মূল: সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আলূভী মালেকী হাসানী মক্কী (রহ.)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী রিসোর্স: মুহাম্মদ রুবাইয়াৎ বিন মূসা
আরবী রিসোর্স: মুহাম্মদ রুবাইয়াৎ বিন মূসা
[১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে রেডিওতে প্রদত্ত সাক্ষাৎকার থেকে]
إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ
الْأَنْبِيَاءِ
- উলামাবৃন্দ হযরতে
আম্বিয়া-এ-কেরাম আলাইহিমুস সালাম-এর উত্তরাধিকারী।[১]
এই হাদীস ব্যক্ত করে যে আল্লাহ তা’লার আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দ কোনো ধন-সম্পদ বা অর্থ-কড়ি
(উত্তরাধিকারস্বরূপ) রেখে যাননা, শুধু এলম তথা জ্ঞান রেখে যান; ঠিক যেমনি মানুষেরা স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাসন্তান উত্তরাধিকারী
রেখে যান।
আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দের উত্তরাধিকারী হলেন ‘আহলে এলম’, অর্থাৎ, জ্ঞানী ব্যক্তিগণ। আর এই জ্ঞানে তাঁদের হিস্যা
হলো আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দের শরীয়ত পালনে তাঁরা যে যতোটুকু সাধনা করেছেন ততোটুকু-ই;
ঠিক যেমনি কোনো পরলোকগত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে যারা বেশি ঘনিষ্ঠ তারা
অন্যদের চেয়ে উত্তরাধিকারের অংশ বেশি পেয়ে থাকে। উলামা (এ-হাক্কানী/রব্বানী)-বৃন্দের বেলায়ও একই ব্যাপার। এঁদের মধ্যে যাঁরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরও দৃঢ়ভাবে অনুসরণ (আনুগত্য) করেন এবং তাঁর প্রতি পরম মহব্বত তথা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন, তাঁরা তাঁর (এলমের) উত্তরাধিকারের আরও বড় অংশ পেয়ে থাকেন।
অন্যান্য হাদীসে স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে এই উত্তরাধিকার
কোনো
(বৈষয়িক) ধন-সম্পদের নয়, বরং (ইসলামী) জ্ঞানের, যার মূল হলো আল-কুরআন, সুন্নাহ ও আখলাক। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে
শরীয়তের সমস্ত অংশ। [বঙ্গানুবাদকের নোট: এই উত্তরাধিকার প্রমাণিত “উলামা” শব্দটি দ্বারা; মানে ইলম/জ্ঞান যার উপর জোর দিতে হবে। ইসলামী জ্ঞান আবার দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত: প্রকাশ্য (জাহেরী) ও অপ্রকাশ্য (বাতেনী)। এই দুটোর মধ্যে যে সকল বুযূর্গ আলেম সমন্বয় সাধন করতে পেরেছেন, তাঁরাই উপরোক্ত হাদীস শরীফের উদ্দিষ্ট দল।]
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, যিনি সাহাবা-এ-কেরামের মধ্যে ‘হাফিয’ হিসেবে পরিচিত, তিনি বর্ণনা করেন যে একবার
তিনি বাজারে গিয়ে দেখেন মানুষেরা যথারীতি বেচা-কেনায় রত। তাদেরকে তিনি বলেন:
وَأَنْتُمْ
هَاهُنَا لَا تَذْهَبُونَ فَتَأَخُذُونَ نَصِيبَكُمْ مِنْهُ» قَالُوا: وَأَيْنَ
هُوَ؟ قَالَفِي الْمَسْجِدِ» فَخَرَجُوا سِرَاعًا إِلَى الْمَسْجِدِ، وَوَقَفَ
أَبُو هُرَيْرَةَ لَهُمْ حَتَّى رَجَعُوا، فَقَالَ لَهُمْ: «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا:
يَا أَبَا هُرَيْرَةَ فَقَدْ أَتَيْنَا الْمَسْجِدَ، فَدَخَلْنَا، فَلَمْ نَرَ
فِيهِ شَيْئًا يُقْسَمُ. فَقَالَ لَهُمْ أَبُو هُرَيْرَةَ: «أَمَا رَأَيْتُمْ فِي
الْمَسْجِدِ أَحَدًا؟» قَالُوا: بَلَى، رَأَيْنَا قَوْمًا يُصَلُّونَ، وَقَوْمًا يَقْرَءُونَ
الْقُرْآنَ، وَقَوْمًا يَتَذَاكَرُونَ الْحَلَالَ وَالْحَرَامَ، فَقَالَ لَهُمْ
أَبُو هُرَيْرَةَ: «وَيْحَكُمْ،
فَذَاكَ مِيرَاثُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» .
-
তোমরা এখানে
বেচা-কেনা করছো, আর ওদিকে মানুষেরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তরাধিকার বণ্টন
করছে।” তারা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এটা কোথায় ঘটছে?” তাদের এই আগ্রহের কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেখে যাওয়া কোনো বস্তুর মালিক হওয়া। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তর দিলেন, “মসজিদে (নববীতে)।” অতঃপর মানুষেরা সবাই মসজিদে নববীতে ছুটে গেল, কিন্তু সেখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সম্পদ পাওয়া গেলো না। এমতাবস্থায় তারা হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কেন বল্লেন
যে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তরাধিকার বণ্টন
করা হচ্ছে, অথচ ওখানেতো
কিছুই ছিলো না?” হযরত আবু হুরায়রা
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাদের পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “তোমরা ওখানে কী দেখতে পেয়েছিলে?” তারা জবাবে বল্লো, “আমরা ওখানে দেখতে পাই মানুষেরা গোল হয়ে (বৃত্তাকারে) কুরআন মজীদ ও
হাদীস শরীফ অধ্যয়ন করছেন।” হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু উত্তর দিলেন, “ওটাই উত্তরাধিকার।” [২]
আল্লাহ তা’লা-ই সবচেয়ে ভালো জানেন।
*সমাপ্ত*
তথ্যসূত্র :
[১] ইবনে মাজাহ : আস সুনান, বাবু ফাদ্বলিল উলামা, ১:৮১
হাদীস নং ২২৩।
(ক) তিরমিযী : আস সুনান, বাবু মা জাআ ফি ফদ্বলিল ফিকহ, ৫:৪৮ হাদীস নং ২৬৮২।
(খ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১:২৮৯ হাদীস নং ৮৮।
(গ) দারেমী : আস সুনান, ১:৩৮৪ হাদীস নং ৩৫১।
(ঘ) বায়হাকী : শু‘য়াবুল ঈমান, ২:২৬২ হাদীস নং ৭১৮।
[২] তাবারানী
: আল মু‘জামুল আওসাত, মিন ইসমিহি আহমদ, ২:১১৪ হাদীস নং
No comments:
Post a Comment