Monday 24 September 2018

‘এহইয়া’র প্রতি নির্লজ্জদের অপবাদের জবাব

মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[Bengali translation of Dr GF Haddad's online article "Defending the Ihyaa' from those devoid of shame;" translator: Admin]

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

ইমাম গাযযালী (রহ:)’র প্রণীত “এহইয়াও উলুমিদ্দীন” গ্রন্থটি ইসলামে সর্বাধিক পঠিত বইগুলোর একটি হিসেবে পরিগণিত, যা (যুগে ‍যুগে) উলামাবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং মুসলমান সমাজের কাছেও সাধারণভাবে গৃহীত হয়েছে। এর প্রশংসাকারী অগণিত আলেম-উলামার একজন ইমাম সাফাদী (রহ:) বলেন: “এটা সবচেয়ে অভিজাত ও সেরা (ইসলামী) গ্রন্থগুলোর একটা; তা এমনই এক পর্যায়ের যে এর সম্পর্কে কথিত আছে, ইসলামের সমস্ত বই-ও যদি হারিয়ে যায় কিন্তু ‘এহইয়া’ টিকে থাকে, তাহলে এটা হারানো সব কিছুর জন্যে যথেষ্ট হবে।” [ নোট-১: ইমাম ইবনে সুবকী কৃত ‘তাবাক্বাত আল-শা’ফিইয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৫৩]

বিভিন্ন কারণে ‘এহইয়া’ পুস্তকটি সমালোচিতও হয়েছে; এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল ও জাল হাদীস/রওয়ায়াত উদ্ধৃত করার অভিযোগ। এর একটি তালিকা পেশ করেছেন ইমাম ইবনে সুবকী, যিনি গুরুত্বারোপ করেন যে ইমাম গাযযালী (রহ:) কখনোই হাদীসশাস্ত্রে উৎকর্ষ সাধন করেননি [নোট-২: প্রাগুক্ত ‘তাবাক্বাত,’ ৬: ২৮৭-৩৮৯]। আবূ আবদিল্লাহ মা’যারী মালেকী ভুলভাবে ‘আল-কাশফ ওয়াল-ইনবা’আ ‘আন কিতা’ব আল-এহইয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে ‘এহইয়া’ পুস্তকটিতে উদ্ধৃত বেশির ভাগ বর্ণনা-ই নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নে ‘ওয়া’হিন’ তথা ত্রুটিপূর্ণ। অপর দিকে আরেক সমালোচক মালেকী আলেম আবূ বকর মুহাম্মদ ইবনে আল-ওয়ালীদ আল-তুরতূশী (ইন্তেক্বাল: ৪২০ হিজরী) ইবনে জা’ফির আবূ আবদিল্লাহ ‍মুহাম্মদ ইবনে আবদির রহমান ইবনে আতিয়্যা’কে লেখা পত্রে বিস্ময় প্রকাশ করেন: “তিনি (আল-গাযযালী) তাঁর বইটি জাল বর্ণনা দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন!” ইমাম ইবনে সুবকী (রহ:) প্রত্যুত্তর দেন:

আল-মা’যারী ছিলেন আশআরী মতবাদের একজন আবেগপ্রবণ প্রবক্তা - কর্তৃত্বশীল ও মাঝারি, বড় ও ছোট উভয় ক্ষেত্রেই; যে ব্যক্তি এগুলোকে অতিক্রম করতেন, তাঁকেই অাল-মা’যারী বেদআতী ঘোষণা করতেন। অধিকন্তু, তিনি নিজের মালেকী মাযহাবের প্রতি ছিলেন পক্ষপাতিত্বপূর্ণ, যে পক্ষ তিনি তেজোদ্দীপ্তভাবে সমর্থন করতেন। পক্ষান্তরে, আল-জুওয়াইনী (রহ:) ও আল-গাযযালী (রহ:) এমন এক জ্ঞান ও দক্ষতার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলেন যে প্রত্যেক নিরপেক্ষ গবেষক/পর্যবেক্ষক-ই এ কথা স্বীকার করতে সক্ষম যে তাঁদের পরে ওই ক্ষেত্রে তাঁদের জুড়ি মেলা ভার; আর তাঁরা কালা’মশাস্ত্রের প্রশ্নে ইমাম আবূল হাসান আশআরী (রহ:)’র সাথে ভিন্নমত পোষণ করাকে হয়তাে যথাযথ বিবেচনা করে থাকতে পারেন (এর দরুন)। আশআরীবৃন্দ, বিশেষ করে ওই মাযহাবের মরক্কোবাসী অনুসারীবৃন্দ এটাকে সহজভাবে নেন না এবং তাঁরা কাউকেই ইমাম আবূল হাসান (রহ:)’এর মতাদর্শের সামান্যতম লঙ্ঘনও করতে দিতে চান না [নোট-৩: দেখুন ইমাম গাযযালী (রহ:)’র ‘ফায়সাল আল-তাফরিক্বা’ {রাসা’ইল ৩:৭৫-৯৯} শীর্ষক পত্র, যেটা সেসব আশআরী’র জবাবে লেখা হয়েছে যারা ইমাম অাবূল হাসানের এমন কী এজতেহাদ-সহ সকল নীতিমালা হতে বিচ্যুত যে কারো প্রতি তাকফির/ধর্মচ্যুতির ফতোয়া জারি করেন। এই পত্রে ইমাম গাযযালী (রহ:) লেখেন: “জেনে রেখো, ইসলামী জ্ঞানের শাখাগুলোতে কোনো তাকফির নেই স্রেফ একটি বিষয় ব্যতিরেকে, আর তা হলো অামাদের কাছে ব্যাপক (জনশ্রুত) বর্ণনার মাধ্যমে আগত ধর্মের উসূল/মূলনীতিমালার যে কোনো একটির অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান। অন্যান্য বিষয়গুলোর বেলায় ’ফিক্বীয়্যা’ তথা শরঈ বিধানশাস্ত্রে ‘তাখতিয়া’ তথা অসত্যতা বা ভুলভ্রান্তির ফতোয়া হতে পারে; আর অন্য ক্ষেত্রে ‘তাবদী’ (বেদআত/নতুন প্রচলন) হতে পারে; যেমনটি ইমাম পদবীর ব্যাপারে ভ্রান্তি সম্পর্কিত হওয়া {মানে চার খলীফা (রা:)-বিষয়ক ভ্রান্তি ও হুযূরের (দ:) সাহাবাবৃন্দের (রা:) অবস্থা সম্পর্কে ভ্রান্তি}]। আরো জটিলতা সৃষ্টি করেছে আল-জুওয়াইনী (রহ:) ও আল-গাযযালী (রহ:) কর্তৃক কিছু বিষয়ে ইমাম মালেক (রহ:)’এর সিদ্ধান্তকে দুর্বল করে ফেলা, যেমন - জনকল্যাণ বিষয়ে দেয়া রায়গুলো [নোট-৪: হানাফী ও মালেকী ফক্বীহ-মণ্ডলী কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে জনকল্যাণ (আল-মাসা’লিহ আল-মুরসালা) ক্ষেত্রে নেয়া এসতেহসা’ন (সুবিবেচনাপূর্ণ বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত) ও রায়কে ইসলামী বিধানের বৈধ উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, যা ওই সব বিষয়ে নস (শরঈ দলিল), এজমা’ (উলামাবৃন্দের ঐকমত্য) ও ক্বেয়াসের (গবেষণামূলক সিদ্ধান্তের) অনুপস্থিতিতে গৃহীত হতো। দেখুন - আবূ এসহা’ক্ব আল-শীরা’যী কৃত ‘অাল-লুমা’আ ফী উসূল আল-ফেক্বাহ (১২১ পৃষ্ঠা), আল-শা’তিবী প্রণীত ‘আল-মুওয়া’ফাক্বাত ফী উসূল আল-ফেক্বাহ’ (৩:৭৫-৭৭), আল-আমিদী রচিত ‘আল-এহকা’ম ফী উসূল আল-আহকা’ম’ (৪:৩২f, ৪:১৬৭f), আল-রা’যী লিখিত ‘আল-মাহসুল ফী ’এলম আল-উসূল’ (৬:২১৮-২২৫) এবং ইবনে বাদরান কৃত ‘আল-মাদখাল ইলা’ মাযহাব আল-ইমাম আহমদ’ (২৯৫-২৯৬ পৃষ্ঠা)। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আল-হাসান আল-শায়বানী (রহ:) একটি বই রচনা করেন ‘আল-এসতেহসা’ন’ শিরোনামে যা ইমাম শাফেঈ (রহ:) খণ্ডন করেন তাঁর প্রণীত ‘এবতাল আল-এসতেহসা’ন’ পুস্তকে], অথবা কোনো মাযহাবের চেয়ে অন্য আরেকটি মাযহাবকে বেশি পছন্দ করা......আর আল-মা’যারী’র ব্যক্ত “ইমাম গাযযালী (রহ:) কালা’মশাস্ত্রে কোনো মুতাবাহহির তথা অগ্রগণ্য পণ্ডিত নন” মর্মে কথাটির সাথে আমি একমত; তবে আমি আরো যোগ করবো: এতে নিশ্চয়ই তাঁর ছিলো সুদৃঢ় দখল/পদচারণা, যদিও আমার মতে অন্যান্য বিদ্যাশাস্ত্রে তাঁর দখলের তুলনায় এটা তেমন দৃঢ় ছিলো না। আর আল-মা’যারীর ব্যক্ত “উসূলের শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনের আগে ইমাম গাযযালী (রহ:) দর্শনশাস্ত্রে প্রবৃত্ত হন” মর্মে কথাটি প্রসঙ্গে বলতে হয়, ঘটনা তা নয়। তিনি উসূল-শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পরই কেবল দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন আরম্ভ করেন; এবং তিনি তাঁর ‘আল-মুনক্বিয মিন আল-দালা’ল’ পুস্তকে এটা উল্লেখও করেছেন এ কথা যোগ করে যে, তিনি কালা’ম-শাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেই দর্শনশাস্ত্রের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন।....আর ইবনে সীনা’র ক্ষেত্রে আল-গাযযালী (রহ:) তাঁকে অবিশ্বাসী ঘোষণা করেন; এমতাবস্থায় তাঁর (ইবনে সীনার) ওপর কীভাবে তিনি নির্ভর করতে পারেন? ‘এহইয়া’ গ্রন্থে কিছু বর্ণনা উদ্ধৃত করার ব্যাপারে ইমাম গাযযালী (রহ:)’র প্রতি দোষারোপ প্রসঙ্গে জানা যায় যে তাঁর হাদীসশাস্ত্রে কোনো দক্ষতা ছিলো না, আর অধিকাংশ বর্ণনা ও ঘটনা তিনি তাঁর পূর্বসূরী সূফীবৃন্দ ও ফক্বীহ-মণ্ডলী হতে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বয়ং একটি এসনাদ/সনদ-ও পেশ করেননি; কিন্তু আমাদের একজন সাথী (ইমাম যাইনউদ্দীন এরাক্বী) যত্নসহকারে ‘এহইয়া’র বর্ণনাগুলোর এসনাদ সপ্রমাণ করেছেন; স্রেফ কিছু সংখ্যক বিবরণকে শা‘যয তথা ত্রুটিপূর্ণ অভিহিত করা হয়েছে। আমি উপকারার্থে সেগুলো উদ্ধৃত করবো....আল-গাযযালী (রহ:)’র কথিত ‘রাসূল (দ:) এরশাদ ফরমান’ বাক্যটিও তাঁর (হুযূরের) প্রতি নিশ্চিতভাবে অারোপিত অর্থে নয়, বরঞ্চ তা এমন এক আরোপিত কথা যা নিশ্চিত বলে দৃশ্যমান হয়। কেননা তিনি যদি এটাকে সত্য বলে ধরে না নিতেন, তাহলে তিনি তা বলতেন না। বিষয়টি তিনি যেভাবে ভেবেছিলেন, সে মোতাবেক ছিলো না; আর এটাই মোদ্দা কথা। ’এহইয়া’ গ্রন্থে প্রাপ্ত বানোয়াট বিবরণ সম্পর্কে তুরতূশী’র অভিযোগ প্রসঙ্গে আমি জিজ্ঞেস করি, ইমাম গাযযালী (রহ:)-ই কি সেগুলো বানিয়েছেন যে তাঁকে এর জন্যে দোষারোপ করা যাবে? সেগুলোর জন্যে তাঁকে দোষারোপ করা নিশ্চিতভাবে অসার উগ্রতা ছাড়া কিছু নয়। এটা এমনই এক বিরুদ্ধাচরণ যা কোনো চিন্তাশীল গবেষক গ্রহণ করবেন না। [নোট-৫: প্রাগুক্ত ‘তাবাক্বা’ত আল-শা’ফিয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৪৪-, ২৪৯, ২৫২]

ইমাম যাহাবী ইমাম আল-হা’রিস্ আল-মুহা’সেবী সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে, যেখানে তিনি ওই ইমামের প্রতি মুহাদ্দীস আবূ যুর’আ’র আরোপিত কুৎসার উদ্ধৃতি দেন, সেখানে তিনি নিজেও কিছু সূফীবিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করেন এবং বিস্ময়ভরে উচ্চারণ করেন:

আল-হা’রিস্ অাল-মুহা’সেবীর মতো লোকেরা কোথায়? কী হতো যদি আবূ যুর’আ হযরত আবূ তালেব (আল-মক্কী)’এর লেখা ‘ক্বূত আল-ক্বুলূব’ বইটির মতো পরবর্তীকালের সূফীদের বইপত্র দেখতে পেতেন? অার ’ক্বূত’ বইটির মতো বইপত্র কোথায়? কী হতো যদি তিনি (অাবূ যুর’আ) আবূ জাহদামের ‘বাহজাত আল-আসরা’র’ ও আল-সুলামী’র ‘হাক্বায়েক্ব আল-তাফসীর’ পুস্তকগুলো দেখতে পেতেন? তিনি নিশ্চয় ছাদ পর্যন্ত লাফিয়ে উঠতেন! কী হতো যদি তিনি আবূ হা’মিদ আল-তূসী (ইমাম গাযযালী)’র কিতা’বগুলো দেখতে পেতেন? শায়খ আবদুল ক্বা’দির (আল-জীলা’নী)’এর ‘গুনইয়া’.... (ইবনে অারবীর) ‘ফুসূস আল-হিকাম’ ও ‘ফুতূহাত আল-মক্কীয়া’ দেখতে পেতেন?! [নোট-৬: আল-যাহাবী কৃত ‘মীযা’ন’, ১:৪৩০ #১৬০৬]

ইমা’ম আল-সৈয়ূতী (রহ:) তেজোদ্দীপ্তভাবে আল-যাহাবীর প্রতি জবাব দেন:

