Saturday, 6 January 2018

শানে আউলিয়া

Yasmin Akter Kazi Saifuddin Hossain-এর সাথে on Facebook

 `````````` শানে আউলিয়া ````````` 

মূল: ইয়াসমিন আখতার

★ ওলি আরবী শব্দ। আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওলি'র বহুবচন।
ওলি' অর্থ বন্ধু,মিত্র বা অনুসারি, মুরব্বী, অভিভাবক ।
কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।
(তথ্যসূত্রঃ আরবী-বাংলা অভিধান,প্রকাশনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
★ প্রসিদ্ধ আরবী-ইংরেজী অভিধান “আল-মাওয়ারিদ” অনুসারে ওলি শব্দের অর্থঃ guardian, patron, friend,companion ইত্যাদী।
★ পবিত্র কোরআনে “ওলি” এবং “আউলিয়া” এ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্য বার।
★★★ ওলীগনের অবস্থা সম্পর্কে বোঝার জন্য কিছু মুল্যবান বানী দেখে নেই :
★ "সুফি তিনিই যার নিকট জাহের ও বাতেন (গায়েব) পরিষ্কার"
- বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রা)।।
★ "দরবেশের শান সেটাই যার ঘর থেকে কেউ খালি হাতে ফেরে না"
- সুলতানুল হিন্দ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রা)।।
★ "মানুষ ফকীরী ও দরবেশীর যোগ্য তখনই হয় যখন তার এই অস্থায়ী
জগতের কোন কিছু অবশিষ্ট না থাকে।"
- সুলতানুল হীন্দ খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহঃ)
★ একদিন হযরত খাজা গারিবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (র) কাবার হেরেম শরীফে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এলহাম হইলো যে, “হে মইনুদ্দিন! আমি তোমার উপর সন্তোষ্ট আছি এবং আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম। যাহা ইচ্ছা হয় চাও; আমি তোমাকে প্রদান করিব।” খাজা বাবা আরজ করিলেন, “হে এলাহি! মইনুদ্দিনের সাজরা ভুক্ত মুরিদদের ক্ষমা করুন।” আল্লাহ্‌ তায়ালার হুকুম হইলো, “ হে মইনুদ্দিন, তুমি আমার; তোমার মুরিদের মুরিদ কেয়ামত পর্যন্ত, যাহারা তোমার সাজরা ভুক্ত হইবে, আমি ক্ষমা করিব।” অতঃপর হযরত খাজা গারিবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (র) অধিকাংশ সময়ই বলতেন, “আমার মুরিদ ও আমার মুরিদগণের মুরিদগণ, যাহারা কেয়ামত পর্যন্ত আমার সাজারা ভুক্ত হইবে, উহাদিগকে বেহেশতে না লইয়া মইনুদ্দিন কখনো বেহেশতে কদম রাখিবে না।”
★★★ ওলী কারা?
★ হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেনঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) ও ইবনে আব্বাস সহ অনেক সাহাবায় কেরাম বলেছেন-
```আউলিয়া আল্লাহিল্লাযিনা ইজা রুয়ুযা জুকেরাল্লাহ।```
অর্থঃ " তারাই অলী আল্লাহ যাদের কে দেখলে খোদার কথা স্মরণ হয়।"
★ ভারতের জমীনে সুলতালুন হিন্দ খাজা মাইনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) এসে দ্বীন প্রচার করেন তিনি ৯২ লক্ষ্য মানুষকে মুসলমান করেেছে। এখনও খাজা বাবার (রা:) পবিত্র রওজা মোবারকে অনেক বিধর্মী মুসলমান হচ্ছে। কই নামধারী আহলে হাদিস ড জাকির নায়েক কি ১০০০ মুসলমান করতে পেরেছে? এত প্রচার আর এত tv show আর lecture দিয়ে? যেখানে ওলীদের চেহারা দেখেই কত বিধর্মী মুসলমান হয়ে গেছে তার হিসেব নেই।
আউলিয়া কেরাম (মুমিন বান্দাগন) সম্পর্কে আল-কোরান থেকে দেখুন :
★ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওসিলা তালাশ কর।[সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।
(বহু সহিহ হাদিসে আসছে যে সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ (সা) এর উসিলা দিতেন বা ওনারা একে অন্যের উসিলা দিতেন এখন আমরা নবী-রাসুল, সাহাবী, ইমাম, ওলী-আউলিয়ার উসিলা দেই)
★ এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে আল্লাহর হেদায়াতপ্রাপ্ত বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:-
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অনুবাদ- আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ।{সূরা ফাতিহা-৬,৭}
★ আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন –
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ
অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ।{সূরা নিসা-৬৯}
★ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী । [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]
★ হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর (ন্যায় বিচারক) রয়েছে তাদের। [সুরা ৪ নিসা: ৫৯]
★ আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯)
★ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
'' নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি (বন্ধু) হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দিয়ে দেয়, এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে।
وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
আর যারা ওলি (বন্ধু) মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী '' ( সূরা আল মায়িদা,আয়াত-৫৫-৫৬)
★ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
মনে রেখো যারা আল্লাহর (ওলি) বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
(সুরা ইউনুছ আয়াত :৬২-৬৪)
★ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’ (সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
★ আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন ।’’
(সূরা আল-বাকারা:২২২)
★ তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’
(সূরা আল ইমরান:৭৬)
★ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন,
وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
"ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন "
অর্থ - আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের (পরহেজগারদের) বন্ধু।
(সূরা জাসিয়া ৪৫:১৯)
★ আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , " তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।'' ( সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩ )
★ যারা (প্রকৃত ভাবে) ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। (সূরা বাকারা ২৫৭)
★ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন-
وَاللّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ
"ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মু'মিনীন"
অর্থ - আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু (অভিভাবক)।
( সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৮ )
★ '' সকল মুমিনই দয়াময় আল্লাহ অলি।'' ( ইমাম তাহাবী ''আল আকীদা'' গ্রন্থ)
★ আল্লাহ কোরআনে পরমান,শয়তান আল্লাহকে বলতেছে,""সকল মানুষকে আমি পথভ্রষ্ঠ করিব,কিন্তু আপনার সে বান্দাদের ব্যতীত যারা তার মধ্যে বিশিষ্ট।
(সূরা হিজর -40)
★ আল্লাহ পাক এবার নিজেই বলছেন, "বাস্তবিক আমার সে বান্দাদের উপর তোমার কতৃর্ত চলবে না।
(সূরা হিজর-43)
★★★ ওলীগন কি সত্যি বিদ্যমান আছেন?
★ হযরত মালিক বিন আনাস (রঃ) বর্ণনা করেন যে,“
হযরত রসূলে করিম (সঃ) ফরমায়েছেন যে, আমাদের জন্য ৪০ জন ওলী আছেন। এঁদের মধ্যে ১২ জন সিরিয়ায় এবং ১৮ জন ইরাকে রয়েছেন”।
★ ইবনে আসাকির (রহ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মারফু হাদীসটি বর্ণনা করেন। হাদীসের মর্ম মতে, “
** নিশ্চয়ই আল্লাহতালার ৩০০ জন ওলি আল্লাহ রয়েছেন যাদের ক্বলব হযরত আদম (আঃ)-এর ক্বলবের ন্যায়,
** ৪০ জন মুসা (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৭ জন ওলী ঈসা (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৫ জন ওলী জিব্রাইল (আঃ)-এর কলবের ন্যায়,
** ৩ জন ওলী মিকাইল (আঃ)-এর কলবের ন্যায় এবং
** ১ জন ওলী ইস্রাফীল (আঃ)-এর কলবের ন্যায় সৃষ্টি করেছেন।
যখন তাদের মধ্যে একজন পরলোক গমন করেন, তখন তাদের তিনজনের দলের একজনতাঁর স্থানে,
পাঁচজনের দলেন একজন তিনজনের দলে,
সাতজনের দলের একজন পাঁচজনের দলে,
চল্লিশ জনের দলের একজন সাতজনের দলে এবং
তিনশত জনের দলের একজন চল্লিশজনের দলে এবং
কোন একজন সৎকর্ম পরায়ন মুসলমানকে সেই তিনশত দলের মনোনয়ন দান করে তাঁদের সংখ্যা পরিপূর্ণ রাখা হয়”।
