Saturday, 30 March 2019

প্রিয়নবী (দ:) কি সত্যি নিরক্ষর ছিলেন?

মূল: যোসেফ এ, ইসলাম
অনুবাদ: এডমিন

(১) মহানবী (দ:) নিরক্ষর হওয়ার  (মানে পড়তে/লিখতে না জানার) বিষয়টি আল-ক্বুরআন নিশ্চিত করেছে কি?

উত্তর: না

(২) প্রিয়নবী (দ:) নিরক্ষর মর্মে ধারণাটির পক্ষে দলিলস্বরূপ আল-ক্বুরআন হতে ব্যবহৃত শব্দটি কী?

উত্তর: রাসূল (দ:)’এর প্রতি আরোপিত শব্দটি হচ্ছে ‘উম্মী’, যার দৃষ্টান্ত নিচে রয়েছে:

আল-ক্বুরআন ০৭:১৫৭ (আংশিক উদ্ধৃতি)



ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلأُمِّيَّ
 
অর্থ: যারা আনুগত্য করে রাসূল (দ:)’এর, যিনি ‘উম্মী নবী (দ:)’। [সরাসরি অনুবাদ]

(৩) أُمِّىٌّ - ‘উম্মী’ শব্দটির ক্লাসিকাল/ঐতিহ্যবাহী আরবী সংজ্ঞা কী?

উত্তর: ক্লাসিকাল আরবী ভাষায় ’উম্মী’ শব্দটি ‘অ-ইহুদী’ (Gentile) বা ’পয়গম্বর মূসা (আ:)’র (প্রাপ্ত) ঐশী বিধানের সাথে অপরিচিত কাউকে উদ্দেশ্য করে।’ এটা এমন কেউ নন যিনি অপরিহার্যত নিরক্ষর।

দলিলচিত্র-১


অনুবাদ: ‘উম্মী’ মানে সত্যিকারভাবে অ-ইহুদী। দ্বিতীয় অর্থে অবিশ্বাসী, যা আহলে কেতাব/ইহুদী-খৃষ্টানদের দ্বারা প্রয়োগকৃত। বিশেষ করে আরব বা আল-আম্বর অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট। ‘উম্মী-ইউনাল্ কিতা-বা’ (ক্বুরআন ২: ৭৮) অনুসারে অশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ (বা অবিশ্বাসী), যারা পয়গম্বর মূসা (আ:)’র প্রতি অবতীর্ণ ঐশীগ্রন্থ সম্পর্কে জানে না; প্রিয়নবী (দ:)’কে ‘উম্মী’ (মানে ইসরাঈলীদের থেকে আলাদা করতে অ-ইহুদী) বলা হয়েছে। [Lane. E.W, Edward Lanes Lexicon, Williams and Norgate 1863; Libraire du Liban Beirut-Lebanon 1968, Volume 1, Page 92]

পয়গম্বর মূসা (আ:)’র প্রাপ্ত ঐশী-বিধান সম্পর্কে না জানাটা কেবল সেসব লোকদের বেলাতেই প্রযোজ্য নয়, যারা ইসরাঈলী ঐতিহ্যের নন; বরং আল-ক্বুরআনে কিছু ইসরাঈল বংশীয় লোককেও ‘উম্মী’ বলা হয়েছে, যা তাদের নিজেদের ঐশী শাস্ত্রলিপি সম্পর্কে সামগ্রিক অজ্ঞতার ইঙ্গিত করে।

আল-ক্বুরআন ০২: ৭৮

وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لاَ يَعْلَمُونَ ٱلْكِتَابَ إِلاَّ أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَظُنُّونَ

অর্থ: এবং তাদের মধ্যে এমন কিছু উম্মী-ইউনা লোক আছে, যারা কিতাব সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না, কিন্তু মৌখিকভাবে পড়তে জানে মাত্র, কিংবা নিজেদের কিছু মনগড়া কথাবার্তা; আর তারা নিরেট কল্পনার মধ্যে রয়েছে। [তাফসীরে নূরুল এরফান]

(৪) ‘Gentile' বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: উক্ত শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন। এটা 'Gentilis' শব্দ হতে এসেছে, যার মানে কোনো বিশেষ গোত্র বা গোষ্ঠীর সাথে জড়িত হওয়া। সুনির্দিষ্টভাবে এর অর্থ অ-ইহুদী গোত্র; আর এর দ্বারা অ-ইহুদীদের বোঝায়।

বর্তমানে উক্ত শব্দটির মৌলিক অর্থ একই আছে, যা এমন অ-ইহুদীদের উদ্দেশ্য করে যাঁরা তৌরীত পাঠ করেননি, কিংবা ইহুদী গোত্রভুক্ত নন।

(৫) ‘উম্মী’ শব্দটি দ্বারা যে ‘নিরক্ষর’ বোঝায় না, আমাদের কাছে  এ মর্মে  অন্যান্য কী কী ক্বুরআনী দলিল আছে?

উত্তর: কেউ যদি ‘উম্মী’ শব্দটির অর্থ ’নিরক্ষর’ (মানে পড়ালেখা জানেন না) বলে অনুবাদ করে, তাহলে নিচের ক্বুরআনের আয়াতটি নিরর্থক সাব্যস্ত হবে:

আল-ক্বুরআন ০৩: ২০

 فَإنْ حَآجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ وَجْهِيَ للَّهِ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِ وَقُلْ لِّلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلأُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ فَإِنْ أَسْلَمُواْ فَقَدِ ٱهْتَدَواْ وَّإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ ٱلْبَلَٰغُ وَٱللَّهُ بَصِيرٌ بِٱلْعِبَادِ

অর্থ: অতঃপর হে মাহবূব! যদি তারা (মক্কার কুফফার) আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তবে বলে দিন, ‘আমি আপন চেহারা আল্লাহর সামনে অবনত করেছি এবং যারা আমার অনুসারী হয়েছে;’ আর কিতাবী সম্প্রদায় ও উম্মী-ইউনা লোকদের বলে দিন, ‘তোমরা কি গর্দান অবনত করেছো?’ সুতরাং তারা যদি গর্দান অবনত করে থাকে, তবেই তো সঠিক পথ পেয়ে গেছে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে হাবীব) আপনার কর্তব্য তো এই নির্দেশ পৌঁছে দেয়া মাত্র। এবং আল্লাহ বান্দাদেরকে দেখছেন। [তাফসীরে নূরুল এরফান]

ওপরে উক্ত আয়াতে করীমায় আল্লাহতা’লা প্রিয়নবী (দ:)’কে আদেশ দিচ্ছেন পূর্ববর্তী কিতাবপ্রাপ্ত ইহুদী ও খৃষ্টানদের এবং ‘উম্মী’দের কাছে ঐশীবাণী ক্বুরআনের ঘোষণা জারি করতে। এখানে ‘উম্মী’ বলতে ‘নিরক্ষর’ অর্থ করলে আয়াতে করীমাটি নিরর্থক হয়ে যায়। কেননা এতে দৃশ্যমান হয় আল্লাহতা’লা প্রিয়নবী (দ:)’কে ঐশীবাণী সেসব লোকের মাঝে ঘোষণা করতে আদেশ করছেন যারা ইতিপূর্বে কেতাবপ্রাপ্ত ‘এবং যারা নিরক্ষর।’ এই অর্থে অনাবশ্যকভাবে তাদেরকে বাদ দেয়া হবে যারা লিখতে ও পড়তে পারেন অথচ যারা ঐশীবাণী প্রাপ্ত হননি। আরবীয়রা সামগ্রিকভাবে নিরক্ষর জাতি ছিলেন না। বরঞ্চ ক্বুরআনে প্রমাণিত হয় যে আরব জাতি বেশ ভালো লিখতে পড়তে জানতেন। যেমন আল-ক্বুরআন ৮০:১৫, যা ক্বুরআন মজীদ কাগজ-কলমে লেখার জন্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত করে। [ بِأَيْدِي سَفَرَةٍ]

আল-ক্বুরআন ৬২: ০২

هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ

অর্থ: তিনি, যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেন যেনো তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে (ঐশী) কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন আর নিশ্চয় নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলো। [তাফসীরে নূরুল এরফান]

কেউ আবারো ওপরের আয়াতটিতে উল্লেখিত ‘উম্মী’ শব্দটিকে নিরক্ষর বলে ধরে নিলে তা এই ভ্রান্ত ধারণার দিকে ইঙ্গিত করবে যে খোদাতা’লা লিখতে পড়তে জানেন না এমন লোকদের মাঝে রাসূল (দ:)’কে প্রেরণ করেছেন, যা স্পষ্টতঃ এ আয়াতটিকে নিরর্থক সাব্যস্ত করবে।

আল-ক্বুরআন ০৩: ৭৫

 وَمِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنْطَارٍ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍ لاَّ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ إِلاَّ مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِماً ذٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ لَيْسَ عَلَيْنَا فِي ٱلأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ ٱلْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ 

অর্থ: এবং কিতাবীদের মধ্যে কিছু এমন লোক রয়েছে যে, যদি তুমি তার কাছে বিপুল সম্পদ আমানত রাখো, তবে সে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আর তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও রয়েছে যে, যদি একটা স্বর্ণমুদ্রা তার কাছে আমানত রাখো, তবে সে তাও তোমাকে ফেরত দেবে না, কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত তুমি তার মাথার ওপর দণ্ডায়মান থাকো (মানে তার পেছনে লেগে থাকো)। এটা এ জন্যে যে, তারা বলে: ‘উম্মীয়্যিনা’ লোকদের মামলায় (তাদের প্রতি) আমাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।’ আর তারা (ওই সমস্ত কিতাবী) আল্লাহ সম্পর্কে জেনে বুঝে মিথ্যে বলে থাকে। [তাফসীরে নূরুল এরফান]

ওপরের আয়াতটিতে আমরা লক্ষ্য করি যে, ঐশী কিতাবী কিছু লোক ধরে নিয়েছিলো যে কিতাবী নয় এমন মানুষ মানে অ-ইহুদীদের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। অতএব, এ আয়াতেও ‘উম্মী-ঈনা’ শব্দটির অর্থ নিরক্ষর নির্ধারণ করলে তা অর্থবোধক হবে না।

(৬) প্রিয়নবী (দ:) যে একজন ‘উম্মী’ তথা ইতিপূর্বে অবতীর্ণ কোনো ঐশীগ্রন্থের পাঠক নন এবং ইহুদী বংশােদ্ভূত-ও নন, ক্বুরআন মজীদ কি এমন দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থন করে?

উত্তর: হ্যাঁ

আল-ক্বুরআন ৪২: ৫২

 وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ رُوحاً مِّنْ أَمْرِنَا مَا كُنتَ تَدْرِي مَا ٱلْكِتَابُ وَلاَ ٱلإِيمَانُ وَلَـٰكِن جَعَلْنَاهُ نُوراً نَّهْدِي بِهِ مَن نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَا وَإِنَّكَ لَتَهْدِيۤ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

অর্থ: এবং এভাবে আমি আপনার প্রতি ওহী/ঐশীবাণী (অবতীর্ণ) করেছি, এক প্রাণ-সঞ্চারক বস্তু আপন নির্দেশে; এর পূর্বে আপনি কিতাব জানতেন না, না শরীয়তের বিধানাবলীর বিস্তারিত বিবরণ। হ্যাঁ, আমি সেটাকে (হেদায়াতের) আলো করেছি, যা দ্বারা আমি পথ দেখাই আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করি। এবং নিশ্চয় নিশ্চয় আপনি সোজা পথ বাতলে দেন। [তাফসীরে নূরুল এরফান]

مَا كُنتَ تَدْرِي- মা’ কুনতা
مَا ٱلْكِتَابُ - মা’ল-কিতা’বু
وَلاَ ٱلإِيمَانُ - লা’ ঈমা’নু
[যোসেফ ইসলাম কর্তৃক পেশকৃত উদাহরণ]

আল-ক্বুরআন ২৯: ৪৮

 وَمَا كُنتَ تَتْلُواْ مِن قَبْلِهِ مِن كِتَابٍ وَلاَ تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذاً لاَّرْتَابَ ٱلْمُبْطِلُونَ

অর্থ: এবং এর আগে আপনি কোনো কিতাব/ঐশীগ্রন্থ পাঠ করতেন না এবং আপনি না আপন ডান হাতে কিছু লিখতেন। যদি এমন হতো তাহলে বাতিল সম্প্রদায় অবশ্য সন্দেহ করতো। [নূরুল এরফান]

বিশেষ জ্ঞাতব্য:

এখানে ‘(আপনি) আপন ডান হাতে কিছু লিখতেন না’ বাক্যটি আল-ক্বুরআনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। এটা স্পষ্টতঃ ইতিপূর্বেকার আসমানী কিতাব বা শাস্ত্রলিপির প্রতি উদ্দেশ্যকৃত, যা প্রসঙ্গের আলোকে বেরিয়ে এসেছে। এই আয়াতটি পাঠকদেরকে জানায় যে মহানবী (দ:) পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর না ছিলেন পাঠক, না লেখক, আর তাই তাঁর কাছে না ছিলো ওগুলোর (কোনো) জ্ঞান; এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন দাঁড়ায়, তিনি কোত্থেকে তাঁর (এতদসংক্রান্ত) জ্ঞান লাভ করেছিলেন? আর এটা (জনমনে ঠাঁয় পাওয়া বিশ্বাসের বিপরীতে) এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আস্থাশীলতা দেয় যে প্রিয়নবী (দ:) পড়া ও লিখা দুটোই জানতেন।

রাসূলুল্লাহ (দ:) যদি পড়তে বা লিখতে না-ই জানতেন, তাহলে ‘পূর্ববর্তী কিতাবগুলো’ তিনি পড়েননি বা লিখেননি মর্মে  বক্তব্য দ্বারা কেন মানুষকে জানানো হয়েছে? উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলে ’ক’ নির্দিষ্টভাবে ‘খ’ বইটি পড়েননি, তাহলে এতে প্রতীয়মান হবে যে ‘ক’ প্রকৃতপক্ষেই পড়ার সক্ষমতা বা সামর্থ্য রাখেন। উদাহরণটিতে ব্যতিক্রম শুধু এই যে, ‘খ’ বইটি ‘ক’ পাঠ করেননি।

রাসূল (দ:) যে নবী হবেন এমন কোনো প্রত্যাশাও তাঁর ছিলো না

আল-ক্বুরআন ২৮: ৮৬

وَمَا كُنتَ تَرْجُوۤ أَن يُلْقَىٰ إِلَيْكَ ٱلْكِتَابُ إِلاَّ رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ فَلاَ تَكُونَنَّ ظَهيراً لِّلْكَافِرِينَ

অর্থ: এবং আপনি আশা করতেন না যে কিতাব আপনার প্রতি প্রেরণ করা হবে। হ্যাঁ, আপনার রব্ব অনুগ্রহ করেছেন; সুতরাং কখনো কাফেরদের সহায়তা করবেন না। [নূরুল এরফান]

(৭) প্রিয়নবী (দ:) যে নিরক্ষর ছিলেন না, এ বিষয়টিকে সমর্থন দানকারী অন্য কোনো দলিল আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ

প্রামাণ্য দলিল-১: (মক্কার) কুফফার/অবিশ্বাসীরা প্রিয়নবী (দ:)’র প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করেছিলো যে তিনি নিজ মোবারক হাতে কিতাবুল্লাহ লিখেছিলেন।

আল-ক্বুরআন ২৫: ০৫

 وَقَالُوۤاْ أَسَاطِيرُ ٱلأَوَّلِينَ ٱكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلَىٰ عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً

অর্থ: এবং (কুফফার) বল্লো, ‘পূর্ববর্তীদের কিচ্ছা-কাহিনি তিনি লিখে নিয়েছেন; অতঃপর সেগুলো তাঁর কাছে সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করা হয়।’ [নূরুল এরফান]

এই আয়াতটি অনুবাদ করার ক্ষেত্রে তাফসীরকারক উলামাবৃন্দ কিছুটা বেগ পেয়ে থাকেন, কেননা এটা ইঙ্গিত করে যে মহানবী (দ:) লিখতে পারতেন। এই আয়াতটি তাঁরই বিরুদ্ধে কুফফারদের উত্থাপিত আরো বড় অভিযোগের অংশবিশেষ (যা ব্যক্ত করে যে তিনি কিচ্ছা লিখেছিলেন)। এমতাবস্থায় অনেক ভিন্ন ভিন্ন (দৃষ্টিভঙ্গির) অনুবাদ পেশ করা হয়েছে। সমস্যাটির গোড়া এই বাস্তবতা যে, একদিকে কিছু আহাদীসে বিবৃত হয়েছে প্রিয়নবী (দ:) নিরক্ষর ছিলেন, আরেক দিকে এই আয়াতে করীমায় ব্যবহৃত আরবী ইঙ্গিত করছে যে (বৃহত্তর অভিযোগের অংশ হিসেবে) তিনি কার্যতঃ লিখতে পারতেন।

