আলোচ্য বিষয়টির প্রতি সবার, বিশেষ করে দেশের কর্ণধারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই আমি। আজ (১৭/০৬/২০২৪) অনলাইনে (সময় টিভির ভিডিও ফুটেজে) দেখলাম, দেশের কোথাও কোথাও এবং ঢাকায়ও কিছু কিছু জামাতে সৌদি আরবের অনুসরণে ঈদের নামায পড়া হয়েছে। অথচ সরকারি সংস্থা ইসলামী ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটি আগামীকাল ১৭ তারিখে ঈদ হবে বলে জানিয়েছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে ওই কমিটির যথার্থতা ও কার্যকারিতা রইলো কই? এ যেনো রাস্তায় যে যার মতো অনিয়মের হদ্দ করে গাড়ি চালনার দৃষ্টান্ত! আমরা সরকারের কাছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের এবং দেশের গণ্যমান্য আলেম-উলামার এতদসংক্রান্ত সর্বসম্মত রায় প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান মোতাবেক এ বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। জানি, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মুসলিম কমিউনিটি সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে ঈদ পালন করে থাকেন। তা পালন করেন না শুধু এ উপমহাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়। এর পক্ষে যুক্তি-প্রমাণও রয়েছে। আমি শরঈ দলিলগুলো প্রথমে পেশ করবো এবং এরপর আক্বলী তথা বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব দেবো।
*শরঈ দলিল*
প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন:
" الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ إِلاَّ أَنْ يُغَمَّ عَلَيْكُمْ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ ".
অর্থ: মাস ঊনত্রিশ রাত্রবিশিষ্ট হয়ে থাকে। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আরম্ভ করবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফতার (ঈদ) করবেনা। হ্যাঁ, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। [মুসলিম শরীফ, ২৩৭৮ (আন্তর্জাতিক নম্বর); ইসলামী ফাউন্ডেশন লিঙ্ক - https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=11741 ]
ওপরে উক্ত হাদীসটিতে খালি চোখে চাঁদ দেখার কথা বলা হয়েছে। বিগত চৌদ্দ শ বছরে এভাবেই ঈদ উদযাপন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদ দেখে জগতে এক দিনে ঈদ উদযাপনের ধারণাটি অতি সাম্প্রতিক। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগেও মূল আরব অঞ্চলে এ প্রথার অস্তিত্ব ছিলো না, আমাদের দেশে তো নয়ই। শরীয়তের দালিলিক প্রমাণের নিরিখে এ রকম ঐকমত্য সিদ্ধ নয়, বরং ইবাদতে নব আবিষ্কার তথা বিদ’আত। কেননা, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন -
«خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ إِنَّ بَعْدَهُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ وَيَنْذُرُونَ وَلَا يفون وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَيَحْلِفُونَ وَلَا يستحلفون» . مُتَّفق عَلَيْهِ
অর্থ: আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক (সাহাবীদের যুগ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, তাদের পর এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দিবে অথচ তাদের কাছ হতে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানত করবে, তাদের আমানাতদারীর উপর বিশ্বাস করা যাবে না। তারা মানৎ করবে; কিন্তু তা পূর্ণ করবে না, তাদের মধ্যে স্থূলতা প্রকাশ পাবে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, তারা (নিষ্প্রয়োজনে) শপথ করবে, অথচ তাদের কাছ হতে শপথ চাওয়া হবে না। (বুখারী ও মুসলিম) [ইসলামী ফাউন্ডেশন লিঙ্ক: https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=85986 ]
এটাই সেই যুগ যখন ধর্মীয় পদে সমাসীন লোকেরা ধর্মকে অধর্ম বানাবে! সবকিছু উল্টাপাল্টা করবে। যা আমরা সারা জীবন দেখিনি, তাই এখন ধর্ম হিসেবে চালিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। যদি কেউ ধর্ম পালনে সত্যনিষ্ঠ হন, তবে তাঁদের পক্ষে সেরা যুগের মু’মিন জনগোষ্ঠীকে অনুসরণ করাই অত্যাবশ্যক হবে। খালি চোখে চাঁদ দেখে ঈদ পালন করতে হবে।
*আক্বলী/বৃদ্ধিবৃত্তিক জবাব*
প্রযুক্তির সহায়তায় চাঁদ দেখে সৌদির অনুসরণে ঈদ পালন করার মধ্যে সমস্যা নিহিত। এটা পৃথিবীর স্থানীয় সময়কালের বিভিন্নতা। ধরুন, সৌদি আরবে সকাল ৭টা বা ৮টায় জামাত, কিন্তু বাংলাদেশে তখন ৩ ঘণ্টা যোগ করে প্রায় দুপুর ১১টা। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে আরো ২ বা ৪ ঘণ্টা যোগ করতে হবে। মানে সেখানে যোহরের নামাযের ওয়াক্ত। সৌদি থেকে উত্তরে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলো পিছিয়ে আছে ৩ ঘণ্টা। সৌদিতে সকাল ৮টা হলে ইউরোপে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত-প্রায়। সৌদির অনুকরণে নামায পড়তে হলে তাদের সময়সূচিও বজায় রাখতে হবে! আগে বা পরে নামায পড়লে চলবে না!
প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে যাঁরা দূরবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে চাঁদ দেখে ঈদ পালন করছেন, তাঁরা একই প্রযুক্তির দান টেষ্ট-টিউব বেবী নেয়ার ব্যাপারে কী বলবেন? এই প্রযুক্তিতে কোনো স্বামী বা স্ত্রী অন্যের সহায়তায় সন্তান গ্রহণ করতে সক্ষম। কিন্তু তা কি শরীয়তে বৈধ হবে? নাকি হারাম/নিষিদ্ধ হবে? চর্মচক্ষে চাঁদ দেখে রোযা রাখতে এবং রোযা ছাড়তে বলা হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে আদেশ অমান্য করাও নিষিদ্ধ হবে।
পরিশেষে বলবো, ইসলামী ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞ আলেম-উলামা কর্তৃক এ ব্যাপারে তাঁদের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত প্রদান এখন সময়ের দাবি।
*সমাপ্ত*
পুনশ্চ:
প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে আধুনিক মারণাস্ত্র ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন। এর ফলাফল ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন বলুন, এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব সভ্যতার জন্যে কতোখানি সুফল বয়ে এনেছে? স্রেফ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধুয়ে পানি খেলে একদিন দেখা যাবে দুনিয়া থেকে মানবজাতির বিনাশ হয়েছে, ঠিক যেমনটি ডায়নোসোর প্রজাতির হয়েছিলো।