✍ ইমরান বিন বদরী
══◉◉══
নাহ'মাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বা’দ।
ইফতার (إفطار ) শব্দটি আরবী ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে। ইফতার শব্দের অর্থ বিরতি, ভঙ্গ করা বা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার গ্রহণ। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। রোজা বা সাওম পালনে ইফতারের ফজিলত অপরিসীম এবং রোজাদারদের জন্য সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ।
মাহে রমজান মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ অনুভূতির ফলে এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় রমজানের ইফতারের মাধ্যমে।
🔰রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না। অর্থাৎ, রোজাদারের সওয়াব কমবে না। এ রকম সওয়াব আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারা হলেও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন, যার দরুন সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বায়হাকী)
➡ তবে যে ইফতার মাহফিলে ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের স্থলে এশার নামাজের সময় চলে আসে, সে ইফতার মাহফিল জানিনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কতোটুকু গ্রহণযোগ্য। রাজকীয়ভাবে ইফতার না করে ইফতারের পরপর মাগরিবের নামাজের দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সুন্নাতের পর ফরজ আদায় করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সম্প্রতি ইফতারকে কেন্দ্র করে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ও ভোজনবিলাসিতা লক্ষ্য করা যায়। ইফতার শুধু খাওয়ার নাম নয়, বরং একটি নিখুঁত ইবাদত।
এ ইবাদতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো পালন করা মুসলমানদের জন্যে খুবই দুঃখজনক। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। সময় হওয়া মাত্রই তিনি দেরি না করে ইফতার করতেন। নাসাঈ শরীফের এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে:
🔈 হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আনাস, আমি রোজা রাখতে আগ্রহী, আমাকে আহার করাও।’ আমি তাঁর সামনে কিছু শুকনো খেজুর ও পাত্রে পানি রাখলাম। (হজরত) বেলালের প্রথম আজানের পর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন।” তিনি কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার সেরে নিতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। এই ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইফতার।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইবাদত হিসেবে ইফতার করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment