মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাযের ও নাযের
মূল: ড: জি. এফ হাদ্দাদ দামেশকী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
অনলাইন সংস্করণ সরবরাহকারী: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা
[আমার পীর ও মুরশীদ সৈয়দ মওলানা এ. জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ
সাহেব কেবলা রহমতুল্লাহি আলাইহির পুণ্য স্মৃতিতে উৎসর্গিত...]
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ
رَسُولَ اللَّهِ
-
এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর
রাসূল রয়েছেন।[১]
وَلَا
يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ
-
আর তারা পায় না তাঁর
(ঐশী) জ্ঞান থেকে, কিন্তু যতোটুকু তিনি
ইচ্ছা বা মর্জি করেন।[২]
عَالِمُ
الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا ۞إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ
-
অদৃশ্যের জ্ঞাতকারী (আল্লাহ), সুতরাং আপন অদৃশ্যের
ওপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না (কেবল) আপন মনোনীত রাসূলবৃন্দ আলাইহিমুস সালাম ব্যতিরেকে।[৩]
وَمَا
هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ
-
এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন।[৪]
ইবনে খাফিফ আশ-শিরাযী তাঁর ‘আল-আকিদা আস্ সহিহা’ গ্রন্থে বলেন:
واِعْتَقِدُ
أَنَّهُ عَالِمُ بِمَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ وَاَخْبَرَ اَنْ عِلْمِ الغَيْبِ
-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যা (এ যাবত) ঘটেছে এবং যা ঘটবে সে সম্পর্কে জ্ঞানী, আর তিনি গায়বের তথা
অদৃশ্যের খবর দিয়েছেন।[৫]
মানে হলো, আল্লাহ তাঁকে যা কিছু
জানিয়েছেন তা জানার অর্থে। আমাদের শিক্ষক মহান ফকীহ শায়খ আদিব কাল্লাস বলেন:
-
লক্ষ্য করুন, ইবনে খাফিফ এ কথা
বলেন নি ’তিনি (এ যাবত) যা
ঘটেছে এবং যা ঘটবে সবই জানেন।
শায়খ আবদুল হাদী খারসা আমাদের জানান:
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিষয়ের জ্ঞান রাখেন এবং সৃষ্টিজগতকে
সেভাবে জানেন যেমনভাবে কোনো কক্ষে উপবেশনকারী ব্যক্তি ওই কক্ষ সম্পর্কে জানেন। কোনো
কিছুই তাঁর থেকে গোপন নয়। কুরআন মজীদের দুটো আয়াত একে সমর্থন দেয়; প্রথমটি এরশাদ ফরমায়-
فَكَيْفَ
إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا
-
তবে কেমন হবে যখন আমি
(আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো, এবং হে মাহবুব, আপনাকে তাদের সবার
ব্যাপারে সাক্ষী ও পর্যবেক্ষণকারীস্বরূপ উপস্থিত করবো?।[৬]
আর দ্বিতীয়টি এরশাদ করে-
وَكَذَلِكَ
جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ
عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
-
এবং কথা হলো এ রকম যে
আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে (মুসলমানদেরকে) সব (নবীবৃন্দের) উম্মতের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি
যাতে তোমরা মানব জাতির ব্যাপারে সাক্ষী হও। আর রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হন তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষী”।[৭] মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা জানেন
না বা দেখেন নি, সে সম্পর্কে তো তাঁকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে বলা হবে না।
ওপরের এই প্রমাণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ হাদীস বা বাণী
দ্বারা সমর্থিত, যা বর্ণনা করেছেন হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহীহ, সুনান ও মাসানিদ গ্রন্থগুলোতে:
হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
" يَجِيءُ نُوحٌ وَأُمَّتُهُ، فَيَقُولُ اللَّهُ
تَعَالَى، هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ نَعَمْ أَيْ رَبِّ، فَيَقُولُ لِأُمَّتِهِ: هَلْ
بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ لاَ مَا جَاءَنَا مِنْ نَبِيٍّ، فَيَقُولُ لِنُوحٍ: مَنْ
يَشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأُمَّتُهُ،
فَنَشْهَدُ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ، وَهُوَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ: وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ
أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَالوَسَطُ العَدْلُ
-
নূহ আলাইহিস সালাম ও
তাঁর কওম (জাতি) আসবেন (বর্ণনান্তরে তাদেরকে ‘আনা হবে’) এবং আল্লাহ তা’লা তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘তুমি কি আমার ঐশী
বাণী (ওদেরকে) পৌঁছে দিয়েছিলে?’ তিনি উত্তর দেবেন, ‘জ্বি, পৌঁছে দিয়েছিলাম, হে মহান প্রতিপালক।’ অতঃপর তিনি ওই উম্মতকে
জিজ্ঞেস করবেন, ‘(আমার বাণী) কি তিনি
তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন?’ আর তারা বলবে, ‘না, কোনো নবী আমাদের কাছে আসেন নি।’ এমতাবস্থায় আল্লাহ
পাক হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-কে বলবেন, ‘তোমার সাক্ষী কে?’ অতঃপর তিনি উত্তর দেবেন, ‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর উম্মত।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাক্ষ্য দেবো যে নূহ আলাইহিস
সালাম ঐশী বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন, আর এ-ই হলো খোদার বাণীর অর্থ –
-
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا
لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ
-
এবং কথা এই যে আমি তোমাদেরকে
সব উম্মতের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি (উম্মাতান
ওয়াসাতান বা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে) যাতে তোমরা মানব জাতির ব্যাপারে সাক্ষী হও’।[৮] আল-ওয়াসাত-এর
মানে আল-আদল তথা ন্যায়বান।[৯]
ওপরের বর্ণনার ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন যে ইমাম
আহমদ ও ইবনে মাজাহ বর্ণিত একই এসনাদের অনুরূপ আরেকটি রওয়ায়াতে পরিস্ফুট হয় যে (মহানবীর)
ওই ধরনের সাক্ষ্য সকল (নবীর) উম্মতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, শুধু নূহ আলাইহিস
সালামের জাতির ক্ষেত্রে নয়:
রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, “পুনরুত্থান দিবসে
কোনো নবী আলাইহিস সালাম (তাঁর উম্মত হিসেবে) একজনকে সাথে নিয়ে আসবেন; আরেকজন দুইজন (উম্মত)
নিয়ে আসবেন; অন্যান্য নবী আলাইহিস
সালাম আরও বেশি উম্মত আনবেন। তখন প্রত্যেক নবী আলাইহিস সালাম-এর উম্মতদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস
করা হবে, ‘এই নবী আলাইহিস সালাম
কি তোমাদের কাছে ঐশী বাণী পৌঁছে দিয়েছেন?’ তারা উত্তর দেবে, ‘না।’ অতঃপর ওই নবী আলাইহিস সালাম-কে জিজ্ঞেস করা হবে, ‘আপনি কি আপনার উম্মতের
কাছে ঐশী বাণী পৌঁছে দিয়েছেন?’ তিনি বলবেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হবে, ‘আপনার সাক্ষী কে?’ তিনি উত্তর দেবেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মত।’ এমতাবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতকে
ডেকে জিজ্ঞেস করা হবে, ‘এই নবী আলাইহিস সালাম
কি তাঁর উম্মতের কাছে ঐশী বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন?’ উম্মতে মুহাম্মদী উত্তর দেবেন, ‘হ্যাঁ।’ তাঁদেরকে প্রশ্ন করা
হবে, ‘তোমরা কীভাবে জানো?’ তাঁরা বলবেন, ‘আমাদের মহানবী আলাইহিস
সালাম এসে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে আম্বিয়া আলাইহিস সালাম তাঁদের উম্মতদের কাছে ঐশী বাণী
পৌঁছে দিয়েছেন।’ আর এটাই হলো ওই খোদায়ী
কালামের অর্থ যা’তে ঘোষিত হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) তোমাদের
(মুসলমানদের)-কে সকল উম্মতের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি যাতে তোমরা সমগ্র মানবজাতির ব্যাপারে
সাক্ষী হতে পারো এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তোমাদের পক্ষে সাক্ষী
থাকেন’ (আল-কুরআন, ২:১৪৩)। এই শ্রেষ্ঠত্ব
বলতে আল্লাহ বুঝিয়েছেন ন্যায়পরায়ণতাকে (ইয়াকুলু আদলান্)।”
মোল্লা আলী কারী ‘মেশকাতুল মাসাবিহ’ গ্রন্থে হযরত নূহ
আলাইহিস সালাম-এর উল্লেখিত ওই বর্ণনার ব্যাখ্যায় বলেন:
আর তিনি (নূহ আলাইহিস সালাম) জবাব দেবেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মত’; অর্থাৎ, উম্মতে মুহাম্মদী
হবেন সাক্ষী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের (সত্যবাদিতার)
পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন। তবে তাঁর নাম মোবারক প্রথমে উচ্চারিত হওয়াটা সম্মানার্থে (লিত্
তা’যিম)। এটা সম্ভব যে
তিনি নিজেও হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-এর পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন, কেননা এর প্রেক্ষিত
হচ্ছে সাহায্য করার; আর আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান, وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ
لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا
مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ
عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ
الشَّاهِدِينَ
-
যখন আল্লাহ তাঁর আম্বিয়া
আলাইহিমুস সালামদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন’, এবং [মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে]
তিনি আয়াতের শেষে বলেন, ‘তোমরা (আম্বিয়াবৃন্দ)
তাঁর প্রতি ঈমান আনবে ও তাঁকে সাহায্য করবে’।[১০] এই বিষয়ে লক্ষ্য করার মতো হঁশিয়ারি আছে এই মর্মে
যে, যখন আম্বিয়া আলাইহিমুস
সালাম-দেরকে ও তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথমে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-কে ডাকা হবে এবং তাঁদের
পক্ষে সাক্ষী হিসেবে এই উম্মত (-এ-মুহাম্মদীয়া)-কে পেশ করা হবে, তখন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই চূড়ান্ত বিচারালয়ে উপস্থিত থাকবেন ও সাক্ষ্য দেবেন (ওয়া ফীহি
তাম্বিহুন নাবিহুন আন্নাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামা হাযিরুন নাযিরুন ফী যালিকাল
আরদিল আকবর )। [১১]
কুরআন মজীদে অন্যান্য আয়াত আছে যা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে যে হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের আমল (কর্ম) দেখেন এবং শোনেন। আল্লাহ এরশাদ ফরমান:
وَاعْلَمُوا
أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ
-
এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন ।[১২]
وَسَيَرَى
اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ
-
অতঃপর তোমাদের কার্যকলাপ
প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”[১৩] এবং فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ
وَالْمُؤْمِنُونَ “আপনি বলুন: কাজ করো; অতঃপর তোমাদের কাজ
প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মো’মেন মুসলমানবৃন্দ”।[১৪] ওপরের
এই আয়াতগুলোতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দর্শনক্ষমতাকে একদিকে
মহান রাব্বুল আলামীনের দর্শনক্ষমতার সাথেই বর্ণনা করা হয়েছে, যে মহান স্রষ্টার
দর্শনক্ষমতা সব কিছুকেই বেষ্টন করে রেখেছে, আর অপর দিকে, সকল জীবিত মো’মেন তথা বিশ্বাসী মুসলমানের দৃষ্টিশক্তির সাথেও
বর্ণনা করা হয়েছে।
শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-গোমারী বলেন:
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ
كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ۞ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
-
আল্লাহতা’লা ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারবৃন্দ!