তাঁদের ওছিলায় রাসূল করিম (সঃ)-এর উম্মতদেরকে আল্লাহতালা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন।
★ ইমাম হাকিম তিরমিজি বর্ণনা করেছেন যে,
হযরত রাসূলে করিম (সঃ) মানুষের মধ্যে ৪০ জন সিদ্দিক রেখে যান যাঁরা এ পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখেন।
এদের একজনের মৃত্যু হলে আর একজন তাঁর জায়গায় আসেন। এঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আল্লাহতালা মোহর দিয়ে একজন ওলীকে পাঠিয়ে দেন। কিতাবে খতম-আল আউলিয়া
Reference :
(হাকিম তিরমিজি, ৮৯৮ খৃঃ)
(কাসফ আল মাহজুব : আল-হুজবেরী, ১০৬৩ খৃঃ)।
★ “ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থেও ওলীদের প্রশাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ধার্মিক লোক হচ্ছে এ পৃথিবীর ভিত্তি। ধার্মিক লোক না থাকলে পৃথিবীর কল্যাণ লোপ পাবে। পৃথিবীতে কমপক্ষে ত্রিশজন ধার্মিক লোক আছেন, তাঁরা না থাকলে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সকল ধর্মগ্রন্থের কোন সংস্করণে দেখায় যায় যে, পৃথিবীতে ৪৫ জন ধার্মিক লোক আছেন যাঁরা এ পৃথিবীকে টিকে থাকতে সাহায্য করেন। এঁদের মধ্যে বেবিলোনে রয়েছেন ত্রিশজন, প্যালেষ্টাইনে ১৫ জন। পরবর্তীতে এ সকল ধর্মের বিশেষজ্ঞগণ এসকল ধার্মিক ব্যক্তির সংখ্যা ৩৬ জন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এ সকল ধর্মীয় পন্ডিতগণ মনে করেন যে, এ সকল ধার্মিক লোক না থাকলে পৃথিবী থাকবে না এবং এঁদের কেউ মৃত্যু বরণ করলে তাঁর জায়গায় অন্যজন চলে আসবেন।
(আদি পুস্তক:৯; Old Testament (Midas Version)।
★ জুন্নুন মিশরী (রঃ)-এর মতে, পৃথিবীতে ৩০০ জন ওলী আছেন। এঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন গাউছ বা মূল খুঁটি। তাঁকে একটি বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুর সঙ্গে তুলনা করা যায়। তিনিই আকর্ষণ ও বিকর্ষণের কেন্দ্র।
★ হযরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ) বলেন,“
হযরত রাসূলে করিম (সঃ)-এর প্রতিনিধি ছাড়া এ পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন থাকেন যাঁকে কুতুব বা খুঁটি বলা যায়। কোন এক যুগে এবং কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক গুণাবলীর পরিপূর্ণতা থাকে এবং তাঁকে সাধারণত ছাহেবে জমান বলা হয়।”
★ হযরত মুহীউদ্দিন আরবী (রঃ)-এর মতে, “গাউছ হলেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রাণকেন্দ্র। তাঁর নিকট থেকে চতুর্দিকে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সমস্ত জীবের প্রাণে প্রবেশ করে। গাউছকে দু’জন ইমাম প্রতিনিয়ত সাহায্য করেন। গাউছের পরে হলেন চারজন আউতাদ বা স্তম্ভ। আউতাদের অধীনে আছেন সাতজন আবদাল। এঁদের কাজ হলো আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করা। এঁদের পরে রয়েছেন বারজন নুকাবা বা মনোনত পরহেজগার ব্যক্তি। এসকল নুকাবাগণ মানুষের অন্তর্নিহিত চিন্তসমূহ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন। এদের পরে আরও আটজন নুকাপ আছেন যাঁদের মধ্যে মহান আল্লাহতালা আট রকমের গুণ দিয়েছেন। সবার শেষে আছেন হুয়ারী বা শিষ্যগণ এবং তাঁদের পশ্চাতে রয়েছেন আরও ৪০ জন লোক”। হযরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরবী (রঃ)-এর মতে,“পয়গম্বারদের মধ্যে যেমন শেষ পয়গাম্বর আছেন, ওলীদের মধ্যেও তেমনি শেষ ওলী রয়েছেন যার কাছে সীলমোহর রয়েছে”।তাঁর মতে “দুটি সীল মোহর রয়েছে- একটি হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে এবং অপরটি সর্বশ্রেষ্ঠ ওলীর সঙ্গে”।
★ প্রখ্যাত সুফী আশ শাধিলী বলেন, “প্রত্যেক পীর হলে নিজ নিজ ত্বরিকার কুতুব, খুঁটি বা গাউছ হলেন একজন”। (Alnafakhir al-Aliya Fi-Alma-Atnir-Osh-Shadhiliya by Ahmad-Ibu-Ayas)।
★ পল বি, ফেন্টনের মতে, “বহু সুফী সাধক তাঁদের পীরকে গাউছুল আযম বা মূল খুঁটি বলে দাবী করেছেন। যেহেতু অনেক সময় গাউছুল আযম দৃশ্যমান নহেন। এ অবস্থায় একটি সময়গত মূল খুঁটি (কুতুবুজজ্বমান) ধারণার সৃষ্টি হয়েছে”। (Journal of the Muhiddin-Ibu-Arabi Society, Vol.X,1991, Oxford University Press Ltd.)
