Sunday 1 September 2019

‘মুসলমান সমাজ শির্কে লিপ্ত হবে না’ মর্মে হাদীসের বিশ্লেষণ


 - এডমিন

আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আবদীল ওয়াহহাব নজদীর ভাই শায়খ সুলাইমান ইবনে আবদীল ওয়াহহাব সাহেব নিজের লিখিত ‘আস্ সাওয়াইক্বুল ইলাহিয়্যা’ পুস্তকে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা আমার অনূদিত তুর্কী ‘ওহাবীদের প্রতি নসীহত’ বইটিতে (২৩ ও তৎপরবর্তী পৃষ্ঠায়) সন্নিবেশিত হয়েছে। তবে বাংলায় অনূদিত বইয়ে প্রকাশক সাঞ্জেরী পাবলিকেশন ওই হাদীসের অনুরূপ আরেকটি হাদীসের এবারত নক্বল করেন, যা হয়তো পাঠকের জন্যে পূর্ণ অর্থজ্ঞাপক না-ও হতে পারে। এ কারণেই আমি এখানে আমার বিশ্লেষণ পেশ করছি। তবে শায়খ সুলাইমানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেখার জন্যে এখানে বইয়ের স্ক্যানকৃত কপিও যুক্ত করা হয়েছে।

হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমে লিপিবদ্ধ। এবারত - عن عقبة بن عامر ان النبى صلى الله عليه وسلم صعد المنبر فقال اني لست اخشى عليكم ان تشركوا بعدي ولكن اخشى عليكم الدنيا ان تنفسوا فيها فتقتلوا فتهلكوا كما هلك من كان قبلكم - অর্থ: “আমার বেসালের (খোদার সাথে পরলোকে মিলিত হবার) পরে তোমাদের মুশরিক (মূর্তিপূজারী) হবার ব্যাপারে আমি শঙ্কিত নই; আমি আশঙ্কা করি যে তোমরা দুনিয়াবী স্বার্থে একে অপরকে হত্যা করবে এবং ফলশ্রুতিতে পূর্ববর্তী গোত্রগুলোর মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” লক্ষণীয় যে, বর্ণনাকারী হযরত উক্ববা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শেষবারের মতো নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে মিম্বরে আরোহণ করতে দেখেছিলেন। অতএব, এটা তাঁর হায়াতে জিন্দেগীর সায়াহ্নে হবে। [শায়খ সুলাইমানের বইয়ের ৪৪ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত যা আরবী বইয়ের স্ক্যানকৃত পৃষ্ঠায় দৃশ্যমান]

আলোচ্য হাদীসে সাহাবাবৃন্দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) মুরাদ/উদ্দেশ্য নন। কেননা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) অন্যত্র বলেছেন তাঁর ও তাঁর সাহাবাবৃন্দের (রা:) জমানা-ই সেরা। অতঃপর সেরা তাবেঈনমণ্ডলীর সময়কাল; তাঁদের পরে সেরা তাবে’ তাবেঈনবৃন্দের যুগ। বুখারী শরীফে লিপিবদ্ধ হাদীসটির এবারত নিম্নরূপ - خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ - (সহীহ বুখারী ২৬৫২; বই - ৫২, হাদীস - ১৬)

অতএব, হানাহানি ও ধ্বংস ওই আলোকোজ্জ্বল জমানায় আসতে পারে না - শেষোক্ত হাদীসের বাণী মোতাবেক। আমি জানি না কতিপয় আলেম কীভাবে, কিসের ভিত্তিতে সাহাবাবৃন্দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’কে আলোচ্য হাদীসের উদ্দেশ্য মনে করলেন! অধিকন্তু, হুজূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে উঠেই উম্মতের ভবিষ্যতের ঘটনাবলী বর্ণনা করতেন। তাই এটা শেষ জমানা পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত বলেই সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

[বি:দ্র: প্রথমে শায়খ সুলাইমানের বইয়ের স্ক্যানকৃত কপি এবং শেষে বঙ্গানুবাদের কপি পেশ করা হয়েছে]

*আরবীতে যাঁরা শায়খ সুলাইমানের বইটি পড়তে চান, তাঁদের জন্যে পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক: http://www.hakikatkitabevi.net/book.php?bookCode=151
** ‘ওহাবীদের প্রতি নসীহত’ বইটির বঙ্গানুবাদ যাঁরা পড়তে চান, তাঁদের জন্যে পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক: http://www.mediafire.com/file/bq2wggqn8zfepfz/

পুনশ্চ: এতদসংক্রান্ত হাদীসগুলোকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মুসলমান সমাজ দুনিয়াবী স্বার্থে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হবার আশঙ্কা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাহাবা কেরাম (রা:)’বৃন্দের যুগে হবে বলে মনে করেন নি। এটা একমাত্র শেষ জমানাতেই সম্ভব, যখন মুসলমানরা লোভী হয়ে গেছে। ’দুনিয়াবী স্বার্থে পরস্পর হানাহানিতে ধ্বংসের আশঙ্কা’ প্রকাশক হাদীসের বাণী কোনোক্রমেই সাহাবা কেরাম (রা:)’কে উদ্দেশ্য করে না, বরং শেষ জমানার মুসলমান প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে। অপর হাদীসের এবারতে এই বিষয়টি খোলাসা হয় না। তাই বৃহত্তর চিত্রের জন্যে আমার উদ্ধৃত হাদীসটি বিবেচনায় আনতেই হবে। কেননা মুসলমান সমাজ শির্ক (আকবর)-এ লিপ্ত হবে না বলে উভয় হাদীসেই বলা হয়েছে। অধিকন্তু, তাবেঈ ও তাবে’ তাবেঈ (রা:)’মণ্ডলী সেরা সময়ের প্রজন্ম বলে আমার উদ্ধৃত হাদীসে বলা হয়েছে। তাঁরা তো সাহাবা কেরাম (রা:)’এর প্রজন্ম নন! আসলে না বুঝলে যা হয় আর কী! মহানবী (দ;)’এর ওই ভব্যিদ্বাণী তিনি মিম্বরে আরোহণ করে উচ্চারণ করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণতঃ তিনি ক্বেয়ামতের আগে উম্মতের ভাগ্যে যা যা ঘটবে, তা-ই মিম্বরে উঠে বর্ণনা করতেন। ড: জি, এফ, হাদ্দাদ রচিত ও আমার অনূদিত ‘মহানবী (দ:)’এর অদৃশ্য জ্ঞান’ বইটি ভালোভাবে পড়লে এই বিভ্রান্তি হতো না।

No comments:

Post a Comment