আল্লাহকে ভয় করো এবং ত্যাগ করো যা অবশিষ্ট রয়েছে সুদের (প্রথার), যদি মুসলমান হও। অতঃপর
যদি তোমরা এই আজ্ঞানুরূপ না করো, তবে নিশ্চিত বিশ্বাস রেখো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে (তোমাদের)
যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।[১৫]
এই আয়াতে করীমা ইঙ্গিত
করে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোবারক রওযায় জীবিত আছেন এবং তাঁর
দোয়া দ্বারা সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন (অর্থাৎ, প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
নিচ্ছেন); অথবা তাঁর অন্তবর্তীকালীন
কবর-জীবনের সাথে খাপ খায় এমন যে কোনো ব্যবস্থা (অর্থাৎ, আধ্যাত্মিক ক্ষমতা)
দ্বারা ওই পাপীদের শাস্তি দিচ্ছেন। এই আয়াত হতে আমি যে সিদ্ধান্ত টানলাম, আমার আগে এই রকম সিদ্ধান্ত
কেউ টেনেছেন বলে আমার জানা নেই।”[১৬]
উপরোক্ত ভাষ্য নিম্নের প্রামাণিক দলিল দ্বারা সুন্নাহ হিসেবে আরও পাকাপোক্ত হয়:
১. হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরযখ থেকে উম্মতের সকল কাজ-কর্ম
প্রত্যক্ষ করার ব্যাপারে হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্ভরযোগ্য
বর্ণনা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, “আমার হায়াতে জিন্দেগী
তোমাদের জন্যে উপকারী, তোমরা তা বলবে এবং
তোমাদেরকেও তা বলা হবে। আমার বেসাল শরীফও তদনুরূপ। তোমাদের আমল (কর্ম) আমাকে দেখানো
হবে; তাতে ভালো দেখলে আমি
আল্লাহর প্রশংসা করবো। আর যদি বদ আমল দেখি তাহলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্যে ক্ষমা
প্রার্থনা করবো।” حَيَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُحَدِّثُونَ وَنُحَدِّثُ
لَكُمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكُمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ ۞، فَمَا رَأَيْتُ
مِنَ خَيْرٍ حَمِدْتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنَ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ
لَكُمْ [নোট-৫: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে আল বাযযার নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৩৯৭) এটা বর্ণনা করেন নির্ভরযোগ্য সনদে, যার সমর্থন রয়েছে
ইমাম সৈয়ুতীর ‘মানাহিল আল-সাফা’ (পৃষ্ঠা ৩১ #৮) এবং ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:২৮১) কেতাবগুলোতে, আল-হায়তামী (৯:২৪
#৯১), এবং আল-ইরাকীর শেষ
বই ‘তারহ আল-তাসরিব’ (৩:২৯৭)-এ, যা আল-বাযযারের এসনাদে
জনৈক বর্ণনাকারীর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে তাঁরই উত্থাপিত আপত্তিসম্বলিত ‘আল-মুগনিয়ান হামল
আল-আসফার’ গ্রন্থের (৪:১৪৮)
খেলাফ। শায়খ আবদুল্লাহ আল-তালিদী তাঁর ‘তাহযিব আল-খাসাইস আল-কুবরা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৪৫৮-৪৫৯
#৬৯৪) বলেন যে এর সনদ
ইমাম মুসলিমের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য; আর শায়খ মাহমূদ মামদুহ স্বরচিত ‘রাফ’ আল-মিনারা’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৫৬-১৬৯)
এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করে একে সহীহ সাব্যস্ত করেন। তাঁদের দু’জনের শায়খ (পীর) আল-সাইয়্যেদ
আবদুল্লাহ ইবনে আস্ সিদ্দিক আল-গোমারী (বেসাল-১৪১৩ হিজরী/১৯৯৩) তাঁর একক বিষয়ভিত্তিক
‘নেহায়া আল-আমল ফী
শরহে ওয়া তাসহিহ হাদীস ‘আরদ আল-আমল’ গ্রন্থে এই বর্ণনাকে
বিশুদ্ধ বলেছেন। এই ছয় বা তারও বেশি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আল-আলবানী ইমাম কাজী
ইসমাইলের রচিত ‘ফযল আল-সালাত’ বইটির ওপর লিখিত হাশিয়া
বা নোটে (পৃষ্ঠা ৩৭, নোট-১) এই রওয়ায়াতকে
দুর্বল বলেছে। দুর্বল সনদসমূহে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে এবং উত্তরাধিকারী
বকর ইবনে আব্দিল্লাহ আল-মুযানী হতে সাহাবীর সনদবিহীন দুটো বিশুদ্ধ মুরসাল বর্ণনায় ইসমাইল
আল-কাজী (বেসাল-২৮২ হিজরী) এটা উদ্ধৃত করেন নিজ ’ফযল আস-সালাত আলান-নবী’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৩৬-৩৯
#২৫-২৬)। শেষোক্ত সনদটিকে
বিশুদ্ধ বলেছেন মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহে শেফা’ কেতাবে (১:১০২); শায়খুল ইসলাম ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী স্বরচিত ‘শেফাউস্ সেকাম’ পুস্তকে এবং তাঁর
সমালোচক ইবনে আবদ আল-হাদীর কৃত ‘আল-সারিম আল-মুনকি’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ২১৭); এবং আল-আলবানী নিজ
‘সিলসিলা দায়িফা’ গ্রন্থে (২:৪০৫)।
তৃতীয় আরেকটি দুর্বল সনদে বকর আল-মুযানী থেকে এটা বর্ণনা করেন আল-হারিস ইবনে আবি উসামা
(বেসাল-২৮২ হিজরী) তাঁর ’মুসনাদ’ কেতাবে (২:৮৮৪) যা
উদ্ধৃত হয়েছে ইবনে হাজরের ‘আল-মাতালিব আল-আলিয়্যা’ পুস্তকে (৪:২৩); আল-মানাবীর রচিত ‘ফায়য আল-কাদির’ (৩:৪০১ #৩৭৭১) কেতাবেও উদ্ধৃত
হয়েছে যে ইবনে সা’আদ এটা তাঁর ‘তাবাকাত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম কাজী আয়ায নিজ ‘শেফা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৫৮
#৬) এবং আস্ সাখাভী
তাঁর ‘আল-কওল আল-বদী’ বইয়ে এটা উদ্ধৃত করেন।
আল-আলবানী একে দুর্বল বলার কারণ হিসেবে দেখায় যে কতিপয় হাদীসের বিশারদ মুরজি’ হাদীসবেত্তা আবদুল
মজীদ ইবনে আবদিল আযীয ইবনে আবি রাওওয়াদের স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে ইমাম
মুসলিম নিজ সহীহ গ্রন্থে তাঁর সনদ বহাল রাখেন; আর এয়াহইয়া ইবনে মা’ঈন, ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, আন্ নাসাঈ, ইবনে শাহীন, আল-খলিলী ও আদ্ দারে
কুতনী তাঁকে ‘সিকা’ হিসেবে ঘোষণা দেন; অপর দিকে শায়খ মামদুহ
প্রণীত ‘রাফ’ আল-মিনারা’ (পৃষ্ঠা ১৬৩, ১৬৭) কেতাবে বিবৃত
হয়েছে যে আয্ যাহাবী তাঁকে নিজ ‘মান তুকুল্লিমা ফীহি ওয়া হুয়া মুওয়াসসাক’ (পৃষ্ঠা ১২৪) পুস্তকে
তালিকাবদ্ধ করেন। আল-আরনাওত এবং মা’রুফ তাঁর ‘তাহরির আল-তাকরিব’ গ্রন্থে (২:৩৭৯ #৪১৬০) তাঁকে ‘সিকা’ হিসেবে ঘোষণা করেন; এর পাশাপাশি একই সিদ্ধান্ত
দিয়েছেন ড: নূরুদ্দীন ‘এতর যা উদ্ধৃত হয়েছে
তাঁর কৃত আয্ যাহাবীর ‘মুগনী’ সংস্করণে (১:৫৭১ #৩৭৯৩) এবং ড: খালদুন
আল-আহদাব নিজ ‘যাওয়াইদ তারিখ বাগদাদ’ পুস্তকে (১০:৪৬৪)।
যদি আল-আলবানী কর্তৃক রওয়ায়াতটির এই নিম্ন পর্যায়ভুক্তিকে তর্কের খাতিরে মেনেও নেয়া
হয়, তথাপিও দুর্বল মুসনাদ
বর্ণনাটির সাথে নির্ভরযোগ্য অপর মুরসাল বর্ণনা যাকে সহীহ বলেছে আলবানী স্বয়ং, তার সমন্বয় সাধন করলে
’হাসান’ বা ’সহীহ’ হিসেবে এটা চূড়ান্ত
মান অর্জন করে, এবং মোটেও ‘যয়িফ’ সাব্যস্ত হয় না। উপরন্তু,
শায়খ ইসমাইল আল-আনসারীকে খণ্ডন করার চেষ্টায় আলবানী যে ’কিতাব আল-শায়বানী’ শীর্ষক বই (১:১৩৪-১৩৫)
