Sunday, 12 May 2019

ইফতার একটি নিখুঁত ইবাদত


 ইমরান বিন বদরী 
══◉◉══

নাহ'মাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বা’দ। 

ইফতার (إفطار ) শব্দটি আরবী ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে। ইফতার শব্দের অর্থ বিরতি, ভঙ্গ করা বা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার গ্রহণ। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। রোজা বা সাওম পালনে ইফতারের ফজিলত অপরিসীম এবং রোজাদারদের জন্য সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ।

মাহে রমজান মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ অনুভূতির ফলে এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় রমজানের ইফতারের মাধ্যমে।

🔰রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না। অর্থাৎ, রোজাদারের সওয়াব কমবে না। এ রকম সওয়াব আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারা হলেও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন, যার দরুন সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বায়হাকী)

 তবে যে ইফতার মাহফিলে ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের স্থলে এশার নামাজের সময় চলে আসে, সে ইফতার মাহফিল জানিনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কতোটুকু গ্রহণযোগ্য। রাজকীয়ভাবে ইফতার না করে ইফতারের পরপর মাগরিবের নামাজের দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সুন্নাতের পর ফরজ আদায় করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সম্প্রতি ইফতারকে কেন্দ্র করে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ও ভোজনবিলাসিতা লক্ষ্য করা যায়। ইফতার শুধু খাওয়ার নাম নয়, বরং একটি নিখুঁত ইবাদত।

এ ইবাদতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো পালন করা মুসলমানদের জন্যে খুবই দুঃখজনক। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। সময় হওয়া মাত্রই তিনি দেরি না করে ইফতার করতেন। নাসাঈ শরীফের এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে:

🔈 হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আনাস, আমি রোজা রাখতে আগ্রহী, আমাকে আহার করাও।’ আমি তাঁর সামনে কিছু শুকনো খেজুর ও পাত্রে পানি রাখলাম। (হজরত) বেলালের প্রথম আজানের পর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন।” তিনি কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার সেরে নিতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। এই ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইফতার।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইবাদত হিসেবে ইফতার করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

Tuesday, 7 May 2019

✯শাফা`আতে রাসুল (সঃ)✯


════❖════ ইমরান বিন বদরী

নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বা’দ। সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের প্রিয়নবী সায়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।

 শাফাআত-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সুপারিশ, মাধ্যম ও দু’আ বা প্রার্থনা। একজন উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এর চেয়ে বড় কী আশা থাকতে পারে যে, কাল ক্বিয়ামতের কঠিনতম সময়ে নবী রাহমাতুল্লীল আলামীনের শাফা`আত প্রাপ্তি হবে ! কতইনা সৌভাগ্যবান ওইসব ব্যক্তি,যাঁদেরকে আল্লাহর হাবীব (দ:) হাশরের মাঠের মহাসংকটের দিনে সুপারিশ করবেন। আখেরাতে অনুষ্ঠেয় শাফাআতের প্রার্থনার বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। শাফা`আত নিয়ে লেখার কখনো ইচ্ছা ছিলো না, কারণ সবাই জানি যে আমরা গুনাহগার। কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারে বিচার দিবসে স্ব স্ব অপরাধের কারণে সেই সৎসাহস নেই যে বলবো - হে আল্লাহ আমি পাপমুক্ত, আপনার বিচারে হিসাব ছাড়াই আপনি আমাকে জান্নাত দান করুন। আর আমরা বলতে পারবো না বলেই এই গুনাহগার উম্মতের মুক্তির জন্য ১৪০০ বছর আগে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে 'রাব্বী হাবলী উম্মাাতী' রাব্বী হাবলী উম্মাাতী' বলে বলে কান্নাকাটি করেছিলেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাললাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম। কিন্তু আজ অনেকে সেই হাবীবুল্লাহ (দ:)’এর শাফা`আতকে পরোক্ষভাবে সুরা যুমার ৪৪ আয়াত দ্বারা অস্বীকার করছে। অথচ এতো এতো সহীহ হাদিস থাকা সত্ত্বেও তারা দেখেও যেন দেখে না।

