর এতায়াত তথা আনুগত্য/তাবেদারি ঘাটতিপূর্ণ, এ কথা তিনি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, যা বর্তমানকালের হামবড়া ভাবের অধিকারী এক শ্রেণির মোল্লা-পুরোহিতদের ও তাদের অনুসারীদের মাঝে দেখা যায় না। অতঃপর ওই সাহাবী সার কথাটি বলেছেন। তিনি জানান, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-কে তিনি ভালোবাসেন। এই ভালোবাসা তাঁদের সত্তার প্রতি, আখেরাতের প্রস্তুতিরূপী আমলদারি এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, তা ইতিপূর্বেই এক্সক্লুড বা বাদ পড়েছে তাঁরই “কিছুই না” বক্তব্য দ্বারা। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছেড়ে তাতে উন্নীত হওয়ার সিঁড়ি বা সোপানকে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা স্রেফ বেওকুফি! মহানবী (দ:)-এর ভালোবাসা ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়, আর আমল ও এবাদত-বন্দেগী মূল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই দুটো বিষয়কে তালগোল পাকিয়ে ফেলা ওহাবী/মওদূদী/সালাফীদেরই গোমরাহী, যা সুন্নী আকীদার পরিপন্থী। ওপরোক্ত রেওয়ায়াত তথা বর্ণনায় বেদুঈন আরব সাহাবী (রা:) যখন বলেন, “আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-কে ভালোবাসি”, তখন মহানবী (দ:) তাঁকে জানান, “তুমি তাঁদের সাথে থাকবে, যাঁদের তুমি ভালোবাসো” [বুখারী, আদাব, ১৮৮]। অতএব, বার্তা একদম স্পষ্ট, আর সিদ্ধান্ত-ও ফায়সালাকারী! অর্থাৎ, তিনি আখেরাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-এর সাথে অবস্থান করবেন। লক্ষণীয় যে মহানবী (দ:)-ই এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ ধরনের আরো বর্ণনা আছে হাদীস গ্রন্থগুলোতে। এগুলোর সাথে আল-কুরআন কোথায় সাংঘর্ষিক, তা কিন্তু বাতেলপন্থীরা নির্দেশ করতে পারেনি।]
(৪) আরও কিছু সমর্থনসূচক দলিল
বিশ্বনবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
مِنْ أَشَدِّ أُمَّتِي لِي حُبًّا، نَاسٌ يَكُونُونَ
بَعْدِي، يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ رَآنِي بِأَهْلِهِ وَمَالِهِ.
-
আমাকে ভালোবাসেন আমার এমন উম্মাতদের মধ্যে কিছু
মানুষ আছেন যারা আমার পরে আসবেন এবং যারা নিজেদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের
বিনিময়ে আমাকে দেখার জন্যে উদগ্রীব হবেন।[১৫]
একবার কেউ একজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে আরয করলেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ , وَاللَّهِ إِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ
مِنْ نَفْسِي , وَإِنَّكَ لَأَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَهْلِي وَمَالِي , وَأَحَبُّ
إِلَيَّ مِنْ وَلَدِي , وَإِنِّي لَأَكُونُ فِي الْبَيْتِ فَأَذْكُرُكَ فَمَا
أَصْبِرُ حَتَّى آتِيَكَ فَأَنْظُرَ إِلَيْكَ , وَإِذَا ذَكَرْتُ مَوْتِي
وَمَوْتَكَ عَرَفْتُ أَنَّكَ إِذَا دَخَلْتَ الْجَنَّةَ رُفِعَتْ مَعَ
النَّبِيِّينَ , وَإِنِّي إِذَا دَخَلْتُ الْجَنَّةَ خَشِيتُ أَنْ لَا أَرَاكَ ,
فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا
حَتَّى نَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِهَذِهِ الْآيَةِ.
-
হে আল্লাহর নবী! আমি
আপনাকে আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আমি আপনাকে
স্মরণ করি এবং আপনার কাছে এসে আপনাকে দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে পারি না।
আমি জানি আমি পরলোকবাসী হবো এবং আপনিও বেসালপ্রাপ্ত হবেন; এও
জানি আপনি
তখন বেহেশতে (নবীকুল সরদার হিসেবে) নবীদের সাথে উচ্চ মকামে অধিষ্ঠিত হবেন।
তখন তো জান্নাতে আপনার দেখা পাবো না।” এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা’লা আয়াত নাযেল
করলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ
وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ
النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ
أُولَئِكَ رَفِيقًا.
-
এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুম মান্য করে, তবে সে
তাঁদের সঙ্গ লাভ করবে যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন- অর্থাৎ নবীবৃন্দ, সত্যনিষ্ঠ
বুযূর্গানে দ্বীন, শাহাদাৎপ্রাপ্ত
ব্যক্তি ও সৎ-কর্মপরায়ণ
মানবকুল। এঁরা কতোই উত্তম সঙ্গী”![১৬]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে ডেকে উপরোক্ত আয়াতে করীমা তেলাওয়াত করে শুনালেন। এই
ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাবারানী এবং মারদাওয়াইহ্ হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ও
হযরত ইবনে
আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। এছাড়া ইমাম কাজী আয়াজ (রহমতুল্লাহি আলাইহি) তাঁর
প্রণীত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থে
ও ইবনে কাসীর তার তাফসীর পুস্তকে একটি বর্ণনা করেছেন। আল বাগাভীও
এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর তাফসীরে। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত অপর এক হাদীসেও
বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে:
وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَدْ جَلَدَهُ فِي الشَّرَابِ
فَأُتِيَ بِهِ يَوْمًا فَأَمَرَ بِهِ فَجُلِدَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ
اللَّهُمَّ الْعَنْهُ مَا أَكْثَرَ مَا يُؤْتَى بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم : لاَ تَلْعَنُوهُ فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّهُ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَه.