★★★ ওলীদের কাছে আছে ইলমে লাদ্দুনী বা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান :
★ আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদেরকে (আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে) জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
★ কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।(আল-হাদিস)
★ “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছো, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)
★ “নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি বরং তাঁরা ইল্‌মে দ্বীন রেখে গিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো।”
(আহ্‌মদ, তিরমিযী)
★ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“ইল্‌ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বালবী ইল্‌ম (ইল্‌মে তাছাউফ), যা উপকারী ইল্‌ম। অপরটি হচ্ছে- জবানি ইল্‌ম (ইল্‌মে ফিক্বাহ), যা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।”
(দারেমী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত)
“আলিমগণ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।”
(তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্‌, দারিমী, আহমদ, মিশকাত, মা’য়ারিফুস্‌ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্‌ ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, উরফুশ্‌ শাজী, বজলুল মাজহুদ ইত্যাদি)
Note: কাদের নিকট সেই সত্যিকারের ইলমে লাদ্দুনী রয়েছে? যারা আল্লাহর ওলী তারাই তো প্রকৃত আলিম। তাই নয় কি?
★★★ ওলীগনের কারামত :
★ আল-কোরআনে আসহাবে কাহাফ এর ওলীগনের কথা বলা হয়েছে তারা শত শত ঘুমন্ত ছিল তাও উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা আসহাবে কাহাফ)
★ হযরত মরিয়ম আঃ নবী ছিলেন না। কিন্তু কারামত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে অমৌসুমি ফল দান করেছিলেন। কুরআনে এসেছে :
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ [٣:٣٧]
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন “মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?” তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” {সূরা আলে ইমরান-৩৭}
★ এমনিভাবে সুলাইমান আঃ এর জমানায় মুহুর্তের মাঝে ইয়ামান থেকে আসিফ বিন বারখিয়া নামক ব্যক্তির রানী বিলকিসের সিংহাসন নিয়ে আসাও ওলীদের কারামত সত্য হবার প্রমাণ। কারণ আসিফ বিন বারখিয়া কোন নবী ছিল না।
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ [٢٧:٤٠]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। {সুরা নামল-৩৭}
★★★ ওলীরা কি ওফাত বরন করার পর জীবিত নাকি মৃত ? সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
★ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:-
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚبَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
যারা আল্লাহ্‌ পাকের রাস্তায় শহীদ হয়েছেন তাদের কে তুমি মৃত মনে করো
না বরং তারা তাঁদের নিজেদের রব এর নিকট জীবিত ও রিজিক প্রাপ্ত।"(সুরা আলইমরান ১৬৯)
★ আরো ইরশাদ করেন :
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ (سورة البقرة-154
"আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তারা জীবিত। তবেতা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।"
