Thursday, 13 February 2014

আহলুস্ সুন্নাহ’র দৃষ্টিতে মীলাদুন্নবী (দ:)





[কুরআন ও হাদীসের আলোকে মহানবী (দ:)-এর বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন দিবস) উদযাপনের বৈধতা ও এতদসংক্রান্ত ইসলামী বিধান]

এটি সত্য যে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সময় শয়তান ও তার সহযোগীরা ছাড়া সবাই দিনটিকে উদযাপন করেন; কেননা, শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল – প্রথমবার যখন আল্লাহতা’লা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেশ্ত থেকে বের করে দেয়া হয়; তৃতীয়বার যখন মহানবী (দ:)-এর বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমন হয়; এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা নাযেল তথা অবতীর্ণ হয় [ইবনে কাসীর কৃত আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া, ২য় খণ্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা]।
নোট: ওপরের বর্ণনা একটি ছোট-খাটো ভূমিকামাত্র। পাঠ করা জরুরি কাতে’য়ী তথা প্রামাণিক ও সুস্পষ্ট দলিল-আদিল্লা নিচে পেশ করা হবে, ইনশা’আল্লাহ।
মুসলমান সর্বসাধারণ মহানবী (দ:)-এর বেলাদত দিবস খুশি মনে উদযাপন করেন এই কারণে যে আল্লাহ পাক তাঁর ‘ফযল (অনুগ্রহ) ও রহমত (করুণা)’ প্রাপ্তিতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন খুশি হতে। নিচের লেখনীর ভিত্তি হবে
() কুরআন মজীদ ও এর তাফসীর (ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ);
() হাদীস শাস্ত্র;
() প্রসিদ্ধ আলেম-উলেমা ও ফেকাহবিদদের বক্তব্য; এবং
() মীলাদুন্নবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপত্তির খণ্ডন।
ক.  আল-কুরআন ওয়াল ফুরকান ও এর তাফসীরের মাধ্যমে উপলব্ধি
দলিল নং ১
আল্লাহতা’লা তাঁর পাক কালামে বলেন,
”(হে রাসূল) আপনি বলুন: আল্লাহর ফযল (অনুগ্রহ) ও তাঁরই রহমত (দয়া/করুণা), তাতে তাদের (মো’মেন মুসলমানদের) খুশি প্রকাশ করা উচিত। তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলতের চেয়েও শ্রেয়।” (সূরা ইউনুস, ৫৮ আয়াত)
কেউ কেউ হয়তো কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে ভাবতে পারেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর ধরণীর বুকে শুভাগমন কোনো খোদায়ী করুণা নয়; আরও কেউ কেউ মিথ্যেভাবে আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডারকে সীমাবদ্ধ করতে চান এই বলে যে, আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ‘রহমত’ দ্বারা হুযূর পূর নূর (দ:)-কে উদ্দেশ্য করা হয় নি, আর তাই আমাদের খুশি/আনন্দ উদযাপন করা উচিত নয়। এমতাবস্থায় এই সমস্ত লোকদের জন্যে সেরা জবাব হবে কুরআনের আয়াত দ্বারা আয়াতের তাফসীর করা।
আল-কুরআনের অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
”(হে রাসূল), আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে।” (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)
অতএব, সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে মহানবী (দ:)-এর ধরণীর বুকে শুভাগমন কেবল আমাদের জন্যেই রহমত নয়, বরং আল্লাহ পাকের সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যেও তা রহমত। তাই কুরআনের (১০:৫৮) নির্দেশ মোতাবেক আমাদের তা উদযাপন করতে হবে।
ইমাম ইবনুল জাওযী নিজ ‘তাফসীর’গ্রন্থে সূরা ইউনূসের উক্ত ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আদ্ দাহাক হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: এই আয়াতে ‘ফযল’ বলতে জ্ঞান (অর্থাৎ, আল-কুরআন ও তাওহীদ)-কে বুঝিয়েছে; আর ‘রহমত’ বলতে মহানবী (দ:)-কে বোঝানো হয়েছে।” [ইবনে জাওযী কৃত ‘যা’দ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর’, ৪:৪০]
ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী এ সম্পর্কে বলেন, “ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” [তাফসীর আল-বাহর আল-মুহীত, ৫:১৭১]
ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
আল্লামা আলূসী  ব্যাখ্যা করেন যে এমন কি ‘ফযল’ (অনুগ্রহ) বলতেও হযূর পাক (দ:)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে আল-খতীব ও ইবনে আসাকির থেকে যে আয়াতোক্ত ‘ফযল’ হলেন মহানবী (দ:)। [আলূসী রচিত রূহুল মাআনী, ১১:১৪১]



দলিল নং ২  


কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে,



”এটি আল্লাহর অনুগ্রহ; যাকে চান দান করেন; এবং আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।” (সূরা জুমু’আহ্, ৪ আয়াত)



আয়াতের শেষাংশে ‘আল্লাহ বড় (অশেষ) অনুগ্রহশীল’ বাক্যটিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) ব্যাখ্যা করেন এভাবে:


আল্লাহর অনুগ্রহ অফুরন্ত, যেহেতু তিনি মহানবী (দ:)-কে ইসলাম ও নবুয়্যত দান করেছেন; এও বলা হয়েছে যে এর মানে ঈমানদারদের প্রতি তিনি ইসলামের নেয়ামত বর্ষণ করেছেন। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে এর অর্থ তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি তিনি অনুগ্রহ করেছেন মহানবী (দ:) এবং কেতাব (কুরআন) প্রেরণ করে। [তানবির আল-মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস]



দলিল নং ৩ 



হযরত এয়াহইয়া (আ:) সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,



”অতএব, শান্তি তাঁরই প্রতি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলন)-প্রাপ্ত হবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা মরঈয়ম, ১৫ আয়াত)

প্রমাণিত হলো যে আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের বেলাদত তথা ধরণীতে শুভাগমনের দিনগুলো আল্লাহর দৃষ্টিতে ‘শান্তিময়’।



দলিল নং ৪



আল্লাহতা’লা তাঁর পাক কালামে বলেন,


”আর নিশ্চয় আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাদি সহকারে প্রেরণ করেছি (এ কথা বলে) ‘আপন সম্প্রদায়কে অন্ধকার রাশি থেকে আলোতে নিয়ে আসো এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দাও’! নিশ্চয় সেটির মধ্যে নিদর্শনাদি রয়েছে অত্যন্ত ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে।” (সূরা ইবরাহীম, ৫ আয়াত)

আয়াতোক্ত আল্লাহর ’আইয়াম’ (দিবস) মানে কী? ইমাম বায়হাকী নিজ ‘শুআব আল-ঈমান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আল্লাহর ’আইয়াম’ বা দিনগুলো হলো সে সব দিন যা’তে তাঁর ‘নেয়ামত ও নিদর্শনাদি’ প্রকাশ পেয়েছে। [তাফসীর-এ-রূহুল মা’আনী, সূরা ইব্রাহীম, ৫ আয়াত]