বন্ধুরা, আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই; আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে। আমি চেষ্টা করি সত্যটাকে উপলব্ধি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আমরা জানি কিতাবুল্লাহ তথা পবিত্র কুরআনে করীমের বাণীকে প্রাধান্য দিয়েই হাদীসে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে গ্রহণ করতে হবে। এখন যে আয়াতের ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত শাফা`আতকে অস্বীকার করার চেষ্টা, তা সেই সব (মক্কার) কাফেরদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলো যারা মহান আল্লাহর ওয়াহদানিয়তকে স্বীকার করেনি।

মূলতঃ সৃষ্টিকর্তার হাতেই রয়েছে সবকিছুর ক্ষমতা। সুতরাং শাফাআত-ও মহান আল্লাহর এখতিয়ারে। কিন্তু সেই শাফাআতের অধিকার যদি আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবীব (দ:)’কে দেন, তাতে আমাদেরই বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা। আল্লাহ পাক বলেন:

أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا

অর্থ: আপনার প্রতিপালক অচিরেই সেইদিন আপনাকে ‘মাক্বামে মাহমূদে’ পৌঁছিয়ে দেবেন’। [(সুরা বনী ইসরাঈল ৭৯]

প্রিয়নবী হাবীবুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন সায়্যিদুশ শুফাআ’ বা শাফাআতকারীদের সর্দার হবেন। এ সত্ত্বেও তিনি সিজদাবনত হবেন আল্লাহর দরবারে এ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

آتي تَحْتَ الْعَرْشِِ فَأَخِرُّ سَاجِدًا

অর্থ: আমি আরশের নিচে আসবো আর সিজদায় লুটিয়ে পড়বো।

 আসুন দেখি সুরা যুমার আয়াতে আল্লাহ পাক কী বলেন -

أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ شُفَعَاء قُلْ أَوَلَوْ كَانُوا لَا يَمْلِكُونَ شَيْئًا وَلَا يَعْقِلُونَ

অর্থ: তারা কি আল্লাহকে ছেড়ে সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোনো এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? (সুরা যুমার ৪৩)

قُل لِّلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا لَّهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা যুমার ৪৪)

এর পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক স্পষ্ট করেন কাদেরকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সুপারিশের আওতাভুক্ত করা হবে না।
এদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেন,

وَإِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ

অর্থ: যখন খাঁটিভাবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ ব্যতিরেকে অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে। (সুরা যুমার ৪৫)

উপরোক্ত আয়াতে দেখুন যারা মুশরিক, অর্থাৎ, আল্লার নাম ভিন্ন অন্য নাম উচ্চারণে যারা আনন্দিত হয়, তাদের জন্য শাফাআতের দরজা খোলা নেই।
🔰এবার শুনুন কাল-কিয়ামত দিবসে মুমিনদের সুপারিশকারীর প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কী বলেন:

وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ

অর্থ: তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত।
(সুরা আম্বিয়া ২৮)
আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন -
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا
দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না। (সূরা ত্বোয়া-হা ১০৯)
আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেন -

وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ

অর্থ: আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন, সে ছাড়া তাঁর কাছে কোনো সুপারিশ কারো উপকার করবে না।
(সূরাঃ সাবা ২৩)

সুতরাং কিয়ামত দিবসে নিজেদের জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাললাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের শাফা‘আত আমরা কামনা করতেই পারি। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ''আমাকে শাফায়াতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।'' সেই সাথে যেন বলি: হে আল্লাহ ! কিয়ামত দিবসে আপনি আমার ভাগ্যে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফা‘আত নছীব করুন।

🔰 হাদিস শরীফে আল্লার প্রিয় হাবীব ইরশাদ করেন:

جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الأَنْبِيَاءِ قَبْلِي، نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ، وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ، وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً، وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً، وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ "

অর্থ: হযরত জাবির ইবনুূু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোনো নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে দেয়া হয়নি:

১। আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়।
২। সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত (নামাজ) আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাত-এর ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত আদায় করে নেয়।
৩। আমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে।
৪। অন্যান্য নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন, আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।
৫। আমাকে (ব্যাপক) #শাফায়াতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
(সহিহ বুখারী/৪২৫ইফা/আহমাদ ১৪২৬৮)
➲ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: প্রত্যেক নবী (আ:)’কে তাঁর উম্মাতের ব্যাপারে একটি করে এমন দু’আর অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা অবশ্যই কবুল করা হবে। আমি সংকল্প করেছি, আমার দু’আটি পরে আমার উম্মাতের #শাফাআতের জন্য করবো।(সহীহ মুসলিম/ইফা৩৮৯)

রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আমি আমার দু‘আকে ক্বিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাতের শাফা‘আতের জন্য রেখে দিয়েছি।
➲ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

(أَنَا أَوَّلُ شَافِعٍ وَ أَوَّلُ مُشَفَّعٍ (متفق عليه

অর্থ: “আমি-ই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার শাফাআত-ই প্রথম গ্রহণ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)

أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا

অর্থ: হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাত সম্পর্কে আমি-ই হবো সর্বপ্রথম #সুপারিশকারী এবং এতো অধিক সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি ঈমান আনবে, যা অন্য কোন নবী (আ:)’র বেলায় হবে না। আম্বিয়া (আ:)’দের কেউ কেউ তো এমতাবস্হায়ও আসবেন, যার প্রতি মাত্র এক ব্যক্তি-ই ঈমান এনেছে। (সহীহ মুসলিম/ইফা ৩৮১)
➲ হজরত ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যিয়াফতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু পেশ করা হল; এটা তাঁর কাছে পছন্দনীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক টুকরা খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানবজাতির সরদার হবো। তোমরা কি জানো, আল্লাহ কীভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহ্বানকারীর ডাক সবার কাছে পৌঁছোয়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোনো কোনো মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করো নি, তোমরা কী অবস্থায় আছো এবং কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছো? তোমরা কি এমন ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের দরবারে সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা আদম আলাইহিস্ সালাম আছেন (চলো তাঁর কাছে যাই)। তখন সকলে তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে, হে আদম (আলাইহিস সালাম)! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকেছেন। তিনি ফিরিশ্‌তাদেরকে (আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের) নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে আপনাকে সিজ্‌দাও করেছেন এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য রবের কাছে সুপারিশ করবেন না? আপনি দেখেন না আমরা কী অবস্থায় আছি এবং কী কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, এর আগে এমন রাগান্বিত হননি, আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে বৃক্ষটি থেকে (ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তা খেয়েছিলাম। এখন আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তোমরা আমি ছাড়া অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে চলে যাও। তখন তারা নূহ আলাইহিস্ সালামের কাছে আসবে এবং বলবে, হে নূহ (আলাইহিস্ সালাম)! পৃথিবীবাসীর কাছে আপনি-ই প্রথম রাসূল আলাইহিস্ সালাম। আল্লাহ আপনার নাম রেখেছেন কৃতজ্ঞ বান্দা। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা কী ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছি? আপনি দেখছেন না আমরা কতইনা দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করবেন না? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়ে আছেন, যা ইতিপূর্বে হন নাই এবং এমন রাগান্বিত পরেও হবেন না। এখন আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তোমরা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুহাম্মদ)–এর কাছে চলে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে আর আমি আরশের নিচে সিজ্‌দায় পড়ে যাবো। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)! আপনার মাথা তুলুন এবং #সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, আর আপনি যা চান আপনাকে তাই দেয়া হবে।
(আম্বিআ কিরাম সহীহ বুখারি/ ইফা ৩১০৪)
💚 হে আল্লাহ ! কাল কিয়ামতের কঠিন সময়ে আপনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের শাফাআত প্রাপ্ত হওয়ার সেই কামীয়াবি হাছিল করার তৌফিক দান করুন। اَللهم لاَتَحْرِمْنِيْ شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ আর কিয়ামত দিবসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জন্য শাফা‘আত করবেন, আমাকে আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন, আমীন।

*সমাপ্ত*