আরবীতে ٱكْتَتَبَ ‘একতাতাবা’ শব্দটির মূল كتب কাফ-তা-বা

كتب মানে তিনি লিখেছেন, নির্দেশ দিয়েছেন, নিয়োগ করেছেন, স্থির করেছেন, লিখতে হুকুম দিয়েছেন, বিচার-বিবেচনা করেছেন, বিধান জারি করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একত্র করেছেন, সংগ্রহ করেছেন, যুক্ত করেছেন; এমন একটি বস্তু যার ওপর কেউ লিখেন বা লিপিবদ্ধ করেন, কিংবা নথিভুক্ত করেন।

আরবী كتب - ক্রিয়াপদ 

আরবী ٱكْتَتَبَ হচ্ছে كتب -এর কর্তাবাচ্য অতীতকাল ক্রিয়া। অতএব, এই ক্রিয়ার দ্বারা বোঝা যায় প্রিয়নবী (দ:) হয় ক্বুরআন লিপিবদ্ধ করিয়েছেন, না হয় নিজে লিখেছেন। [বঙ্গানুবাদকের নোট: ইতিহাস প্রথমটি সমর্থন করে। তাঁর কয়েকজন কাতেব তথা ওহী লেখক ছিলেন। তিনি নিজে তা লেখার পক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।]

প্রামাণ্য দলিল-২

আমরা সূরাহ ৯৬:০১ পাঠ করলে বিবেচনা করার মতো কিছু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় তাতে পাওয়া যাবে:

আল-ক্বুরআন ৯৬:০১-৫

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ

অর্থ: পড়ুন! আপনার রব্বের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ূন! এবং আপনার রব্ব-ই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা, যিনি কলম দ্বারা লিখন শিক্ষা দিয়েছেন - মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না। [নূরুল এরফান]

‘ইক্বরা’ (পড়ুন) শব্দটি ও কলম দ্বারা শিক্ষাদানের মধ্যে সংযোজক অব্যয় পদের প্রতি লক্ষ্য করুন।

(৮) তাহলে কোন্ সূত্র আমাদের জানাচ্ছে প্রিয়নবী (দ:) লিখতে পড়তে জানতেন না?

উত্তর: ইসলামী অমুখ্য উৎসগুলো। যেমন এলম-এ-রেজাল তথা ইসলামী আলেম-উলামার গবেষণাকীর্তি ও ফতোয়া যা মুখ্য ঐশী শাস্ত্রলিপি তথা ক্বুরআন মজীদ নয়।

এই ব্যাখ্যাটি ওই উৎস থেকেই ইসলামী ইতিহাসবিদ ও গবেষকমণ্ডলী বের করেছেন। তবে এসব উৎসের মধ্যেই এ ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। কিছু উৎস বিবৃত করে যে রাসূলুল্লাহ (দ:) পড়তে জানতেন; আবার কিছু উৎস আমাদের জানায় তিনি তা জানতেন না।

ইসলামী অমুখ্য উৎসগুলোর মধ্যকার অসঙ্গতি: (মহানবী সাক্ষর হওয়ার পক্ষে যেসব উৎস)

কেউ যদি আহাদীসকে নিজ যুক্তির পক্ষে ব্যবহার করেন (যেহেতু একমাত্র আমদের ধর্মের আহাদীসেই প্রিয়নবী (দ:)’র নিরক্ষরতার পক্ষে দাবি পাওয়া যায়), তাহলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসবিদমণ্ডলী (যথা - আল্ বাকাঈ ইবনে হিশাম; সালাম আল-ফযল তাবারী প্রমুখ) যাঁদের থেকে বিদ্যমান মৌলিক জীবনী নেয়া হয়েছে, তাঁরা লিপিবদ্ধ করেন যে ভণ্ড নবী মুসাইলামা কাযযাবের পত্রের জবাব প্রিয়নবী (দ:) স্বয়ং লিখেছিলেন। ওই হাদীস রেকর্ড করে যে তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন। ইমাম বুখারী (রহ:)’র দ্বারা হাদীস সংকলনেরও এক শতাব্দী আগে এই ইতিহাসবিদবৃন্দ আহাদীস থেকে সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করেছেন।

(ক) প্রিয়নবী (দ:)’র কাছে পড়ার জন্যে জিবরীল (আ:) বুটিদার রেশমি বস্ত্র/চাদর এনেছিলেন 

