Thursday 28 March 2024

*ইসলামী ইলম্/জ্ঞান: (১) আধ্যাত্মিক ও (২) প্রকাশ্য*


- এডমিন বিশিষ্ট তাবেঈ ও আলেমে হক্কানী-রব্বানী তথা সূফী-দরবেশ হযরত ইমাম হাসান বসরী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন -

وَعَن الْحسن قَالَ: «الْعِلْمُ عِلْمَانِ فَعِلْمٌ فِي الْقَلْبِ فَذَاكَ الْعلم النافع وَعلم على اللِّسَان فَذَاك حُجَّةُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى ابْنِ آدَمَ». رَوَاهُ الدَّارمِيّ

অর্থ: হযরত ইমাম হাসান আল-বসরী (রহঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ’ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার ’ইলম হলো অন্তরে, যা উপকারী ’ইলম। আর অপর প্রকার ’ইলম হলো মুখে মুখে, আর এটা হলো আল্লাহর পক্ষে বনী আদমের প্রতি আরোপিত প্রামাণিক দলিল। [দারিমী, ৩৬৪; মিশকাতুল মাসাবিহ, কিতাবুল ইলম অধ্যায়; বর্ণনার মান-সহীহ/বিশুদ্ধ]

ব্যাখ্যা:

হযরত ইমাম বসরী (রহ.) ইসলামী প্রথম তিন প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের সম্পর্কে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন। ইমাম সাহেবের (রহ.) এ কথায় শরঈ ইলম/জ্ঞান সম্পর্কে গভীর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বস্তুতঃ এ জ্ঞান দু ভাগে বিভক্ত। মুখে মুখে তথা জিহ্বা দ্বারা যা প্রকাশ্যে বিবৃত হয়েছে, তা আল্লাহতায়ালার জাহেরী বা প্রকাশ্য বিধান (ফিকাহ)। আর ক্বলব্ তথা অন্তরের বাতেনী বা অপ্রকাশ্য ইলম্ হচ্ছে ইসলামের আধ্যাত্মিকতা (তাসাউফ/সূফীতত্ত্ব তথা ইলমে মা’রেফত)। এ জ্ঞানই সূফী-বুযূর্গমণ্ডলী চর্চা করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

সিদ্ধান্ত:

ফিক্বাহ-শাস্ত্র ও তাসাউফ-শাস্ত্র পরস্পরবিরোধী নয়, বরং পরিপূরক। এটা অনেকটা দুনিয়ার বিদ্যালয়গুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরম্ভ করে কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনাকে জাহেরী শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করাকে বাতেনী শিক্ষা বলে ধরে নিলে বোঝা যাবে যে, মানুষের জীবনে বাতেনী বা মারেফতী জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভই চূড়ান্ত লক্ষ্য। স্রেফ ফিক্বাহ চর্চায় যে খোদাপ্রাপ্তি সম্ভব নয়, তা ইমামুল আযম আবূ হানীফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর কথায় স্পষ্ট হয়েছে। তিনি সারা জীবন ইজতিহাদ ও ফিক্বাহশাস্ত্র চর্চা করার পর শেষ ২ বছর সূফী ইমাম হযরত জা’ফর সাদিক্ব (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর দরবারে উপস্থিতি দ্বারা খেদমতে ব্যয় করেন। অতঃপর তিনি বলেন -

لولا السنتان لهلك النعمان

অর্থ: আমি নু’মান (বিন সাবিত তথা ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি) যদি ওই দুই বছর ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর সান্নিধ্যে না থাকতাম, তাহলে ‘হালাক’ বা বিনাশ হয়ে যেতাম।

তাসাউফ বিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে আমার অনূদিত ‘তাসাউফ প্রবন্ধ সমগ্র’ পুস্তকে। পিডিএফ লিঙ্ক: https://drive.google.com/file/d/1jhdpeWPSlZsHimBCYVxJiyyPZX6d0E26/view?usp=drive_link

আল্লাহতায়ালা সবাইকে বোঝার তৌফীক্ব দিন, আমীন।

*সমাপ্ত*

ছবি - ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর মাযার শরীফ, বাগদাদ, ইরাক।



No comments:

Post a Comment