আল-যাহাবীর মিন মিন যেনো আপনাদের ধোকা না দেয়। কেননা তার মিন মিন ইমাম ফখরুদ্দীন ইবনে আল-খতীব (আল-রা’যী) এবং ওই ইমামের চেয়েও মহান ‘ক্বূত আল-ক্বুলূব’ গ্রন্থপ্রণেতা হযরত আবূ তা’লেব মক্কী (রহ:)’র বিরুদ্ধে গিয়েছে; আর তা হযরত আবূ তা’লেব মক্কীর চেয়েও মহান শায়খ আবূল হাসান আল-আশআরী, যাঁর প্রসিদ্ধি আসমান (জমিন) পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তাঁরও বিরুদ্ধে গিয়েছে! উপরন্তু, তার লেখা ‘আল-মীযা’ন’, ‘আল-তা’রীখ’ ও ‘সিয়্যার আল-নুবালা’ বইগুলো ওরকম সমালোচনায় পরিপূর্ণ। আপনারা কি উক্ত ইমামবৃন্দের মোকাবেলায় তার কথাকে মানবেন? আল্লাহর শপথ, কখনোই নয়! তাঁদের ব্যাপারে তার কথা গ্রহণীয় নয়। বরঞ্চ আমাদের ওপর তাঁদের হক্ব/অধিকারকে আমরা সম্মান করি এবং তাঁদের প্রতি তা পরিপূর্ণভাবে আদায়ও করি। [নোট-৭: আল-সৈয়ূতী, ‘ক্বাম’ আল-মু’আরিদ বি-নুসরাত ইবনে আল-ফা’রিদ’ (আল-ফারিদের সত্যতা প্রতিপাদন দ্বারা আপত্তিকারীকে বশীভূতকরণ) যা তাঁরই ‘মাক্বা’মাত’ গ্রন্থে (২:৯১৭-১৮) বিদ্যমান; আল-লাখনৌভীও নিজ ‘আল-রাফ’ ওয়াল-তাকমীল ফীল-জারহ ওয়াল-তা’দীল’ (৩১৯-৩২০ পৃষ্ঠায়) পুস্তকে এটা উদ্ধৃত করেন।]

সূফীদের প্রতি কুৎসা রটনাকারী ইবনে আল-জাওযীও একইভাবে ‘এহইয়া’কে নিজের রচিত নিম্নোল্লিখিত চারটি বইয়ে প্রত্যাখ্যান করেন: ‘এ’লাম আল-আহএয়া’ বি-অাগলা’ত আল-এহইয়া’ (এহইয়া’র ভ্রান্তি সম্পর্কে জীবিতদেরকে অবহিতকরণ), ‘তালবীস-এ-ইবলীস’, ‘আল-ক্বুসসা’স’ [নোট-৮: ইবনে আল-জাওযী, ‘আল-ক্বুসসা’স ওয়াল-মুযাককেরীন’, ২০১ পৃষ্ঠা] এবং তার ইতিহাস পুস্তক ‘আল-মুনতাযাম ফী তা’রীখ আল-মুলূক ওয়াল উমাম’ [নোট-৯: ইবনে আল-জাওযী, ‘আল-মুনতাযাম’, ৯:১৬৯]। তার এসব মতামত ইবনে তাইমিয়া ও অন্যান্যদের প্রভাবিত করেছিলো। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি এও ছিলো যে ইমাম গাযযালী (রহ:) অত্যধিক পরিমাণ দুর্বল ও ভিত্তিহীন হাদীস ব্যবহার করেছিলেন। আবদুল ফাত্তা’হ আবূ গুদ্দা বলেন:

আমাদের আস্থাশীলতা আল্লাহর প্রতি! ইবনে আল-জাওযী জাল হাদীস-বিষয়ক একটি বিশালাকৃতির গ্রন্থ লেখেন যেনো ফক্বীহ, ধর্মপ্রচারক ও অন্যান্যরা সেগুলো এড়াতে পারেন। অতঃপর আপনারা তাকে নিজের উপদেশমূলক বইপত্রে জাল হাদীস ও প্রত্যাখ্যাত বর্ণনাগুলো সম্পর্কে আগামাথা ছাড়া, শরমহীনভাবে কিংবা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা ব্যতিরেকেই উদ্ধৃতি দিতে দেখবেন। পরিশেষে প্রত্যেক পাঠক অনুভব করবেন যে ইবনে আল-জাওযী দু জন ব্যক্তি, একজন নন! ....এ কারণেই ইবনে আল-আসীর নিজস্ব ‘আল-কা’মিল’ ইতিহাসগ্রন্থে তাকে দোষারোপ করেন এই বলে: ইবনে আল-জাওযী অনেক কিছুর জন্যে ইমাম গাযযালী (রহ:)’কে দোষারোপ করেন, যেগুলোর মধ্যে হযরত ইমামের উপদেশে নিহিত অ-সহীহ হাদীসসমূহের বর্ণনা। কী আজব যে ইবনে আল-জাওযী এর জন্যে তাঁর সমালোচনা করতে পেরেছেন! কেননা তার নিজের বইপত্র ও উপদেশমূলক লেখালেখিতেই ওই রকম জাল হাদীস ভরপুর [নোট-১০: ইবনে আল-আসীর, ‘আল-কা’মিল ফীল-তা’রীখ’ (দা’র সা’দির সংস্করণ, ১০:২২৮; ইলমিয়্যা সংস্করণ ৯:২৪০]! অধিকন্তু , হাদীস-শাস্ত্র বিশারদ আল-সাখাভী (রহ:) ‘শরহ আল-আলফিয়্যা’ পুস্তকে বলেন: “ইবনে আল-জাওযী নিজের উপদেশমূলক বইপত্রে প্রচুর পরিমাণে জাল ও অনুরূপ হাদীস উদ্ধৃত করেন।” [নোট-১১: আবদ আল-ফাত্তা’হ আবূ গুদ্দা, ‘আল-লাখনৌভীর আল-রাফ’ ওয়াল-তাকমিল পুস্তকের টীকা’, ৪২০-৪২১ পৃষ্ঠা]       

অন্যান্য মধ্যমপন্থী মুহাদ্দীস-ইমাম ‘এহইয়া’ পুস্তকের প্রতিটি হাদীসকে (এসনাদ-সহ) সপ্রমাণ করেছেন, আর এর সামগ্রিক উপকারিতার ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলেননি; তাঁরা মুসলমানদের মাঝে বইটির অসীম গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এবং এর সৌন্দর্য বর্ধনে ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের সারগ্রন্থ হিসেবে এর প্রচার-প্রসারে অবদান রেখেছেন। এই আলেম-উলামার মধ্যে রয়েছেন:

* ইমাম যাইন আল-দ্বীন আল-এরাক্বী (বেসাল: ৮০৬ হিজরী): ‘এখবা’র আল-আহইয়া’ বি-আখবা’র আল-এহইয়া’, যেটা চার খণ্ডে সমাপ্ত; এতে তিনি ইমাম গাযযালী (রহ:) ও তাঁর বইয়ের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন; এটা ছিলো বিশ হতে ত্রিশ বছরের মধ্যবর্তী বয়সী আল-এরাক্বীর কৃত ‘এহইয়া’র বিবরণগুলোর ওপর সর্ববৃহৎ প্রামাণিক দলিল, যা তিনি মধ্যম আকৃতির ‘আল-কাশফ আল-মুবীন ‘আন তাখরীজে এহইয়া’ উলূম আল-দ্বীন’ বইয়ে এবং ক্ষুদ্রাকৃতির ‘অাল মুগনী ‘আন হামল আল-আসফা’র’ পুস্তিকায় সংস্কৃত করেন। [নোট-১২: ‘লাহয আল-আলহা’য বি-দায়ল তাযকিরাত আল-হুফফা’য’ (২২৮ পৃষ্ঠায়) বর্ণিত ইবনে ফাহদের ভাষ্যানুযায়ী; আল-যাহাবীর মূল ‘তাযকিরাত আল-হুফফায’ পুস্তকের পঞ্চম খণ্ড];

* ইমাম এরাক্বী (রহ:)’র ছাত্র ইমাম ইবনে হাজর (রহ:): ‘আল-এসতেদরা’ক ‘আলা তাখরিজ আহা’দীস আল-এহইয়া’;

* আল-ক্বা’সিম ইবনে ক্বুতলূবাগা’ আল-হানাফী: ‘তোহফাত আল-আহএয়া ফী মা’ ফা’তা মিন তাখরীজ আহা’দীস আল-এহইয়া’;

* সাইয়্যেদ মুরতাদা’ আল-যাবীদী আল-হুসাইনী (বেসাল: ১২০৫ হিজরী): ‘এখতেলা’ফ আল-সা’দাত আল-মুত্তাক্বীন ফী শারহ আসরা’র এহইয়া’ উলূম আল-দ্বীন’; (এখানে উল্লেখিত) প্রত্যেক আলেম তাঁর পূর্ববর্তী আলেমের প্রামাণিক দলিলকে সুসম্পন্ন করেন।

অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে, হাদীস-শাস্ত্রবিশেষজ্ঞ উলামাবৃন্দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই শরঈ-বিধান প্রণয়নমূলক বিষয়াদি ভিন্ন অপরাপর বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে যয়ীফ/দুর্বল হাদীসের ব্যবহারকে জায়েয/অনুমতিপ্রাপ্ত বিবেচনা করেন; উদাহরণস্বরূপ, উত্তম বিষয়কে উৎসাহদান ও মন্দ বিষয়কে নিরুৎসাহিত করা (আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব), যেমনটি অগণিত মুহাদ্দেসীন ও ইমাম সাফাদী (রহ:)’র মতো অন্যান্য উলামা ইঙ্গিত করেছেন [নোট-১৩: দেখুন আল-হা’কিম কৃত ‘আল-মাদখাল লি-ইলম আল-হাদীস (অবতরণিকা); আল-বায়হাক্বী প্রণীত ‘দালা’য়েল আল-নুবুওয়া’ (ভূমিকা); আল-নববী রচিত ‘আল-তিবএয়া’ন ফী আদব হামালাত আল-ক্বুরআন’ (১৭ পৃষ্ঠা); ইমাম নববী বলেন, ‘নেক আমল তথা পুণ্যদায়ক কর্মের অনুশীলনের পক্ষে দুর্বল হাদীস ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে উলামাবৃন্দ একমত।’ ইমাম সাখাভী উলামাদের এতদসংক্রান্ত সর্বসম্মতিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন তাঁরই ‘আল-ক্বাওল আল-বদী’ (২৪৫-২৪৬ পৃষ্ঠা) গ্রন্থের উপসংহারে]। এটা বোঝা উচিত যে ইমাম গাযযালী (রহ:) তাঁর নীতি-শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যের জন্যে উপকারী হিসেবে যেসব উপকরণকে বিবেচনা করেছিলেন, সেগুলো তিনি বেছে নিয়েছিলেন সারমর্মের ভিত্তিতেই, বর্ণনার উৎস বা এসনাদ/পরম্পরার ভিত্তিতে নয়; ‘এহইয়া’ পুস্তকের বৃহত্তর অংশ গঠিত হয়েছে ক্বুরঅান, হাদীস ও আল-গাযযালী (রহ:) ছাড়া অন্যান্যদের বাণীর উদ্ধৃতি দ্বারা; তাঁর নিজের লেখনী মূল বইয়ের ৩৫%-এর চেয়েও কম অংশ জুড়ে বিরাজমান [নোট-১৪: টি, জে, উইনটার, Ghazali's "Remembrance of Death" অনুবাদগ্রন্থ, ক্যামব্রিজ ইসলামিক টেক্সট্ সোসাইটি, ১৯৮৯ খৃষ্টাব্দ) পরিচিতি (xxixn. ৬৩ পৃষ্ঠা)]; আর এই বিশাল সংখ্যক উদ্ধৃত হাদীসের মাঝে তিন-চতুর্থাংশই মূলতঃ সহীহ [নোট-১৫: ইমাম ইবনে সুবকী (রহ:)’র দুর্বল, অতি দুর্বল অথবা জাল হাদীসের তালিকায় বিরাজমান এক সহস্রেরও কম বর্ণনা, অথচ ‘এহইয়া’ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে চার সহস্রাধিক হাদীস]

হানাফী মুহাদ্দীস ও অগ্রবর্তী অভিধান রচয়িতা মুরতাদা’ আল-যাবীদী (রহ:) ‘এহইয়া’র ওপর তাঁর কৃত বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থের সূচনা করেন একটি ব্যাখ্যা দিয়ে, যা’তে তিনি বিবৃত করেন যে ইমাম গাযযালী (রহ:) কর্তৃক হাদীসের কথা হুবহু বর্ণনার পরিবর্তে সেটার সাধারণ অর্থ উদ্ধৃত করার পদ্ধতিটি সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও সালা’ফবৃন্দের আচরিত রীতিরই ওপর ভিত্তিশীল ছিলো। তিনি বলেন:

রওয়ায়াত/বিবরণগুলোর হুবহু কথাসমূহ যাচাই করা ইমাম গাযযালী (রহ:)’র জন্যে বাধ্যতামূলক ছিলো না। তিনি  সাধারণ অর্থ বিবৃত করেছেন বাণীগুলোর বিভিন্ন ইপ্সিত অর্থ ও সেগুলোর পারস্পরিক বিরোধ সম্পর্কে সচেতন হয়েই এবং সেগুলোর মধ্যে যাতে পরস্পরবিরোধী অর্থ সংযোজন না হয় তা এড়িয়েই।