(সূরা বাকারা-১৫৪)
★ 2:154,3:169 আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে,
শহীদগণ কবরে জীবিত। আর এটা বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নবীগণও কবরে জীবিত। কেননা নবীগণের মর্যাদা শহীদদের তুলনায় অনেক উর্দ্ধে। সুতরাং শহীদগণ যদি কবরে জীবিত থাকেন,নবীগণ ও কবরে জীবিত । এটা ইমাম তিরমিযী(র) ও ইমাম বাইহাকী(র) সহীহ হাদিস দারা প্রমাণ করেছেন।
(Nayl al-Awtar, Volume 003, Page No. 82)(Fath al-Bari>sarhe bukhari, Volume 006: Page No. 379)
Note : ওলীগন আল্লাহর রাস্তায় সারা জীবন কাটায় তাই তাদেরও শহিদ বলা যায় । অপরদিকে তারা কোন কোন ক্ষেত্রে শহিদের চেয়েও মর্যাদাবান। যেখানে দ্বীনের একজন প্রকৃত আলিমকেও শহিদের মর্যাদার সাথে তুলনা হয়েছে।
★ আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি।
(সূরা আল হাদীদ: ১৯)
★ “এবং যারা আল্লাহর পথে গমন করেছে এবং পরে নিহত হয়েছে অথবা (স্বাভাবিক) মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহতালা অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবে এবং তিনিইতো (আল্লাহতালা) সর্বোৎকৃষ্ট জীবিকা দাতা। তিনি তাদেরকে (পরকালে) অবশ্যই এমন জায়গায় স্থান দেবেন যা তাঁরা পছন্দ করবে এবং আল্লাহতো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল”। (সুরা হাজ্জ্ব, আয়াত: ৫৮-৫৯)
★ ওলী-আল্লাহগণের বিরোধিতাকারীদের হুশিয়ারী দিয়ে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ সাবধান করে দিয়েছেন।
- ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﻯ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻓَﻘَﺪْ
ﺁﺫَﻧْﺘُﻪُ ﺑِﺎﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﻘَﺮَّﺏَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻤَّﺎ
ﺍﻓْﺘَﺮَﺿْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻳَﺘَﻘَﺮَّﺏُ ﺇِﻟَﻲَّ ﺑِﺎﻟﻨَّﻮَﺍﻓِﻞِ ﺣَﺘَّﻰ
ﺃُﺣِﺒَّﻪُ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻛُﻨْﺖُ ﺳَﻤْﻌَﻪُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﻤَﻊُ ﺑِﻪِ ﻭَﺑَﺼَﺮَﻩُ ﺍﻟَّﺬِﻱ
ﻳُﺒْﺼِﺮُ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﺒْﻄِﺶُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺇِﻥْ
ﺳَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻟَﺄُﻋْﻄِﻴَﻨَّﻪُ ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺍﺳْﺘَﻌَﺎﺫَﻧِﻲ ﻟَﺄُﻋِﻴﺬَﻧَّﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺮَﺩَّﺩْﺕُ ﻋَﻦْ
ﺷَﻲْﺀٍ ﺃَﻧَﺎ ﻓَﺎﻋِﻠُﻪُ ﺗَﺮَﺩُّﺩِﻱ ﻋَﻦْ ﻧَﻔْﺲِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻭَﺃَﻧَﺎ
ﺃَﻛْﺮَﻩُ ﻣَﺴَﺎﺀَﺗَﻪُ .
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।
``` রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার
অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি ।
যেসব অধিক প্রিয় কাজ সমুহের দ্বারা বান্দা আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে সেগুলো হল ফরজ কাজসমুহ।
অত:পর আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমে আমার আরো এত নিকটবর্তী হতে থাকে যতক্ষন না আমি তাকে ভালবাসি ,
তখন আমি তার শ্রবন ইন্দ্রীয় হয়ে যাই
যা দ্বারা সে শোনে !
তার দর্শন ইন্দ্রীয় হয়ে যাই,
যা দ্বারা সে দেখে !
তার হাত হয়ে যাই,
যা দ্বারা সে ধরে এবং
তার পা হয়ে যাই,
যা দিয়ে সে চলাফেরা করে !