রমযান মাসে যা’তে আল্লাহতা’লা তাঁর হাবীবের (দ:) বিষয়ে নিজ করুণাস্বরূপ যা যা এরাদা/ইচ্ছা করেছিলেন, তাতে মহানবী (দ:) নিজ স্বভাব অনুসারে সপরিবার হেরা অভিমুখে রওয়ানা হন। রাতে যখন আল্লাহতা’লা তাঁকে তাঁর ঐশী মিশনের দ্বারা সম্মানিত করেন এবং তা দ্বারা আপন সেবকমণ্ডলীর প্রতি করুণা বর্ষণ করেন, তখন জিবরীল আমীন (আ:) তাঁর কাছে খোদার বিধান নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ (দ:) বলেন, “আমি নিদ্রাগত থাকাকালে জিবরীল (আ:) আমার কাছে আসেন একটি বুটিদার রেশমি বস্ত্র/চাদরসহ, যার ওপর কিছু লেখা ছিলো; আর তিনি বলেন, ‘পড়ুন!’ আমি বলি, আমি কী পড়বো? তিনি তা দ্বারা আমাকে এমন শক্তভাবে চেপে ধরেন যে আমি মনে করেছিলাম আমার বুঝি ইন্তেক্বাল হবে; অতঃপর তিনি আমায় ছেড়ে দেন এবং বলেন, ‘পড়ুন!’ আমি (আবার) বলি, আমি কী পড়বো? (এমতাবস্থায়) তিনি আবারো তা দ্বারা আমাকে চেপে ধরেন এমনভাবে যেনো আমার ইন্তেক্বাল হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছিলো। তিনি এরপর আমায় ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘পড়ুন!’ আমি (আবার) বলি, আমি কী পড়বো? তিনি তৃতীয়বার তা দ্বারা আমায় চেপে ধরেন, যার দরুন মনে হলো আমার ইন্তেক্বাল হবে; এরপর তিনি আমায় ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘পড়ুন!’ আমি (এমতাবস্থায়) বলি, তাহলে আমি কী পড়বো? আর এ কথা আমি বলেছিলাম তাঁর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে, পাছে তিনি আবার একই রকম করেন। এবার তিনি বলেন:

পড়ুন! আপনার রব্বের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ূন! এবং আপনার রব্ব-ই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা, যিনি কলম দ্বারা লিখন শিক্ষা দিয়েছেন - মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না।

অতঃপর আমি তা-ই পাঠ করি, আর জিবরীল (আ:) আমার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। [Guillaume. A, The Life of Muhammad: A Translation of Ishaq's Sirat Rasul Allah, Oxford University Press, Page 106]

(খ) মুসায়লামা’র পত্র ও মহানবী (দ:)’র উত্তর   

আশজা’র জনৈক শায়খ আমার কাছে বর্ণনা করেন সালামা বিনতে নুয়াইম বিন মাসউদ আল-আশজাঈ হতে, তিনি তাঁর পিতা নুয়াইম হতে; যিনি বলেন: আমি হুজূর পাক (দ:)’কে মুসায়লামা কাযযাবের চিঠি পড়া হলে তাদের (বার্তাবাহকদের) প্রতি জিজ্ঞেস করতে শুনি, “তোমরা এ সম্পর্কে কী বলো?” তারা উত্তর দেয় যে তারা মুসায়লামার মতামত-ই ব্যক্ত করে। এমতাবস্থায় তিনি (দ:) প্রত্যুত্তর দেন, “আল্লাহর শপথ! বার্তাবাহকদের হত্যা না করার ব্যাপারটি যদি না থাকতো, তাহলে আমি তোমাদের দু জনের শিরোচ্ছেদ করতাম।” অতঃপর তিনি মুসায়লামার প্রতি লেখেন: “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে মিথ্যুক মুসায়লামা’র প্রতি লিখিত। হেদায়াত যে ব্যক্তি অনুসরণ করে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এই জগৎ আল্লাহতা’লার মালিকানাধীন। তিনি যে সব বান্দার প্রতি ইচ্ছা করেন, তাদেরকে এর উত্তরাধিকার দান করেন; আর উত্তম ফলাফল হচ্ছে পুণ্যাত্মাদের জন্যে (বরাদ্দ)।” এই ঘটনা দশম হিজরী সালের। [প্রাগুক্ত Guillaume. A, The Life of Muhammad: A Translation of Ishaq's Sirat Rasul Allah, Oxford University Press, Page 649]