কিছু সংখ্যক সাহাবা (রা:) প্রিয়নবী (দ:)’র হুবহু আহাদীস/বাণী (রেওয়া’য়া বিল-আলফা’য)’র পরিবর্তে সেগুলোর অর্থ (রেওয়া’য়া বিল-মা’আনা’) বিবৃত করার পক্ষে অনুমতি দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন: সর্ব-হযরত আলী (ক:), ইবনে অব্বাস (রা:), আনাস বিন মালেক (রা:), আবূদ্ দারদা (রা:), ওয়া’সিলা ইবনে আল-আক্বসা (রা:) ও আবূ হুরায়রাহ (রা:) [নোট-১৬: আল-খতীব তাঁর ‘আল-জামে’ ফী আখলা’ক্ব আল-রা’ওয়ী’ (২:২৪, ২:২৬-২৮) গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে সর্ব-হযরত ইবনে মাসউদ (রা:), আবূদ্ দারদা (রা:), আনাস (রা:), আয়েশা (রা:), আমর ইবনে দীনা’র (রা:) আমির আল-শা’বী (রা:), ইবরা’হীম আল-নাখাঈ (রা:), ইবনে আবী নুজায়হ (রা:), আমর ইবনে মুর্রা (রা:), জা’ফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (রা:), সুফিয়ান ইবনে উবায়না (রা:) ও এয়াহইয়া ইবনে সাঈদ অাল-ক্বাত্তা’ন (রা:) ওই পন্থায় হাদীস বর্ণনার অনুমতি দিয়েছিলেন। লেখক সর্ব-হযরত ইবনে মাসউদ (# ১১১৩), আবূদ্ দারদা (# ১১১৪-১১১৫) ও আনাস (# ১১১৬-১১১৭) হতে এর সপক্ষে উদাহরণ পেশ করেন। তিনি আরো বর্ণনা করেন ইমাম ওয়াকী’ (২:২৪ # ১১১০৮) ও ইমাম মালেক (২:২৫ # ১১১০-১১১১) হতে আহাদীসের মূল শব্দচয়ন ব্যতিরেকে অন্য শব্দচয়নে তা বর্ণনার ওপর নিষেধাজ্ঞার কথাও। আল-খতীব এ বিষয়টির বিস্তারিত প্রামাণ্য দলিল পেশ করেন ‘আল-কেফা’য়া’ গ্রন্থে (২০৩-২১১ পৃষ্ঠা)]। এছাড়াও তাঁদের বৃহত্তর সংখ্যক উত্তরসূরী ওই মত গ্রহণ করেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন: ইমামবৃন্দের ইমাম হযরত হাসান আল-বসরী (রহ:), সর্ব-হযরত আল-শা’বী (রা:), আমর ইবনে দীনা’র (রা:), ইবরাহীম আল-নাখাঈ (রা:), মুজাহিদ (রা:) ও একরিমা (রা:) প্রমুখ.....ইবনে সীরীন (রা:) বলেন, “আমি দশজন পৃথক পৃথক ব্যক্তি হতে কোনো একটি হাদীস শুনতাম, যার অর্থ একই কিন্তু শব্দচয়ন একে অপর থেকে ভিন্ন” [নোট-১৭: আবূল আহওয়াস্ মুহাম্মদ ইবনে আল-হায়তাম হতে আল-খতীব কর্তৃক ‘আল-জামে’ লি-আখলাক্ব আল-রা’ওয়ী’ (২:২১ # ১০৯৯) গ্রন্থেও উদ্ধৃত]। অনুরূপভাবে, সাহাবাবৃন্দের (রা:) মধ্যেও মহানবী (দ:)’র হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শব্দচয়নের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাঁদের কেউ কেউ পুরোটুকু বিবরণ হুবহু উদ্ধৃত করেছেন; কেউ কেউ শুধু সারমর্ম বর্ণনা করেছেন; অপরাপর সাহাবাবৃন্দ (রা:) সংস্কৃত অংশ পেশ করেছেন; অন্যরা আবার নির্দিষ্ট কিছু শব্দের সমার্থক শব্দ দ্বারা পরিবর্তন সাধন করেছেন এই বিবেচনায় যে মূল অর্থের বিকৃতি এতে সাধিত হবে না। তাঁদের কেউই মিথ্যে আরোপকে উদ্দেশ্য করেননি, বরঞ্চ সত্যবাদিতাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন; আর তাঁরা বর্ণনা করেছেন যা শুনেছিলেন। সে কারণেই তাঁদের তা করার অবকাশ ছিলো। তাঁরা বলতেন: “অসত্য বিবরণ প্রদান তখন-ই হবে, যখন কেউ ইচ্ছাকৃকভাবে মিথ্যেকে উদ্দেশ্য করে” [নোট-১৮: দেখুন আল-খতীব, ‘আল-কেফা’য়া’, ১৯৮৬ সংস্করণ, ২৩৯-২৪৭ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ, ২০৪-২১১ পৃষ্ঠা]

ইমরা’ন ইবনে মুসলিম (আল-ক্বাসীর) বর্ণনা করেন যে জনৈক ব্যক্তি ইমাম হাসান আল-বসরী (রহ:)’কে বলেন: “হে আবূ সাঈদ! আপনি যখন কোনো হাদীস বর্ণনা করেন, তখন আমাদের কারো দ্বারা ওই হাদীস বর্ণনার চেয়ে আপনি আরো শ্রেয়তর ও প্রাঞ্জল ভাষায় বিবৃত করেন।” তিনি উত্তরে বলেন: “তাতে কোনো ক্ষতি নেই যতোক্ষণ না তুমি তার অর্থ পুরোপুরি ব্যক্ত করেছো” [নোট-১৯: আল-খতীব কর্তৃক ‘আল-কেফা’য়া’ (১৯৮৬ সংস্করণ, ২৪৩ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ ২০৭ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে ও ‘আল-জামে’ (২:২২ #১১০১-১১০২) পুস্তকে বর্ণিত। তুলনা করুন আল-শাফেঈ (রহ:)’র পুস্তক ‘আল-রেসা’লা’ (২৭৫ পৃষ্ঠা) যা’তে আল-হাসান বসরী (রহ:) বা আল-যুহরী’র নামের উল্লেখ নেই]। আল-নাদর ইবনে শুমায়ল (বেসাল: ২০৮ হিজরী) বলেন: “হুশায়ম (বেসাল: ১৮৩ হিজরী) অারবীতে অনেক ভুল করতেন, তাই আমি তাঁর করা বর্ণনাগুলোকে তোমাদের জন্যে সুন্দর বস্ত্রাবৃত করেছি” - এ কথার অর্থ হলো, তিনি সেগুলোকে উন্নত আরবী ভাষায় রূপান্তরিত করেছেন, কেননা নাদর ছিলেন একজন ‘নাহউয়ী’ তথা ভাষাতত্ত্ববিদ [নোট-২০: ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া বলেন: “আমরা (উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র মুক্ত করা গোলাম) না’ফীর ভাষাগত ভুল শুধরে দিতাম, যখনই তিনি (বর্ণনাগুলোতে) তা সংঘটন করতেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলতেন, ‘এটা আমি হুবহু যা শুনেছিলাম, তা ছাড়া কিছু নয়’।” আল-যাহাবীও ‘সিয়্যার’ পুস্তকে এর উদ্ধৃতি দেন (৫:৫৬৭)]। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:) বলতেন: “তোমরা যখন হাদীসের শব্দের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করতে কাউকে দেখতে পাও, তখন জানবে যে ওই লোক নিজের প্রদর্শনী দিচ্ছে।” তিনি বর্ণনা করেন যে একবার এক ব্যক্তি হযরত এয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-ক্বাত্তা’ন (বেসাল: ১৯৮ হিজরী)’কে একটি হাদীসের কোনো এক নির্দিষ্ট শব্দের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে আরম্ভ করে। এয়াহইয়া তাকে বলেন: “এয়া ফুলা’ন! সারা পৃথিবীতে আল্লাহর কিতা’বের মতো শ্রেষ্ঠ আর কোনো কিছু নেই, অথচ তিনি সাতটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানিক বাচনে এর (পঠনের) অনুমতি দিয়েছেন। অতএব, অতোটা কঠোর হয়ো না” [নোট-২১: মিলিয়ে দেখুন আল-শাফেঈ, ‘আল-রেসা’লা’, (২৭৪ পৃষ্ঠা)]!

হাদীস-শাস্ত্রবিশারদ আল-সৈয়ূতী (রহ:) তাঁর কৃত (ইমাম নববী’র) ‘আল-তাক্বরীব’ গ্রন্থের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকের ৪র্থ খণ্ডের ২৬তম শিরোনামে [নোট-২২: আল-সৈয়ূতী, ‘তাদরীব আল-রা‘ওয়ী ফী শারহ তাক্বরীব আল-নববী (১:৫৩২-৫৩৯)] যা বলেছেন, তার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:

কোনো বর্ণনাকারী (হাদীসের) শব্দের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ না হলে এবং শব্দের অর্থ অন্য কিছুতে রূপান্তরিত হলে স্রেফ অর্থের ক্ষেত্রে তিনি যা শুনেছেন, তা বর্ণনা করার কোনো অনুমতি তার নেই। এ বিষয়ে (উলামাদের মাঝে) কোনো মতপার্থক্য নেই। তাকে অবশ্যই তিনি যা শুনেছেন হুবহু তা-ই (শাব্দিকভাবে) বর্ণনা করতে হবে। তিনি যদি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন, (মতান্তর বিদ্যমান) তাহলে হাদীস, ফেক্বাহ ও উসূল-শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞদের একটি বড় দল অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে হুবহু শব্দচয়ন ছাড়া অন্য কোনোভাবে হাদীস বর্ণনার অনুমতি তার নেই। এই মত ব্যক্ত করেন ইবনে সীরীন, তা’লাব ও হানাফী পণ্ডিত আবূ বকর রা’যী [নোট-২৩: মিলিয়ে দেখুন আল-খতীব কৃত ‘আল-কেফা’য়া’ (১৯৮৬ সংস্করণ ২৪২ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ ২০৭ পৃষ্ঠা); তিনি তাতে আরো উল্লেখ করেন ইবরা’হীম ইবনে মায়সারা, আল-ক্বাসেম ইবনে মুহাম্মদ, রাজা ইবনে হায়এয়া ও ইবনে তাউসের নাম]। হযরত ইবনে উমর (রা:)-ও এই মত পোষণ করেন।

{তাবেঈ উবায়দ ইবনে উমাইর আল-মারওয়াযী একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:)’এর উপস্থিতিতে মদীনাবাসীদের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন যে মহানবী (দ:) এরশাদ করেছেন: “মোনাফেক্বের উপমা হলো দুটো ভেড়ার খোঁয়াড়ের (রাবীদাইন) মধ্যখানে একটা ভেড়ার মতো; যখন সেটা একটা খোঁয়াড়ে যায়, ওই ভেড়ার দল ঢুঁ মারে (মানে তাড়িয়ে দেয়); আবার যখন সেটা অপর খোঁয়াড়ে যায়, সেখানেও ভেড়ার দল ঢুঁ মারে (তাড়িয়ে দেয়)।” হযরত ইবনে উমর (রা:) বাধা দিয়ে বলেন, “রাসূলুল্লাহ (দ:) এ কথা বলেননি। তিনি যা বলেছিলেন তা হলো, ‘দুটো ভেড়ার পালের (গানামাইন) মাঝখানে একটা ভেড়ার মতো।’ শায়খ (মারওয়াযী) এতে রাগান্বিত বোধ করেন। হযরত ইবনে উমর (রা:) তা দেখে অতঃপর বলেন, “নিশ্চয় আমি যদি তা না শুনতাম, তাহলে তুমি যা বলেছো তা শুধরে দিতাম না।” [নোট-২৪: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) বর্ণিত] (আরবী দলিলচিত্র - ১)

ইমাম মুহাম্মদ আল-বাক্বের (রহ:) হতে বর্ণিত আরেকটি ভাষ্যে এসেছে যে উবায়দ ইবনে উমাইর আল-মারওয়াযী বলেছিলেন, “দুটো ভেড়ার পালের (গানামাইন) মাঝখানে একটা ভেড়া,” আর হযরত ইবনে উমর (রা:) বাধা দিয়ে বলেন যে সঠিক বিবরণটি ছিলো “দুটো ভেড়ার খোঁয়াড়ের (রাবীদাইন) মাঝখানে একটা ভেড়া।” আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়া’ন যখন হযরত ইবনে উমর (রা:)’কে জানান যে দুটো বাক্য একই অর্থবোধক, তখন তিনি উত্তর দেন, “আমি এটাই শুনেছিলাম।” তৃতীয় আরেকটি ভাষ্যে তাঁর আরো কিছু কথা যুক্ত হয়: “আফসোস তোমার জন্যে! রাসূলুল্লাহ (দ:)’এর ব্যাপারে মিথ্যে বোলো না!” এই তিনটি সংস্করণ-ই সহীহ সনদে ইমাম আহমদ (রহ:)’এর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে। (আরবী দলিলচিত্র-২)}

এতদসত্ত্বেও ‘সালাফ’ (পূর্ববর্তী পুণ্যাত্মাবৃন্দ) ও ‘খালাফ’ (তৎপরবর্তী পুণ্যাত্মাবৃন্দ)‘এর বিভিন্ন দল, যা’তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন (চার মাযহাবের) চার ইমামমণ্ডলীও, তাঁদের একচেটিয় সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বর্ণনাসমূহের অর্থগত বিষয়ে উপরোল্লিখিত সকল ক্ষেত্রকেই অনুমতি দেন, শুধু শর্ত এই যে প্রত্যেককে বর্ণনার (হুবহু) অর্থ তুলে ধরতে হবে [নোট-২৫: আল-সৈয়ূতী লিখিত ‘তাদরীব আল-রা’উয়ী’ (১:৫৩২-৫৩৩, মিলিয়ে দেখুন ‘তাক্বরীব’, ৭৭-৭৮ পৃষ্ঠা); আল-নববী নিজ ‘তাক্বরীব’ পুস্তকে বলেন: “এটা হাদীস সংকলন (মুসান্নাফা’ত) ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোনো হাদীস সংকলনের পরিবর্তন অনুমতিপ্রাপ্ত নয়, এমন কী তা একই অর্থের হলেও। অধিকন্তু, যে ব্যক্তি অর্থের দিক থেকে বর্ণনা পেশ করেন, তাঁর জন্যে বর্ণনার শেষে অত্যাবশ্যক হবে এ কথা বলা: ‘অথবা অনুরূপ কোনো কথা’ (أو كما قال، أو نحوه، أو شبهه) কিংবা এ ধরনের অন্য কোনো অভিব্যক্তি।” ইমাম সৈয়ূতী (রহ:) প্রামাণ্য দলিল পেশ করেন যে এর অনুশীলন করতেন সর্ব-হযরত ইবনে মাসউদ (রা:), আবূদ্ দারদা (রা:) ও আনাস বিন মালেক (রা:)। এই ব্যাপারে অতিরিক্ত দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন ইমাম তিরমিযী (রহ:) তাঁর ‘অাল-’এলাল আল-কবীর’ পুস্তকে এবং ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহ:) কৃত উক্ত পুস্তকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘শারহ ‘এলাল অাল-তিরমিযী (১:১৪৫-১৫২); আল-খতীব আপন ‘অাল-কেফা’য়া’ কিতাবে (১৯৮৬ সংস্করণ, ২৩২-২৪৭ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ, ১৯৮-২১১ পৃষ্ঠা) এবং ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) তাঁর ‘আল-’এলমা’ (১৭৪-১৭৮ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে। এছাড়াও দেখুন ইমাম ইবনে হাজর (রহ:)’এর এতদসংক্রান্ত আলোচনা এবং তার ওপর মোল্লা আলী ক্বা’রীর ব্যাখ্যামূলক ’শরহু শরহে নুখবাত আল-ফিকার’ কিতা’বটি (৪৯৭-৫০২ পৃষ্ঠা)]। এই প্রয়োগ পদ্ধতি সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও সালাফ-মণ্ডলীর (রহ:) আচরিত রীতির মাঝে প্রত্যক্ষ করা হয়েছিলো, যা তাঁদের দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট একটি বর্ণনার বিভিন্ন বাক্যবিন্যাসে প্রদর্শিত হয়েছিলো।