যদি সে আমার কাছে কিছু প্রর্থনা করে,
আমি তাকে তাই দেই।
যদি সে আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে,
তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই।
আমি কোনকিছু করার ব্যপারে দিধ্যাবোধ করি না,
যতটা না মুমিনের রুহ কবজের (নেয়ার) ব্যপারে করি এজন্য যে
সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তাকে অসন্তুষ্ট করতে অপছন্দ করি।
Reference :
★ বুখারী শরিফঃ ৬৫০২
★ মেশকাত শরীফ-১৯৭ পৃষ্ঠা
★ হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্নিত,
তিনি বলেন,
আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত মূছা আঃ ও হযরত
হারুন আঃ কে ফেরাউনের নিকট পাঠায় , তখন
আল্লাহ তায়ালা তাদেরঁকে বলেন,
ফেরাউনের দুনিয়ার সম্মান ও শান শওকত যেন তোমাদেরকে
অবাগ না করে, খেয়াল রাখ এইসব জিনিষের প্রতি তোমাদের দৃষ্টি যাতে না যায়, এইসব কিছু দুনিয়াতে সুখ ও আরাম আয়েশের অলংকার মাত্র, আমি (আল্লাহ) যদি তোমাদেরকে দুনিয়ার আরাম আয়েশ, সুখ- শান্তি , ও প্রাচুয্যের বালা খানায় রাখতে
ইচ্ছা পোষন করতাম তবে ফেরাউন তোমাদের বালা খানার
সৌন্দয্য দেখে নিবাক হয়ে যেত, কিন্তু আমি তোমারা দুজনকে
ইহা থেকে বাচিয়েঁ রেখেছি। কেননা আমি আমার বন্ধুদের সাথে
এই রকমই করি, আগেও আমার ওলিদের বা বন্ধুদের জন্য
আমি এই রকম ( তোমরা যে অবস্থায়) অবস্থা পছন্দ করেছি,
আমি (আল্লাহ) তাদেরকে (ওলিদের) দুনিয়ার আরাম আয়েশ,
সুখ- শান্তি , ও প্রাচুয্যের বালা খানা থেকে এমনভাবে দূরে
রেখেছি রাখাল তার ছাগল গুলোকে বিপদজনক শস্য মাঠ
থেকে দূরে রাখে, দয়াময় রাখাল তার উঠ গুলোকে নিরাপদে
রাখে, আমার ওলীদের সাথে আমার এই বিনিময় এই কারনে
যে আমার কাছে তাদের কোন গুরুত্ব নেই তা নয়, বরংচ পরকালে
তারা যেন আমার কাছ থেকে পরিপূন সম্মান ও অসীম
নেয়ামত অর্জন করে নেয়, দুনিয়ার এই অবস্থা, মর্যাদা ও
প্রাচুর্য পরকালের তুলনায় কিছু না। দুনিয়াতে মোরাকাবা ও
মোশাহেদা বা আমাকে (আল্লাহকে) পাওয়ার ধ্যান ই হল আমার ওলিদের জন্য প্রাচুর্য্য , তাদের পোশাক বা চেনার চিহ্ন হচ্ছে
তারা শান্তিকামি ও মাহবুবের ধ্যানে মগ্ন। তাদের চেহেরার উপর
আল্লাহর ইবাদতে মশগুলের কারনে সিজদার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়, নিঃসন্দেহে তারাই হচ্ছে আমার সত্যিকারের বন্ধু।
(হে মুমিন গন) যখন তোমরা তাদের সাক্ষাত পাবে , তাদের
প্রতি সর্বোচ্চ তাজিমের (সম্মানের) সাথে সাক্ষাত কর,
তোমার জিব্বাহ ও অন্তরকে তাদের ক্ষেত্রে সাবধান রাখ।
এবং জেনে রাখ ( হে মানব সম্প্রদায়) যে কেও আমার ওলিকে ঘৃনা করল অথবা আমার ওলির সম্মানকে হালকা মনে করল
সে যেন আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করল !!
** সে যুদ্ধের জন্য আমার সামনে এগিয়ে আসল,
আমি (আল্লাহ) আমার বন্ধুদের সাহায্যের ক্ষেত্রে
খুব দ্রুতগামি !
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল, সে কি মনে করে
সে আমার সামনে যুদ্ধের জন্যে দাডাঁতে পারবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সে কি মনে করে সে আমাকে দুশমনির খাতিরে অক্ষম করে দেবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সেকি মনে করে
সে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে ?