ওপরের বর্ণনাটি, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে প্রিয়নবী (দ:) বাস্তবিকই লিখতে সক্ষম ছিলেন, তার পরিষ্কার সাংঘর্ষিক বক্তব্যের প্রতি পরবর্তীকালের ইতিহাসবিদবৃন্দ যে ব্যাখ্যা দেন তা হলো, এটা প্রিয়নবী (দ:) কাউকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা এই লিপি ইঙ্গিত করে না, যেটা ব্যক্ত করে প্রিয়নবী (দ:) লেখা ও পাঠ দুটোই করতে সক্ষম ছিলেন।

(গ) সুনানে আবী দাউদ: বই-১৯, হাদীস নং-২৯৯৩

حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا قُرَّةُ، قَالَ سَمِعْتُ يَزِيدَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا بِالْمِرْبَدِ فَجَاءَ رَجُلٌ أَشْعَثُ الرَّأْسِ بِيَدِهِ قِطْعَةُ أَدِيمٍ أَحْمَرَ فَقُلْنَا كَأَنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ ‏.‏ فَقَالَ أَجَلْ ‏.‏ قُلْنَا نَاوِلْنَا هَذِهِ الْقِطْعَةَ الأَدِيمَ الَّتِي فِي يَدِكَ فَنَاوَلَنَاهَا فَقَرَأْنَاهَا فَإِذَا فِيهَا ‏

"‏ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ إِلَى بَنِي زُهَيْرِ بْنِ أُقَيْشٍ إِنَّكُمْ إِنْ شَهِدْتُمْ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَأَقَمْتُمُ الصَّلاَةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَأَدَّيْتُمُ الْخُمُسَ مِنَ الْمَغْنَمِ وَسَهْمَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَسَهْمَ الصَّفِيِّ أَنْتُمْ آمِنُونَ بِأَمَانِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ‏"

‏ ‏.‏ فَقُلْنَا مَنْ كَتَبَ لَكَ هَذَا الْكِتَابَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم 

অর্থ: হযরত এয়াযীদ ইবনে আবদিল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমরা মিরবাদে ছিলাম। এমন সময় এলোমেলো চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাঁর হাতে (পশুর) একটি লাল চামড়া নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমরা বলি: আপনি দেখতে তো বেদুঈন। তিনি উত্তর দেন: জি হ্যাঁ। আমরা বলি: আপনার হাতে অবস্থিত চামড়ার টুকরোখানি আমাদের দিন। তিনি তা হস্তান্তর করলে আমরা তাতে পাঠ করি নিম্নের লিপি: “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে বনূ যুহায়র ইবনে উক্বাইশের প্রতি (লিখিত)। তোমরা যদি সাক্ষ্য দাও এই মর্মে  যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ/উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, আর যদি নামায আদায় করো, যাকাত দাও, গনীমতের এক-পঞ্চামাংশ ও মহানবী (দ:)’র অংশ (সোয়াফী) পরিশোধ করো, তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)’এর আমান তথা জিম্মাদারীতে বা সুরক্ষায় থাকবে।” এমতাবস্থায় আমরা তাঁকে (বেদুঈনকে) জিজ্ঞেস করি: এই দলিলটি আপনার জন্যে কে লিখেছিলেন? তিনি উত্তর দেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)।

(ঘ) সহীহ মুসলিম: বই-১৩, কিতাবুল ওয়াসীয়্যা, হাদীস নং-৪০১৬

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، ء قَالَ عَبْدٌ أَخْبَرَنَا وَقَالَ ابْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، ء أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا حُضِرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَفِي الْبَيْتِ رِجَالٌ فِيهِمْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ هَلُمَّ أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّونَ بَعْدَهُ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ غَلَبَ عَلَيْهِ الْوَجَعُ وَعِنْدَكُمُ الْقُرْآنُ حَسْبُنَا كِتَابُ اللَّهِ ‏.‏ فَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ فَاخْتَصَمُوا فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ قَرِّبُوا يَكْتُبْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كِتَابًا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ ‏.‏ وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ مَا قَالَ عُمَرُ ‏.‏ فَلَمَّا أَكْثَرُوا اللَّغْوَ وَالاِخْتِلاَفَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ قُومُوا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ فَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ أَنْ يَكْتُبَ لَهُمْ ذَلِكَ الْكِتَابَ مِنِ اخْتِلاَفِهِمْ وَلَغَطِهِمْ ‏.