প্রিয়নবী (দ:)’এর এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বিরাজমান, যা আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইমা’ন ইবনে আকতাম [নোট-২৬: আল-যাবীদী’র লিপিতে এটা একটা ভুল বানান] আল-লায়সী {অাবদুল্লা’হ ইবনে সুলাইম ইবনে উকায়মা[নোট-২৭: ইমাম ইবনে হাজরের ‘আল-এসা’বা’ ও ‘তা’জীল আল-মানফা’আ’ গ্রন্থ দুটোতে যেমনটি উদ্ধৃত হয়েছে, আল-হুসাইনী ‘আল-একমাল’ (৫৬৫ পৃষ্ঠা #১২১১) পুস্তকে ভুল করেছিলেন যখনই তিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)’এর ‘মুসনাদ’ কিতাবে উদ্ধৃত ইবনে উকায়মা’কে আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইম ইবনে উকায়মা হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন; কেননা ‘সুনান’, ‘মুওয়াত্তা’ ও ইমাম আহমদ (রহ:)’এর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থগুলোতে উল্লেখিত ইবনে উকায়মা’কে ইমাম তিরমিযী (রহ:) নিজ ‘সুনান’ গ্রন্থে এবং অন্যান্য পণ্ডিতবৃন্দ উমারা অথবা ‘আম্মার ইবনে উকায়মা আল-লায়সী বলে চিহ্নিত করেন। উপরন্তু, তাঁকে ইমাম মুসলিম নিজ ‘সহীহ’ গ্রন্থে (৩:১৫৬৬), ইবনে হিব্বা’ন (৫:১৫৮, ১৩:২৩৮-২৩৯), আবূ এয়া’লা আপন ‘মুসনাদ’ বইয়ে (১২:৩৪৮) এবং ইবনে ‘আবদিল বার্র ’আল-তামহীদ’ কিতাবে (১৭:২৩৭) ’আমর ইবনে মুসলিম ইবনে আম্মা’র ইবনে উকায়মা আল-লায়সী বলে চিহ্নিত করেন। তাঁরা সবাই একমত হন যে তিনি কোনো সাহাবী ছিলেন না, বরঞ্চ উত্তরসূরী ছিলেন, যিনি সর্ব-হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা:) ও সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রা:) উভয়ের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইম (-য়ান) ইবনে উকায়মা যিনি আল-তাবারা’নী (রহ:)’র কাছ থেকে বর্ণনা করেছিলেন, তিনি এক অপরিচিত জন]}হতে বর্ণনা করেছেন ইবনে মানদাহ নিজ ‘মা’রেফাত আল-সাহা’বা’ পুস্তকে এবং ইমাম তাবারা’নী আপন ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে, যিনি বলেন: আমি আরয করলাম, “এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! নিশ্চয় আমি যখন আপনার কাছ থেকে কোনো হাদীস শুনি, তখন তা যেভাবে আপনার কাছে শুনেছিলাম সেভাবে আবার বর্ণনা করতে পারি না।” অর্থাৎ, তিনি তাতে সংযোজন বা বিয়োজন করেন। প্রিয়নবী (দ:) উত্তর দেন: “যতোক্ষণ তুমি হারাম/অবৈধকে হালাল/বৈধ না করো, বা হালালকে হারাম সাব্যস্ত না করো, আর যতোক্ষণ এর অর্থকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করো, ততোক্ষণ এতে কোনো ক্ষতি নেই” [নোট-২৮: আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইমা’ন ইবনে উকায়মা হতে ইমাম তাবারা’নী তাঁর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৭:১০০ #৬৪৯১, ১১৭) এবং ইবনে ক্বা’নী (ইন্তেক্বাল: ৩৫১ হিজরী) নিজ ‘মু’জাম আল-সাহা’বা’ বইয়ে (৩:১৭) বর্ণিত; উভয়ের সনদেই দু জন অপরিচিত বর্ণনাকারী আছেন - এয়া’ক্বূব ইবনে অাবদিল্লাহ ইবনে সুলাইম (-য়ান) ইবনে উকায়মা ও তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইম (-য়ান), যেমনটি বিবৃত করেছেন আল-হায়তামী (১:১৫৪); মিলিয়ে দেখুন আল-সাখাভী কৃত ‘ফাতহুল মুগীস’ (৩:১৪৫)। ইমাম জু’রাক্বা’নী (ইন্তেক্বাল: ৫৪৩ হিজরী)-ও নিজ ‘আল-আবা’তীল’ পুস্তকে (১:৯০-৯৭) এটা বর্ণনা করেছেন, যা’তে তিনি বলেন: “এই হাদীস বা’তেল, আর এর সনদের মধ্যে এদতেরা’ব তথা বিভ্রান্তি বিদ্যমান।” তথাপিও আল-খতীব তাঁর ‘আল-কেফা’য়া’ গ্রন্থে (১৯৮৬ সংস্করণ, ২৩৪ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ, ১৯৮ পৃষ্ঠা) অর্থগতভাবে হাদীস বর্ণনার অনুমতি প্রসঙ্গে দুটি অনুরূপ এসনাদ দ্বারা এটা পেশ করেছেন; এর পাশাপাশি মোল্লা আলী ক্বারীও ‘শরহ শরহে নুখবাত আল-ফিকার’ (৪৯৮ পৃষ্ঠা) কিতাবে তা উপস্থাপন করেন। হযরত সালামা ইবনে অাল-আকওয়া হতেও এটা বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির (রহ:), যেমনটি বিবৃত করেন ইবনে হামজা আল-হুসাইনী নিজ ‘আল-বয়া’ন ওয়াল-তা’রিফ’ পুস্তকে (২:৭৭-৭৮)। ইবনে হাজর (রহ:) এটা বর্ণনা করেন ‘আল-এসা’বা গ্রন্থে (৩:১৬৬ #৩৪৩৬, ৬:৩৪১ #৮৫৩২) এবং বলেন: “ইবনুল জাওযী এটাকে জাল হাদীসগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এর জন্যে আল-ওয়ালীদ ইবনে সালামা’কে দোষারোপ করেন; কিন্তু তিনি যে দাবি করেছিলেন, বিষয়টি তা নয়। কেননা ইবনে মানদাহ এটা বর্ণনা করেন (’মা’রেফাত আল-সাহা’বা’ পুস্তকে) আরেকটি এসনাদে, যা বর্ণনা করেছেন উমর ইবনে ইবরাহীম, তিনি মুহাম্মদ ইবনে এসহা’ক্ব ইবনে উকায়মা হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর পিতামহ হতে - এই জাতীয় বাক্যের সমর্থন দিয়ে। তবে উমর হলেন আল-ওয়ালীদেরই সমসাময়িক। ইবনে মানদাহ এটা আরেকটা সনদে উমর ইবনে ইবরাহীম হতে বর্ণনা করেন এবং বলেন: ‘মুহাম্মদ ইবনে এসহাক্ব ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে সুলাইম হতে বর্ণিত।’ তিনি তাঁর বংশে আবদুল্লাহ’কে যোগ করেন। অতঃপর তিনি আবদুল্লাহ’র নামে এই এসনাদ-টি বর্ণনা করেন।এটা আবূল ক্বা’সেম ইবনে মানদাহ-ও বর্ণনা করেন তাঁর ‘আল-ওয়াসিয়্যা’ পুস্তকে, যা দুটি এসনাদে ফেরত গিয়েছে আল-ওয়ালীদ ইবনে সালামা পর্যন্ত; তিনি এসহাক্ব ইবনে এয়াক্বূব ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে উকায়মা হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর পিতামহ হতে।’ অন্যান্য অসঙ্গতিও এতে বিরাজমান....আবূ মূসা ‘আল-দায়ল’ পুস্তকে এবং ইবনে মারদূএয়াহ-ও ‘কিতা’ব আল-এলম’ গ্রন্থে আবদা’ন আল-মারওয়াযী হতে এটা বর্ণনা করেছেন...আমার বিশ্বাস কিছু অদল-বদল সাধিত হয়েছে এবং সঠিক এসনাদ হলো: মুহাম্মদ ইবনে এসহা’ক্ব, হতে অাবদুল্লাহ ইবনে সুলাইম ইবনে উকায়মা, হতে তাঁর পিতা, হতে তাঁর পিতামহ।” ‘তা’জিল আল-মানফা’আ’ (৫৩১ পৃষ্ঠা #১৪৪০) কিতাবে ইবনে হাজর (রহ:) ইবনে মানদাহ’র এসনাদকে ওয়া’হিয়্যা তথা হাল্কা বা নড়বড়ে ঘোষণা করেন। ফলে তিনি এই হাদীসকে যয়ীফ/দুর্বল বিবেচনা করেন, কিন্তু জাল নয়। এর মূলপাঠ মহানবী (দ:)’র অন্য দুটি হাদীস দ্বারা তুলে ধরেন আল-খতীব, যার প্রথমটি ঘোষণা করে: “যতোক্ষণ কেউ অর্থ (যথাযথভাবে) প্রকাশ করে থাকে, ততোক্ষণ যেনো সে বর্ণনা করে।” দ্বিতীয় হাদীসটি ফরমায়: “আমি নিষেধ করিনি তা (মানে হুবহু বর্ণনা), বরং স্রেফ এই কারণে (করেছি) যে কেউ আমি যা বলিনি তা আমি বলেছি মর্মে মিথ্যে দাবি করে বসে, আর তার উদ্দেশ্য হয় আমাকে শরমিন্দায় ফেলা এবং ইসলামকে খাটো করা, বা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করে ইসলামকে শরম দেয়া।” এটা যথাক্রমে বর্ণিত হয়েছে হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) ও অজ্ঞাতনামা এক সাহাবী হতে আল-খতীব কৃত ‘আল-কেফা’য়া’ বইয়ে (১৯৮৬ সংস্করণ, ২৩৪-২৩৫ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ, ১৯৮ পৃষ্ঠা)। হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত: “মহানবী (দ:)’কে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, যিনি বাক্যের বিন্যাস পরিবর্তন করেন (হাদীসের বর্ণনাকালে)। হুযূর করীম (দ:) উত্তর দেন: ‘যতোক্ষণ সে অর্খ তুলে ধরতে সক্ষম, ততোক্ষণ এতে কোনো ক্ষতি নেই’।” এটা আল-হাকিম আল-তিরমিযী (রহ:) তাঁর ‘নওয়া’দির আল-উসূল’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন (৩৮৯ পৃষ্ঠা)। অতএব, সহীহ অাল-বুখারী (কিতাবুল এলম) গ্রন্থে উদ্ধৃত হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া (রা:) কর্তৃক ব্যাপকভাবে বর্ণিত (মোতাওয়াতের) হাদীস - “আমি যা বলিনি তা যে ব্যক্তি উচ্চারণ করে, সে যেনো জাহান্নামের আগুনে বসতির জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়” মর্মে সতর্কবাণীটিকে অবশ্যঅবশ্য অন্যান্য ওই সব (ওপরে উদ্ধৃত) হাদীসের আলোকে উপলব্ধি করতে হবে। এটা আল-যাবীদী বর্ণিত সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের বক্তব্য এবং আল-হাকিম আত্ তিরমিযী কৃত ‘নওয়া’দির আল-উসূল’ পুস্তকে (৩৮৯-৩৯০ পৃষ্ঠা, আসল #২৬৮) ব্যক্ত সালাফবৃন্দের আচরিত প্রথা দ্বারা সমর্থিত; যেমনটি পুরোপিুরিভাবে উদ্ধৃত হয়েছে আল-ক্বা’সেমী’র রচিত ‘ক্বাওয়াইদ আল-তাহদীস’ (২২৩-২২৪ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে। আর আল্লাহতা’লাই সবচেয়ে ভালো জানেন]। এই ব্যাপারে যখন ইমাম আল-হাসান (রা:)’এর কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি বলেন: “এটা যদি না হতো, তাহলে আমরা কোনো কিছুই বর্ণনা করতাম না” [নোট-২৯: আল-খতীব প্রণীত ‘আল-জামে’ (২:২১-২২ #১১০০) ও ‘আল-কেফা’য়া’ (মদীনা সংস্করণ, ২০৭ পৃষ্ঠা]। 

ইমাম শাফেঈ [নোট-৩০: ‘আল-রেসা’লা’, ২৭৪ পৃষ্ঠা] এই বিষয়ের পক্ষে নিজ প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন নিম্নোক্ত হাদীসখানা: “ক্বুরআন মজীদ প্রকাশিত হয়েছে সাতটি স্থানিক বাচনে” [নোট-৩১: সর্ব-হযরত উমর (রা:) ও ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণনা করেন সর্ব-ইমাম আল-বুখারী (রহ:), মুসলিম (রহ:) ও আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:); এছাড়াও ‘সুনান’ পুস্তকে হযরত উবাই ইবনে কা’আব (রা:) হতে বর্ণিত]

