-এডমিন
প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীস শরীফে মুসলমানদের তিয়াত্তর দলবিভক্ত হবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন (সুনানুত্ তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৪১)। এর মধ্যে ৭২ দলই জাহান্নামী হবে (বদ-আকীদার কারণে); স্রেফ একটি দল হবে নাজাতপ্রাপ্ত। হাদীসে উল্লেখিত নাজাতপ্রাপ্ত দলটি হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত তথা সুন্নী মুসলমান সমাজ। আমরা সুন্নী মুসলমান। আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পরিচিতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে লিখতে হয় - ‘ইসলাম (সুন্নী)।’ অথচ সুন্নী বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে আমরা একেবারেই অনবধান। বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে সুন্নী কী তা সবার জানা অতীব জরুরি (এ বিষয়ে আমার বিভিন্ন লেখা অনলাইনে বিরাজমান)। তবে এই পোষ্টে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে না। কেবল শিরোনামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি আলোচিত হবে। এতদসংক্রান্ত লিঙ্কগুলো নিচে প্রদত্ত।
১/- মাযার
আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর সমাধিকে মাযার বলা হয়। শব্দটি আরবী যিয়ারত শব্দ হতে উদ্ভূত। রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাযার যিয়ারতের পক্ষে অনেক হাদীস ব্যক্ত করেছেন; এর ফযীলত তাতে বর্ণনা করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে, “মাযার যিয়ারত আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।” নিশ্চয় এতে গভীর অর্থ নিহিত রয়েছে, কেননা আমাদের ধর্ম চূড়ান্ত পর্যায়ে পরকালীন মুক্তি ও সাফল্যের দিকনির্দেশনা দেয়। অতএব, উক্ত হাদীসের নির্দেশনা সেদিকেই আলোকপাত করেছে; বিশেষ করে আউলিয়া কেরাম (রহ.)’মণ্ডলীর মাযার শরীফে তাঁদের রূহের ফয়েয-বরকত পাওয়া যায় মর্মে বিভিন্ন শরঈ দলিলে বর্ণনা এসেছে এবং এর পক্ষে ইমামবৃন্দ (রহ.) হতে ভাষ্যও লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু ইদানীং ৭২টি ভ্রান্ত দলের অন্তর্গত ওহাবী সম্প্রদায় সৌদি আরবের পেট্রো-ডলারের মদদপুষ্ট হয়ে মাযার-বিরোধী অপপ্রচার জোরদার করেছে। তারা দাবি করছে মাযার নিয়ে ’ব্যবসা’ হয় বিধায় মাযার ’অনৈসলামী’ বস্তু! ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখার অসৎ উদ্দেশ্যে এটা কতোখানি জঘন্য অপযুক্তি! আবার ভ্রান্ত শিয়া দলটি মাযারস্থ আউলিয়া কেরাম (রহ.)’বৃন্দের বর্তমান আওলাদ যারা ইসলামী (যাহেরী ও বাতেনী) জ্ঞানশূন্য, তাদেরকে ইরানী পেট্রো-ডলারের লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে। ফলশ্রুতিতে মাযার শরীফগুলোতে শিয়াপন্থীদের প্রভাব বেড়ে গিয়েছে। অথচ মাযারস্থ পূ্র্ববর্তী বুযূর্গানে দ্বীন (রহ.) সবাই হলেন সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী। অতএব, সুন্নী মুসলমানদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে এ মর্মে যে আমরা আমাদের পূর্ববর্তী আউলিয়া কেরাম (রহ.)’মণ্ডলীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি না তো? আমাদের দ্বীন-ঈমান কিন্তু আমরা তাঁদের নিঃস্বার্থ ও নিরলস দ্বীনী খেদমতের খাতিরেই পেয়েছি। আজ যে আমরা মুসলিম পরিচয় বহন করছি, তাও তাঁদেরই অবদান।
২/ - মসজিদ
মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের উপাসনালয়। এতে এক, অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস থেকে আমরা জানি, মুসলমান আউলিয়া-দরবেশ যে দেশেই ধর্মপ্রচার করতে গিয়েছিলেন, সেখানেই তাঁরা নিজেদের আস্তানা/খানেকাহ’র পাশে মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে মুসলমানদের অনবধানতাহেতু মসজিদগুলোতে হাদীসে উল্লেখিত ৭২টি ভ্রান্ত দলের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে আরেকটি হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে; ঘোষিত হয়েছিলো - “(শেষ জমানায়) মসজিদগুলো হবে শান-শওকতপূর্ণ ইমারত, কিন্তু হেদায়াতশূন্য।” অর্থাৎ, উঁচু উঁচু বিল্ডিং হবে, টাইল্স, এসি সবই হবে, কিন্তু হেদায়াতের আলো থাকবে না, থাকবে গোমরাহীর অন্ধকার! আলো না থাকলে অন্ধকার অবশ্যই থাকবে। মসজিদ কি নিজে নিজে হেদায়াতের দ্যুতি ছড়াতে সক্ষম? না, হাদীসের উদ্দেশ্য মসজিদের ইমাম/খতীব/মোয়াযযিন/মুসল্লি কমিটি গং। তারা সবাই গোমরাহ হবে। আর আমরা জানি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মসজিদই ওহাবী, মওদূদী, সালাফী, তাবলীগী, শিয়া, কাদিয়ানী ইত্যাদি ৭২টি ভ্রান্ত ফিরকার দখলে চলে গেছে! সুন্নী মুসলমান সমাজের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এখন উপস্থিত। [নোট: শান-শওকতপূর্ণ অথচ হেদায়াতশূন্য মসজিদের হাদীসটি লিপিবদ্ধ আছে ‘বিহারুল আনওয়ার,’ ২য় খণ্ডে, ১৯০ পৃষ্ঠায়]
৩/ - মাদ্রাসা
ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা আরম্ভ হয়। সূফী-বুযূর্গানে দ্বীন (রহ.) এই মহৎ কাজে ব্রত হন। সে সময় এসব মাদ্রাসায় ইসলামের যাহেরী/প্রকাশ্য ইলমের পাশাপাশি তাসাউফ-তরীক্কতের বাতেনী/আধ্যাত্মিক জ্ঞানেরও দরস তথা পাঠ দেয়া হতো। কেননা আমরা জানি, স্রেফ যাহেরী ইলম চর্চা করলেই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর উত্তরাধিকারী আলেমে হক্কানী/রব্বানী হওয়া যায় না। এর জন্য তাসাউফ/তরীক্বতের বাতেনী ইলম চর্চাও বাধ্যতামূলক। নতুবা কেউই পূর্ণতাপ্রাপ্ত (কামিল-মুকাম্মিল) হবেন না (এ বিষয়ে আমার অনূদিত ‘তাসাউফ প্রবন্ধ সমগ্র’ বইটির লিঙ্ক মন্তব্যে দেখুন)। কিন্তু মুসলমানদের দুরবস্থা এক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। ভ্রান্ত/পথভ্রষ্ট ৭২টি দল-উপদল এখানেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। উপরন্তু, আমাদের সুন্নী মাদ্রাসাগুলোতেও পূর্ববর্তী (গাউসে পাক বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহ প্রবর্তিত) দরসে নিজামী-জাতীয় শিক্ষাক্রমের অনুপস্থিতির দরুন তাসাউফ-তরীক্বতের বিভিন্ন সিলসিলার একে অপরের প্রতি যে সহিষ্ণু ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি তা এখন অনুপস্থিত। সুন্নী আলেম-উলামা পূর্ববর্তী সূফী-দরবেশ তথা বুযূর্গানে দ্বীনের জীবনাদর্শ অধ্যয়ন করে তা হতে শিক্ষা ও দীক্ষা নিতে পারেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
শেষ কথা
আমার এই পোষ্টের শিরোনামে একটি আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে। মাযার, মসজিদ ও মাদ্রাসার এই সুন্নী কাফেলা হাইজ্যাক করার চক্রান্ত চলছে। তাই আমাদের দেশের সুন্নী মুসলমান সমাজের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। নচেৎ বর্তমান ধারা চলতে থাকলে গোমরাহী সর্বগ্রাসী হবে এবং মুসলমানদের এর দরুন পস্তাতে হবে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন, আমীন।