-
এক ব্যক্তিকে মদ পানের কারণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিনিয়ত শাস্তি দিতেন; একবার তাঁকে ধরে আনা হলে তাঁকে আবারও প্রহারের শাস্তি দেয়া হয়।
এমতাবস্থায় উপস্থিত কেউ একজন “আল্লাহর লা’নত পড়ুক তাঁর ওপর! তাঁকে
কতো ঘন ঘনই না ধরে আনা হয়”- এ কথাটি বলে উঠলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বারণ করে বলেন,
“ওকে লা’নত দেবে না; আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ও আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।”[১৭]
তথ্যসূত্র
:
[১] আল
কুরআন : আলে ইমরান, ৩:৩১।
[২] আল
কুরআন : আল ক্বলম, ৬৮:৪।
[৩] বুখারী : আস সহীহ, বাবু হুব্বি রাসূলিল্লাহ, ১:১২ হাদীস নং
১৪।
(ক)
মুসলিম : আস সহীহ, বাবু উজুবি মুহাব্বতি রাসূলিল্লাহ, ১:৬৭ হাদীস নং ৪৪।
(খ) ইবনে মাজাহ : আস
সুনান, বাবু ফিল ঈমান, ১:২৬ হাদীস নং ৬৭।
(গ) নাসায়ী : আস সুনান,
বাবু আলামাতিল ঈমান, ৮:১১৪ হাদীস নং ৫০১৩
(ঘ) আহমদ : আল মুসনাদ,
৩:২৭৮ হাদীস নং ১৩৯৯১।
(ঙ) দারেমী : আস সুনান,
৩:১৮০১ হাদীস নং ২৭৮৩।
(চ) বাযযার : আল মুসনাদ,
১৪:৭৭ হাদীস নং ৭৫৪০।
(ছ) ইবনে হিব্বান : আস
সহীহ, ১:৪০৫ হাদীস নং ৪৭৯।
(জ) আবু ইয়ালা : আল
মুসনাদ, ৫:৩৮৭ হাদীস নং ৩০৪৯।
(ঞ) তবারানী : আল
মু‘জামুল আওসাত, ১:১০২ হাদীস নং ৩১৭।
(ট) বায়হাকী : শু‘য়াবুল
ঈমান, ২:১২৯ হাদীস নং ১৩৭৪।
(ঠ) বাগাবী : শরহুস
সুন্নাহ, ১:৫০ হাদীস নং ২২।
(ড) আবু উয়ানা : আল মুসনাদ,
১:৪১।
[৪] বুখারী : আস সহীহ, বাবু কায়ফা
কানাত ইমিনান নবী্য়্যি, ৮:১২৯ হাদীস নং ৬৬৩২।
[৫] আল কুরআন : আল আহযাব, ৩৩:৫৬।
[৬]
প্রাগুক্ত।
[৭]
প্রাগুক্ত।
[৮] আল
কুরআন : ইউনুস, ১০:৫৮।
[৯] আল কুরআন : আল আম্বিয়া, ২১:১০৭)।
[১০] আল কুরআন : আন নিসা, ৪:১১৫।
[১১] আহমদ :
আল মুসনাদ, হাদীসু সৈয়্যদা আয়েশা, ৬:২৬৮ হাদীস নং ২৬৩৫১।
(ক) বুখারী : আস সহীহ, ৭:২ হাদীস নং ৫০৬৩।
(খ) মুসলিম : আস সহীহ, ২:১০২০ হাদীস নং ১৪০১।
(গ) আবু দাঊদ : আস সুনান, ২:৪৮ হাদীস নং ১৩৬৯।
(ঘ) নাসায়ী : আস সুনান, ৬:৬০ হাদীস নং ৩২১৭।
[১২] মুসলিম : আস সহীহ, বাবু মিন
ফাদ্বায়িলি আবী হুরায়রা, ৪:১৯৩৮ হাদীস নং ২৪৯১।
(ক) আহমদ : আল মুসনাদ, মুসনাদু আবী
হুরায়রা, ২:৩১৯ হাদীস নং ৮২৪২।
(খ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৬:১০৭ হাদীস নং ৭১৫৪।
(গ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৩:৩০৭।
(ঘ) বাযযার : আল মুসনাদ, ১৬:২২৮ হাদীস নং ৯৩৮৭।
[১৩] নাসায়ী : আস সুনান,
আলামাতুল ঈমান, ৮:১১৫ হাদীস নং ৫০১৮।
(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ১৩:৩৪২ হাদীস নং ৪১০১।
(খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ১:৯৫ হাদীস নং ৭৩১।
(গ) আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১:২৫০ হাদীস নং
২৯১।
(ঘ) তবারানী : আল মু‘জামুল আওসাত, ২:৩৩৭ হাদীস নং ২১৫৬।
(ঙ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:১১৩ হাদীস নং ৩৯০৭।
(চ)
হুমায়দী : আল মুসনাদ, ১:১৮২ হাদীস নং ৫৮।
[১৪] আহমদ : আল মুসনাদ, ৩:২২৭ হাদীস নং ১৩৩৯৫।
(ক)
আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ৬:১৮০ হাদীস নং ৩৪৬৫।
[১৫] মুসলিম : আস সহীহ, ৪:২১৭৮ হাদীস
নং ২৮৩২।
(ক)
আহমদ : আল মুসনাদ, ২:৪১৭ হাদীস নং ৯৩৮৮।
(খ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৬:২১৪ হাদীস নং ৭২৩১।
(গ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:৫৬।
(ঘ) আবু উয়ানা : আল মুসনাদ, ১:২১২।
[১৬] তবারানী : আল মু‘জামুল আওসাত, ১:১৫২ হাদীস নং ৪৭৭।