আল-বায়হাক্বী (রহ:) বর্ণনা করেন মাখূল হতে, যিনি বলেন যে তিনি ও আবূ আল-আযহার দেখা করতে গিয়েছিলেন হযরত ওয়া’সিলা ইবনে আল-আসক্বা (রা:)’র সাথে; তাঁকে তাঁরা বলেন: “মহানবী (দ:)’র এমন একটি হাদীস আমাদের কাছে বর্ণনা করুন যার মধ্যে নেই কোনো বিয়োজন, সংযোজন ও বিস্মৃত অংশ।” তিনি উত্তর দেন: “তোমাদের কেউ কি ক্বুরআন মজীদ হতে কোনো কিছু তেলাওয়াত করেছো?” তাঁরা বলেন: “জি, কিন্তু আমরা তা খুব ভালোভাবে হেফয্ তথা মুখস্থ করিনি। আমরা কখনো কখনো ‘এবং’ অথবা ‘আলিফ’ অক্ষরটি যোগ করি, কিংবা কোনো কিছু বিয়োজন করে ফেলি।” তিনি উত্তরে বলেন: “তোমরা যদি তোমাদের সামনে লিপিবদ্ধ ক্বুরআন-ই মুখস্থ করতে না পারো, আর তাতে সংযোজন বা বিয়োজন করে থাকো, তাহলে মহানবী (দ:) হতে আমাদের শ্রুত আহাদীসের বেলায় কী হতে পারে, যার কোনো কোনোটি আবার স্রেফ একবার শুনেছিলাম? অতএব, আমরা যখনই সেগুলো তোমাদের কাছে বর্ণনা করি, তখন সেগুলোর সাধারণ অর্থ গ্রহণেই তোমরা সন্তুষ্ট থেকো” [নোট-৩২: আল-খতীব কর্তৃক ‘আল-জামে’ (২:২০-২১ #১০৯৮) ও ‘আল-কেফা’য়া’ (১৯৮৬ সংস্করণ ২৩৯ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ ২০৪ পৃষ্ঠা) গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত; তিনি ক্বুতায়বা (রা:) হতেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা করেছেন। হা’কিম তিরমিযী’র কৃত ‘নওয়া’দিরুল উসূল’ (৩৮৯ পৃষ্ঠা) সংস্করণে মাখূল জিজ্ঞেস করেন: “আপনাদের কেউ কি রাতে দীর্ঘ নামাযে দণ্ডায়মান হয়েছিলেন?”]! ইমাম বায়হাক্বী ‘আল-মাদখাল’ পুস্তকে হযরত জা’বের ইবনে আবদিল্লাহ (রা:) হতেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “হুযায়ফা (রা:) আমাদের বলেন, ‘আমরা হলাম বেদুঈন আরব; আমরা যথাযথ ক্রম ব্যতিরেকেই কোনো বাণী উদ্ধৃত করতে পারি’।” আল-বায়হাক্বী আরো বর্ণনা করেন শু’য়াইব ইবনে আল-হাজ্জা’ব হতে, যিনি বলেন: আমি আবদানকে সাথে নিয়ে ইমাম আল-হাসান (রা:)’এর সাথে দেখা করতে যাই। আমরা তাঁকে বলি: ‘হে আবূ সাঈদ! কেউ হয়তো এমন কোনো হাদীস বর্ণনা করতে পারেন, যার মধ্যে তিনি কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করেছেন।’ তিনি উত্তর দেন: ‘মিথ্যে হলো যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এটাকে উদ্দেশ্য করে’” [নোট-৩৩: আল-খতীব প্রণীত ‘আল-কেফা’য়া’ (১৯৮৬ সংস্করণ, ২৪৪ পৃষ্ঠা; মদীনা সংস্করণ, ২০৮ পৃষ্ঠা]। {তিনি এ ছাড়াও অনুরূপ কিছু বর্ণনা গ্রহণ করেন হতে ইবরাহীম আল-নাখাঈ [নোট-৩৪: দেখুন নোট-১৬], আল-শা’বী [নোট-৩৫: দেখুুন নোট-১৬], আল-যুহরী [নোট-৩৬: আল-খতীব, ‘আল-জামে’, ২:২২ #১১০৩], সুফিয়া’ন [নোট-৩৭: আল-খতীব, ‘আল-জামে’, ২:২৩ #১১০৪-১১০৬], আমর ইবনে দীনা’র [নোট-৩৮: দেখুন নোট-১৬] এবং ওয়াকী [নোট-৩৯: এছাড়াও আল-হাম্মা’দ ইবনে যায়দ, যেমনটি বর্ণনা করেছেন আল-খতীব নিজ ‘আল-জামে’ পুস্তকে (২:২৩-২৪ #১১০৭; তবে বর্ণনাসমূহ ইঙ্গিত করে যে ইমাম মালেক (রহ:)’এর মতো ওয়াকী-ও ‘আল-রিওয়া’য়া বিল-লাফয’কে বারণ করেছিলেন এবং সুনির্দিষ্ট মূল কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন; মিলিয়ে দেখুন নোট-১৬]}। [নোট-৪০: অাল-যাবীদী রচিত ‘এসা’ফ আল-সা’আদত আল-মুত্তাক্বীন’, ১:৪৮-৪৯]   

মুহাদ্দেসীন উলামাবৃন্দ ‘অর্থের ভিত্তিতে বর্ণনা’ গ্রহণের ব্যাপারে সর্বসম্মতি পোষণ করেন, তবে শর্ত স্রেফ এই যে আরবীতে বর্ণনাকারীর দক্ষতা থাকতে হবে এবং অন্যান্য শর্তের মাঝে এ-ও শর্ত থাকবে যে তাঁর বিবরণে যেনো কোনো বিচ্যুতি কিংবা শুযূয/ভুলভ্রান্তি না থাকে [নোট-৪১: এতর কৃত ‘মানহাজ আল-নাক্বদ’ ২২৭-২৩০ পৃষ্ঠা]। প্রিয়নবী (দ:)’র আহাদীস/বাণী হুবহু বর্ণনার পরিবর্তে সেগুলোর অর্থগত বর্ণনা জায়েয/বৈধ মর্মে সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম-উলামার
মতামতকে সপ্রমাণকারী আল-যাবীদীর মতো একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন ইবনে আল-সালাহ-ও নিজ ‘মুক্বাদ্দামা’ গ্রন্থে; তবে তিনি তা ফিরিয়ে নেন এই কারণে যে এ প্রয়োগ-পদ্ধতি আর বর্তমান সময়ে প্রযোজ্য নয়, কেননা সমস্ত হাদীস-ই এখন বইপত্রে পাওয়া যাচ্ছে [নোট-৪২: ইবনে আল-সালা’হ, ‘উলূম আল-হাদীস’, ২১৪ পৃষ্ঠা]। শায়খ নূর আল-দ্বীন ’এতর শেষোক্ত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে বলেন: “এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, স্রেফ অর্থের ভিত্তিতে হাদীস বর্ণনাকে (আজকে) নিষেধ করতে হবে, কেননা সমস্ত বর্ণনা হাদীসগ্রন্থগুলোতে সংকলন করা হয়েছে, যা দ্বারা ওই প্রয়োগ-পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে [নোট-৪৩: নূর অাল-দ্বীন ’এতর সম্পাদিত ইবনে হাজরের ‘শরহু আল-নুখবা নুযহাত আল-নাযার ফী তাওদিহ নুখবাত আল-ফিকার’, (৯৫ পৃষ্ঠা, নং-১); মিলিয়ে দেখুন আল-ক্বাসেমী’র ‘ক্বাওয়াঈদ আল-তাহদিস্ (২২৩-২২৫ পৃষ্ঠা) এবং তা’হির আল-জাযা’ইরী কৃত ‘তাওজিহ আল-নাযার’ (২৯৮-৩১২ পৃষ্ঠা)]

ইমাম গাজ্জালী (রহ:)’র বেসালপ্রাপ্তির মাত্র কয়েকদিন আগে ৫০৩ হিজরী সালের শুরুতে মুরা’বিত সুলতান (স্পেনের মুসলিম রাজা) অালী ইবনে ইঊসুফ ইবনে তা’শফীন (ইমাম গাজ্জালীর) ‘এহইয়া’ গ্রন্থটিকে কর্ডোবার ক্বা’জী আবূ আবদিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হামদাইন (মৃত্যু: ৫০৮ হিজরী) ও অন্যান্য ফক্বীহ উলামার সর্বসম্মত রায় অনুযায়ী কর্ডোবায় পুড়িয়ে ফেলেন। ইবনে আল-ক্বাত্তা’ন আল-মার্রাকেশী (বেসাল: ৬৪৮ হিজরী) নিজ ’নুযূম আল-জুমা’ন’ পুস্তকে এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন এবং আরো যোগ করেন: “ওই গণ্ডমূর্খের দল কর্তৃক এই অতুলনীয় মহান গ্রন্থখানি পোড়ানো তাদের শাসনের ইতি, পতন ও মূলোৎপাটনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়” [নোট-৪৪: ইবনে অাল-ক্বাত্তা’ন, ‘নুযূম আল-জুমা’ন, ৭০-৭২ পৃষ্ঠা]। কপট লোকেরা অবশ্য ওই বই থেকে তাঁর কোনো উদ্ধৃতি দেয়ার সময় এ কথা যে তিনি বলেছিলেন, তা সযত্নে এড়িয়ে যায়! ইবনে আল-ক্বাত্তা’ন এবং অন্যান্য উলামা আরো বর্ণনা করেন যে বাগদাদে ইবনে তূমা’র্তের উপস্থিতিতে [নোট-৪৫: উদ্ধৃত পুস্তকের ৭৩ পৃষ্ঠা; আল-হিলা’ল আল-মূশিয়া’, ১০৪-১০৫ পৃষ্ঠা; এবং আল-ওয়ানশারীসী কৃত ‘আল-মিয়্যা’র আল-মু’আর্রাব, ১২:১৮৫] ইমাম গাজ্জালী (রহ:) হাত উত্তোলন করে জালিমদের শাসনের পতন কামনা করে দোয়া করেন, যখনই তাদের (বই পোড়ানোর) দুষ্কর্মের সংবাদটি তাঁর কাছে পৌঁছে। এর অল্প কিছু কাল পরেই মরক্কোবাসী মুসলমানবৃন্দ বইটির পুনঃপ্রচলন করেন, যেমনটি বিবৃত করেছেন শায়খুল ইসলাম তক্বীউদ্দীন আল-সুবকী (রহ:) তাঁরই দীর্ঘ এক কবিতায় যার সূচনা হয়েছে এ কথা দ্বারা - “আবূ হা’মিদ! আপনি সত্যি সে (সৎ) জন, যিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য” [নোট-৪৬: ‘তাবাক্বা’ত আল-শা’ফিয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৫৪]

ইবনে আল-সুবকী নিজ এসনাদে বর্ণনা করেন ইমাম আবূল হাসান শা’যিলী (রহ:) হতে এই মর্মে যে, ইবনে হিরযাহম নামের জনৈক মরোক্কীয় শায়খ ‘এহইয়া’ পুস্তকটি পোড়ানোর ইচ্ছা করেছিলেন; এমতাবস্থায় তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)’কে স্বপ্নে দেখেন, যিনি ইমাম গাজ্জালী (রহ:)’র সামনে বইটির প্রশংসা করেন এবং ইবনে হিরযাহম’কে কুৎসা রটনার দায়ে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন। পাঁচটি আঘাতের পরে তাঁকে ক্ষমা করা হয় এবং তিনি জেগে ওঠে বেত্রাঘাতের চিহ্নস্বরূপ (শরীরে) ব্যথা অনুভব করেন। অতঃপর তিনি (’এহইয়া’) বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।[নোট-৪৭: ‘তাবাক্বা’ত আল-শাফিয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৫৮-২৬০]   

’এহইয়া’ গ্রন্থটির সমালোচকদের আরেকটি হৈচৈয়ের বিষয় হলো, এতে জ্বেহাদের প্রসঙ্গে কোনো উপদেশ নিহিত নেই; আর এর লেখক (ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহে আলাইহে) ৪৮৮-৪৯৯ হিজরী সালে নির্জনবাসে ছিলেন; এটা ঠিক এমনি এক সময়ে ঘটেছিলো যখন ক্রুসেডার বাহিনী এনটিওক ও আল-কুদস্ বিধ্বস্ত করেছিলো এবং সহস্র সহস্র মুসলমানকে করেছিলো শহীদ। এই সমালোচকেরা ভুলে যান যে আল-ক্বুরআনে বিধৃত বৃহত্তর জ্বেহাদের (আল-জ্বিহা’দ আল-আকবর) মৌলিক মর্মবাণী হলো, যারা ধর্মকে অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রথমতঃ এবং সর্বাগ্রে ক্বুরআনকে সাথে নিয়ে সংগ্রাম করা:

فَلاَ تُطِعِ ٱلْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَاداً كَبيراً

অর্থ: “সুতরাং তুমি কাফেরদের কথা মান্য কোরো না এবং এ ক্বুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ করো - বড় জ্বিহাদ” (আল-ক্বুরআন, ২৫:৫২)। ড: ইঊসুফ কারাযা‘ভী সমালোচকদের এসব কটাক্ষের জবাবে বলেন:

মহান ইমাম গাজ্জালী (রহ:)’র ওজর হতে পারে এই যে, তাঁর সবচেয়ে জরুরি দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিলো সর্বপ্রথমে তাঁর নিজের সত্তার পরিশুদ্ধি লাভ করা; কেননা কারো ব্যক্তিগত দুর্নীতি-ই বাহ্যিক দূষণের পথ খুলে দেয়, যেমনটি ইঙ্গিত করা হয়েছে সূরা ইসরা’র প্রারম্ভে। ইসরাঈলী জাতি যখনই দুর্নীতিগ্রস্ত হতো এবং দুনিয়ার বুকে দুর্নীতি ছড়াতো, তৎক্ষণাৎ তাদের ওপর তাদের শত্রুরা আধিপত্য বিস্তার করতো। আবার যখনই তারা ভালো কাজ করতো এবং নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতো, অমনি তারা তাদের শত্রুদের ওপর আধিপত্য ফিরে পেতো। ব্যক্তিসত্তা যা সমাজের মর্মবস্তু গঠন করে থাকে, তার পরিশুদ্ধির প্রতি ইমাম গাজ্জালী (রহ:) সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন। কোনো ব্যক্তির পরিশুদ্ধি কেবল তার অন্তর ও চিন্তা-মননের পরিশুদ্ধি দ্বারাই অর্জন করা সম্ভব। স্রেফ ওই পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই তার কর্ম ও আচরণ এবং তার গোটা জীবন উন্নত করা সম্ভব। এটাই সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি, যার প্রতি আল-ক্বুরঅান আমাদেরকে পরিচালিত করে এই ঘোষণা দ্বারা:

  إِنَّ ٱللَّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ

অর্থাৎ, “নিশ্চয় আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তাঁর নেআমতের পরিবর্তন করেন না যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে না” (আল-ক্বুরআন, ১৩:১১)। [নোট-৪৮: আল-ক্বারাযা’ভী প্রণীত ‘আল-ইমা’ম আল-গাজ্জা’লী, ১৭৪ পৃষ্ঠা] 

ওপরে প্রদত্ত বক্তব্যের চেয়েও স্পষ্টভাষী কথা হলো হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:)’র, যাঁকে কিছু লোক জিজ্ঞেস করেছিলো কেন তিনি তাঁর সময়কার দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেননি। তিনি উত্তরে বলেন: “কেননা তারা ইসলামের বাধ্যবাধকতামূলক বিষয়গুলোতে শিথিল বা সেগুলোর অবহেলাকারী” [নোট-৪৯: আল-যাহাবী কর্তৃক নিজ ‘সিয়্যার’ (৭:২০৩) পুস্তকে আল-খুরায়বী হতে উদ্ধৃত]। ইমাম গাজ্জালী (রহ:) স্বয়ং বলেন: “ওযা’য তথা উপদেশের বেলায় আমি নিজেকে এর জন্যে যোগ্য বিবেচনা করি না। কেননা ওয়া’য-নসীহত (উপদেশ) হচ্ছে এক সংশোধন বা পরিশুদ্ধিমূলক কর (যাকা’ত), যার নিসা’ব তথা ন্যূনতম করারোপ-অযোগ্য অঙ্কের পরিমাণ হলো ‘আল-এত্তে’আয (মানে আত্মোপদেশ)। যে ব্যক্তির কোনো ন্যূনতম করারোপ-অযোগ্য অঙ্কের পরিমাণ-ই নেই, তিনি আবার তাঁর কর পরিশোধ করবেন কীভাবে? গাছ যদি বাঁকা হয়, তাহলে তার ছায়া কি সরল বা সোজা হবে?” [নোট-৫০: ইবনে আল-মুলাক্কিন কৃত ‘তাবাক্বা’ত আল-আউলিয়া, ১০৪ পৃষ্ঠা] 

এছাড়া আরো স্পষ্ট প্রমাণ এই যে, ইমাম গাযযালী (রহ:) তাঁর সময়কার মুসলমানদের অধঃপতিত অবস্থার ব্যাপারে নিজেই গভীরভাবে সম্পৃক্ত ও চিন্তিত ছিলেন, যা তাঁর রচিত ‘আল-মুনক্বিয মিনাদ্ দালা’ল’ (ভ্রষ্টতা হতে মুক্তি) পুস্তকের শেষে তিনি আপন ভাষায় ব্যক্ত করেন; নিচে তা উদ্ধৃত করা হলো:

আমি যখন দেখলাম নানা ধরনের মানুষের ঈমান-আক্বীদা সবচেয়ে দুর্বল পর্যায়ে পৌঁছেছে....তখন আমার আত্মা পুরোপুরিভাবে এই ত্রুটির মূল কারণ খোঁজার কাজে প্রবৃত্ত হয়। এমতাবস্থায় এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ করাটা আমার জন্যে পানি পানের চেয়েও সহজতর হয়ে যায়; কেননা আমি তাদের জ্ঞান-বিদ্যা ও পথ সম্পর্কে গভীরভাবে পরিচিত। আমি এখানে বোঝাচ্ছি সূফী-দরবেশবৃন্দ, দার্শনিকবর্গ, আল-তা’লীমিয়্যা তথা বিদ্বান/পণ্ডিত ও সেসব লোক যারা আলেম-উলামা’র বাহ্যিক চিহ্ন বহন করেন। আমি নিশ্চিত হলাম যে এটা (মানে এই দুর্বলতা) নির্দিষ্টভাবে আমাদের যুগেরই এক অবধারিত/অনিবার্য (বাস্তব) পরিস্থিতি। এই অবস্থায় নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা ও নির্জন-বাস (আল-খালওয়া ওয়াল-’উযলা) করাতে আপনাদের কী ফায়দা হবে, যেখানে সংক্রমণ এতোই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে চিকিৎসকরা নিজেরাই অসুস্থ এবং মানবজাতি ধ্বংসের উপক্রম? অতঃপর আমি নিজেকে বল্লাম: তুমি কবে এই মসীবত অপসারণে ও মহা অন্ধকার মোকাবেলায় তোমাকে নিয়োজিত করবে? কিন্তু এ তো হলো দুর্বল মুহূর্ত, যখন মিথ্যের রাজত্ব বহাল। তুমি মানুষদেরকে তাদের মিথ্যে পথগুলো হতে সত্যের দিকে আহ্বান করলে তারা সবাই তোমার বিরোধিতা করবে। তুমি কীভাবে তাদের মোকাবেলা করবে, আবার একই সময়ে তাদের সাথে একত্রে বসবাস করবে? এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে না, শুধুমাত্র কোনো শুভক্ষণ ও ক্ষমতাবান সুলতান ব্যতিরেকে।

অতঃপর ইমাম গাজ্জালী (রহ:) ‘খালওয়া’য় অবস্থান করেন যতোক্ষণ না তিনি ওই ধরনের সুলতানের আলামত দেখতে পান; এর পরপর-ই তিনি বেরিয়ে আসেন এবং তাঁকে (সুলতানকে) পরামর্শ দিতে যান।

শায়খ তকীউদ্দীন সুবকী (রহ:) ‘এহইয়া’ গ্রন্থের নিন্দুকদের সম্পর্কে বলেন:

আমি তাদেরকে ধার্মিক ও একান্ত অনুরক্ত মানুষদের একটি দলের মতো বিবেচনা করি [নোট-৫১: তবে বর্তমানের নিন্দুকবর্গ আগের দিনের ‘ধার্মিক ও একান্ত অনুরক্ত’ নয়, বরঞ্চ অলস নিরর্থক শয়তানী কর্মকাণ্ড ও অনুপকারী জ্ঞান নিয়ে ব্যস্ত, আর এই জগতের ময়লা জঞ্জালের জন্যে লালায়িত], যারা মুসলমানদের সারির মধ্যে কোনো মহান যোদ্ধার আবির্ভাব ও তাঁদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর রণমূর্তি দেখেছেন এবং প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর দ্বারা শত্রুদের পরাস্তকরণ ও ধ্বংসসাধন। অতঃপর শত্রুদের রক্ত-মাখা অবস্থায় তিনি বিজয়ীর বেশে নিজেকে ধুয়ে পরিষ্কার হয়েছেন, আর মুসলমানদের সাথে এবাদতগাহে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু ওই দলটি ভেবেছে তাঁর গায়ে তখনো শত্রুদের কিছু রক্ত লেগে আছে, আর তাই তারা এর জন্যে তাঁর সমালোচনামুখর হয়েছে। [নোট-৫২: ‘তাবাক্বা’ত আল-শাফিয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৫৪]

তাঁর (ইমাম সুবকীর) পুত্র ইবনে আল-সুবকী বলেন:

এই বইটি (এহইয়া) সেসব বইয়ের সারিতে অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর প্রতি মুসলমানদের যত্ন নেয়া উচিত এবং যেগুলোর প্রচার-প্রসার করা উচিত এমনিভাবে যাতে প্রচুর মানুষ তা পড়ে হেদায়াত পান। এই বইটি পড়ে এর কল্যাণে তৎক্ষণাৎ জাগ্রত না হওয়ার ঘটনা বিরল। আল্লাহতা’লা আমাদেরকে সত্যপথে পরিচালিত হবার অন্তর্দৃষ্টি মঞ্জুর করুন এবং সত্য ও আমাদের মাঝে পর্দাস্বরূপ যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তা হতে আমাদের রক্ষা করুন। [নোট-৫৩: ‘তাবাক্বা’ত আল-শা’ফিয়্যা আল-কুবরা’, ৬:২৫৩]    

’এহইয়া’ গ্রন্থখানির সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যাখ্যামূলক বইগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* মুহাদ্দীস মুরতদা আল-যাবীদী’র ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘এতহা’ফ আল-সাআদাত আল-মুত্তাক্বীন শরহ এহইয়া উলূম আল-দ্বীন’ (খোদভীরু তাপসদের অকাতর দান: আল-গাজ্জালী’র রচিত ধর্মীয় জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন সংক্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ’), যা’তে অাল-গাজ্জালী (রহ:)’র উদ্ধৃত হাদীসগুলোর সামগ্রিক দলিলাদি সপ্রমাণ করা হয়েছে। {ইরাক্বী ওহাবী মাহমূদ শুকরী আলূসী (মৃত্যু: ১৩৪২ হিজরী)’র কুৎসা দ্বারা আপনারা প্রতারিত হবেন না। কেননা এই লোক একই নামের অধিকারী ক্বুরঅান-তাফসীরকারক মাহমূদ আলূসী, যিনি নিজ ‘রূহুল মা’আনী’ তাফসীরগ্রন্থ লিখতে ‘এহইয়া’র ওপর নির্ভর করেছেন, তিনি নন।}

* আবদুল ক্বা’দির ইবনে আবদিল্লাহ আল-’আয়দারূস্ বা’ আলাউয়ী প্রণীত ‘তা’রীফ আল-আহএয়া’ বি-ফাদা’ইল আল-এয়াহইয়া’ (এহইয়া পুস্তকের জীবন্ত মহা-কল্যাণের মূল্যায়ন)।

* মোল্লা আলী ক্বা’রী লিখিত ‘শরহ আইন আল-এলম ওয়া যাইন আল-হিলম’ (জ্ঞানের ঝর্না ও সৌন্দর্য-অলঙ্করণের উপলব্ধি) যা (এহইয়া’র) সংস্কৃত কপির ওপর লেখা। আলী ক্বারী সূচনায় লেখেন:

আমি এই ব্যাখ্যামূলক বই লিখেছি এহইয়া পুস্তকের সংস্কৃত কপির ওপর, ইসলামের প্রামাণিকতা ও সৃষ্টিকুলের (বিদ্বানদের) প্রত্যয়নের ভিত্তিতেই; তা এই আশায় যে খোদাজ্ঞানীদের বাণী হতে প্রবাহিত কিছু আশীর্বাদের প্রাপক হতে আমি সক্ষম হবো, অার মাশায়েখ ও দরবেশমণ্ডলীর (বইয়ের) পাতাগুলো হতে যে উপহার ঝরে পড়ে তা দ্বারাও লাভবান হবো, যাতে আমাকে তাঁদের সংখ্যা মাঝে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁদেরই সমাবেশে পুনরুত্থিত করা হয়; যদিও তাঁদের অনুসরণে ও খেদমতে আমার ঘাটতি বিদ্যমান। কেননা আমি তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসার ওপরই নির্ভর করি এবং তাঁদেরই সান্নিধ্যের আকাঙ্ক্ষী হই। [নোট-৫৪: আল-ক্বা’রী রচিত ‘শরহু আইন আল-’এলম’, ১:১]

আল্লাহতা’লা ইমাম গাজ্জালী (রহ:)’র প্রতি করুণাশীল হোন এবং তাঁকে সকল গুণে গুণান্বিত করুন যার সমালোচনায় মুখর তাঁর নিন্দুকবর্গ এবং সেসব লোক, যাদেরকে শয়তান ব্যস্ত রেখেছে আল্লাহর আউলিয়া (রহ:)’র কুৎসা রটনায়; কেননা তারা একেবারে বেহায়া-নির্লজ্জ।

                                           *সমাপ্ত*   


         

Saturday 19 May 2018

মহানবী (দ:) আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নন

- কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন


মহানবী (দ:)-কে আমাদের মতো মানুষ প্রমাণ করতে ওহাবীরা যে আয়াতখানা ব্যবহার করে তার সঠিক ব্যাখ্যা তারা দেয় না। এরশাদ হয়েছে,  قُلْ إِنَّمَآ أَنَاْ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ ‘কুল ইন্নামা আনা বাশারুম্ মিসলুকুম’ (সূরা কাহাফ, ১১০ আয়াত)। অর্থাৎ, ”(হে রাসূল - দ:) বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদেরই উপমায় মানব সুরতসম্পন্ন।” আরবী ‘মিসাল’ (উপমা) শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহতা’লা কথার মাঝে হেকমত বা রহস্য রেখে দিয়েছেন! মিসাল বা তুলনা দেয়া হয় দুটো সত্তার মাঝে কোনো সার্বিক গুণ বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে। যেমন - যায়দের সাহস বাঘের মতো। কিন্তু যায়দ ও বাঘ একই ধরনের সত্তা বা জাত নয়। এমতাবস্থায় উক্ত আয়াতে ’মিসাল’ ব্যবহার করাটা আল্লাহতা’লার মহা গূঢ় রহস্য বলে সাব্যস্ত হয়। আমরা মুসলমান সর্বসাধারণকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করার আহ্বান জানাই। কেননা, আয়াতের শেষাংশে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পার্থক্যকারী জাতী সিফাত তথা সত্তাগত গুণ বর্ণনা করা হয়েছে - ‘আমার কাছে ওহী আসে’ (যা তোমাদের কাছে আসে না)। বুখারী শরীফে একটি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে: “তোমাদের মধ্যে কে আছ আমার মতো?” অর্থাৎ, তিনি কোনোক্রমেই আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নন। এখন মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আরবীতে বলা হয় হাইওয়ানে নাতেক, যার বাংলা হলো বাক্ তথা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী (Man is a rational animal)। এই জাতী সিফাত দ্বারাই আমরা গরু, গাধা, মোষ, উট ইত্যাদি প্রাণী থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। কেউ যদি এই জাতী সিফাতকে না মেনে মানুষকে প্রাণীকুলের সাথে একই কাতারবদ্ধ করে, তাহলে তাকে আমরা গণ্ডমূর্খ ছাড়া আর কিছু বলবো না। মহানবী (দ:)-এর রেসালতের সত্তাগত গুণকে যারা অস্বীকার করে তাঁকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাতারবদ্ধ করে, তাদের বেলায়ও একই সূত্র কার্যকর হবে। তাই সহীহ আকীদা হলো, তিনি আমাদের রাসূল, নূরনবী (দ:)। মানুষ বল্লে কুরআনী রায়ের বিরোধিতা হবে, যেমনটি এরশাদ হয়েছে -  يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَرْفَعُوۤاْ أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ ٱلنَّبِيِّ وَلاَ تَجْهَرُواْ لَهُ بِٱلْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لاَ تَشْعُرُونَ “তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডেকে থাকো, সেভাবে মহানবী (দ:)-কে ডাকবে না।”(সূরা হুজুরাত, ২য় আয়াত)

Saturday 6 January 2018

শানে আউলিয়া

Yasmin Akter Kazi Saifuddin Hossain-এর সাথে on Facebook

 `````````` শানে আউলিয়া ````````` 

মূল: ইয়াসমিন আখতার

★ ওলি আরবী শব্দ। আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওলি'র বহুবচন।
ওলি' অর্থ বন্ধু,মিত্র বা অনুসারি, মুরব্বী, অভিভাবক ।
কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।
(তথ্যসূত্রঃ আরবী-বাংলা অভিধান,প্রকাশনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
★ প্রসিদ্ধ আরবী-ইংরেজী অভিধান “আল-মাওয়ারিদ” অনুসারে ওলি শব্দের অর্থঃ guardian, patron, friend,companion ইত্যাদী।
★ পবিত্র কোরআনে “ওলি” এবং “আউলিয়া” এ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্য বার।
★★★ ওলীগনের অবস্থা সম্পর্কে বোঝার জন্য কিছু মুল্যবান বানী দেখে নেই :
★ "সুফি তিনিই যার নিকট জাহের ও বাতেন (গায়েব) পরিষ্কার"
- বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রা)।।
★ "দরবেশের শান সেটাই যার ঘর থেকে কেউ খালি হাতে ফেরে না"
- সুলতানুল হিন্দ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রা)।।
★ "মানুষ ফকীরী ও দরবেশীর যোগ্য তখনই হয় যখন তার এই অস্থায়ী
জগতের কোন কিছু অবশিষ্ট না থাকে।"
- সুলতানুল হীন্দ খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহঃ)
★ একদিন হযরত খাজা গারিবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (র) কাবার হেরেম শরীফে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এলহাম হইলো যে, “হে মইনুদ্দিন! আমি তোমার উপর সন্তোষ্ট আছি এবং আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম। যাহা ইচ্ছা হয় চাও; আমি তোমাকে প্রদান করিব।” খাজা বাবা আরজ করিলেন, “হে এলাহি! মইনুদ্দিনের সাজরা ভুক্ত মুরিদদের ক্ষমা করুন।” আল্লাহ্‌ তায়ালার হুকুম হইলো, “ হে মইনুদ্দিন, তুমি আমার; তোমার মুরিদের মুরিদ কেয়ামত পর্যন্ত, যাহারা তোমার সাজরা ভুক্ত হইবে, আমি ক্ষমা করিব।” অতঃপর হযরত খাজা গারিবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (র) অধিকাংশ সময়ই বলতেন, “আমার মুরিদ ও আমার মুরিদগণের মুরিদগণ, যাহারা কেয়ামত পর্যন্ত আমার সাজারা ভুক্ত হইবে, উহাদিগকে বেহেশতে না লইয়া মইনুদ্দিন কখনো বেহেশতে কদম রাখিবে না।”
★★★ ওলী কারা?
★ হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেনঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) ও ইবনে আব্বাস সহ অনেক সাহাবায় কেরাম বলেছেন-
```আউলিয়া আল্লাহিল্লাযিনা ইজা রুয়ুযা জুকেরাল্লাহ।```
অর্থঃ " তারাই অলী আল্লাহ যাদের কে দেখলে খোদার কথা স্মরণ হয়।"
★ ভারতের জমীনে সুলতালুন হিন্দ খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) এসে দ্বীন প্রচার করেন তিনি ৯২ লক্ষ্য মানুষকে মুসলমান করেেছে। এখনও খাজা বাবার (রা:) পবিত্র রওজা মোবারকে অনেক বিধর্মী মুসলমান হচ্ছে। কই নামধারী আহলে হাদিস ড জাকির নায়েক কি ১০০০ মুসলমান করতে পেরেছে? এত প্রচার আর এত tv show আর lecture দিয়ে? যেখানে ওলীদের চেহারা দেখেই কত বিধর্মী মুসলমান হয়ে গেছে তার হিসেব নেই।
আউলিয়া কেরাম (মুমিন বান্দাগন) সম্পর্কে আল-কোরান থেকে দেখুন :
★ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওসিলা তালাশ কর।[সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।
(বহু সহিহ হাদিসে আসছে যে সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ (সা) এর উসিলা দিতেন বা ওনারা একে অন্যের উসিলা দিতেন এখন আমরা নবী-রাসুল, সাহাবী, ইমাম, ওলী-আউলিয়ার উসিলা দেই)
★ এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে আল্লাহর হেদায়াতপ্রাপ্ত বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:-
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অনুবাদ- আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ।{সূরা ফাতিহা-৬,৭}
★ আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন –
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ
অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ।{সূরা নিসা-৬৯}
★ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী । [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]
★ হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (ন্যায় বিচারক) রয়েছে তাদের। [সুরা ৪ নিসা: ৫৯]
★ আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯)
★ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
'' নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি (বন্ধু) হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দিয়ে দেয়, এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে।
وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
আর যারা ওলি (বন্ধু) মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী '' ( সূরা আল মায়িদা,আয়াত-৫৫-৫৬)
★ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
মনে রেখো যারা আল্লাহর (ওলি) বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
(সুরা ইউনুছ আয়াত :৬২-৬৪)
★ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’ (সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
★ আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন ।’’
(সূরা আল-বাকারা:২২২)
★ তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’
(সূরা আল ইমরান:৭৬)
★ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন,
وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
"ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন "
অর্থ - আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের (পরহেজগারদের) বন্ধু।
(সূরা জাসিয়া ৪৫:১৯)
★ আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , " তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।'' ( সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩ )
★ যারা (প্রকৃত ভাবে) ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। (সূরা বাকারা ২৫৭)
★ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন-
وَاللّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ
"ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মু'মিনীন"
অর্থ - আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু (অভিভাবক)।
( সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৮ )
★ '' সকল মুমিনই দয়াময় আল্লাহ অলি।'' ( ইমাম তাহাবী ''আল আকীদা'' গ্রন্থ)
★ আল্লাহ কোরআনে পরমান,শয়তান আল্লাহকে বলতেছে,""সকল মানুষকে আমি পথভ্রষ্ঠ করিব,কিন্তু আপনার সে বান্দাদের ব্যতীত যারা তার মধ্যে বিশিষ্ট।
(সূরা হিজর -40)
★ আল্লাহ পাক এবার নিজেই বলছেন, "বাস্তবিক আমার সে বান্দাদের উপর তোমার কতৃর্ত চলবে না।
(সূরা হিজর-43)
★★★ ওলীগন কি সত্যি বিদ্যমান আছেন?
★ হযরত মালিক বিন আনাস (রঃ) বর্ণনা করেন যে,“
হযরত রসূলে করিম (সঃ) ফরমায়েছেন যে, আমাদের জন্য ৪০ জন ওলী আছেন। এঁদের মধ্যে ১২ জন সিরিয়ায় এবং ১৮ জন ইরাকে রয়েছেন”।
★ ইবনে আসাকির (রহ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফু হাদীসটি বর্ণনা করেন। হাদীসের মর্ম মতে, “
** নিশ্চয়ই আল্লাহতালার ৩০০ জন ওলি আল্লাহ রয়েছেন যাদের ক্বলব হযরত আদম (আঃ)-এর ক্বলবের ন্যায়,
** ৪০ জন মুসা (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৭ জন ওলী ঈসা (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৫ জন ওলী জিব্রাইল (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৩ জন ওলী মিকাইল (আঃ)-এর কলবের ন্যায় এবং
** ১ জন ওলী ইস্রাফীল (আঃ)-এর কলবের ন্যায় সৃষ্টি করেছেন।
যখন তাদের মধ্যে একজন পরলোক গমন করেন, তখন তাদের তিনজনের দলের একজনতাঁর স্থানে,
পাঁচজনের দলেন একজন তিনজনের দলে,
সাতজনের দলের একজন পাঁচজনের দলে,
চল্লিশ জনের দলের একজন সাতজনের দলে এবং
তিনশত জনের দলের একজন চল্লিশজনের দলে এবং
কোন একজন সৎকর্ম পরায়ন মুসলমানকে সেই তিনশত দলের মনোনয়ন দান করে তাঁদের সংখ্যা পরিপূর্ণ রাখা হয়”।
তাঁদের ওছিলায় রাসূল করিম (সঃ)-এর উম্মতদেরকে আল্লাহতালা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন।
★ ইমাম হাকিম তিরমিজি বর্ণনা করেছেন যে,
হযরত রাসূলে করিম (সঃ) মানুষের মধ্যে ৪০ জন সিদ্দিক রেখে যান যাঁরা এ পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখেন।
এদের একজনের মৃত্যু হলে আর একজন তাঁর জায়গায় আসেন। এঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আল্লাহতালা মোহর দিয়ে একজন ওলীকে পাঠিয়ে দেন। কিতাবে খতম-আল আউলিয়া
Reference :
(হাকিম তিরমিজি, ৮৯৮ খৃঃ)
(কাসফ আল মাহজুব : আল-হুজবেরী, ১০৬৩ খৃঃ)।
★ “ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থেও ওলীদের প্রশাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ধার্মিক লোক হচ্ছে এ পৃথিবীর ভিত্তি। ধার্মিক লোক না থাকলে পৃথিবীর কল্যাণ লোপ পাবে। পৃথিবীতে কমপক্ষে ত্রিশজন ধার্মিক লোক আছেন, তাঁরা না থাকলে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সকল ধর্মগ্রন্থের কোন সংস্করণে দেখায় যায় যে, পৃথিবীতে ৪৫ জন ধার্মিক লোক আছেন যাঁরা এ পৃথিবীকে টিকে থাকতে সাহায্য করেন। এঁদের মধ্যে বেবিলোনে রয়েছেন ত্রিশজন, প্যালেষ্টাইনে ১৫ জন। পরবর্তীতে এ সকল ধর্মের বিশেষজ্ঞগণ এসকল ধার্মিক ব্যক্তির সংখ্যা ৩৬ জন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এ সকল ধর্মীয় পন্ডিতগণ মনে করেন যে, এ সকল ধার্মিক লোক না থাকলে পৃথিবী থাকবে না এবং এঁদের কেউ মৃত্যু বরণ করলে তাঁর জায়গায় অন্যজন চলে আসবেন।
(আদি পুস্তক:৯; Old Testament (Midas Version)।
★ জুন্নুন মিশরী (রঃ)-এর মতে, পৃথিবীতে ৩০০ জন ওলী আছেন। এঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন গাউছ বা মূল খুঁটি। তাঁকে একটি বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুর সঙ্গে তুলনা করা যায়। তিনিই আকর্ষণ ও বিকর্ষণের কেন্দ্র।
★ হযরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ) বলেন,“
হযরত রাসূলে করিম (সঃ)-এর প্রতিনিধি ছাড়া এ পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন থাকেন যাঁকে কুতুব বা খুঁটি বলা যায়। কোন এক যুগে এবং কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক গুণাবলীর পরিপূর্ণতা থাকে এবং তাঁকে সাধারণত ছাহেবে জমান বলা হয়।”
★ হযরত মুহীউদ্দিন আরবী (রঃ)-এর মতে, “গাউছ হলেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রাণকেন্দ্র। তাঁর নিকট থেকে চতুর্দিকে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সমস্ত জীবের প্রাণে প্রবেশ করে। গাউছকে দু’জন ইমাম প্রতিনিয়ত সাহায্য করেন। গাউছের পরে হলেন চারজন আউতাদ বা স্তম্ভ। আউতাদের অধীনে আছেন সাতজন আবদাল। এঁদের কাজ হলো আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করা। এঁদের পরে রয়েছেন বারজন নুকাবা বা মনোনত পরহেজগার ব্যক্তি। এসকল নুকাবাগণ মানুষের অন্তর্নিহিত চিন্তসমূহ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন। এদের পরে আরও আটজন নুকাপ আছেন যাঁদের মধ্যে মহান আল্লাহতালা আট রকমের গুণ দিয়েছেন। সবার শেষে আছেন হুয়ারী বা শিষ্যগণ এবং তাঁদের পশ্চাতে রয়েছেন আরও ৪০ জন লোক”। হযরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ)-এর মতে,“পয়গম্বারদের মধ্যে যেমন শেষ পয়গাম্বর আছেন, ওলীদের মধ্যেও তেমনি শেষ ওলী রয়েছেন যার কাছে সীলমোহর রয়েছে”।তাঁর মতে “দুটি সীল মোহর রয়েছে- একটি হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে এবং অপরটি সর্বশ্রেষ্ঠ ওলীর সঙ্গে”।
★ প্রখ্যাত সুফী আশ শাধিলী বলেন, “প্রত্যেক পীর হলে নিজ নিজ ত্বরিকার কুতুব, খুঁটি বা গাউছ হলেন একজন”। (Alnafakhir al-Aliya Fi-Alma-Atnir-Osh-Shadhiliya by Ahmad-Ibu-Ayas)।
★ পল বি, ফেন্টনের মতে, “বহু সুফী সাধক তাঁদের পীরকে গাউছুল আযম বা মূল খুঁটি বলে দাবী করেছেন। যেহেতু অনেক সময় গাউছুল আযম দৃশ্যমান নহেন। এ অবস্থায় একটি সময়গত মূল খুঁটি (কুতুবুজজ্বমান) ধারণার সৃষ্টি হয়েছে”। (Journal of the Muhiddin-Ibu-Arabi Society, Vol.X,1991, Oxford University Press Ltd.)
★★★ ওলীদের কাছে আছে ইলমে লাদ্দুনী বা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান :
★ আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদেরকে (আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে) জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
★ কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।(আল-হাদিস)
★ “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছো, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)
★ “নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি বরং তাঁরা ইল্‌মে দ্বীন রেখে গিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো।”
(আহ্‌মদ, তিরমিযী)
★ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“ইল্‌ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বালবী ইল্‌ম (ইল্‌মে তাছাউফ), যা উপকারী ইল্‌ম। অপরটি হচ্ছে- জবানি ইল্‌ম (ইল্‌মে ফিক্বাহ), যা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।”
(দারেমী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত)
“আলিমগণ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।”
(তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্‌, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্‌ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্‌ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্‌ শাজী, বজলুল মাজহুদ ইত্যাদি)
Note: কাদের নিকট সেই সত্যিকারের ইলমে লাদ্দুনী রয়েছে? যারা আল্লাহর ওলী তারাই তো প্রকৃত আলিম। তাই নয় কি?
★★★ ওলীগনের কারামত :
★ আল-কোরআনে আসহাবে কাহাফ এর ওলীগনের কথা বলা হয়েছে তারা শত শত ঘুমন্ত ছিল তাও উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা আসহাবে কাহাফ)
★ হযরত মরিয়ম আঃ নবী ছিলেন না। কিন্তু কারামত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে অমৌসুমি ফল দান করেছিলেন। কুরআনে এসেছে :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ [٣:٣٧]
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন “মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?” তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” {সূরা আলে ইমরান-৩৭}
★ এমনিভাবে সুলাইমান আঃ এর জমানায় মুহুর্তের মাঝে ইয়ামান থেকে আসিফ বিন বারখিয়া নামক ব্যক্তির রানী বিলকিসের সিংহাসন নিয়ে আসাও ওলীদের কারামত সত্য হবার প্রমাণ। কারণ আসিফ বিন বারখিয়া কোন নবী ছিল না।
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ [٢٧:٤٠]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। {সুরা নামল-৩৭}
★★★ ওলীরা কি ওফাত বরন করার পর জীবিত নাকি মৃত ? সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
★ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:-
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚبَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
যারা আল্লাহ্‌ পাকের রাস্তায় শহীদ হয়েছেন তাদের কে তুমি মৃত মনে করো
না বরং তারা তাঁদের নিজেদের রব এর নিকট জীবিত ও রিজিক প্রাপ্ত।"(সুরা আলইমরান ১৬৯)
★ আরো ইরশাদ করেন :
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ (سورة البقرة-154
"আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তারা জীবিত। তবেতা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।"
