*অনলাইনে ধর্মনীতির অনুসরণ, না এজেন্ডার বাস্তবায়ন?*
কতিপয় ফেইসবুকারকে দেখছি পোষ্টের এ বিষয়টিকে কোনোক্রমেই মেনে নিতে নারাজ। তাঁরা দাবি করছেন যে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ মর্মে কোনো স্পষ্ট বাণী নেই। তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে নিম্নোক্ত হাদীসই তাঁদের ওই দাবিকে সমূলে উৎপাটিত করেছে। মনে রাখবেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ তিন প্রকার: (১) তাঁর বাণী যা সুন্নাতে কওলী; (২) তাঁর কাজ যা সুন্নাতে ফে’লী; এবং (৩) সুন্নাতে তাকরীরী যা তাঁর সামনে করা হয়েছে, কিন্তু তিনি নিষেধ করেননি। অতএব, এর পক্ষে স্পষ্ট দলিল হচ্ছে নিম্নের রওয়ায়াত/বর্ণনা -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন:
روى عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: كنا نقول والنبي صلى الله عليه وسلم حي: أفضل هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي فيبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فلا ينكره .
অর্থ: আমরা এ কথা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (যাহেরী) হায়াতে জিন্দেগীতে বলতাম: “প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে এই উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হয়রত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); এরপর হয়রত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); এরপর হযরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); এরপর হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনোই এ কথাকে নিষেধ করেননি। [আল-বুখারী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কৃত ‘মানা’ক্বিব, ৩৪৬৮; সুনানে আবী দাউদ (রহমতুল্লাহি আলাইহি), কিতা’বুস্ সুন্নাহ, ৪৬২৭, ৪৬২৮, ৪৬২৯; ইবনে মাজাহ (عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ), ‘মোক্বাদ্দমা’, ১০৬; সুনানে তিরমিযী (রহমতুল্লাহি আলাইহি), ‘মানা’ক্বিব’, ৩৭০৭ এবং ইমাম আহমদ (রহমতুল্লাহি আলাইহি), ১:১১৪; ইমাম তিরমিযী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন]
বি.দ্র. এতদসংক্রান্ত দলিলসমৃদ্ধ আমার পূর্ববর্তী লেখাটি তাই আবার শেয়ার করলাম। তরুণ সুন্নী অনলাইন এ্যাকটিভিষ্টদের বলবো, এজেন্ডাধারীদের চিহ্নিত করে রাখুন এবং সবাইকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করুন, যাতে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
*বিশেষ জ্ঞাতব্য*
একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। সাহাবা (রা.)-মণ্ডলীর মধ্যে কাউকে বড় করা এবং অপর কাউকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এসব লেখায় আমার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করা হতে আমি বিরত থেকেছি। বরং ইসলামী দলিলাদি হতে যা প্রকাশিত হয়েছে, তাই তুলে ধরা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আল্লাহতায়ালা ও প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুস্পষ্ট বাণী, সংশ্লিষ্ট সাহাবা (রা.)-বৃন্দের ভাষ্য ও পূর্ববর্তী সুন্নী ইমামমণ্ডলীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। যেহেতু অনলাইনে সক্রিয় কতিপয় এজেন্ডাধারী ভ্রান্ত মতবাদী ইতর লোক ফেইসবুকে দলিলাদির অপব্যাখ্যা দ্বারা এদেশের সুন্নী মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে, সেহেতু এই আলোচনা করতে আমি বাধ্য হয়েছি। এতে আমার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত হয়নি।
*প্রিয়নবী (ﷺ) কর্তৃক হযরত আবূ বকর (রা.)-কে নামাযে ইমামতির নিয়োগ দান ছিলো প্রতীকী*
সম্প্রতি আমার লেখা প্রথম দুই খলীফা (রা.)-এর ‘আফযালীয়্যাত’/শ্রেষ্ঠত্ব-সংক্রান্ত পোষ্টগুলো এজেন্ডাধারীদের মাঝে বেশ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। তাঁরা অনেক অপযুক্তি ও অস্পষ্ট বিষয়াদি উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো, প্রিয়নবী (ﷺ) কর্তৃক আপন বেসাল শরীফের আগে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে নামাযে ইমামতির নিয়োগ দানের মাধ্যমে তাঁকে পরবর্তী খলীফা মনোনয়নে এমন আর কী ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে? এ রকম ইমামতির জন্যে নিয়োগ তো বর্তমানে হরহামেশাই ঘটছে! মসজিদ কমিটি তো হাফেজে কুর’আনকেও নামায পড়াবার জন্যে নিয়োগ দিচ্ছে! নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক!