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন: প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র প্রকাশ্য জিন্দেগীর সায়াহ্নে তাঁর ঘরে মানুষজন উপস্থিত ছিলেন, যাঁদের মধ্যে হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-ও ছিলেন। হুযূর পাক (দ:) এরশাদ ফরমান: “(কাগজ-কলম নিয়ে) এসো, আমি যাতে একটি দলিল লিখতে পারি; ওর পরে তোমরা আর পথভ্রষ্ট হবে না।” অতঃপর হযরত উমর (রা:) বলেন: নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গভীর বেদনা-ক্লেশ অনুভব করছেন। তোমাদের কাছে রয়েছে ক্বুরআন মজীদ। কিতাবুল্লাহ-ই আমাদের জন্যে যথেষ্ট। তখন ঘরে উপস্থিতদের মধ্যে এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। তাঁদের কেউ কেউ বলেন: (কাগজ-কলম) এনে দাও যাতে প্রিয়নবী (দ:) তোমাদের জন্যে একটি দলিল লিখতে পারেন, যার দরুন তোমরা আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। অন্যান্যরা অপর দিকে হযরত উমর (রা:) যা বলেছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি করেন। এতে মহানবী (দ:)’র উপস্থিতিতে তর্ক-বিতর্ক ও উচ্চস্বরে আওয়াজ হলে তিনি (সবাইকে) বলেন: উঠে দাঁড়াও (এবং চলে যাও)! হযরত উবায়দুল্লাহ (রা:) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন: এটা ছিলো বড় একটি ক্ষতি, নিশ্চয় বড় ক্ষতি, তাঁদেরই মতবিরোধ ও আওয়াজের কারণে। রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁদের কারণে দলিলটি লিখতে (বা লেখাতে) পারেননি।

দলিলচিত্র-২




ওপরের দলিলচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হলুদ ও ছাই বর্ণে চিত্রিত করা হয়েছে।

(৯) এ রকম পরস্পরবিরোধী উৎসের ক্ষেত্রে কোনটি তাহলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য?

উত্তর: নিঃসন্দেহে মুখ্য উৎস - ক্বুরআন মজীদ; যদি এটাকে প্রাথমিক ঐতিহাসিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করাও হয়।

(১০) প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে নিরক্ষর হিসেবে প্রতীয়মান করার জন্যে অমুখ্য উৎসগুলো আল-ক্বুরআনের তাফসীর/ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ।

শেষ কথা

অতএব, সারসংক্ষেপ হিসেবে আমরা যা দেখতে পাই:

১/- ক্লাসিকাল আরববৃন্দ ‘উম্মী’ বলতে অ-ইহুদী অথবা পয়গম্বর মূসা (আলাইহিস্ সালাম)’র প্রাপ্ত ঐশী বিধান সম্পকে অপরিচিত কাউকে জানতেন/বুঝতেন। [অর্থাৎ, ওই বিধান স্রেফ ইহুদীদের ছিলো ২:৭৮]

২/- ‘উম্মী’ শব্দটিকে ‘নিরক্ষর’ হিসেবে অনুবাদ করলে ক্বুরআনী আয়াতসমূহ নিরর্থক প্রতিপন্ন হয়; কেননা এতে গোটা আরবজাতি বা ক্বুরআন যাঁদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে (অনারবও অন্তর্ভুক্ত), তাঁদের সবাইকে নিরক্ষর বলা হয়। [আল-ক্বুরআন ৩:২০; ৬২:০২]

৩/- মহানবী (দ:)’র সময়কার (মক্কার) কুফফার তাঁর প্রতি নিজ হাতে ক্বুরআন লেখার অভিযোগ উত্থাপন করেছিলো।তিনি নিরক্ষর হলে এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হতো এবং তা প্রথমাবস্থায় উত্থাপনও করা হতো না।

৪/ - হতে পারে প্রিয়নবী (দ:) লিখতে বা পড়তে জানতেন না। তবে আল-ক্বুরআন তাঁর ‘উম্মী’ হওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনাকালে তা নিশ্চিত করে না। বরং সামগ্রিক দলিলাদির আলোকে তাঁর লিখতে ও পড়তে জানার সম্ভাবনা-ই এক্ষেত্রে প্রবলতম।

                                                            *সমাপ্ত*   
   

No comments:

Post a Comment