আহাদীস থেকে এস্তাদলাল

দলিল নং ১

বই-০০৬, হাদীস নম্বর-২৬০৬ (সহীহ মুসলিম)

হযরত আবু কাতাদা আনসারী (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:)-কে সোমবার দিন তিনি কেন রোযা রাখেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়; এর জবাবে তিনি এরশাদ ফরমান: এই দিন আমার বেলাদত (ধরণীতে শুভাগমন) হয়েছিল এবং এই দিনে আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়। 

এই হাদীসটি আরও বর্ণনা করেন ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘সুনান আল-কুবরা’ (৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০০, হাদীস নং ৮১৮২, ৮২৫৯) গ্রন্থে, ইমাম নাসাঈ নিজ ‘সুনান’ বইয়ে এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল স্বরচিত ’মুসনাদ’ পুস্তকে।

এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁর বেলাদত দিবসের ব্যাপারে খুব খুশি ছিলেন এবং তাই তিনি (আল্লাহর কাছে) কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে রোযা রেখেছিলেন। রোযা রাখা এক ধরনের এবাদত; সুতরাং যে কোনো ধরনের এবাদত পালন করে এই দিনকে উদযাপন করা যায়। কেউ রোযা রাখতেও পারেন, আবার (মীলাদের) মাহফিল (সমাবেশ) করতেও পারেন; কেননা এগুলোর সবই এবাদত।

দলিল নং ২ 

খণ্ড-৭, বই-৬২, হাদীস নম্বর-৩৮ (সহীহ বুখারী)       
  
উরসা (রা:) বর্ণনা করেন: সোওয়াইবা (রা:) আবু লাহাবের মুক্ত করে দেয়া ক্রীতদাসী ছিলেন, যিনি পরবর্তীকালে মহানবী (দ:)-কে বুকের দুধ খাইয়েছিলেন (তাঁর মায়ের ইন্তেকালের পরে)। আবু লাহাব মারা যাবার পরে তার এক আত্মীয় স্বপ্নে তাকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কেমন আচরণ পেলে?” সে উত্তরে বল্লো, “তোমাদের ত্যাগ করার পরে আমি কোনো নিষ্কৃতি পাই নি, তবে প্রতি সোমবার আমার এই আঙ্গুল থেকে খাবার জন্যে পানি প্রবাহিত হয়; আর এটি এই জন্যে যে আমি (তা দ্বারা) সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম।” 

সোয়াইবিয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের বেলাদতের সুসংবাদ আবু লাহাবের কাছে নিয়ে এলে সে ওই আঙ্গুলের ইশারায় তাঁকে মুক্ত করে দেয়। সর্বনিকৃষ্ট কাফের ও ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রুকেও এই কারণে তার আযাব ভোগের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় সে সকল মো’মেন মুসলমানের উচ্চ মর্যাদার কথা চিন্তা করুন, যাঁরা খুশি মনে হুযূর পাক (দ:)-এর মওলিদ উদযাপন করেছেন এবং করছেন। এই হাদীসের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হবে উলামাবৃন্দের রায়-সম্বলিত শেষ অধ্যায়ে।

দলিল নং ৩ 

খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪৭, হাদীস নম্বর-১১৩০ (সহীহ মুসলিম, দারুল কুতাব আল-ইলমিয়্যাহ)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (দ:) মদীনায় এসে দেখেন যে সেখানকার ইহুদীরা ১০ই মুহররম তারিখে রোযা রাখছেন। এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তরে বলেন, ‘এই দিনটিতেই মূসা (আ:) ও বনী ইসরাইল বংশ ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেন। তাই আমরা এর মহিমা সমুন্নত রাখতে রোযা পালন করে থাকি।’ অতঃপর মহানবী (দ:) বলেন, ‘মূসা (আ:)-এর ওপর তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি হক্কদার।’ এমতাবস্থায় তিনি মুসলমানদেরকে রোযা রাখার আদেশ করেন।

হযরত মূসা (আ:)-এর সম্মানার্থে যদি ইহুদীরা তাঁর স্মরণে দিবস পালন করতে পারেন, তাহলে আমরা মুসলমান সমাজ মহানবী (দ:) যেদিন এ দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছিলেন সে দিনটিকে সম্মান করার ও তা পালন করার ক্ষেত্রে আরও বেশি অধিকার সংরক্ষণ করি। এটি ওপরের হাদীস থেকে উলামা-এ-কেরামের নেয়া সর্বজন স্বীকৃত সিদ্ধান্ত, যা তাঁরা দুটো বিষয়ের মধ্যে তুলনার ভিত্তিতে গ্রহণ করেছেন। এই বিষয়ে শেষ অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে।

দলিল নং ৪ 

খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নম্বর-২৪১, হাদীস নম্বর-৪৪৮ (সুনান আন্ নাসাঈ) 

হযরত আনাস বিন মালিক (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) তাঁর মে’রাজে গমন সম্পর্কে ব্যাখ্যাকালে বলেন, জিবরীল আমীন (আ:) বেথলেহেমে আমাকে বোরাক থেকে নেমে দোয়া করতে অনুরোধ করেন, যা করা হলে তিনি বলেন: ’এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আপনি কোথায় দোয়া করেছেন তা জানেন কি? আপনি বেথলেহেমে দোয়া করেছেন, যেখানে ঈসা (আ:)-এর জন্ম হয়েছিল।’ 

ইমাম বায়হাকী (রহ:) এই হাদীসটি অপর এক সাহাবী হযরত শাদ্দাদ বিন আওস (রা:) থেকে ভিন্ন এসনাদে বর্ণনা করেন। বর্ণনাশেষে তিনি বলেন, ‘এর এসনাদ (সনদ) সহীহ।’ [আল-বায়হাকী কৃত ’দালাইল আন্ নবুওয়াহ’, (২/৩৫৫-৩৫৬)]

অতএব, মওলিদ ও আম্বিয়া (আ:)-এর জন্মস্থানসমূহ আল্লাহর শআয়ের তথা সম্মানীয় স্মৃতিচিহ্নগুলোর অন্তর্ভুক্ত।  

হক্কপন্থী উলামা ও ফুকাহাবৃন্দের সমর্থনসূচক দলিল

১/ - ইবনে কাসীর, যাকে সালাফী/ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতান গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। অথচ সালাফীরাই ইবনে কাসীরের কথাকে বিকৃত করে এই মর্মে মিথ্যে ছড়িয়েছে যে মুযাফফর শাহ একজন ফাসেক, নিষ্ঠুর ও বেদআতী শাসক ছিলেন (নাউযু বিল্লাহ)। প্রকৃতপক্ষে ইবনে কাসীর লিখেন:

”(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন.....(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক - রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম - শায়খ আবুল খাত্তাব (রহ:) সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।

”আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।” [’তারিখে ইবনে কাসীর’, ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান্ নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা]

২/ - ইমাম সেহাবউদ্দীন আবুল আব্বাস কসতলানী (রহ:) যিনি ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’ শীর্ষক সীরাতের বই রচনা করেন, তিনি বলেন:

”মহানবী (দ:)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন - কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?

