














মুফতী আল্লামা আবুল ফজল সাইফুল্লাহ (মাঃজিঃআঃ)
মসলক শব্দের অর্থ রীতি আদর্শ, মতবাদ। মসলকে আ'লা হযরত অর্থ, মওলানা আহমদ রেজা বেরলবী নামক এক জন মওলানা তথা ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তির মতবাদ/আদর্শকে যারা অনুসরণ করে, তাদের মসলকে আলা হযরতের অনুসারী বলা হয়।
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’এর খোলফায়ে রাশেদার যুগ হতে চার মাজহাবের শেষ ইমাম আজম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) পর্যন্ত অসংখ্য মুজতাহিদ ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী (রহমতুল্লাহে আলাইহিম) প্রমুখ বড় বড় জ্ঞানীবৃন্দ ইজতিহাদ করেছেন। এঁদের অনেকে নিজেই নিজের ইজতিহাদের অনুসারী ছিলেন নতুবা নিজের চাইতে বড় জ্ঞানী কারো অনুসরণ করতেন। যেমন, সর্ব-হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উম্মুহাতুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর তাকলীদকে অপরাপর সাহাবী (রা:)’মণ্ডলী অনুসরণ করতেন। কিন্তু খাইরুল করণের পর এ তাকলীদি ইজতিহাদ আর বেশি দূর এগোয়নি। শেষ অবধি শাফেয়ী মালেকী হাম্বলী ও হানাফী মাযহাবে তাকলিদী ইজতিহাদ’কে সমসাময়িক উলামায়ে আহলে সুন্নাহ’বৃন্দের ইজমা বা ঐকমত্যে সীমাবদ্ধকরণ হয়। উসূলে দ্বীনের ভিত্তি চারটি। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাহ ও কিয়াস। চার মাজহাব চার উসূলে দ্বীনেরই সমন্বিত নাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। এজন্য ইজমায়ে উম্মাতের মাধ্যমে উসুল চতুষ্টয়ের ধারায় আজকের দিনে পঞ্চম কোনো মাজহাব গড়ার সুযোগ নেই। পঞ্চম মতবাদ, হোক সে লা মাজহাবী বা ভিন্ন নামে কোন মসলক, তা নিশ্চিত বিভ্রান্তি নয়তো গোমরাহী। চার মাজহাবের সন্মিলিত নাম মসলকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। যদি কেউ লা-মাজহাবীদের মতো চার মাজহাবের ওপর প্রতিষ্ঠিত ইজমায়ে উম্মাহ’কে অস্বীকার করে চুনের পানি দুধের ঘোলা বলে, তাহলে সাবধান! পানকারীর জিভে সেটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। সূফীয়ায়ে কেরাম (রহ:)’মণ্ডলীর মধ্যে চিন্তাধারার ভিত্তিতে একেক জনের একেক ধরনের দর্শন দেখা যায়। তাই বলে সব মানতে হবে, বা একজন আরেক জনের সাথে চিন্তার বৈপরীত্য থাকার কারণে তাঁকে ভ্রষ্ট বলার রেওয়াজ কখনো ছিলনা, এখনো নেই। চার মাজহাবে উসূল তথা মৌলনীতিগতভাবে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত, আর ফুরূয়ি তথা কিছু ছোটখাটো বা আনুষঙ্গিক মাসআলায় বৈপরীত্যও দেখা যায়। তাই বলে অনুসারীদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্বও নেই।
সম্প্রতি একজন হুজূর নিজের পছন্দের মতবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতি কয়েকটি আপত্তি দেখা দিয়েছে। যেমন -









★ আলা হযরত মসলক মতে, মহিলাদের দ্বারা মাজার জিয়ারত নিষেধ।


★ আপনাদের মেয়েরা কেউ ভার্সিটিতে, কেউ মেডিকেলে লেখাপড়া করে। যিনি ফিৎনাযুক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর দুই মেয়ে ডাক্তারী লেখাপড়া করেছে।

★আলা হযরত মসলক মতে, কোরআন খতম, বুখারী শরীফ খতম, কন্ট্রাক্ট করে ওয়াজে টাকা নেয়া হারাম।

★আলা হযরত ফতোয়া মতে, বর্তমান ব্যাংকিং লেনদেন হারাম।

★আলা হযরত মসলক মতে, সামা’ তথা (আধ্যাত্মিক) গান-বাজনা হারাম।


আর বলতে চাইনা, বাকিটা ইতিহাস!
সময় থাকতে মুখে লাগাম লাগান! মসলকে আলা হযরত দাবিদার কিছু আলেম আছেন - আপনাদের কথাবার্তা, নীতি, আদর্শ আর চেহারা-শরীরের ভঙ্গিমা রাস্তার টোকাইদের মতো। তা সংশোধন করুন। নইলে পথে ঘাটে অপদস্থ আর অপমানিত হবেন।
আলা হযরত জিন্দাবাদ!
*সমাপ্ত*
No comments:
Post a Comment