লিখে, তা থেকে শায়খ মামদুহ
আলবানীর নিজের কথাই উদ্ধৃত করেন: “নির্ভরযোগ্য মুরসাল হাদীস চার মযহাবে প্রামাণ্য
দলিল হিসেবে গৃহীত এবং এ ছাড়াও উসূলে হাদীস ও উসূলে ফেকাহর ইমামদের কাছে গ্রহণযোগ্য।]
অতএব, এটা প্রত্যেক যুক্তিসঙ্গত
চিন্তাধারার মানুষের কাছে সুস্পষ্ট যে কেবল মুরসাল হওয়ার কারণে এ ধরনের হাদীস দলিল
হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয় বলাটা-ই সমর্থনযোগ্য নয়।” আলবানীর স্ববিরোধিতাই শুধু নয়, তার নিজেকে নিজে পূর্ণ
খণ্ডনের বহু উদাহরণেরও একটি এটি।
শায়খ হাসানাইন মোহাম্মদ মাখলুফ তাঁর প্রণীত ‘ফাতাওয়া শরীয়্যা’ (১:৯১-৯২) গ্রন্থে লিখেন:
-
এই হাদীস বোঝায় যে মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হায়াতে জিন্দেগীতে তাঁরই উম্মতের জন্যে এক বৃহৎ
কল্যাণ, কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপস্থিতির গোপন রহস্য দ্বারা আল্লাহতা’লা এই উম্মতকে পথভ্রষ্টতা, বিভ্রান্তি ও মতানৈক্য
হতে রক্ষা করেছেন এবং তাঁরই মাধ্যমে সুস্পষ্ট সত্যের দিকে মানুষকে পরিচালিত করেছেন; আর মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেয়ার পরও তাঁর সদগুণ ও কল্যাণময়তার সাথে আমাদের
সম্পৃক্ততা অবিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং তাঁর এই উপকারিতা সম্প্রসারিত আকারে আমাদেরকে ছেয়ে
আছে। তাঁর উম্মতের কর্ম (আমল) তাঁকে প্রতিদিন দেখানো হয়, আর ভালো দেখলে তিনি
আল্লাহর প্রশংসা করেন; ছোট পাপগুলোর জন্যে
তিনি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি বড় পাপগুলো যাতে না হয় তার জন্যেও দোয়া
করেন; এটা আমাদের জন্যে
পরম ভালাই। অতএব, ‘তাঁর প্রকাশ্য জিন্দেগীতে
যেমন উম্মতের জন্যে মঙ্গল বিদ্যমান, তেমনি তাঁর বেসালের পরও তা জারি আছে।’ অধিকন্তু, হাদীসের দ্বারা সাবেত
(প্রমাণিত) যে তিনি তাঁর মোবারক রওযায় এক বিশেষ ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ জীবনে জীবিত যা আল-কুরআনের
একাধিক আয়াতে বর্ণিত শহীদদের পরকালীন জীবনের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। এই দুই ধরনের পরকালীন
জীবনের প্রকৃতি এর দাতা, মহান আল্লাহতা”লা ছাড়া জানা সম্ভব
নয়। আল্লাহ সব কিছুই করতে সক্ষম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মানসূচক
উপহার হিসেবে তাঁরই উম্মতের সকল আমল ও উম্মতকে তাঁর সামনে দৃশ্যমান করার ব্যাপারটি
পুরোপুরিভাবে যুক্তিগ্রাহ্য এবং তা (সহীহ) রওয়ায়াতেও এসেছে। এর অস্বীকার করার কোনো
উপায় নেই; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
তাকে তাঁর নূরের (জ্যোতির) দিকে হেদায়াত দেন; আর আল্লাহ-ই সবচেয়ে ভালো জানেন।”]
২.‘আল-মালাউল আলা’ (ঐশী সান্নিধ্য) সম্পর্কে
হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও অন্যান্যদের বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
-
‘‘আমার প্রভু সুন্দরতম
সুরতে আমার কাছে আসেন”; বর্ণনাকারী এ পর্যায়ে
বলেন, “আমার মনে হয় তিনি
বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্নে’।” অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ ফরমান, “আল্লাহতা’লা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আল-মালাউল আলা’-এর মানে কী [নোট-৬:
অর্থাৎ, ‘ফেরেশতাকুল যাঁদের
ঐশী সান্নিধ্য দেয়া হয়েছে’;
এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন
ইবনে আল-আসির তাঁর ‘আন্ নেহায়া’ পুস্তকে, যা অন্যান্যরাও ব্যক্ত
করেছেন]। আমি বললাম, আমি জানি না। এমতাবস্থায়
তিনি আমার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে তাঁর হাত মোবারক রাখেন, আর আমি আমার অন্তস্তলে এক স্নিগ্ধ পরশ অনুভব করি;
অতঃপর পূর্ব থেকে
পশ্চিমে অবস্থিত যাবতীয় জ্ঞান আমার অধিকারে আসে।” [নোট-৭: এই হাদীস ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন তিনটি
সনদে, যার দু’টি হযরত ইবনে আব্বাস
রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। ইমাম তিরমিযী ওই দুটোর প্রথমটিতে বলেন, ‘আসমান ও জমিনে অবস্থিত
সব কিছুর জ্ঞান’; দ্বিতীয়টিকে তিনি
‘হাসান গরিবের’ পর্যায়ভুক্ত করেন।
অপর এসনাদ এসেছে হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে (হাসান সহীহ হিসেবে), যা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করে যে এটা ঘটেছিল হুযূর
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্নে। আল-বুখারী পরের এসনাদকে ‘হাসান সহীহ’ হিসেবে ঘোষণা দেন, যা আত্ তিরমিযী তাঁর
‘সুনান’ ও ‘এলাল’ গ্রন্থ দুটোতে বর্ণনা
করেছেন; আর ইবনে হাজর কৃত
‘আল-এসাবা’ গ্রন্থে (২:৩৯৭) ব্যক্ত
মতানুযায়ী এটা অন্যান্য সব সনদ থেকে শ্রেয় এই কারণে যে, এর সম্পর্কে মুহাদ্দীসবৃন্দের
মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই (দেখুন - ‘আসমা’ হাশেদী সংস্করণ ২:৭৮)। শাকির ও আল-যাইনের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শিথিল মানদণ্ড অনুযায়ী ইমাম আহমদ ও চারটি নির্ভরযোগ্য সনদে এটা বর্ণনা করেছেন: ওগুলোর
একটি হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে যার মধ্যে যুক্তি ছিল এই কথা
- “আমার মনে হয় তিনি
বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্নে’।” (শাকির সংস্করণ ৩:৪৫৮
#৩৪৮৪=আল-আরনাওত সংস্করণ
৫:৪৩৭-৪৪২ #৩৪৮৩ এসনাদুহু যাইফ); হযরত মু’য়ায রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে অপর এক রওয়ায়াত যা ইবনে ‘আদীর ’আল-কামিল’ (৬:২২৪৪) গ্রন্থের ভাষ্যানুযায়ী ইমাম আহমদ সুস্পষ্টভাবে
সহীহ ঘোষণা করেছেন এবং তাতে এই বক্তব্যও যুক্ত ছিল, “ঘুম থেকে জেগে দেখি আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্যে” (আল-যাইন সংস্করণ ১৬:২০০
#২২০০৮); আর অবশিষ্ট দুটো নামহীন
সাহাবীদের বরাতে বর্ণিত যার মধ্যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমে না
জাগ্রতাবস্থায় তা উল্লেখিত হয় নি (আল-যাইন সংস্করণ ১৩:৯৩-৯৪ #১৬৫৭৪=আল-আরনাওত সংস্করণ
২৭:১৭১-১৭৪ #১৬৬২১ ইসনাদুহু যাইফ
মুদতারিব; আল-যাইন সংস্করণ ১৬:৫৫৬
#২৩১০৩)। শেষোক্ত এসনাদকে
আল-হায়তামী নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং এর পাশাপাশি আত্ তাবারানী কর্তৃক ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (২০:১০৯ #২১৬, ২০:১৪১ #২৯০) উদ্ধৃত ও আল-বাযযার
প্রণীত ‘মুসনাদ’ কেতাবে বর্ণিত অন্যান্য
রওয়ায়াতকেও তিনি তা-ই বলেছেন; আর তিনি আত্ তাবারানীর ‘আল-কবীর’ (৮:২৯০ #৮১১৭) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-এর এসনাদকেও ‘হাসান’ বলেছেন। এর জন্যে
দেখুন ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ (৭:১৭৬-১৭৯)। আত্ তিরমিযী