হুযূর পূর নূর (দ:)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে  -

প্রথমতঃ নবী করীম (দ:) এ বসুন্ধরায় আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (দ:)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।

দ্বিতীয়তঃ কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (দ:) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (দ:) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।

তৃতীয়তঃ কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (দ:)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”

রেফারেন্স: ইমাম কসতলানী (রহ:) প্রণীত ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা। এ ছাড়াও ইমাম যুরকানী মালেকী স্বরচিত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।

ইমাম কসতলানী (রহ:) আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মীলাদের মাস, অর্থাৎ, রবিউল আউয়ালের প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!” [আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা]

৩/ - ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) যিনি হিজরী ৯ম শতকের মোজাদ্দেদ (ইসলাম পুনরুজ্জীবনকারী), তিনি লিখেন:

"মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপন যা মূলতঃ মানুষদের সমবেত করা, কুরআনের অংশ-বিশেষ তেলাওয়াত, মহানবী (দ:)-এর ধরাধামে শুভাগমন (বেলাদত) সংক্রান্ত ঘটনা ও লক্ষ্মণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণ এবং সবশেষে সমাবেশ ত্যাগ, তা উত্তম বেদআত (উদ্ভাবন); আর যে ব্যক্তি এর অনুশীলন করেন তিনি সওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মহান মর্যাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর সম্মানিত বেলাদতের প্রতি খুশি প্রকাশ।” [ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

* [হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ ৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য]

একই দিনে বেলাদত (শুভাগমন) ও বেসাল (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলিত) হলেও কেন মহানবী (দ:)-এর মীলাদ অগ্রাধিকার পাবে তা ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) ব্যাখ্যা করে বলেন:

“বিশ্বনবী (দ:)-এর বেলাদত হলো (আল্লাহর) সর্ববৃহৎ নেয়ামত (আশীর্বাদ); আর তাঁর বেসাল মহা দুর্যোগ। ধর্মীয় বিধান আমাদের প্রতি তাকিদ দেয় যেন আমরা আল্লাহর নেয়ামতের শোকরগুজারি (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করি এবং দুর্যোগের মুহূর্তে ধৈর্য ধরি ও শান্ত থাকি। শরীয়তের আইনে আমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে কোনো শিশুর জন্মে পশু কোরবানি দিতে (এবং ওর গোস্ত গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে)। এটা ওই শিশুর জন্মোপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ও খুশি প্রকাশের নিদর্শন। পক্ষান্তরে, মৃত্যুর সময় পশু কোরবানি দিতে শরীয়ত আমাদের আদেশ দেয় নি। উপরন্তু, শোক প্রকাশ বা মাতম করতে শরীয়তে মানা করা হয়েছে। অতএব, মীলাদুন্নবী (দ:)-এর ‍পুরো মাসব্যাপী খুশি প্রকাশ করার পক্ষে ইসলামী বিধানের রায় পরিদৃষ্ট হয়; আর তাঁর বেসাল উপলক্ষে শোক প্রকাশ না করার পক্ষে মত দেয়া হয়।” [হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৫৪-৫৫ পৃষ্ঠা]

* [দেখুন - ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ’আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

নোট: মহানবী (দ:)-এর বেসাল ১২ই রবিউল আউয়াল নয় যেমন ধারণা করে থাকে কিছু মানুষ; তাদের এই ধারণার জন্ম ‘অমৃতের সীলমোহর’ জাতীয় বই-পুস্তক। বিভিন্ন সহীহ বর্ণনায় বিবৃত সঠিক দিনটি হলো ২রা রবিউল আউয়াল।

৪/ - যুগের শায়খুল ইসলাম ও মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) 

মহানবী (দ:)-এর মীলাদ দিবস উদযাপন সম্পর্কে হযরত ইমামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি লিখিতভাবে যে উত্তর দেন তা নিম্নরূপ: “মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনের উৎস বলতে এটি এমন এক বেদআত (উদ্ভাবন) যা প্রথম তিন শতকের সালাফ আস্ সালেহীন (পুণ্যাত্মাবৃন্দ) কর্তৃক আমাদেরকে জ্ঞাত করানো হয় নি, যদিও এতে প্রশংসনীয় ও প্রশংসনীয় নয় উভয় দিকই বিদ্যমান। কেউ প্রশংসনীয় দিকগুলো গ্রহণ করে প্রশংসনীয় নয় এমন দিকগুলো বর্জন করায় যত্নবান হলে তা বেদআতে হাসানা তথা কল্যাণময় নতুন প্রথা হবে। আর তা না হলে এর উল্টো হবে। এ বিষয়ের বৈধতা প্রতীয়মানকারী একটি নির্ভরযোগ্য শরীয়তের দলিল আমার সামনে এসেছে, আর তা হলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত সহীহ হাদীস যা’তে বর্ণিত হয়েছে যে মহানবী (দ:) মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করে দেখতে পান সেখানকার ইহুদীরা ১০ই মহররম (আশুরা) তারিখে রোযা রাখেন [’হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’ ৬৩ পৃষ্ঠা]। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ:)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ:) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (দ:) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ সারা বছরের যে কোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তা উদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।[প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]। 

”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ:) হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (দ:) নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (দ:) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (দ:) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (দ:)-এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।” [প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]

৫/ - ইমাম শামসউদ্দীন দামেশকী (রহ:) লিখেন: 

এটি প্রমাণিত যে আবু লাহাবের (পারলৌকিক) অনলে জ্বলবার শাস্তি প্রতি সোমবার লাঘব করা হয়, কেননা সে মহানবী (দ:)-এর বেলাদতে খুশি হয়েছিল এবং তার দাসী সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিল (সুসংবাদ দেয়ার জন্যে)। আবু লাহাবের মতো অবিশ্বাসী, যার চিরস্থায়ী আবাস দোযখ এবং যার জন্যে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়েছে, সে যদি আযাব থেকে তাখফিফ (নিষ্কৃতি) পায় প্রতি সোমবার, তাহলে ভাবুন সেই মো’মেন ব্যক্তির কী শান যিনি সারা জীবন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেলাদতে খুশি প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন। [ইমাম দামেশকী কৃত ‘মওরিদ আস্ সাফা ফী মওলিদ আল-হাদী’ এবং ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৬ পৃষ্ঠা]

৬/ - গোঁড়াপন্থী আলেম ইমাম ইবনুল জাওযী-ও মওলিদ-বিষয়ক একখানি বই লিখেন যার নাম ‘আল-জারহ ওয়াত্ তাদীল’। ওতে তিনি বলেন: 

হারামাইন শরীফাইন (মক্কা ও মদীনা), মিসর, ইয়েমেন, বরঞ্চ আরব বিশ্বের সকল মানুষই দীর্ঘদিন যাবত মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপন করে আসছেন। রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তাঁদের খুশির সীমা থাকে না এবং তাঁরা মওলিদের যিকর পালনের জন্যে নির্দিষ্ট সমাবেশের (মাহফিলের) আয়োজন করেন যার বদৌলতে তাঁরা অশেষ নেকী ও সাফল্য অর্জন করেন। [বয়ানুল মীলাদ আন্ নববী, ৫৮ পৃষ্ঠা]

৭/ - ভারত উপমহাদেশের আলেম শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দীসে দেহেলভী নিজের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর একটি বর্ণনা করেন: 

মক্কা মোয়াযযমায় এক মীলাদ মাহফিলে আমি একবার অংশগ্রহণ করি। তাতে মানুষেরা রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর প্রতি দরুদ-সালাম প্রেরণ করছিলেন এবং তাঁর বেলাদতের সময় (আগে ও পরে) যে সব অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল, আর তাঁর নব্যুয়তপ্রাপ্তির আগে যে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করা হয়েছিল (যেমন - মা আমেনা হতে নূর বিচ্ছুরণ ও তাঁর দ্বারা নূর দর্শন, রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বাবা আব্দুল্লাহর কপালে নূর দেখে তাঁকে এক মহিলার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ইত্যাদি), সে সম্পর্কে তাঁরা উল্লেখ করছিলেন। হঠাৎ আমি দেখলাম এ রকম এক দল মানুষকে নূর ঘিরে রেখেছে; আমি দাবি করছি না যে আমার চর্মচক্ষে এটি আমি দেখেছি; এও দাবি করছি না যে এটি রূহানীভাবে (দিব্যদৃষ্টি মারফত) দেখেছি, আর আল্লাহতা’লা-ই এই দুইয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। তবে ধ্যানের মাধ্যমে এই সব আনওয়ার (জ্যোতিসমূহ) সম্পর্কে আমার মাঝে এক বাস্তবতার উদয় হয়েছে যে এগুলো সে সকল ফেরেশতার আনওয়ার যাঁরা ওই ধরনের (মীলাদের) মজলিশে অংশগ্রহণ করেন। আমি এর পাশাপাশি আল্লাহর রহমত নাযেল হতেও দেখেছি। [ফুইয়ূয আল-হারামাইন, ৮০-৮১ পৃষ্ঠা]

৮/ - শাহ আবদুল আযীয মোহাদ্দীসে দেহেলভী যিনি রাফেযী শিয়াদের খণ্ডনে ‘তোহফা-এ-এসনা আশারিয়্যা’ শিরোনামের একটি বই লিখেছেন, তিনি বলেন:

রবিউল আউয়াল মাসের বরকত (আশীর্বাদ) রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেলাদত তথা ধরণীতে শুভাগমনের কারণেই হয়েছে। এই মাসে উম্মতে মোহাম্মদী যতো বেশি দরুদ-সালাম প্রেরণ করবেন এবং গরিবদের দান-সদকাহ করবেন, ততোই তাঁরা আশীর্বাদ লাভ করবেন। [ফতোয়ায়ে আযীযিয়্যা, ১:১২৩]

৯/ - মোল্লা আলী কারী যিনি ’শরহে মেশকাত’ শীর্ষক গ্রন্থপ্রণেতা ও হানাফী ফেকাহবিদ, তিনি বলেন:

আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে তাশরীফ এনেছেন তোমাদের মধ্য থেকে ওই রাসূল...’ (সূরা তাওবা, ১২৮ আয়াত)। এতে এই ইঙ্গিত আছে যে আমাদের এই ধরণীতে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর আগমনের শুভক্ষণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। অতএব, প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে (কুরআনের) যিকর পালন করা। আর সেমা’ ও খেলাধুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো, মোবাহ (বৈধ) যা কিছু আছে শুধু তা-ই মওলিদের অঙ্গীভূত করা যাবে; যেহেতু এগুলো এমন খুশির বিষয় যা’তে কোনো ক্ষতি নেই। [মোল্লা আলী কারী রচিত ‘আল-মওলিদ আন্ নবী’, ১৭ পৃষ্ঠা]

১০/ - ইমাম ইসমাঈল হাক্কী যিনি মুফাসসির ও সূফী, তিনি বলেন: 

মওলিদ উদযাপন মহানবী (দ:)-এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থাগুলোর অন্যতম, তবে শর্ত এই যে তা হতে হবে সকল বদ কাজ থেকে মুক্ত। ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) বলেছেন, মীলাদুন্নবী (দ:) উপলক্ষে আমাদের খুশি হওয়া মোস্তাহাব (তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৯ম খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা)।

১১/ - মাশরেক তথা পূর্বাঞ্চলীয় কবি আল্লামা ইকবাল বলেন: 

মুসলমানদের পবিত্র দিনগুলোর মধ্যে মীলাদুন্নবী (দ:) অন্যতম। আমার উপলব্ধি অনুযায়ী, মানব মস্তিষ্ক ও অন্তরগুলোর খাদ্য এবং নিরাময়/চিকিৎসার জন্যে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, ’আসওয়া-উর-রাসূল’ (দ:) মুসলমানদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া অত্যাবশ্যক। তাঁদের এই আবেগ তিনটি উপায়ে জারি রাখা যায়:

(১) প্রথমটি হলো দরুদ-সালাম প্রেরণ যা মুসলমানদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁরা সম্ভাব্য সকল সময়েই তা করে থাকেন। আমি জানতে পেরেছি যে আরব বিশ্বে কোনো বাজার এলাকায় যদি দু’জন মানুষ ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তৃতীয়জন উচ্চস্বরে পাঠ করেন - আল্লাহুম্মা সাল্লে আ’লা সাইয়্যেদিনা ওয়া বারিক ওয়া সাল্লাম - যা শুনে বিবদমান দু’জন ঝগড়া থামিয়ে দেন। এটি-ই দরুদের তা’সির বা প্রভাব। অতএব, যাঁর প্রতি এই দরুদ প্রেরণ করা হয় তাঁর (মহানবী-দ:) সম্পর্কে চিন্তা অন্তরের গভীরে প্রোথিত করা একান্ত আবশ্যক।

(২) দ্বিতীয় পন্থাটিতে মুসলমান সর্বসাধারণ বিপুল সংখ্যায় মীলাদের মাহফিলে হাজির হবেন এবং তাঁদের মধ্যে এমন ব্যক্তি (ইমাম/শায়খ/মুরশেদ) থাকবেন যিনি দো’জাহানের গর্ব মহানবী (দ:)-এর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে ওয়াকেফহাল; তিনি তা বিস্তারিতভাবে ওই মাহফিলে আলোকপাত করবেন যাতে মহানবী (দ:)-এর পথ ও মত অনুসরণের নিষ্ঠা ও আগ্রহ মুসলমানদের অন্তরে জাগ্রত হয়। এই উদ্দেশ্যেই আমরাও আজ সমবেত হয়েছি।