এই অপযুক্তির খণ্ডনে শুধু এতোটুকু বলবো, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে যিনি আপন বেসাল শরীফের আগে ইমামতির দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, আল্লাহতায়ালার মাহবূব, সরকারে দো জাহান, রহমতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরতে নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি আর আমাদের যুগের মসজিদ কমিটি এক সমান হলো? বস্তুতঃ তাঁর এই নিয়োগ দান ছিলো প্রতিনিধিত্বের প্রতীকস্বরূপ - তাঁরই খেলাফত ও বেলায়াতের প্রথম প্রতিনিধিস্বরূপ, যার সাথে অন্য কারো তুলনা করা স্রেফ বেয়াদবি! যে বা যারা এ রকম তুলনা করছে সে বা তারা গোস্তাখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তারা অবশ্যঅবশ্য ইসলামের শত্রুদের মদদপুষ্ট হয়ে শত্রুতার এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপতৎপর।
পুনশ্চ: আরেকটি অপযুক্তি পেশ করা হয়েছে যে ইমাম মাহদী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও পয়গাম্বর ঈসা (আলাইহিস সালাম) যখন আসবেন, তখন পয়গাম্বর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ইমাম মাহদী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইমামতিতে নামায পড়বেন। এতে তিনি কি ছোট হয়ে যাবেন না? এর উত্তর হলো, যিনি (দ.) হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইমামতি দিয়ে মনোনীত করেছিলেন, সেই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ইমাম মাহদী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে রূহের জগতে কর্তৃত্বদান (অথরাইজ) করেছেন, আর তিনি তা হাদীস শরীফে ঘোষণা করেছেন। তাঁর হুকুমই আমাদের শিরোধার্য।
*সাহাবা (রা.)-বৃন্দের প্রতি মন্দ ধারণা রাখার বিষয়টি কবরের প্রশ্নোত্তরে প্রভাব ফেলবে কি-না?*
সম্প্রতি সুন্নী ঘরানা হতে উৎপন্ন জনৈক সুবক্তা আলেম বলেছেন যে কোনো সাহাবী (রা.)-এর ব্যাপারে কী ধারণা রাখা হয়েছিলো তা কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নোত্তরের সময় জিজ্ঞেস করা হবে না। তিনি আলোচ্য হাদীসটির কিয়দংশ উদ্ধৃত করেছেন মাত্র, কিন্তু আসল অংশ করেননি। সেটা আরো বিবৃত করে - “তোমার নবী কে?” এরই সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি রওয়ায়াতে এসেছে - مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم؟ - অর্থ: “এই যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে” [বুখারী, ১৩৩৮]? ওই সময় প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরে হাজির থাকবেন এবং তাঁকে দেখিয়েই ফেরেশতাবৃন্দ এই প্রশ্নটি করবেন। যে ব্যক্তি তাঁর সাহাবী (রা.)-এর প্রতি অপবাদ দিতো, গালমন্দ করতো, তার প্রতি যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তষ্ট থাকবেন, তা তো বিভিন্ন হাদীসে তিনি ব্যক্ত করেই দিয়েছেন। ফলে কবরের সওয়াল-জওয়াব যে গালমন্দকারী ব্যক্তির পক্ষে যাবে না, তা তো সহজেই অনুমেয়। প্রশ্নোত্তর চলাকালীন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সন্তুষ্ট ও কোমল সুন্দর অবয়বে দেখতে পারার ওপরই পরীক্ষাদাতার সাফল্য নির্ভর করবে। যাদের মনে বক্রতা বিরাজমান, কোনো রকম আকীদাগত ত্রুটি বিদ্যমান, তারা তাঁকে সেই সন্তুষ্ট সুরতে দেখতে সক্ষম হবে না।
*হিজরতকালে শত্রুপরিবেষ্টিত গুহার ভেতরে হযরত আবূ বকর (রা.) নিজের জন্যে দুঃখ করেছিলেন কি?*
আফসোস, শিয়ালের দল যেমন বিভিন্ন দিক হতে ‘হুক্কা হুয়া’ রবে ডেকে উঠে, ঠিক তেমনি দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী সাহাবা (রা.)-বিদ্বেষী শিয়াচক্রও তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ফেইসবুকের বিভিন্ন কোণা থেকে আকস্মিক চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। অতি সম্প্রতি এরকম একটি পোষ্ট আমার নজরে পড়েছে, যেখানে হিজরতকালে শত্রুপরিবেষ্টিত গুহায় আশ্রয়গ্রহণকারী প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁরই সাহাবী হযরতে আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে যেয়ে মূল লিপির বিকৃতি সাধন করা হয়েছে এবং তা দ্বারা হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে এ মর্মে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, তিনি নাকি ওই সময় নিজের জন্যে দুঃখিত হয়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক!