ও ইমাম আহমদের সাতটি রওয়ায়াতকে শায়খ আবদুল কাদের ও শায়খ শু’য়াইব আল-আরনাওত সহীহ
বলেছেন ইবনে আল-কাইয়েমের ‘যাদ আল-মা’আদ’ (৩:৩৩-৩৪, নোট-৪) গ্রন্থের ওপর
কৃত তাঁদের সংস্করণে। হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ইবনে
আবি ‘আসিমও নিজ ‘আস্ সুন্নাহ’ (পৃষ্ঠা ২০৩ #৪৬৫) পুস্তকে এই হাদীস
বর্ণনা করেন যার সনদ আলবানীর মতে ‘হাসান’। হযরত আবদুর রহমান ইবনে ‘আইশ রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে এটা আরও বর্ণনা করেছেন আদ্ দারিমী নিজ ‘মুসনাদ’ (২:১৭০ #২১৪৯) কেতাবে এবং
দুটো এসনাদে আত্ তাবারানী স্বরচিত ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ (৫:৪৮-৫০ #২৫৮৫-২৫৮৬) বইয়ে; এ ছাড়াও অপর এক সনদে
তাঁর ‘মুসনাদ আল-শামিয়ীন’ পুস্তকে (১:৩৩৯ #৫৯৭)। হযরত উম্মে
আত্ তোফায়েল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেও আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ’ (৬:১৫৮ #৩৩৮৫) গ্রন্থে আরেকটি
বর্ণনা এনেছেন যা ঘোষণা করে, “আমি আমার প্রভুকে দাড়িবিহীন যুবকের সুন্দরতম সুরতে দেখেছি”। তবে এই বর্ণনা আয্
যাহাবী তাঁর কৃত ‘তাহযিব আল-মওদু’আত’ (পৃষ্ঠা ২২ #২২) বইয়ে প্রত্যাখ্যান
করেন। এটা সাহাবী হযরত আবু রাফি’ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে (আল-এসাবা ৭:১৩৪ #৯৮৭৫) আত্ তাবারানী
উদ্ধৃত করেন স্বরচিত ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১:৩১৭ #৯৩৮)। আবু এয়ালা-ও তাঁর ‘মুসনাদ’ (৪:৪৭৫ #২৬০৮) কেতাবে এই বর্ণনা
উদ্ধৃত করেন হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। এই হাদীসের কিছু ’হাসান’ পর্যায়ের বর্ণনায়, উদাহরণস্বরূপ হযরত
আবদুর রহমান ইবনে আইয়্যাশ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে আত্ তাবারানী এবং হযরত আবু
উবায়দা ইবনে আল-জাররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে আল-খতীব নিজ ‘তারিখে বাগদাদ’ (৮:১৫১), ’আমার প্রভু আমার কাছে
আসেন’ এই কথাটির পরিবর্তে
‘আমি আমার প্রভুকে
দেখি’ বাক্যটি যুক্ত আছে; এরই ভিত্তিতে ইবনে
কাসীরের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত, যা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে। আল-আহদাব নিজ ‘যাওয়াইদ তারিখ বাগদাদ’ (৬:২৫১-২৫৩) গ্রন্থে
এবং আল-হায়তামীও সর্ব-হযরত আবু উবায়দা ইবনে আল-জাররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, সওবান রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বরাতে এই হাদীস বর্ণনা করেন, যার ফলে অন্ততঃ এগারোজন
সাহাবীর (উম্মে আত্ তোফায়েল বাদে) সূত্র এতে রয়েছে। এই হাদীসের বিভিন্ন সনদ ও বর্ণনার
তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ এবং এর ওপর আলোচনা করেছেন ইবনে রাজাব তাঁর একক বিষয়ভিত্তিক
‘এখতেয়ার আল-আওলা ফী
শরহে হাদীস এখতেসাম আল-মালা’ আল-‘আলা’ গ্রন্থে (জাসিম আল-দাওসারী
সংস্করণ, কুয়েত, দারুল্ আকসা, ১৪০৬)। আরও দেখুন
‘ইবনে আসির কৃত ‘জামে’ আল-উসূল’ (৯:৫৪৮-৫৫০)। এই হাদীসকে
সহীহ-মানের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের যাঁরা বিবেচনা করেছেন তাঁরা হলেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-আসমা’ ওয়া আল-সিফাত’ (কাওসারী সংস্করণ পৃষ্ঠা
৩০০, হাশিদী সংস্করণ ২:৭২-৭৯)
কেতাবে, ইবনে আল-জাওযী স্বরচিত
‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ (১:৩৪) পুস্তকে, ইবনে খুযাইমা তাঁর
আত্ তাওহীদ (পৃষ্ঠা ২১৪-২২১) বইয়ে এবং আদ্ দারু কুতনী নিজ ‘এলাল’ (৬:৫৬) গ্রন্থে। আস্
সাককাফ এতো দূর গিয়েছিলেন যে তিনি ইবনে আল-জাওযীর ‘দাফ’ শুবাহ আত্ তাশবিহ’ পুস্তকের ওপর নিজস্ব
সংস্করণে এই হাদীসকে বানোয়াট বলেছেন - ‘আকওয়াল আল-হুফফায আল-মানসুরা লি বয়ান ওয়াদ’ হাদীস রায়াইতু রাব্বী
ফী আহসানি সুরা’।]
৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মে’রাজ (ঊর্ধ্বগমনের)
রজনীতে সিদরাত আল-মুনতাহা (আসমানী গাছ) পার হয়ে যান এবং তাকদীর লেখায় ব্যস্ত কলমের
আওয়াজ শোনেন, তখন জিবরাইল আমীন
ফেরেশতা তাঁর সাথে আর ওপরে যেতে পারেন নি [নোট-৮: ইবনে আবি হাতিম ও ইবনে কাসীরের তাফসীর
দুটোতে উদ্ধৃত হয়েছে, ‘ফারাফাদানী জিবরীল’; অপর দিকে আল-সালেহীর
‘সুবূল আল-হুদা’ গ্রন্থে (৩:১২৯) বলা
হয়েছে, ‘ফাতা’আখখারা জিবরীল’ - দুটোরই মানে হলো ‘তিনি (জিবরীল) আমাকে
ছেড়ে পেছনে থেকে যান’; দেখুন - আল-মালেকী
প্রণীত ‘ওয়া হুয়া বিল্ উফুকি
আল-আ’লা’ (পৃষ্ঠা ৭৩, ২৭৯) এবং ‘আল-আনওয়ার আল-বাহিয়্যা’ (পৃষ্ঠা ৭৫-৭৭)]। অথচ
সকল সৃষ্টির মাঝে হযরত জিবরাইল আমীন হলেন আল্লাহর বেশ কাছের এবং আহলে সুন্নাতের মতে
ফেরেশতাকুল আল্লাহকে দেখে থাকেন। [নোট-৯: আবু আশ্ শায়খ রচিত ‘আল-আ’যামা’ ও ইমাম আস্ সৈয়ুতী
লিখিত ’আল-হাবা’ইক’ গ্রন্থগুলো দেখুন।
এতে সকল সৃষ্টির ওপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও পছন্দনীয়
হবার বিষয়টি এবং তাঁর লকব (খেতাব) ‘আফযালুল্ খালক্ক’ সাবেত হয় যা অন্যত্র লিপিবদ্ধ আছে।]
ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি
যে সব স্থানে সালাত-সালাম পাঠ করা কাম্য’ শীর্ষক অধ্যায়ে আল-কুরআনে বর্ণিত “অতঃপর যখন কোনো ঘরে
প্রবেশ করো তখন তোমাদের আপনজনের প্রতি সালাম করো” (২৪:৬১) - আয়াতটি সম্পর্কে আমর ইবনে দিনার আল-আসরাম
(বেসাল ১২৬ হিজরী)-এর ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করেন; তিনি বলেন: “যদি ঘরে কেউ না থাকে, তাহলে বলো - ‘আস্ সালামু আলান্
নবীয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।” [নোট-১০: ইমাম কাযী আয়ায কৃত ‘শেফা’ (পৃষ্ঠা ৫৫৫-৫৫৬=এসাফ
আহল আল-ওয়াফা পৃষ্ঠা ৩৬৯)।] {বঙ্গানুবাদকের নোট: ইমাম আহমদ রেযা খানের ‘তাফসীরে কানযুল ঈমান’ গ্রন্থে উক্ত আয়াতের
ব্যাখ্যায়ও ইমাম কাযী আয়াযের উদ্ধৃতির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া আছে।}
মোল্লা আলী কারী উপরোক্ত ‘শেফা শরীফ’ বইটির ব্যাখ্যায় বলেন, “অর্থাৎ, তাঁর (মহানবীর) রুহ মোবারক (পবিত্র আত্মা) সকল মুসলমানের
ঘরে উপস্থিত থাকার কারণে (সালাম দেয়া জরুরি)” {আয় লিয়ান্না রুহাহু আলাইহিস্ সালামু হাযিরুন্ ফী
বুইউতিল্ মুসলিমীন}। [নোট-১১: মোল্লা
আলী কারী প্রণীত ‘শরহে শেফা’ (২:১১৭)।]
ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি আল-আসরাম থেকে যা উদ্ধৃত করেছেন তা ইবনে জারির
তাবারী নিজ তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ইবনে জুরাইজ হতে, তিনি আতাউল্লাহ খুরাসানী
(বেসাল ১৩৫ হিজরী) হতে:
”হাজ্জাজ আমার (ইবনে
জারির তাবারী) কাছে বর্ণনা করেন ইবনে জুরাইজ থেকে, তিনি বলেন: আমি আতা‘কে (এ প্রসঙ্গে) প্রশ্ন
করি, কেউ যদি ঘরে/বাড়িতে
না থাকেন, তাহলে কী হবে? তিনি জবাব দেন, ‘সালাম দেবে এ বলে, আস্ সালামু আলান্
নাবীয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আস্ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সোয়ালিহীন, আস্ সালামু আলা আহলিল্
বায়তি ওয়া রাহমাতুাহ।’ আমি আবার প্রশ্ন করলাম, কোনো জনমানবহীন ঘরে
প্রবেশের সময় আপনি যা পড়ার জন্যে বল্লেন, তা কোত্থেকে গ্রহণ করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি শুনেছি বিশেষ
কারো থেকে গ্রহণ না করেই’।”[১৭]
আতাউল্লাহ খুরাসানী একজন পুণ্যবান মুহাদ্দীস (হাদীসবেত্তা), মুফতী (ফতোয়াবিদ)
ও ওয়ায়েয (ওয়াযকারী) ছিলেন যাঁর কাছ থেকে এয়াযিদ ইবনে সামুরা শুনেছিলেন নিম্নের বাক্যটি:
“যিকরের সমাবেশগুলো
হলো হালাল ও হারাম শেখার বিদ্যাপীঠ।”[১৮]
তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আল-বুখারী, আবু যুরা’, ইবনে হিব্বান, শু’বা, আল-বায়হাকী, আল-উকায়লী ও ইবনে হাজর প্রশ্ন তুল্লেও তাঁকে ’সিকা’ ঘোষণা করেন ইবনে মাঈন, আবু হাতিম, আদ্ দারু কুতনী, আস্ সাওরী, ইমাম মালেক, আল-আওযাঈ, ইমাম আহমদ, ইবনে আল-মাদিনী, এয়াকুব ইবনে শায়বা, ইবনে সাআদ, আল-এজলী, আত্ তাবারানী ও আত্
তিরমিযী; অপর দিকে ইবনে রাজাব
সিদ্ধান্ত নেন তিনি “সিকা সিকা”। [১৯]
মোল্লা আলী কারীর বক্তব্য সম্পর্কে এক দেওবন্দীর মিথ্যা দাবি
সম্প্রতি জনৈক দেওবন্দী লেখক এক আজব দাবি উত্থাপন করেছে যে মোল্লা আলী কারী তাঁর
‘শরহে শেফা’ গ্রন্থে নাকি আসলে
বলেছিলেন, “মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুহ (মোবারক) মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত নন ” (লা আন্না রুহাহু হাযিরাতুন
ফী বুইউতিল্ মুসলিমীন), যা মোল্লা কারীর বক্তব্যের
ঠিক উল্টো! ওই দেওবন্দী বলে:
‘‘তিনি (মোল্লা আলী
কারী) এই বিষয়ে তাঁর ‘শরহে শেফা’ গ্রন্থে আলোচনা করেছেন
যে লা আন্না রূহাহু হাযিরাতুন ফী বুইউতিল মুসলিমীন - অর্থাৎ, মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ (মোবারক) মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত মর্মে ধারণাটি ভুল। কিছু
কিছু সংস্করণে (আরবী) 'লা' শব্দটি বাদ পড়ায় কোনো
কারণ ছাড়াই কতিপয় ব্যক্তির মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে; এঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেব।[২০] মোল্লা আলী কারী স্বয়ং তাঁর সকল সুস্পষ্ট উদ্ধৃতিতে হাযের ও নাযেরের ধারণাকে নাকচ
করে দিয়েছেন। যারা তাঁর সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট (অপ্রাসঙ্গিক) উদ্ধৃতিগুলোর ওপর নির্ভর
করেন, তাঁরা সম্পূর্ণ ও
নিশ্চিতভাবে ভ্রান্ত।”[২১]
ওপরের এই ধৃষ্টতাপূর্ণ দাবি কেউ তখনি উত্থাপন করতে পারে, যখন আরবী ভাষাগত জ্ঞানে
সে মূর্খ হয়। কেননা, মোল্লা আলী কারী তাঁর
বক্তব্য আরম্ভ করেন আরবী শব্দ ‘আয়’
(অর্থাৎ/মানে) দ্বারা,
যার সাথে না-বাচক
(নফি-সূচক) বাক্য জুড়ে দেয়া আরবী ব্যাকরণগত ভুল হবে; যেমন - ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ মোবারক
মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত নন।’ সত্য হলো, আরবী ‘লা’ শব্দটি বাদ পড়ে নি, কারণ তা প্রথমাবস্থায়
সেখানে ছিলই না; আর তা ওখানে ছিল মর্মে
দাবি করাটা তাহরিফ তথা দলিল রদ-বদলের অপচেষ্টার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অধিকন্তু, মোল্লা আলী কারী ’উপস্থিত’ বোঝাতে যে (আরবী)
শব্দ ‘হাযির’ ব্যবহার করেছেন, তা পুং-লিঙ্গে (মোযাক্কের); ‘হাযিরাতুন’ তথা স্ত্রী-লিঙ্গে
(মোয়ান্নেস) নয়। কেননা, রূহের ক্ষেত্রে উভয়
লিঙ্গ ব্যবহৃত হলেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করার সময় মোযাক্কের
ব্যবহার করা অধিক যথাযথ।
এক দেওবন্দী কর্তৃক নবুয়্যতের গুণাবলী অস্বীকার
দেওবন্দীদের অপর এক ব্যক্তি যাকে কেউ কেউ ‘আলেম’ মনে করেন, সে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
প্রতি হাযের ও নাযের হওয়ার বৈশিষ্ট্য আরোপ করার বেলায় আপত্তি উত্থাপন করেছিল; কেননা তার দাবি অনুযায়ী
এই বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী একমাত্র আল্লাহতা’লারই অধিকারে। তর্কের ভিত্তি হিসেবে যদি এই কথাকে
সত্য হিসেবে ধরেও নেয়া হয়,
তথাপি যুক্তি ভুল।
কেননা, এ কথা এই রকম শোনায়
যে ‘আর রাউফ’ ও ‘আর-রাহীম’ খোদায়ী গুণাবলী হবার
কারণে সেগুলো নবুয়্যতের গুণাবলী হতে পারে না। ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর
‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থে এই কূটতর্ককে
খণ্ডন করেছেন এ কথা বলে:
‘‘জেনে রেখো, আল্লাহ তাঁর আম্বিয়া
আলাইহিস সালাম-দের অনেকের প্রতি সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ তাঁর নিজের কিছু নাম মোবারক
তাঁদেরকে দান করেছেন; উদাহরণস্বরূপ, তিনি হযরত এসহাক আলাইহিস
সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-কে ‘আলিম’ (জ্ঞানী) ও ‘হালিম’(ধৈর্যশীল) নামে ডেকেছেন। ঠিক তেমনি হযরত ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম-কে ‘হালিম’, হযরত নূহ আলাইহিস
সালাম-কে ‘শাকুর’ (কৃতজ্ঞ), হযরত মূসা আলাইহিস
সালাম-কে ’কারীম’ (মহৎ) ও ‘ক্কাওয়ী’ (শক্তিশালী), হযরত ইউসুফ আলাইহিস
সালাম-কে ‘হাফেয,’ ‘আলেম’ (জ্ঞানী অভিভাবক/রক্ষক), হযরত আইয়ুব আলাইহিস
সালাম-কে ‘সাবুর’ (ধৈর্যবান), হযরত ঈসা আলাইহিস
সালাম ও হযরত এয়াহইয়া আলাইহিস সালাম-কে ’বার্র’ (আত্মোৎসর্গিত), এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-কে ‘সাদিক আল-ওয়াদ’আ’ (প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী)
নামে ডেকেছেন; তথাপি তিনি আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বেছে নিয়েছেন
(এঁদের মধ্যে) এই কারণে যে,
তাঁরই মহাগ্রন্থে
(আল-কুরআনে) এবং আম্বিয়া আলাইহিস সালাম-বৃন্দের পবিত্র জবানে বিবৃত তাঁর (বহু) নাম
মোবারকের অঢেল সম্পদ তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মঞ্জুর করেছেন।[২২]
ওপরে উদ্ধৃত প্রমাণাদি সন্দেহাতীতভাবে পরিস্ফুট করে যে ’হাযের’ ও ’নাযের’ নাম দুটো আল্লাহর
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যদি হয়ও,
তথাপি তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত
বান্দাদের মধ্যে ওই বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী সন্নিবেশিত থাকার সম্ভাবনায় কোনো রকম বাধা
নেই। বস্তুতঃ এই বিষয়টি সর্বজনজ্ঞাত যে কেরামন কাতেবীন তথা কাঁধের দুই ফেরেশতা, ‘কারিন’, যমদূত আযরাঈল ফেরেশতা
এবং শয়তানও উপস্থিত; এরা সবাই দেখছে, শুনছে, আর সুনির্দিষ্ট যে
কোনো সময়ে সংঘটিত মানুষের সকল কর্মের সাক্ষ্য বহন করছে।
উপরন্তু, ‘হাযের’ ও ’নাযের’ কি খোদায়ী (ঐশী) নাম
ও গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত?