(৩) তৃতীয় পন্থাটি দুষ্কর হলেও উল্লেখ করা জরুরি। এটি হলো মহানবী (দ:)-কে এমনভাবে স্মরণ করা যাতে আমাদের অন্তরগুলো (ও আচার-ব্যবহার) নবুয়্যতের বিভিন্ন দিকের প্রকাশস্থল (মাযহার) হয় - যে অনুভূতি ১৩০০ বছর আগে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হায়াতে জিন্দেগীতে তাঁরই (যাহেরী বা প্রকাশ্য/বাহ্যিক) উপস্থিতির সময় বিরাজ করছিল। ওই একই অনুভূতি যেন আমাদের অন্তরে উদিত হয়। [আসার-এ-ইকবাল, ৩০৬-৩০৭ পৃষ্ঠা]

১১/ - মৌলভী আবদুল হাই লাখনভী বলে:  

মীলাদুন্নবী (দ:)-এর প্রতি খুশি প্রকাশ করায় আবু লাহাবের মতো এতো বড় কাফের যদি পুরস্কৃত হতে পারে, তাহলে রাসূলে করীম (দ:)-এর ধরাধামে শুভাগমন উপলক্ষে যে মুসলমান ব্যক্তি খুশি হন এবং তাঁরই মহব্বতে অর্থ ব্যয় করেন তিনি অবশ্যঅবশ্যই উচ্চ মকামে অধিষ্ঠিত হবেন, যেমনিভাবে ইমাম ইবনে জাওযী ও শায়খ আবদুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী উল্লেখ করেছেন। [আবদুল হাই প্রণীত ‘মজমুয়ায়ে ফাতাওয়া’, ২য় খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা]

মৌলভী খলীল আহমদ সাহারানপুরী সকল সীমা ছাড়িয়ে নিজ ‘আল-মুহান্নাদ’ গ্রন্থে বলে: আমরা কে? কোনো মুসলমানই মীলাদুন্নবী (দ:)-এর যিকরকে বেদআত বা হারাম বিবেচনা করতে পারে না; এমন কি তাঁর মোবারক জুতো, তাঁর (মালিকানাধীন) গাধার মূত্রকেও তা বিবেচনা করতে পারে না। [আল-মুহান্নাদ, ৬০ পৃষ্ঠা, প্রশ্ন ২১]

১২/ - নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালী, লা-মযহাবীদের বড় নেতা, বলে: 

মহানবী (দ:)-এর সীরাত, তাঁর হেদায়াত, মীলাদ ও বেসাল শরীফের যিকর আমরা প্রতিদিন করতে না পারলে কী দোষ? তাহলে আমাদের উচিত প্রতি মাসে এবং রবিউল আউয়াল মাসের দিনগুলোতে তা পালন করা; এই দিনগুলো খালি ফেলে রাখা উচিত নয়।

এই লা-মযহাবী নেতা আরও লিখে: কোনো ব্যক্তি মওলিদের ঘটনায় খুশি না হলে এবং আল্লাহর কাছে এই মহা অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে ‘সে ব্যক্তি মুসলমানই নয়।’ [আশ্ শামামাতুল আম্বারা মিন মওলিদ আল-খায়র আল-বারিয়্যাহ, ১২ পৃষ্ঠা]

জরুরি নোট: আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে আমাদের (জমানার) ‘সালাফী’রা তাদের নিজেদের দলের লোকদেরকেই ‘কাফের’ আখ্যা দেয়া থেকে নিস্তার দেয় নি। ওপরের ফতোওয়া সে সব ‘সালাফী’দের প্রতি ‘তাকফির’ বা কুফরী (অবিশ্বাস)-এর অভিযোগ আরোপ করে যারা মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সময় মুখ গোমড়া করে বসে থাকে এবং সেটিকে খণ্ডন করতে চায়। [এই লেখার প্রারম্ভে উল্লেখ করা হয়েছিল যে মহানবী (দ:)-এর শুভাগমনের সময় শয়তান উচ্চস্বরে কেঁদেছিল]

১৩/ - শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (রহ:) লিখেন: 

আমাদের সময়ে যে মীলাদ মাহফিল ও যিকর-আযকার করা হয়, তা মূলতঃ (এমন) নেক আমল যা’তে রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, দান-সাদকাহ, যিকর-তাযকেরা, মহানবী (দ:)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ এবং তাঁর সানা-সিফাত তথা প্রশংসা-স্তুতি। [ইমাম হায়তামী প্রণীত ‘ফাতাওয়া-এ-হাদীসিয়্যাহ’, ২০২ পৃষ্ঠা]

দ্বীনী ভাই আমির ইবরাহীম কর্তৃক ’সালাফী’দের দাবি খণ্ডন (এই খণ্ডনমূলক বক্তব্যের কোনো জবাব কেউ দেখলে ahlus-sunna.com ওয়েবসাইটের হোম-পেজে প্রদত্ত ফোন নম্বরে সরাসরি ইবরাহীমভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করুন) 

আপত্তি: মীলাদ/মওলিদ কোনো সাহাবী (রা:) কর্তৃক পালিত হয় নি, তাবেঈনদের দ্বারাও আয়োজিত হয় নি। এই সালাফ আস্ সালেহীন (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাবৃন্দ)-দেরকেই আমরা অনুসরণ করি, যা সঠিক এবং নিরাপদ পথ ও মত।

জবাব: প্রথমতঃ এ দাবি অমূলক। কেননা রাসূলুল্লাহ (দ:) স্বয়ং নিজ মীলাদ-দিবস পালন করতেন যা সহীহ মুসলিম শরীফে প্রমাণিত হয়েছে এই মর্মে যে, তাঁকে সোমবার দিন তিনি রোযা রাখেন কেন এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আর তিনি উত্তর দেন, ‘এই দিন আমি ধরাধামে শুভাগমন করেন, এবং আমার প্রতি ওহী তথা ঐশী প্রত্যাদেশও অবতীর্ণ হয় এই দিন’ [দেখুন ওপরের ‘আহাদীস থেকে এস্তাদলাল’ শীর্ষক অংশের ১ম দলিল]। সর্বোপরি, আল্লাহতা’লা স্বয়ং ‘আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মীলাদ তথা ধরণীতে শুভাগমনকে শান্তির দিন’ বলে কুরআনে ঘোষণা করেন [১৯:১৫]।

দ্বিতীয়তঃ আমরা ‘সালাফী’দেরকে আহ্বান জানাই মহানবী (দ:)-এর এমন একটি সুস্পষ্ট হাদীস দেখাতে যেখানে তিনি মীলাদকে বারণ করেছেন। মনে রাখবেন, কোনো বিষয়কে হারাম বলতে হলে নির্ভরযোগ্য প্রামাণিক দলিল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক; পক্ষান্তরে এমন কি নীরবতাও আমাদের সুন্নীদের পক্ষে যাবে নিম্নোক্ত হাদীসবলে:

হযরত আবু দারদা (রা:) বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (দ:) বলেন: ”আল্লাহতা’লা তাঁর কেতাবে (কুরআনে) যা কিছুর অনুমতি দিয়েছেন তা হালাল, যা কিছু নিষেধ করেছেন তা হারাম; আর যে ব্যাপারে নীরবতা পালন করেছেন, তা ক্ষমাপ্রাপ্ত । অতএব, আল্লাহর ক্ষমা গ্রহণ করো, কেননা আল্লাহ বিস্মৃত হন না।” অতঃপর মহানবী (দ:) নিচের আয়াতে করীমা তেলাওয়াত করেন, ’আর আপনার প্রভু খোদাতা’লা কখনো বিস্মৃত হন না’ (সূরা মরিয়ম, ১৯:৬৪)। [ইমাম হায়তামী কৃত ’মজমাউয্ যাওয়াইদ’, ১:১৭১, হাদীস নং ৭৯৪]  

ইমাম হায়তামী (রহ:) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আল-বাযযার এবং তাবারানী তাঁর ‘কবীর’ গ্রন্থে, ’যার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের এসনাদ (সনদ) হাসান পর্যায়ভুক্ত।’

এই হাদীসকে সহীহ বলেছে নাসিরুদ্দীন আলবানীও, তার রচিত ‘সিলসিলাত আস্ সহীহাহ্’ পুস্তকে (৫:৩২৫)।

অতএব, এই হাদীস মোতাবেক নীরবতা প্রমাণ করে যে মওলিদ/মীলাদ জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত)। কেননা, এর আসল (মূলভিত্তি) কুরআন ও সুন্নাহতে বিদ্যমান, যার অসংখ্য প্রমাণ আমরা ওপরে পেশ করেছি।

তৃতীয়তঃ যদি ধরেও নেয়া হয় যে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) বা তাবেঈনবৃন্দ এটি করেন নি (যদিও এর কোনো নফি বা নেতিবাচক প্রমাণ বিদ্যমান নেই), তাহলে তো অনেক আমল-ই সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাবেঈনবৃন্দ পালন করেন নি; বরং পরবর্তীকালের উলামা-এ-কেরাম সেগুলো সম্পর্কে শরীয়তের মৌলনীতির সাথে সঙ্গতি সাপেক্ষে জায়েয হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুতরাং কোনো বিষয় শরীয়তের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সর্বদা জায়েয বলে সাব্যস্ত। উদাহরণস্বরূপ, হাদীসশাস্ত্রে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-এর জ্ঞান, আসমা-উর-রিজাল সংক্রান্ত জ্ঞান, আল-কুরআনে এ’রাব বসানো, মসজিদে মিনারা নির্মাণ, বর্ণনাকারীদের এসনাদ বা পরম্পরাসহ হাদীস বর্ণনা ইত্যাদি জায়েয। এর কারণ হলো, শরীয়তে এগুলোর মৌলভিত্তি পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে, মীলাদুন্নবী (দ:)-এর উদযাপন আল-কুরআনেই বিদ্যমান, আর তা সুন্নাহতেও বিদ্যমান।

আপত্তি: মওলিদ হলো বেদআত আদ্ দালালাত (ধর্মে বিচ্যুতিমূলক নতুন পরিবেশনা)। রাসূলুল্লাহ (দ:) স্বয়ং সহীহ হাদীসে বলেছেন সকল বেদআত পথভ্রষ্টতা এবং সকল পথভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নামের আগুন।

জবাব: এই হাদীসের বিষয়বস্তু সার্বিক নয়, বরং নির্দিষ্ট, যেমনিভাবে স্বর্ণযুগের মহান ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (রহ:) ব্যাখ্যা করেন: 

”উপরোক্ত হাদীস যা’তে বলা হয়েছে যে সকল বেদআত গোমরাহী ও সকল গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নামের আগুন, তা শুধু বেদআতে মোহরিমা তথা হারাম উদ্ভাবনের বেলায়-ই প্রযোজ্য হবে; অন্যান্য ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।” [আল-হায়তামী কৃত ’ফাতাওয়া-এ-হাদীসিয়্যা’, ১ম খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত]

দ্বিতীয়তঃ শরীয়তে এ ধরনের শব্দ ও ব্যাখ্যা অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আল-কুরআন ঘোষণা করে, “নিশ্চয় তোমরা এবং আল্লাহ ভিন্ন যা কিছুর পূজো তোমরা করছো, সবই জাহান্নামের ইন্ধন” [২১:৯৮]। আমরা সবাই জানি, হযরত ঈসা মসীহ (আ:)-কে খৃষ্টান সম্প্রদায় পূজো-অর্চনা করে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা যদি এই আয়াতে করীমাকে সার্বিক (আম) অর্থে গ্রহণ করি, তাহলে ঈসা নবী (আ:)-ও দোযখের ইন্ধন বলে সাব্যস্ত হন (নাউযু বিল্লাহ)। অতএব, (এ ধরনের অপব্যাখ্যা এড়াতে) আমাদেরকে মহানবী (দ:)-এর কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে হবে। তিনি যে বেদআত বা নব্য প্রথা নিষেধ করেছেন, তা শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক, যার দলিল পাওয়া যায়
বোখারী শরীফের ৩য় খণ্ডে, ৪৯ অধ্যায়ে, ৮৬১ নং হাদীসে (ওহাবী মোহসিন খান কৃত ‘সহীহ বোখারী’):

হযরত আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান, “আমাদের ধর্মের মৌলনীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ নতুন কোনো বিষয় কেউ পরিবেশন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”

গুরুত্বপূর্ণ উসূল (মৌলনীতি) 

আমরা রাসূলে করীম (দ:)-এর বহু আহাদীস থেকে জানতে পারি যে তিনি ধর্মের মধ্যে নতুন বিষয়সমূহের অনুমতি দিয়েছেন। যেমন - কতিপয় সাহাবী (রা:) সাপের কামড়ে সূরা ফাতেহা পাঠ করেন (দেখুন সহীহ বোখারী, ৩য় খণ্ড, ৩৬ অধ্যায়, ৪৭৬ নং হাদীস)। এ ব্যাপারে হুযূর পূর নূর (দ:) থেকে তাঁদের কাছে কোনো আগাম জ্ঞান/বার্তা ছিল না। কিন্তু তাঁর দরবারে এলে তিনি এ আমলটি সম্পর্কে জানার পর এর অনুমোদন দেন। কেউ কেউ আপত্তি তোলেন যে এটি মহানবী (দ:)-এর উপস্থিতিতে অনুমোদিত হওয়ায় অনুসরণীয়; কেননা তিনি যার অনুমতি দেন বা যা কিছু নিষেধ করেন সবই আমাদের মানতে হবে। এর জবাব হলো, রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁর কথায় কখনোই স্ববিরোধী হতে পারেন না। তিনি যদি ’মোতলাকান’ বা সামগ্রিক অর্থে সকল বেদআতকে পথভ্রষ্টতা হিসেবে নীতি-নির্ধারণ করে থাকেন, তাহলে তাঁর দ্বারা কিছু কিছু নতুন পরিবেশনা জায়েয হওয়ার অবকাশই আর নেই। সুতরাং সকল বিষয়-ই শরীয়তের নীতিমালার আলোকে যাচাই-বাছাই করা জরুরি।