(সূরা বাকারা-১৫৪)
★ 2:154,3:169 আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে,
শহীদগণ কবরে জীবিত। আর এটা বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নবীগণও কবরে জীবিত। কেননা নবীগণের মর্যাদা শহীদদের তুলনায় অনেক উর্দ্ধে। সুতরাং শহীদগণ যদি কবরে জীবিত থাকেন,নবীগণ ও কবরে জীবিত । এটা ইমাম তিরমিযী(র) ও ইমাম বাইহাকী(র) সহীহ হাদিস দারা প্রমাণ করেছেন।
(Nayl al-Awtar, Volume 003, Page No. 82)(Fath al-Bari>sarhe bukhari, Volume 006: Page No. 379)
Note : ওলীগন আল্লাহর রাস্তায় সারা জীবন কাটায় তাই তাদেরও শহিদ বলা যায় । অপরদিকে তারা কোন কোন ক্ষেত্রে শহিদের চেয়েও মর্যাদাবান। যেখানে দ্বীনের একজন প্রকৃত আলিমকেও শহিদের মর্যাদার সাথে তুলনা হয়েছে।
★ আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি।
(সূরা আল হাদীদ: ১৯)
★ “এবং যারা আল্লাহর পথে গমন করেছে এবং পরে নিহত হয়েছে অথবা (স্বাভাবিক) মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহতালা অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবে এবং তিনিইতো (আল্লাহতালা) সর্বোৎকৃষ্ট জীবিকা দাতা। তিনি তাদেরকে (পরকালে) অবশ্যই এমন জায়গায় স্থান দেবেন যা তাঁরা পছন্দ করবে এবং আল্লাহতো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল”। (সুরা হাজ্জ্ব, আয়াত: ৫৮-৫৯)
★ ওলী-আল্লাহগণের বিরোধিতাকারীদের হুশিয়ারী দিয়ে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ সাবধান করে দিয়েছেন।
- ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﻯ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻓَﻘَﺪْ
ﺁﺫَﻧْﺘُﻪُ ﺑِﺎﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﻘَﺮَّﺏَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻤَّﺎ
ﺍﻓْﺘَﺮَﺿْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻳَﺘَﻘَﺮَّﺏُ ﺇِﻟَﻲَّ ﺑِﺎﻟﻨَّﻮَﺍﻓِﻞِ ﺣَﺘَّﻰ
ﺃُﺣِﺒَّﻪُ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻛُﻨْﺖُ ﺳَﻤْﻌَﻪُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﻤَﻊُ ﺑِﻪِ ﻭَﺑَﺼَﺮَﻩُ ﺍﻟَّﺬِﻱ
ﻳُﺒْﺼِﺮُ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﺒْﻄِﺶُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺇِﻥْ
ﺳَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻟَﺄُﻋْﻄِﻴَﻨَّﻪُ ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺍﺳْﺘَﻌَﺎﺫَﻧِﻲ ﻟَﺄُﻋِﻴﺬَﻧَّﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺮَﺩَّﺩْﺕُ ﻋَﻦْ
ﺷَﻲْﺀٍ ﺃَﻧَﺎ ﻓَﺎﻋِﻠُﻪُ ﺗَﺮَﺩُّﺩِﻱ ﻋَﻦْ ﻧَﻔْﺲِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻭَﺃَﻧَﺎ
ﺃَﻛْﺮَﻩُ ﻣَﺴَﺎﺀَﺗَﻪُ .
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।
``` রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার
অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি ।
যেসব অধিক প্রিয় কাজ সমুহের দ্বারা বান্দা আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে সেগুলো হল ফরজ কাজসমুহ।
অত:পর আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমে আমার আরো এত নিকটবর্তী হতে থাকে যতক্ষন না আমি তাকে ভালবাসি ,
তখন আমি তার শ্রবন ইন্দ্রীয় হয়ে যাই
যা দ্বারা সে শোনে !
তার দর্শন ইন্দ্রীয় হয়ে যাই,
যা দ্বারা সে দেখে !
তার হাত হয়ে যাই,
যা দ্বারা সে ধরে এবং
তার পা হয়ে যাই,
যা দিয়ে সে চলাফেরা করে !
যদি সে আমার কাছে কিছু প্রর্থনা করে,
আমি তাকে তাই দেই।
যদি সে আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে,
তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই।
আমি কোনকিছু করার ব্যপারে দিধ্যাবোধ করি না,
যতটা না মুমিনের রুহ কবজের (নেয়ার) ব্যপারে করি এজন্য যে
সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তাকে অসন্তুষ্ট করতে অপছন্দ করি।
Reference :
★ বুখারী শরিফঃ ৬৫০২
★ মেশকাত শরীফ-১৯৭ পৃষ্ঠা
★ হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্নিত,
তিনি বলেন,
আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত মূছা আঃ ও হযরত
হারুন আঃ কে ফেরাউনের নিকট পাঠায় , তখন
আল্লাহ তায়ালা তাদেরঁকে বলেন,
ফেরাউনের দুনিয়ার সম্মান ও শান শওকত যেন তোমাদেরকে
অবাগ না করে, খেয়াল রাখ এইসব জিনিষের প্রতি তোমাদের দৃষ্টি যাতে না যায়, এইসব কিছু দুনিয়াতে সুখ ও আরাম আয়েশের অলংকার মাত্র, আমি (আল্লাহ) যদি তোমাদেরকে দুনিয়ার আরাম আয়েশ, সুখ- শান্তি , ও প্রাচুয্যের বালা খানায় রাখতে
ইচ্ছা পোষন করতাম তবে ফেরাউন তোমাদের বালা খানার
সৌন্দয্য দেখে নিবাক হয়ে যেত, কিন্তু আমি তোমারা দুজনকে
ইহা থেকে বাচিয়েঁ রেখেছি। কেননা আমি আমার বন্ধুদের সাথে
এই রকমই করি, আগেও আমার ওলিদের বা বন্ধুদের জন্য
আমি এই রকম ( তোমরা যে অবস্থায়) অবস্থা পছন্দ করেছি,
আমি (আল্লাহ) তাদেরকে (ওলিদের) দুনিয়ার আরাম আয়েশ,
সুখ- শান্তি , ও প্রাচুয্যের বালা খানা থেকে এমনভাবে দূরে
রেখেছি রাখাল তার ছাগল গুলোকে বিপদজনক শস্য মাঠ
থেকে দূরে রাখে, দয়াময় রাখাল তার উঠ গুলোকে নিরাপদে
রাখে, আমার ওলীদের সাথে আমার এই বিনিময় এই কারনে
যে আমার কাছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই তা নয়, বরংচ পরকালে
তারা যেন আমার কাছ থেকে পরিপূন সম্মান ও অসীম
নেয়ামত অর্জন করে নেয়, দুনিয়ার এই অবস্থা, মর্যাদা ও
প্রাচুর্য পরকালের তুলনায় কিছু না। দুনিয়াতে মোরাকাবা ও
মোশাহেদা বা আমাকে (আল্লাহকে) পাওয়ার ধ্যান ই হল আমার ওলিদের জন্য প্রাচুর্য্য , তাদের পোশাক বা চেনার চিহ্ন হচ্ছে
তারা শান্তিকামি ও মাহবুবের ধ্যানে মগ্ন। তাদের চেহেরার উপর
আল্লাহর ইবাদতে মশগুলের কারনে সিজদার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়, নিঃসন্দেহে তারাই হচ্ছে আমার সত্যিকারের বন্ধু।
(হে মুমিন গন) যখন তোমরা তাদের সাক্ষাত পাবে , তাদের
প্রতি সর্বোচ্চ তাজিমের (সম্মানের) সাথে সাক্ষাত কর,
তোমার জিব্বাহ ও অন্তরকে তাদের ক্ষেত্রে সাবধান রাখ।
এবং জেনে রাখ ( হে মানব সম্প্রদায়) যে কেও আমার ওলিকে ঘৃনা করল অথবা আমার ওলির সম্মানকে হালকা মনে করল
সে যেন আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করল !!
** সে যুদ্ধের জন্য আমার সামনে এগিয়ে আসল,
আমি (আল্লাহ) আমার বন্ধুদের সাহায্যের ক্ষেত্রে
খুব দ্রুতগামি !
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল, সে কি মনে করে
সে আমার সামনে যুদ্ধের জন্যে দাডাঁতে পারবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সে কি মনে করে সে আমাকে দুশমনির খাতিরে অক্ষম করে দেবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সেকি মনে করে
সে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সেকি মনে করে
সে আমাকে পরাজিত করবে? কক্ষনো নয়।
আমি আমার বন্ধুদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে পরিপুর্ন সফলতা দান কারি, তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমি নিজেই সাহায্যকারী।
Reference :
From : হাফেজ আবু নাঈম আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-ইসফাহানী:
Book : “হিলয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল আছফিয়াহ”
Volume : ১খন্ড, পৃষ্টা নং- ১১-১২
★★★ ওলীগনের শাফায়াত সম্পর্কে :
★ “যে দয়াময় আ̂ল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ, সে ব্যাতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। [সুরা ১৯ মারঈয়াম: ৮৭]
(I) আল্লাহর একজন বিশিষ্ট ওলী ছিলেন ওয়াইছ করনী (রহ)। তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ী। তার সম্পর্কে কিছু হাদিস :
হযরত ওমর (রা.) বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে বলিতে শুনিয়াছি, নিশ্চয়ই , অনুগতদিগের (খায়রুত্তাবেয়ীন) মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাহার নাম উয়ায়ছ। তাহার মা আছে এবং তাহার শরীরে একটি শ্বেত চিহ্ন আছে। তোমরা (তাহার সংগে দেখা করিয়া) অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে।
(মুসলিম শরীফ ৬২৬০/ মিশকাত ৬০০৬)
হযরত উমর বিন খাত্তাব হইতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূলﷺ বলিয়াছেন, “নিশ্চয়ই ইয়েমেন হইতে তোমাদের নিকট এক লোক আসিবে যে উয়ায়ছ নামে অবিহীত। সে তাহার মাতার জন্য ইয়েমেন ত্যাগ করিতে পারে না। তাহার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাকে ডাকিল, তাহার শ্বেত রোগ এক দিরহাম পর্যন্ত ব্যতীত দূর হইয়া গেল। তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাহার সাক্ষাত পাও তাহাকে অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে ।
(মুসলিম শরীফ ৬২৫৯/ মিশকাত শরীফ ৬০০৬)
রাসূলল্লাহ হযরত ওমরকে বলিলেন, উয়ায়ছ ইবনে আমর মুজাহিদগণের সাহায্যার্থে আগমনকারী ইয়েমেনবাসীদের সহিত তোমাদের নিকট আসিবে। সে মুজার গোত্রের কারণ শাখার অন্তর্ভুক্ত। তাহার ধবল রোগ ছিল। (আল্লাহর নিকট দোয়া করিবার কারণে) এক দিরহাম পরিমান স্থান ব্যতীত সে উহা হইতে আরোগ্য লাভ করে। তাহার মাতা আছে। সে তাহার মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে। সে আল্লাহর নিকট শপথ করিলে, আল্লাহ তাহা পূরণ করে। তাহার দ্বারা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা করাইতে সক্ষম হইলে তাহা করাইবে।
(মিশকাত শরীফ)
 হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের
এক বিশেষ ওলী আল্লাহর সুপারিশ
করা সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল
জাদয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের
এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামীম
গোত্রের লোক সংখ্যা হতেও অধিক
লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ,
সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ
৫৩৬১, সুনানে দারেমী]
নোট : এই হাদিসটি অনেক উলামায়ে কেরাম ""আশিকে রাসুল (সা) বিখ্যাত তাবেযী ওয়াইস করনী (রহ) এর কথা বলে উল্লেখ করেছেন। নিচে বর্নিত হয়েছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন," হযরত উয়ায়ছ করণীর শাফায়াতে রাবী ও মুজার গোত্রের মেষের পশম সমপরিমান লোক বেহেশতে যাইবে।
(মিশকাত শরীফ)
হযরত আবি মাসউদ-উল-আনসারী হতে বর্নিতঃ রাসূল ﷺ বলেছেন,
“আমার উম্মতের ভিতর এক ব্যক্তি, যাহাকে লোকে উয়ায়েছ ইবনে আবদুল্লাহ্ করণী বলে, তাহার প্রার্থনায় অবশ্যই রাবিয়া ও মুজার এই দুই গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যক গুনাহ্গার উম্মতের গুনাহ্ মাফ হইবে।”
(শওয়াহেদুন-নবুওয়াত/মছনবী রহীম)
(II)  হযরত আনাস (রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ফরমায়েছেন,
ﻳﺸﻔﻊ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺛﻼﺛﺔ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﺛﻢ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ
ﺛﻢ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ
অর্থ: কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর
লোক সুপারিশ করবে।
(১) নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ।
(২) উলামায়ে কিরাম (বা আউলিয়া কেরাম)
রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৩) শহীদ গন।"
[সুনানে ইবনে মাজাহ
শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫৩৭০]
নোট: পুর্ববর্তী হক্কানী উলামায়ে কেরাম (রহ) গন সব আল্লাহর ওলী ছিলেন।
আর ওলীগনের মর্যাদা আর ক্ষমতা উলামায়ে কেরাম থেকে অনেক বেশি।
এই হাদিসটার সনদ দিতে গিয়ে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ) বলেন," হাশরের মাঠে পিয়ারা নবীর নির্দেশে নবীগণ তাদের উম্মতদের, আউলিয়াগণ তাদের মুরিদদের এবং শহীদগণ তাদের মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে।
(মসনদে গোয়ারভী শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬২)
অপর হাদিসে আছে :-
ﻭ ﺍﺫﺍ ﺭﺃﻭﺍ ﺍﻧﻬﻢ ﻗﺪ ﻧﺠﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﺧﻮﺍﻧﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﻌﻤﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﺍﺫﻫﺒﻮﺍ ﻓﻤﻦ ﻭﺟﺪﺗﻢ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﺜﻘﺎﻝ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻳﻤﺎﻥ ﻓﺎﺣﺮﺣﻮﻩ ﻭ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻮﺭﻫﻢ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﺎﺗﻮﻧﻬﻢ ﻭﺑﻌﻀﻬﻢ ﻗﺪ ﻏﺎﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺍﻟﻲ ﻗﺪﻣﻪ ﻭ ﺍﻟﻲ ﺍﻧﺼﺎﻑ ﺳﺎﻗﻪ ﻓﻴﺨﺮﺟﻮﻥ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﻮﺍ
যখন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল , তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে "হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত , আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সত্কাজ করত "। তখন আল্লাহ বলবেন "যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস । তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে " । অতঃপর তারা (অলীগণ) সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন । এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে । এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে ।
(সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১)
 সহিহ হাদিসে বর্নিত :-
ﻓﻮﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻣﺎ ﻣﻮﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﺑﺎﺷﺪ ﻣﻨﺎﺷﺪﺓ ﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﺳﺘﻘﺼﺎﺀ ﺍﻟﺤﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﻣﻨﻴﻦ ﻟﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻻﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﺤﺠﻮﻥ ﻓﻴﻘﺎﻝ ﻟﻬﻢ ﺍﺣﺮﺟﻮﺍ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﺘﻢ
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ (ওলীগন) তাদের ঐ সমস্ত মুমীন ভাইদের জন্য শুপারিস করবে যারা জাহান্নামে পড়ে থাকবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আল্লাহর দরবারে এমনভাবে আবদারের পর আবদার করতে থাকবে, যে রকম আবদার কোন ব্যক্তি তার নিজ হক আদায়ের জন্যও সাধারণত করে না । এবং তারা আল্লাহর দরবারে আবেদন করবেন হে আমাদের রব এ সমস্ত লোক আমাদের সাথে রোজা রাখত, নামাজ পড়ত, হজ্ব করত ।
(সহীহ মুসলিম । খন্ড ১
পৃষ্ঠা ১০৩ হাদিস ১৮৩)
আরো বর্নিত আছে :-
ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺽ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻗﺎﻻﻥ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻲ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻔﺌﺎﻡ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻘﺒﻴﻠﺔ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻌﺼﺒﺔ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﺣﺘﻲ ﻳﺪﺧﻠﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ
হযরত আবূ সাঈদ রঃ হতে বর্ণিত , রাসুল দঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আছেন যারা একটি বিরাট দল এর (বা তাদের সকল সমর্থক ও অনুসারীদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছেন যারা একটি দলের (বা আত্তীয় স্বজনদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছে যারা এক এক জনের জন্য সুপারিশ করবে । এভাবে তারা সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
[আল হাদিস, তিরমীযি খণ্ড ২ পৃঃ ৬৭ , হাদিস ২৪৪০,
মিশকাত শরীফ ৫৩২৬]

**সমাপ্ত**
[সম্পাদনা করা হয়নি]