ইমাম আহমদ ফারুকী
সেরহিন্দী (মোজাদ্দেদে আলফে সানী)-কে এ মর্মে উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেছিলেন: “আল্লাহতা’লা প্রতিটি ও সকল
ছোট ও বড় ঘটনা/পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকেফহাল এবং তিনি ’হাযের’ ও ’নাযের’। তাঁর সামনে প্রত্যেকের
শরমিন্দা হওয়া উচিত।”[২৩]
তবে খোদায়ী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী আজ্ঞাস্বরূপ এবং অনুমানেরও অতীত। যুক্তি-তর্ক, সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো
কিছুর সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কিংবা অন্য কোনো রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ঐশী বৈশিষ্ট্য/গুণাবলী
উপলব্ধির কাজে ব্যবহার করা হয় না, বরং শরীয়তের মৌলিক দুটো উৎস কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে প্রকাশিত
ঐশী প্রত্যাদেশই শুধু এ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমস্ত না হলেও বেশির ভাগ আকিদার কেতাবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত
আল-মাতুরিদীর আকায়েদ, তাতে এই মৌলিক বিশ্বাসটি
উপস্থিত রয়েছে। অতএব, আমরা ‘আল-হাযের’ সম্পর্কে কথা বলতে
পারবো না, যখন ‘আল-নাযের’ ‘আশ্ শাহীদের’-ই অনুরূপ, যা’তে ঐশী দৃষ্টিক্ষমতার
মানে হলো খোদাতা’লার জ্ঞান। ইমাম বায়হাকী
বলেন:
-
আশ-শাহীদ তথা সাক্ষীর
অর্থ সেই মহান সত্তা (খোদা) যিনি ভালোভাবে জ্ঞাত যে সকল সৃষ্টি উপস্থিত থাকা অবস্থায়
সাক্ষ্যের মাধ্যমে জানতে সক্ষম। কেননা, দূরে অবস্থানকারী কোনো মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলোর
সীমাবদ্ধতায় ভোগে; পক্ষান্তরে, আল্লাহতা’লা ইন্দ্রিয়ের মুখাপেক্ষী
নন এবং তিনি এর অধিকারী মানুষের মতো সীমাবদ্ধও নন।[২৩]
অপর দিকে, ‘আল-হাযির’ শব্দটি নিরুদ্ধ, কেননা আরবী ভাষায়
এটি কোনো স্থানে শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ, এটি সৃষ্টিকুলের এমন
এক বৈশিষ্ট্য যা স্রষ্টা হতে নিরুদ্ধ। সুতরাং ‘হাযের’ শব্দটি ’সর্বত্র উপস্থিত’ শব্দটির মতোই আল্লাহর ক্ষেত্রে কেবল আলঙ্কারিকভাবে
ব্যবহার করা যায়, যাতে বোঝানো যায় যে
তিনি সর্বজ্ঞানী; কিন্তু আল-কুরআন, সুন্নাহ কিংবা প্রাথমিক
জমানার ইমামবৃন্দের লেখনীর কোথাও ‘সর্বত্র উপস্থিত’ বা ‘হাযের’ হওয়াকে খোদায়ী গুণাবলীর অর্ন্তভুক্ত বলে উল্লেখ
বা বর্ণনা করা হয় নি। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
ওপরে আপত্তি উত্থাপনকারীর কাছে যখন এ খণ্ডনমূলক বক্তব্যের কিছু কিছু পেশ করা হয়, তখন সে বলে: “হাযের ও নাযের বলতে আমরা বোঝাই আল্লাহর জ্ঞান সম্পূর্ণ
ও সামগ্রিক। তাঁর সম্পূর্ণ জ্ঞান হতে কোনো কিছু আড়ালে নয়। আরেক কথায়, তিনি হলেন ‘আলীম’ এবং তাঁর এই সিফাত
আল-কুরআনে বার বার উল্লেখিত হয়েছে।” ওই আপত্তি উত্থাপনকারী
এ জবাব দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে:
১. সে ‘আলীম’ বোঝাতে ‘হাযের’ ও ‘নাযের’ শব্দ দুটোকে আলঙ্কারিকভাবে ব্যবহার করেছে;
২. নিজের কৃত ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রথমোক্ত
শব্দটি দ্বারা শেষোক্ত দুটো শব্দ বোঝাতে গিয়ে সে যেমন (ক) ভাষাতত্ত্ব/বিদ্যার ওপর নির্ভর
করে নি, তেমনি (খ) ‘নস-এ-শরঈ’ তথা শরীয়তের দলিলের
ওপরও নির্ভর করে নি।
আমরা শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “আল্লাহ হাযের ও নাযের” মর্মে বক্তব্যের প্রসঙ্গে
আবার ফিরে যাচ্ছি; তাতে কিছু শর্তও প্রযোজ্য:
১. খোদায়ী নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের মৌলিক নিয়ম-কানুন, যা ’আল-আসমা’ ওয়াস্ সিফাত’-বিষয়ক সালাফ-এ-সালেহীন
(প্রাথমিক যমানার বুযূর্গ উলামা) ও খালাফ-এ-সোয়াদেকীন (পরবর্তী যুগের বুযূর্গ উলামা)-বৃন্দের
ওপরে বর্ণিত নীতিমালার আলোকে প্রণীত, তা নাকচ করতে কোনো বিচ্ছিন্ন মন্তব্যকে ব্যবহার
করা যাবে না।
২. বাস্তবতার আলোকে, শায়খ আহমদ ফারুকী
সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বক্তব্যকে যত্নসহ এমনভাবে সাজিয়েছেন যা নকশবন্দিয়া তরীকার আধ্যাত্মিক
প্রক্রিয়ার আওতাধীন কোনো খালেস (একনিষ্ঠ) মুরীদের খোদায়ী জ্ঞানের সর্বব্যাপী প্রকৃতি-বিষয়ক
সচেতনতাকে দৃঢ়তার সাথে ব্যক্ত করে; ঠিক যেমনি শাযিলী তরীকার পীরেরা তাঁদের মুরীদানকে
বলতে শেখান “আল্লাহু হাযিরি”, ‘‘আল্লাহু নাযিরি”, ‘‘আল্লাহু মাঈ”। এই সকল অভিব্যক্তি
বা প্রকাশভঙ্গি খোদাতা’লা সম্পর্কে গভীর
সচেতনতাকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যেই; আর প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সবই ঐশী জ্ঞানের এমন বৈশিষ্ট্যসমূহের
প্রতি দিকনির্দেশ করে যা সৃষ্টিকুলের ‘হুযুর’ বা ’নযর’-এর সাথে কোনো রকম সাদৃশ্য রাখে না, কেবল নামের সাযুজ্য
ছাড়া।
৩. তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ্ থেকে, আরবী ভাষায় এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সম্পর্কে যাঁরা ‘হাযের’ শব্দটি ব্যবহার করেন, তাঁদের থেকে আলাদা
কোনো কিছুকে বুঝিয়েছেন শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ‘হাযের’ বলতে স্বাভাবিক সৃষ্টিজাত
‘উপস্থিতির’ অর্থে বোঝান নি, বরং তিনি একে ‘আল-এলম আল-হুযূরি’ তথা ঐশী জ্ঞানের অ-সৃষ্টিজাত
অর্থে বুঝিয়েছেন। এটা তিনি ‘মকতুবাত শরীফ’ গ্রন্থেও ৩য় খণ্ডে শাহজাদা খাজা মোহাম্মদ সাঈদকে লেখা
৪৮নং চিঠি, যার শিরোনাম ‘খোদার নৈকট্যের রহস্য
ও তাঁর যাত মোবারক সম্পর্কে আত্মপ্রকাশ’, তাতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। এটা একটা অতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
ও বিশেষায়িত অর্থ যাকে এই দৃষ্টিকোণ্ থেকেই দেখতে হবে, যদি না কেউ শায়খ সেরহিন্দী
যে অর্থে বুঝিয়েছেন তার পরিপন্থী কোনো মানে বের করতে আগ্রহী হয়।
৪. ‘মুফতী’ খেতাবে পরিচিত আমাদের
সমসাময়িক কতিপয় ব্যক্তি আকীদাগত কোনো বিষয়ে শর্তারোপের সময় নতুনত্বের সাথে এই একই বাক্য
ব্যবহার করে থাকেন, যার ফলে তাদের দ্বারা
ওই বাক্যের ব্যবহারের মানে কী তা নিয়ে যৌক্তিক সংশয় দেখা দেয়; এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত
হয়, যখন তারা এর সাথে যোগ করেন (নিজেদের) বানানো শর্ত, যথা- “আল্লাহর ছাড়া আর কারো
প্রতি ‘হাযের’ ও ’নাযের’ শব্দগুলো প্রয়োগ করা
যাবে না।” এ কথা বলে তারা বিচারকের
জন্যে অতি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্তটি বাতিল করে দিয়েছেন যা দ্বারা তিনি যে কোনো এবং যে
সকল মামলায় সাক্ষী গ্রহণের দরকার সেগুলোতে সাক্ষী নিতে না পারেন। বরঞ্চ তারা (হয়তো)
বোঝাতে চান, “আল্লাহ ছাড়া আর কারো
প্রতি সেই অর্থে এটি আরোপ করা যাবে, যে অর্থে আল্লাহর প্রতি আরোপ করা হয়েছে”, যখন (আদতে) তা আল্লাহ
ছাড়া অন্যান্যদের প্রতিও আরোপ করা যায় মাখলুক তথা সৃষ্টির প্রতি আরোপযোগ্য অর্থে।
৫. সৃষ্টিকুলশ্রেষ্ঠ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যাঁরা ‘হাযের’ ও ‘নাযের’ শব্দগুলো ব্যবহার
করেন, তাঁরা তাঁর সৃষ্টিজাত
মহান রূহ বা সত্তাকে আল্লাহ যেখানে চান সেখানে শারীরিক ও আত্মিকভাবে উপস্থিত হওয়ার
অর্থে গ্রহণ করেন। আর যারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অর্থে উপস্থিত
হতে পারেন মর্মে বিষয়টিকে অস্বীকার করে, তারা ইসলাম ধর্মত্যাগ করেছে।
৬. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘হাযের’ ও ’নাযের’ লকবগুলোর ব্যবহার বাতিলের পক্ষে দলিল হিসেবে বিরোধিতাকারীরা
যা পেশ করে থাকে, তার কোনোটাই একে নাকচ
করে না। এ লকবগুলো আল্লাহর সাথে তাঁর ভাগাভাগি করা অন্যান্য লকবের মতোই, যা আমরা (ইতিপূর্বে)