এই আপত্তির আরেকটি জবাব হলো খলীফা হযরত উমর (রা:) কর্তৃক একজন কারীর (ইমামের) পেছনে সকল সাহাবা (রা:)-এর তারাবীহর নামায পড়াকে ’কী আশীর্বদধন্য নতুন পরিবেশনা!’ (নে’মাল বেদআতু হাযিহী) বলে অনুমোদন দান [সহীহ বোখারীর কিতাবুত্ তারাবীহ দ্রষ্টব্য]। নস তথা শরীয়তের দলিলে এটি প্রতীয়মান করে যে সকল বেদআত মন্দ নয়। কেউ কেউ এতেও আপত্তি করেন যে হযরত উমর (রা:) নাকি ‘শরয়ী’ নয়, বরং ‘লুগউইয়ী’ (আভিধানিক অর্থে) বেদআতকে উদ্দেশ্য করেছিলেন। তাদেরকে আমরা ওই রওয়ায়াত (বর্ণনা) থেকে প্রমাণ পেশ করার আহ্বান জানাই এই মর্মে যে, খলীফা উমর (রা:) ওতে শরীয়তী ও আভিধানিক পার্থক্যের ইঙ্গিত করেছিলেন কিনা? [অর্থাৎ, তিনি কথাটি আভিধানিক অর্থে বলেছিলেন, শরয়ী মানে’ তাতে নিহিত ছিল না - এই মর্মে দলিল আমরা দেখতে চাই]

সর্বোপরি, খলীফা উসমান ইবনে আফফান (রা:) জুমু’আর নামাযের দ্বিতীয় আযানটি প্রবর্তন করেন। ‘সালাফী’রা এর জবাবে আমাদেরকে বলে, ‘তাঁরা খুলাফায়ে রাশেদীন, হাদীসের আদেশ মোতাবেক আমরা তাঁদেরকে অনুসরণ করতে বাধ্য।’ এর জবাবও সেই আগেরটি আর তা হলো, সকল বেদআত যদি পথভ্রষ্টতা হতো, তবে আমাদের পুণ্যবান পূর্বসূরীবৃন্দ স্ববিরোধী হতেন না; বেদআত শব্দটি মন্দ হলে খলীফা উমর (রা:) ‘নে’মাল বেদআত’ বলতেন না, বরং বলতেন ‘নে’মাস্ সুন্নাত’।

আপত্তি: ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ মহানবী (দ:)-এর মীলাদ-দিবস বলে নিশ্চিত নয়, বরং ওই দিন তাঁর বেসাল শরীফ (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলনপ্রাপ্তি)। অতএব, শোকের দিনে খুশি উদযাপন ভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়।

জবাব: প্রথমতঃ যাঁরা মওলিদের পক্ষে রায় দেন, তাঁরা সর্বদা বিশ্বাস করেন যে মীলাদ কোনো নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়; আপনারা যে কোনো দিন মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনের উদ্দেশ্যে মাহফিল করতে পারেন। দ্বিতীয়তঃ সবচেয়ে প্রাথমিক যুগে রচিত মহানবী (দ:)-এর জীবনীগুলো, যেমন - সীরাতে এসহাক, ইবনে হিশাম, তাবাকাত বিন সা’আদ ইত্যাদি নিশ্চিত করে যে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ-ই রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মীলাদ-দিবস। ইবনে কাসীর-ও তাঁর প্রণীত ‘সীরাত আর্ রাসূল’ গ্রন্থে ঐকমত্য পোষণ করে বলেন যে এটি উলেমাদের মূলধারার অভিমত; অন্যদের মত এ ক্ষেত্রে দুর্বল।

উপসংহার

আপত্তি: উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যে মদ্যপান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সঙ্গীত ইত্যাদির মতো সকল বদ কাজের উৎস হলো মওলিদ/মীলাদ।

জবাব: এ ধরনের মূর্খতাসূচক বক্তব্য ছুঁড়ে মারা হয় (মীলাদ পক্ষীয়) মুসলমান সর্বসাধারণের দিকে যখনই মীলাদ-বিরোধীদের আর কোনো কিছু জবাবে বলার থাকে না। এর জবাবও এভাবে দেয়া যায়, কেউ মসজিদে কোনো মন্দ কাজ করলে তার মানে এই নয় যে আমরা মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দেবো। দ্বিতীয়তঃ আমরা ‘সালাফী’দের জিজ্ঞেস করবো, ওই মন্দ কাজগুলো কি হালাল হয়ে যাবে যদি সেগুলো মীলাদে না করা হয়? অতএব, মীলাদ মূলতঃ জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত) এবং ’সালাফী’রা মূল দাবিকে অসার প্রমাণ করতে কাল্পনিক যুক্তি দাঁড় করিয়ে থাকে যাতে তা ভ্রান্ত প্রমাণ করা যায়।

আপত্তি: ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’ পুস্তকে মীলাদকে মহা নব্য প্রথা বলেছেন। মালিক মোযাফফর শাহ-ও অনুরূপ বেদআতী, ফাসেক শাসক ছিলেন।

জবাব: ইবনে কাসীরের বইয়ের প্রতি এটি একটি মিথ্যে অপবাদ ছাড়া কিছু নয়, যা ওপরে প্রমাণ করা হয়েছে।

১২ই রবিউল আউয়াল: মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তারিখ

কেউ কেউ দাবি করেন যে মীলাদুন্নবী (দ:)-এর প্রকৃত তারিখ জ্ঞাত নয়, আর তাই ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদে মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনের কোনো অবকাশ-ই নাকি নেই।

বারো রবিউল আউয়াল তারিখ মীলাদ-দিবস হিসেবে কেবল প্রাথমিক যুগের বুযূর্গানে দ্বীনের কাছেই গৃহীত নয়, এটি সমগ্র ইসলামী বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারগুলো কর্তৃক স্বীকৃত (মীলাদুন্নবীর) দিনও। এই দিনটি প্রায় ২ ডজন দেশে রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে পালিত হয়; ইরান ছাড়া অন্যান্য সকল রাষ্ট্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফকেই মীলাদুন্নবী (দ:) মানে। ইরান ১৭ তারিখে তা পালন করে, কেননা ওই তারিখ ইমাম জা’ফর সাদেক (রহ:)-এর জন্মদিনের সাথে মিলে যায়।

মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সঠিক তারিখের ব্যাপারে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদদের অভিমত  

১. ইমাম ইবনে এসহাক (৮৫-১৫১ হিজরী): ১২ই রবিউল আউয়াল, ‘আম-উল-ফীল’ (হস্তীর বছর)। [ইবনে জওযী কৃত ’আল-ওয়াফা’, ৮৭ পৃষ্ঠা]

২. আল্লামা ইবনে হেশাম (২১৩ হিজরী): সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, হস্তীর বছর। [ইবনে হেশাম প্রণীত ‘আস্ সীরাতুন্ নববীয়্যা’, ১ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা]

৩. ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (২২৪-৩১০ হিজরী): সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, হস্তীর বছর। [তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক, ২য় খণ্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা]

৪. আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন মোহাম্মদ আল-মাওয়ার্দী (৩৭০-৪৮০ হিজরী): ‘আসহাবে ফীল’ ঘটনার ৫০ দিন ও বাবার ইন্তেকালের পরে সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ। [এ’লামুন্ নবুওয়া, ১৯২ পৃষ্ঠা]

৫. ইমাম হাফেয আবুল ফাতাহ আল-আন্দালুসী (৬৭১-৭৩৪ হিজরী): সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, হস্তীর বছর। [আইয়ুন আল-আসর, ১ম খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা]

৬. আল্লামা ইবনে খালদুন (৭৩২-৮০৮ হিজরী): ১২ই রবিউল আউয়াল, হস্তীর বছর; সম্রাট কাসরা নোশায়রওয়ান শাহের ৪০তম বছর। [ইবনে খালদুন কৃত ‘আত্ তারিখ’, ২য় খণ্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা]

৭. মোহাম্মদ সাদিক ইবরাহীম আরজূন: বিভিন্ন ‘তুরাক’ (পরম্পরা)-এ সুপ্রতিষ্ঠিত যে মীলাদুন্নবী (দ:) সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল, হস্তীর বছরে, কাসরা নোশায়ওয়ান শাহের শাসনামলে। [মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, ১ম খণ্ড, ১০২ পৃষ্ঠা]

৮. শায়খ আবদুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (৯৫০-১০৫২ হিজরী): “ভাল করে জেনে রাখো, ’সিয়ার’ ও ’তারিখ’ বিশেষজ্ঞদের (মানে জীবনীকার ও ইতিহাসবিদদের) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মত প্রকাশ করেন যে মহানবী (দ:) হস্তীর বছরে ধরণীতে আবির্ভূত হন.....এও ভালভাবে জ্ঞাত যে মাসটি ছিল রবিউল আউয়াল এবং দিনটি ১২ তারিখ। বিভিন্ন আলেম-উলেমা এই তারিখ সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করেন।” [মাদারিজুন্ নবুয়্যত, ২য় খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠা]

৯. নবাব মোহাম্মদ সাদেক হাসান ভূপালভী: মীলাদুন্নবী (দ:) মক্কায় ফজরের সময় ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ, হস্তীর বছরে হয়েছিল। অধিকাংশ উলেমা এই মত সমর্থন করেন। ইবনে জওযী উলেমাদের ঐকমত্যের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। [আশ্ শোমামাতুল আম্বারিয়া ফী মওলিদে খায়র আল-বারিয়া, ৭ম পৃষ্ঠা]

অতএব, আপনারা দেখতে পেয়েছেন যে হিজরী প্রথম/দ্বিতীয় শতকের ইতিহাসবিদ ও জ্ঞানী-পণ্ডিতবৃন্দ  
এবং এর পাশাপাশি পরবর্তী যুগের জ্ঞান বিশারদগণও ১২ই রবিউল আউয়ালকে মীলাদ-দিবস হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘সালাফী’ নেতা নবাব সাদেক হাসান ভূপালীও।

ইসলামী বিশ্বে এই দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সমগ্র ইসলামী বিশ্বে মীলাদুন্নবী (দ:) দিনটি উদযাপিত হয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ইরান ব্যতিরেকে (ওখানে ১৭ তারিখ পালিত হয়) সবগুলো মুসলমান দেশেই ১২ তারিখে তা পালিত হয়।

এখানে ১৬টি ইসলামী দেশের তালিকা দেয়া হলো, যেখানে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে সরকারি ছুটি থাকে (এর প্রকৃত তালিকা আরও বড়): 

জর্দান
আরব আমীরাত
বাহরাইন
জাযিরাতুল আরব
সুদান
ইরাক
কুয়েত
মরক্কো
ইয়েমেন
তিউনিশিয়া
সিরিয়া
ওমান
লেবানন
লিবিয়া
মিসর
মৌরিতানিয়া

উপসংহার 

মীলাদুন্নবী (দ:)-এর সর্বজনগ্রাহ্য দিন ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ, যে সম্পর্কে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলেমাবৃন্দ এবং ইতিহাসবিদগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন; আর ইসলামী দেশগুলোও সরকারিভাবে পালনীয় দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে। 

এক্ষণে আমরা এমন এক আলেমের উদ্ধৃতি দেবো যাকে ‘সালাফী’রা তাফসীর ও তাওয়ারিখ বিষয়ে সেরা আলেম মনে করে। তিনি শুধু ১২ তারিখকে মূলধারার উলেমাদের অভিমত বলেই ক্ষান্ত হন নি, বরং এর স্বপক্ষে হাদীসও পেশ করেছেন:

ইবনে আবি শায়বা (রহ:) তাঁর ‘মোসান্নাফ’ গ্রন্থে আফফান থেকে, তিনি সাঈদ থেকে, তিনি জাবের (রা:) থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ:) হস্তীর বছরে ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার, ধরাধামে শুভাগমন করেন। [ইবনে কাসীর কৃত ‘সীরাতুন্ নবী’, ১ম খণ্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা]

অতঃপর ইবনে কাসীর বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ উলেমাদের মধ্যে এটি-ই সুপ্রসিদ্ধ মত।” [প্রাগুক্ত]

ইমাম কসতলানী (রহ:) বলেন: মহানবী (দ:) ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ধরণীতে আবির্ভূত হন এবং মক্কাবাসী মুসলমানগণ তা পালন করেন; ওই একই দিন তাঁরা (তাঁর) বেলাদত-স্থান যেয়ারত করেন....এটি জ্ঞাত যে মহানবী (দ:)-এর মীলাদ-দিবস ১২ই রবিউল আউয়াল, দিনটি ছিল সোমবার। ইবনে এসহাক (রহ:) এবং অন্যান্যরাও এ কথা বর্ণনা করেছেন। [আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১ম খণ্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা]

                  - সমাপ্ত -       

 
 Arabic references: http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=53&Itemid=118