Friday, 21 August 2020
একান্ত ভাবনা: আলা হযরত চেতনা!
Saturday, 15 August 2020
এদেশে আউলিয়া (রহ:)’এর অবদান ও ‘মসলক’
লেখক: এডমিন
মুসলমান তরুণদের একটা বিষয় স্পষ্ট বুঝতে হবে। আমাদের দেশটি আউলিয়া কেরাম (রহ:) আবাদ করেছেন। তাঁরা আমাদের বাপ-দাদাকে কলেমা পাঠ করিয়ে মুসলমান বানিয়েছেন। তাঁরা তাসাউফ-তরীক্বতপন্থী ছিলেন, যে পথ ও মত ক্বুরবাতে এলাহী তথা আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয়। এটা আধ্যাত্মিক লাইন, যা নফস (আত্ম) দমন ও মা’রেফত অর্জন ছাড়া হয় না; যা ওয়ায করে অথবা বইপত্র লিখে শরীয়তের শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমেও অর্জন করা যায় না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিভিন্ন তরীক্বতের মাশায়েখ (রহ:)’বৃন্দ শরীয়তের জ্ঞানে নিপুণ ও দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও সেটার শিক্ষা প্রচারে কতোখানি ওয়ায করেছেন এবং কতোগুলো বইপত্র লিখেছেন? হযরত খিযির (রা:) কতোগুলো বই লিখেছেন? তাঁকে কয় জনে চেনেন? অতএব, শরীয়তের বইপত্র লিখলেই আউলিয়া কেরাম (রহ:) হওয়া যায় না! আউলিয়া (রহ:)’এর কারামত দেখে মুসলমান হয়েছেন এদেশের মানুষ। মুসলমান হওয়ার পরেই শরীয়তের মৌলভীবর্গ ‘মসলক’-এর তা’লিম দিতে এসেছেন! অতএব, আমার সামনে বিষয়টি পরিষ্কার। আউলিয়া কেরাম (রহ:) যখন দ্বীন প্রচার করছিলেন, তখন কোনো শরীয়তের মৌলভী ‘মসলকের’ তা’লিম দিচ্ছিলেন না। কোনো ‘মসলকের’ অস্তিত্বই তখন ছিলো না। তাহলে কি ওই সকল আউলিয়া (রহ:) অ-সুন্নী? অধিকন্তু, শরীয়তের স্রেফ যাহেরী জ্ঞান ও ’মসলক’ নফস (কুপ্রবৃত্তি) দমনে সহায়ক নয়। নতুবা মৌলভী সাহেবদের মধ্যে এতো নফসানী খায়েশ ও ঝগড়া-বিবাদ কেন? বিশেষ করে ইদানীং যা ঘটছে তাতে আহলে সুন্নাতের আক্বীদাহ-বিশ্বাসই নিশ্চিহ্ন হবার দশা! এ এক মহা সঙ্কটকাল বটে!
ইমাম আহমদ রেযা (রহ:) স্রেফ একজন ইসলামী শরীয়তের গবেষক, আমাদের দেশের সর্ব-হযরত শাহ্ জালাল (রহ:), শাহ আলী (রহ:), বদর শাহ (রহ:), মোহসিন আউলিয়া (রহ:), গরীবউল্লাহ শাহ (রহ:), খাঁন জাহান আলী (রহ:), মখদুম শাহ (রহ:), সুলতান মাহী সওয়ার (রহ:), ক্বমরউদ্দীন রূমী (রহ:), শাহ জামাল (রহ:), শরফুদ্দীন চিশ্তী (রহ:), আমানত শাহ (রহ:), শাহ পরাণ (রহ:), মুহাম্মদ শাহ গৌরী (রহ:) প্রমুখের মতো উচ্চ মক্বামের আউলিয়া নন। আল্লাহর দৃষ্টিতে দুটি ক্যাটেগরীর পার্থক্য মুসলমান সাধারণের বুঝতে হবে। সুন্নী উলামাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মানেই মসলকে ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রহ:)।’ কথাটা সঠিক নয়। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়া জামাআত একটা ব্যাপক টার্ম। এতে অনেক শরীয়তের ইমামের ‘মসলক’ অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ইমাম আহমদ রেযা (রহ:)’এর মসলক একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। অর্থাৎ, যাঁরা তাঁর ফিক্বহী (ইসলামী বিধানশাস্ত্রীয়) সিদ্ধান্ত অনুসরণ করেন, স্রেফ তাঁদের জন্যেই ওই মসলক। অতএব, ওই মসলক সামগ্রিক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত (সমাজবদ্ধ সুন্নীপন্থী মনুষ্যকুল) নয়। অন্যান্য ইমামমণ্ডলীর অনুসারীবৃন্দ সেটার অনুসারী নন, হতে পারেন না! তাই এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি মুসলিম সমাজে ফিতনা-ফাসাদের জন্ম দিতে বাধ্য! আমরা সবাইকে বাড়াবাড়ি পরিহার করার উদাত্ত আহ্বান জানাই।