পেশ করেছি; যেমন আল্লাহ হলেন
‘রউফ’ ও ’রাহীম’, এবং তিনি ‘নূর’ ও ‘শাহীদ’ (সাক্ষী) এবং ‘আল-শাহিদ’ (সাক্ষ্যদাতা)-ও। আর
তিনি তাঁরই প্রাক্ অনন্তকালের বাণী আল-কুরআনে এই লকবগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান করেছেন।
৭. ইসলামী বিদ্বান ব্যক্তিদের উদ্ধৃতির প্রশ্ন উঠলে বিরোধিতাকারীদের উচিত এ কথা
স্বীকার করে নেয়া যে ’হাযের’ ও ‘নাযের’ গুণ/বৈশিষ্ট্যগুলো
আহলে সুন্নাতের ওপরে উদ্ধৃত মোল্লা আলী কারীর মতো উলামাবৃন্দ আরোপ করেছেন এবং আরও আরোপ
করেছেন সে সকল অগণিত আউলিয়া-বুযূর্গ যাঁরা দিন-রাত হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
(রূহানী) সান্নিধ্যে ছিলেন বলে সর্বজনজ্ঞাত; এঁদের মধ্যে রয়েছেন - শায়খ আবুল আব্বাস আল-মুরসী
রহমতুল্লাহি আলাইহি, শায়খ আবুল হাসান শাযিলী
রহমতুল্লাহি আলাইহি, শায়খ আব্দুল আযীয
দাব্বাগ রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং সম্ভবত শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেও
(আল্লাহ তাঁদের ভেদের রহস্যকে পবিত্রতা দিন)।
ইবনে কাইয়েম আল-জওযিয়া নিজ ‘কিতাবুর রূহ’ বইয়ে লিখে:
‘‘প্রকৃতপক্ষে, জীবিত ও মৃতদের রূহ
একত্রিত হওয়ার বিষয়টিও সত্য-স্বপ্নেরই রকম-বিশেষ, যেটা মানুষের কাছে অনুভূত বিষয়সমূহের সমশ্রেণীর।
তবে এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
‘‘কারো কারো মতে রূহের
মধ্যে সর্বপ্রকার এলম্ (জ্ঞান) বিদ্যমান। কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিদের পার্থিব কর্মচাঞ্চল্য
ও ব্যস্ততা ওই জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে নিদ্রাবস্থায় যখন কোনো রূহ
সাময়িকভাবে দেহ থেকে বের হয়ে যায়, তখন তা আপন যোগ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী অনেক বিষয় অবলোকন করে
থাকে। আর যেহেতু মৃত্যুজনিত কারণে দেহ থেকে রূহ পুরোপুরি মুক্তি লাভ করে, সেহেতু রূহ জ্ঞান
ও চরম উৎকর্ষ লাভ করে। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সত্য ও কিছু ভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। কেননা, মুক্তিপ্রাপ্ত রূহ
ছাড়া ওই সব জ্ঞান লাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
‘‘কোনো রূহ পুরোপুরি
মুক্তি লাভ করা সত্ত্বেও আল্লাহর ওই সব জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হতে পারে না, যেগুলো তিনি তাঁর
রাসূল আলাইহিস সালাম-বৃন্দকে প্রদান করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর রূহ পূর্ববর্তী
নবী আলাইহিস সালাম ও তাঁদের কওমের বিস্তারিত কোনো তথ্য, যেমন - পরকাল, কিয়ামতের আলামত, কোনো কাজের ভালো-মন্দ
ফলাফল, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের
বিবরণ, আল্লাহ পাকের আসমাউল
হুসনা (সুন্দর নামসমূহ), আল্লাহর গুণাবলী, কার্যাবলী ও শরীয়াতের
বিস্তারিত বিষয়াদিও জানতে পারে না। কেননা, এ সমস্ত বিষয় শুধু ওহী বা ঐশী প্রত্যাদেশের মাধ্যমে
জানা যায়। মুক্তিপ্রাপ্ত রূহের পক্ষে এসব বিষয় জানা সহজ হয়ে ওঠে। তবে ওহীর মাধ্যমে
যে জ্ঞান লাভ করা যায়, সেটাই শ্রেষ্ঠ ও সঠিক।”[২৫]
‘মীলাদ মাহফিলে মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসেন মর্মে বিশ্বাস’ (The Belief that the Prophet Comes to the Milad
Meeting) শীর্ষক একটি ওয়েবসাইটে
আরেকটি আপত্তি উত্থাপন ও প্রচার করা হয়েছিল, যা নিম্নরূপ:
‘‘কিছু মানুষ বিশ্বাস
করেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীলাদের মাহফিলে আসেন, আর এই বিশ্বাসের কারণে
তাঁরা সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ান। এটা একেবারেই মিথ্যা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোনো ঈদে মীলাদ আন্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলেই আগমন করেন
না। তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর রওযা মোবারকে অবস্থান করছেন এবং ’এয়াওমুল কেয়ামাহ’ তথা কেয়ামত দিবসে
(শেষ বিচার দিনে) সেখান থেকে উঠবেন.......নিচের আয়াত ও হাদীস এর সাক্ষ্য বহন করে: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্বোধন করে আল-কুরআনে সুস্পষ্ট এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনাকেও বেসালপ্রাপ্ত
(পরলোকে আল্লাহর কাছে গমন) হতে হবে এবং তাদেরকেও মরতে হবে। অতঃপর
ثُمَّ
إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُونَ –
-
তোমরা কেয়ামত দিবসে
আপন প্রতিপালকের সামনে ঝগড়া করবে।[২৬]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমগ্র মানব জাতির সাথে
একযোগে সম্বোধন করা হয়েছে এভাবে-
ثُمَّ
إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ (১৫) ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ
-
অতঃপর তোমরা এরপরে অবশ্যই
মরণশীল। অতঃপর তোমাদের সবাইকে কেয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে।[২৭]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্বয়ং একটি হাদীসে বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে আমার রওযা-ই সর্বপ্রথম খোলা হবে এবং
আমি-ই সর্বপ্রথম শাফায়াত করবো, আর আমার সুপারিশও সর্বপ্রথম গৃহীত হবে।’ এ সকল আয়াত ও হাদীস
(অনুরূপ অন্যান্য দলিলসহ) প্রমাণ করে যে কেয়ামত দিবসে গোটা মানব জাতিকে কবর থেকে পুনরুত্থিত
করা হবে, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ব্যতিক্রম নন। এ বিষয়ে পুরো উম্মতের এজমা তথা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।”[২৮]
আহল্ আস্ সুন্নাত ওয়াল্ জামাআতের জওয়াব
এই মুফতীর কি অদৃশ্য জ্ঞান (এলমে গায়ব) বা সব কিছু জানার ক্ষমতা আছে? কেননা, সে নিশ্চিতভাবে ঘোষণা
করছে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (১) কোনো নির্দিষ্ট মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত
নন, এবং (২) মদীনায় নিজ
রওযা মোবারক ছাড়া আর কোথাও উপস্থিত নন! যদিও সে মানে যে অন্যান্য আম্বিয়া আলাইহিস সালাম
বায়তুল মাকদিসে নামায পড়ছেন এবং মক্কায় তওয়াফ করছেন, আর সাত আসমানেও অবস্থান করছেন, তথাপিও সে গোঁ ধরছে
যে আমাদের বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রওযা মোবারকেই সীমাবদ্ধ!
অথচ এক হাজার বছর যাবত অবিরতভাবে এই উম্মতের আউলিয়া কেরাম ও সোয়ালেহীনবৃন্দের সাক্ষ্য
প্রদত্ত হয়েছে এ মর্মে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগণিত পৃথক স্থানে
অগণিত নির্মল (আত্মার মানুষের) চোখে দৃশ্যমান হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। শায়খুল ইসলাম
ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কীর এতদসংক্রান্ত ‘ফতোওয়ায়ে হাদিসিয়্যা’ (২৯৭ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে
নিম্নের শিরোনামে প্রশ্ন করা হয় - “প্রশ্ন: জাগ্রত অবস্থায় কি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দেখা যায়?” এর উত্তরে হযরত ইমাম
’হ্যাঁ’ বলেন। আর হুযূর পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখা গেলে তিনি নিশ্চয় হাযের ও নাযের। ‘কীভাবে’ তা জিজ্ঞেস করার কোনো
প্রয়োজন নেই। সাইয়্যেদ আহমদ যাইনী দাহলান মক্কী তাঁর ‘আল-উসূল লি আল-উসুল
ইলা মা’রেফাত আল্লাহ ওয়া
আল-রাসূল’ শীর্ষক কেতাবে বলেন
যে যখন কোনো ওলী ‘জাগ্রতাবস্থায়’ (ইয়াক্কাযাতান) রাসূলে
পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেন, ”তখন এর মানে হলো তিনি কেবল ‘রূহানীয়াত’ তথা আত্মিক আকৃতিতে
দেখেন, জিসমানীয়াত বা শারীরিকভাবে
দেখেন না।” তবে আমাদের শায়খ সিদি