চলুন, আল-কুর’আনের মূল লিপিতে কী বলা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করা যাক এবং তাফসীরকারের ভাষ্যও তুলে ধরা যাক। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন:
لاَ تَحْزَنْ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَا.
অর্থ: (যখন তাঁরা উভয়ই গুহার মধ্যে ছিলেন), যখন আপন সঙ্গীকে (নবী পাক) ফরমাচ্ছিলেন, ‘দুঃখিত হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। [আল-কুর’আন, ৯/৪০; নূরুল ইরফান]
হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী আশরাফী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন:
“আমার জন্যে দুঃখ কোরো না (لاَ تَحْزَنْ)।” কেননা সিদ্দীক্বে আকবর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর মনে নিজের জন্যে দুঃখ ছিলো না। নিজেকে তো (গুহার ভেতরে) সাপ দিয়ে দংশন করিয়েছিলেন (যাতে নবী পাককে সেটা দংশন না করে)। হুযূরের (দ.) প্রতি উৎসর্গ হয়েছিলেন। যদি নিজের জন্যে দুঃখ থাকতো, তবে হুযূরকে (দ.) কাঁধের উপর উঠিয়ে এগারো মাইল অতিক্রম করে পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করতেন না। আর একাকী অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করতেন না। সাপ দ্বারা নিজেকে দংশন করাতেন না। তাঁর এ দুঃখও ইবাদত ছিলো। বস্তুতঃ তাঁকে হুযূরের (দ.) সান্ত্বনা দেওয়াও ইবাদত। সুতরাং মহান রব/প্রভু ওই দুই মহান ব্যক্তিত্বকে মাকড়সার জাল ও মাদী-কবুতরের ডিম দ্বারা রক্ষা করেছেন। [সূরাহ তওবাহ, ৪০ আয়াত, ১১৩ নং টীকা; নূরুল ইরফান]
এর সাথে আমি আরো যোগ করবো, মক্কার কুফফার প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্যে ১০০টি উট পুরস্কারস্বরূপ ঘোষণা করেছিলো। হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এই বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ, কোনো এক জিহাদে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তাঁবু রাতে পাহারা দেওয়ার কথা সাহাবা (রা.)-বৃন্দ আলোচনায় আনার সাথে সাথে অতি ক্ষিপ্রতা সহকারে হযরতে আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তরবারি হাতে উঠে দাঁড়ান এবং প্রহরাস্থলে অবস্থান নেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-মণ্ডলী তাঁর তেজস্বিতা ও সাহসিকতা দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। এগুলো ইতিহাসের ঘটনা যা বিভিন্ন বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অতএব, কিছু গণ্ডমূর্খ লোকের ফেইসবুক পোষ্টে এ ব্যাপারে কুৎসা রটনা করা হলে সুন্নী মুসলমান সমাজ তাতে বিভ্রান্ত হবেন না।
*হযরত আবূ বকর (রা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব*
হযরত ইবনুল হানাফীয়্যা (রা.)-এর বর্ণনায় ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু.)-এর প্রদত্ত ভাষ্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে “প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে” খায়র (خَيْر) তথা সেরা (ব্যক্তিত্ব) হলেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। [রেফারেন্স: ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (হযরতে ইমামে আলী ইবনু আবি তালিবের পুত্র) থেকে বর্ণিত হয়েছে - (قلت لأبي أي الناس خير بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال: أبو بكر، قلت ثم من؟ قال: ثم عمر، وخشيت أن يقول عثمان، قلت ثم أنت؟ قال: ما أنا إلا رجل من المسلمين) رواه البخاري 3671 - “আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পর মানুষের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? তিনি উত্তরে বললেন, 'আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।' আমি প্রশ্ন করলাম, 'তারপর কে?' তিনি জবাবে বললেন, 'তারপর 'উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।' আমি ভয় পেয়েছিলাম যে তিনি 'উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে আপনি কী?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন মাত্র’। আল-বুখারী, ৩৬৭১]
‘খায়র’ শব্দটি ব্যাখ্যা করা দরকার। কেননা মহাভ্রান্ত শিয়াচক্র এর ব্যাপক অর্থকে ধামাচাপা দিয়ে দাবি করে থাকে যে হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ‘খায়র’ শব্দটি ব্যবহার করে স্রেফ উত্তম বুঝিয়েছেন, কিন্তু ধর্মীয় জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বকে উদ্দেশ্য করেন নি। বস্তুতঃ এটা তাদের অপব্যাখ্যা ও খণ্ডিত চিত্র প্রদর্শন ছাড়া কিছু নয়। এর দলিল হচ্ছে হযরত হুযায়ফাহ ইবনে ইয়ামান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস - قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ - “আমি (মানে হুযায়ফাহ) বল্লাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), নিশ্চয় আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও মন্দের (তথা অকল্যাণের) মধ্যে (নিমজ্জিত), অতঃপর আল্লাহতায়ালা আমাদের এনে দিয়েছেন এই খায়র/কল্যাণ তথা দ্বীন-ইসলাম (জ্ঞান যা অজ্ঞতা ও মন্দের বিপরীত)” [মুসলিম শরীফ, ৪৬৭৯]। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেন - مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِخَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ - “আল্লাহ্ যার খায়র/কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন” [বুখারী শরীফ, ৭৩১২]। এখানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে খায়র ধর্মীয় জ্ঞানের ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্যকৃত।
সারবস্তু হলো, এই খায়র-বরকত প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে সর্বোচ্চ পরিমাণে হযরতে আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-ই ধারণ করেন! এ তো স্বয়ং ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর ভাষ্য! দুঃখিত শিয়াচক্র, তাঁর কথা না মানাটা তাঁরই প্রতি স্রেফ বেয়াদবি ছাড়া কিছু নয়। আমরা সুন্নীরা এখানে লাচার। ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর এই কথাই আমাদের শিরোধার্য! তিনি তাঁর কথা না মানলে (ভীতিকর) প্রহারের হুমকিও দিয়েছেন একটি বর্ণনায়! অতএব, (আখেরাতে) তাঁর উত্তম-মধ্যমের জন্যে তৈরি থেকো, ওহে শিয়া গোষ্ঠী!
[বি.দ্র. বেশির ভাগ তরীকতের সিলসিলাহ হযরতে ইমামে আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু হতে এসেছে বলে তাঁকে শিয়াচক্র শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চায়। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পছন্দকে তারা অবজ্ঞা করে চলেছে। সাহাবীয়্যত যে বেলায়াতের সর্বোচ্চ স্তর, এ কথা তারা বিস্মৃত হয়। যদি তাই না হবে, তবে গাউছে পাক বড়পীর সাহেব কেবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি কেন হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মোকাবিলায় নিজেকে এতো ক্ষুদ্র বিবেচনা করলেন? অতএব, তরীকতের কথা বলার সময় আদব বজায় রাখুন! ফেইসবুকে ইদানীং কতোগুলো এজেন্ডাওয়ালা বেয়াদবের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি।]