মোস্তফা আল-বাসির এ সম্পর্কে মন্তব্য করেন: “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিসমানী
তথা শারীরিক আকৃতিতে দেখা যাওয়ায় কি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে, বা কোনো জায়গায় তাঁর
উপস্থিত হতে বাধা আছে?” (অর্থাৎ নেই)। আর শাহ
ওলীউল্লাহ দেহেলভী তাঁর ‘ফুইউয্ আল-রাহমান’ (পৃষ্ঠা ১১৬-১১৮) পুস্তকে
বলেন যে প্রতি ওয়াক্তের নামাযে ইমাম হিসেবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
উপস্থিতি ‘‘একটা বাস্তবতা”; তিনি আরও বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ মোবারক কোনো জিসমেরই অনুরূপ।” শায়খ আবদুল আযীয দাব্বাগ
হতে এ বিষয়ে প্রকাশিত অনেক বিবরণসম্বলিত লেখা রেকর্ড করেছেন তাঁরই শিষ্য আলী ইবনে মোবারক
নিজ ‘আল-ইব্রিয’ গ্রন্থে।
হ্যাঁ, আমরা দৃঢ়ভাবে জানি
যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা মোনাওয়ারায় আছেন, তবে ‘বরযখ’ অবস্থায়। এই হাল বা
অবস্থা আল্লাহতা’লার এরাদায় (ঐশী আজ্ঞায়)
এমন নিয়মের অধীন যা স্থান-কাল-পাত্রের নিয়ম দ্বারা পরিচালিত নয়। ইমাম মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তাঁর ‘মোওয়াত্তা’ গ্রন্থে বলেন: ‘‘আমার কাছে এসেছে
(অর্থাৎ, মহানবী হতে, বিশুদ্ধ বর্ণনায় যা
ইমাম মালেকের ‘বালাগাত’ সম্পর্কে সর্বজনবিদিত)
এক রওয়ায়াতে যে (বেসালপ্রাপ্তদের) রূহসমূহ যখন খুশি তখন চলাফেরা করার অনুমতিপ্রাপ্ত।” এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত
বিবরণ আছে শায়খ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আলাউইয়ী মালেকী প্রণীত ‘মানহাজ আল-সালাফ’ [২৯] গ্রন্থে , ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়া কৃত ‘কিতাব আল-রূহ’ পুস্তকে, কিংবা আল-কুরতুবীর
‘আত্ তাযকিরা’ কেতাবে।
অধিকন্তু, একটি ইসলামী কায়েদা
(নিয়ম) বিবৃত করে, الأثْبَاتُ مُقَدَّمٌ عَلَيْ النَّفِيِّযার অর্থ: “অস্বীকৃতির ওপর স্বীকৃতির
প্রাধান্য”; অপর এক নিয়ম বলে, مَنْ عَلِمَ حُجَّةٌ عَلَيْ مَنْ لَمْ يَعْلَمْ যার মানে: “যে ব্যক্তি জানেন
তাঁর প্রমাণই চূড়ান্ত (হিসেবে বিবেচিত), যিনি জানেন না তাঁর মোকাবেলায়।” এমন কি কোনো সহজ হাদীস
বর্ণনার ব্যাপারেও আমরা অনেকগুলো বিষয় জানি এবং অনেকগুলো বিষয় জানি না, যে সত্যটি ওই মুফতী
বিশিষ্টতার সাথে জানে।
আপত্তি উত্থাপনকারী মুফতীর উদ্ধৃত কুরআনের আয়াতগুলো ও হাদীস যা’তে বলা হয়েছে যে মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করবেন এবং পুনরুত্থিত হবেন, এ সম্পর্কে সে নিজেই
তার সিদ্ধান্তে বলেছে, “এ সকল আয়াত ও হাদীস
(অনুরূপ অন্যান্য দলিলসহ) প্রমাণ করে যে কেয়ামত দিবসে গোটা মানব জাতিকে কবর থেকে পুনরুত্থিত
করা হবে, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ব্যতিক্রম নন। এ বিষয়ে পুরো উম্মতের এজমা তথা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।” এই কথাটি নিচের আরবী
প্রবাদের মতো শোনায়, “আমি তাঁর সাথে পূর্ব
দিকে কথা বলেছিলাম, আর তিনি আমাকে জবাব
দিয়েছেন পশ্চিম দিকে।” কেয়ামত তথা পুনরুত্থানের
মৌলিক ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে তো কোনো প্রশ্নই এখানে নেই, আর এ সব প্রামাণ্য
দলিল নিম্নের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোর বেলায় অপ্রাসঙ্গিক। যেমন - (১) জাগ্রতাবস্থায়
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উপস্থিত দেখা; অথবা (২)দুনিয়া ও
আখেরাতে সোয়ালেহীন বা পুণ্যবানদের মাহফিলে তাঁর উপস্থিতি। ওই ফতোওয়ায় এই বিষয় টেনে
আনাও উচিত হয় নি। কেননা, মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উম্মতের মাঝে উপস্থিত এবং তাদের সকল হাল-অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল, তা এই বিষয়ের অন্তর্নিহিত
অর্থের সত্যতা এবং আমাদের পেশকৃত অবশিষ্ট প্রামাণিক দলিলের সত্যতা দ্বারা পরিস্ফুট; এসব দলিলের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মহান আল্লাহর বাণী -
وَاعْلَمُوا
أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ
-
এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর
রাসূল রয়েছেন।[৩০] এর অর্থ অধিকাংশ তাফসীর অনুযায়ী, ‘মিথ্যা বলো না।’ [কেননা তিনি ‘প্রত্যক্ষকারী’, ‘সত্যের সাক্ষী’ - বঙ্গানুবাদক]
তথ্যসূত্র:
[১]. আল কুর‘আন : আল হুজুরাত, ৪৯/৭।
নোট-১ : হাজের নাজের বিষয়ক এই সংযোজনী শায়খ হিশাম কাব্বানী কৃত এতদসংক্রান্ত পুস্তকের ৩য় খণ্ডের ‘‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর অদৃশ্য জ্ঞান” শীর্ষক অনুচ্ছেদে উপস্থাপিত
বক্তব্যের সম্পূরণ।
[২] . আল কুর‘আন : আল বাক্বারা, ২/২৫৫।
[৩] . আল কুর‘আন : আল জ্বিন, ৭২/২৬।
[৪] . আল কুর‘আন : আত তাকভীর, ৮১/২৪ ইমাম আহমদ রেযা খান (র.) কৃত কান্যুল ঈমান হতে গৃহীত ।
[৫] . আশ-শিরাযী : আল-আকিদা আস্ সহিহা, ১/৪৮।
[৬] . আল কুর‘আন : আন নিসা, ৪/৪১।
[৭] .আল কুর‘আন : আল বাকারা, ২/১৪৩।
[৮] . আল কুর‘আন : আল বাক্বারা, ২/১৪৩।
[৯] . নোট ২ : বুখারী আস সহীহ,
বাবু কাওল্লিাহি তায়ালা, ৪/১৩৪ হাদীস নং ৩৩৩৯। আল-বুখারী এ হাদীস তিনটি সনদে বর্ণনা করেছেন; এ ছাড়াও তিরমিযী (হাসান সহীহ), এবং ইমাম আহমদ।
[১০] . আল কুর‘আন : আলে ইমরান, ৩/৮১।
[১১] . নোট- ৩: মোল্লা কারী কৃত ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’, দারুল ফিকর ১৯৯৪ সংস্করণ ৯/৪৯৩, এমদাদিয়া মুলতান (পাকিস্তান) সংস্করণ ১০/২৬৩-২৬৪ =কায়রো ১৮৯২
সংস্করণ ৫/২৪৫]
[১২]. আল কুর‘আন : আল হুজুরাত, ৪৯/৭।
[১৩] . আল কুর‘আন : আত তাওবা, ৯/৯৪।
[১৪]. আল কুর‘আন : আত তাওবা, ৯/১০৫।
[১৫] . আল কুর‘আন : আল বাক¦ারা, ২/২৭৭-৭৮।
[১৬] . নোট-৪: আল-গোমারী কৃত ‘খাওয়াতিরে দিনিইয়্যা ১/১৯।
[১৭]. নোট ১২ : আত্ তাবারী : তাফসীর, ১৮/১৭৩ #১৯৮৯৪)।
[১৮] . নোট ১৩ : আয্ যাহাবী
: সিয়্যার ৬/৩৬০।
[১৯]. নোট ১৪ : (ক) শরহে এলাল আল-তিরমিযী : ইবনে রাজাব ২/৭৮০-৭৮১।
(খ) আয্ যাহাবীর : মিযান ৩/৩৭৩।
(গ) আল-মুগনী ১/৬১৬-৬১৫ #৪১২২ যা’তে ড: নূরুদ্দীন এ’তরের নোট সংযুক্ত। (ঘ) আল-আরনাওত ও মা’রুফ : তাহরির তাকরিব আল-তাহযিব’ (৩:১৬-১৭ #৪৬০০), যদিও শেষোক্তরা ‘তাওসিক’-কে ইমাম বুখারীর প্রতি ভুলক্রমে আরোপ করেন, আর আল-এ’তর ‘তাদ’ইফ’-কে ভুলক্রমে আরোপ করেন ইমাম আহমদের প্রতি!]।
[২০] . মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী রহমতুল্লাহি আলাইহি : জা‘আল হক্ব ১/১৪২।
[২১] . নোট ১৫ : সারফরাজ সাফদার কৃত ‘আঁখো কি দানদাক’ (পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮)।
[২২] . নোট ১৬ : ইমাম কাজী আয়ায প্রণীত ‘শেফা শরীফ’; ইংরেজি অনুবাদ - আয়েশা আবদ
আর-রাহমান বিউলী (গ্রানাডা, মদীনা প্রেস, ১৯৯২), পৃষ্ঠা ১২৬্
[২৩] .নোট ১৭ : ‘মকতুবাত-এ-ইমাম-এ-রব্বানী, ১ম খন্ড, জব্বারী খানকে লেখা ৭৮ নং
চিঠি।
[২৪] . নোট ১৯ : আল-বায়হাকী কৃত ‘আল-আসমা’ ওয়াস্ সিফাত’ (কাওসারী সংস্করণের ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠা; হাশিদী সংস্করণের ১/১২৬-১২৭)।‘শাহীদ’ আল-কুরআনে বর্ণিত নবুয়্যতের
একটি বৈশিষ্ট্যও।
[২৫] .ইবনে কাইয়েম আল-জওযিয়া কৃত ‘কিতাবুর রূহ’ ১৯৭৫ সংস্করণের ৩০ পৃষ্ঠা; মওলানা লোকমান আহমদ
আমীমীর অনূদিত বাংলা সংস্করণের ৪৯ পৃষ্ঠা, ১৯৯৮।
[২৬] . আল কুর‘আন : আল যুমার, ৯৯/৩০।
[২৭] . আল কুর‘আন : আল মু‘মীনূন, ২৩/১৫-১৬।
[২৮] . নোট ২১ : মুফতী এবরাহীম দেসাঈ, ফতোওয়া বিভাগ, জামিয়াতে উলেমায়ে ইসলাম, দক্ষিণ আফ্রিকা।
[২৯] . নোট-২২: আস্ সুন্নাহ ফাউন্ডেশন অফ আমেরিকার অনূদিত প্রকাশনা
‘বরযখে আম্বিয়া’ দেখুন।
[৩০] . আল কুর‘আন : আল হুজুরাত, ৪৯/৭।
সমাপ্ত