** যে ব্যক্তি আমাকে যুদ্ধের জন্য আহবান করল সেকি মনে করে
সে আমাকে পরাজিত করবে? কক্ষনো নয়।
আমি আমার বন্ধুদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে পরিপুর্ন সফলতা দান কারি, তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমি নিজেই সাহায্যকারী।
Reference :
From : হাফেজ আবু নাঈম আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-ইসফাহানী:
Book : “হিলয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল আছফিয়াহ”
Volume : ১খন্ড, পৃষ্টা নং- ১১-১২
★★★ ওলীগনের শাফায়াত সম্পর্কে :
★ “যে দয়াময় আ̂ল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ, সে ব্যাতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। [সুরা ১৯ মারঈয়াম: ৮৭]
(I) আল্লাহর একজন বিশিষ্ট ওলী ছিলেন ওয়াইছ করনী (রহ)। তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ী। তার সম্পর্কে কিছু হাদিস :
হযরত ওমর (রা.) বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে বলিতে শুনিয়াছি, নিশ্চয়ই , অনুগতদিগের (খায়রুত্তাবেয়ীন) মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাহার নাম উয়ায়ছ। তাহার মা আছে এবং তাহার শরীরে একটি শ্বেত চিহ্ন আছে। তোমরা (তাহার সংগে দেখা করিয়া) অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে।
(মুসলিম শরীফ ৬২৬০/ মিশকাত ৬০০৬)
হযরত উমর বিন খাত্তাব হইতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূলﷺ বলিয়াছেন, “নিশ্চয়ই ইয়েমেন হইতে তোমাদের নিকট এক লোক আসিবে যে উয়ায়ছ নামে অবিহীত। সে তাহার মাতার জন্য ইয়েমেন ত্যাগ করিতে পারে না। তাহার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাকে ডাকিল, তাহার শ্বেত রোগ এক দিরহাম পর্যন্ত ব্যতীত দূর হইয়া গেল। তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাহার সাক্ষাত পাও তাহাকে অনুরোধ করিবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে ।
(মুসলিম শরীফ ৬২৫৯/ মিশকাত শরীফ ৬০০৬)
রাসূলল্লাহ হযরত ওমরকে বলিলেন, উয়ায়ছ ইবনে আমর মুজাহিদগণের সাহায্যার্থে আগমনকারী ইয়েমেনবাসীদের সহিত তোমাদের নিকট আসিবে। সে মুজার গোত্রের কারণ শাখার অন্তর্ভুক্ত। তাহার ধবল রোগ ছিল। (আল্লাহর নিকট দোয়া করিবার কারণে) এক দিরহাম পরিমান স্থান ব্যতীত সে উহা হইতে আরোগ্য লাভ করে। তাহার মাতা আছে। সে তাহার মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে। সে আল্লাহর নিকট শপথ করিলে, আল্লাহ তাহা পূরণ করে। তাহার দ্বারা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা করাইতে সক্ষম হইলে তাহা করাইবে।
(মিশকাত শরীফ)
 হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের
এক বিশেষ ওলী আল্লাহর সুপারিশ
করা সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল
জাদয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের
এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামীম
গোত্রের লোক সংখ্যা হতেও অধিক
লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে তিরমিযী শরীফ,
সুনানে ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ
৫৩৬১, সুনানে দারেমী]
নোট : এই হাদিসটি অনেক উলামায়ে কেরাম ""আশিকে রাসুল (সা) বিখ্যাত তাবেযী ওয়াইস করনী (রহ) এর কথা বলে উল্লেখ করেছেন। নিচে বর্নিত হয়েছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন," হযরত উয়ায়ছ করণীর শাফায়াতে রাবী ও মুজার গোত্রের মেষের পশম সমপরিমান লোক বেহেশতে যাইবে।
(মিশকাত শরীফ)
হযরত আবি মাসউদ-উল-আনসারী হতে বর্নিতঃ রাসূল ﷺ বলেছেন,
“আমার উম্মতের ভিতর এক ব্যক্তি, যাহাকে লোকে উয়ায়েছ ইবনে আবদুল্লাহ্ করণী বলে, তাহার প্রার্থনায় অবশ্যই রাবিয়া ও মুজার এই দুই গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যক গুনাহ্গার উম্মতের গুনাহ্ মাফ হইবে।”
(শওয়াহেদুন-নবুওয়াত/মছনবী রহীম)
(II)  হযরত আনাস (রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) ফরমায়েছেন,
ﻳﺸﻔﻊ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺛﻼﺛﺔ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﺛﻢ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ
ﺛﻢ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ
অর্থ: কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর
লোক সুপারিশ করবে।
(১) নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ।
(২) উলামায়ে কিরাম (বা আউলিয়া কেরাম)
রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৩) শহীদ গন।"
[সুনানে ইবনে মাজাহ
শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫৩৭০]
নোট: পুর্ববর্তী হক্কানী উলামায়ে কেরাম (রহ) গন সব আল্লাহর ওলী ছিলেন।
আর ওলীগনের মর্যাদা আর ক্ষমতা উলামায়ে কেরাম থেকে অনেক বেশি।
এই হাদিসটার সনদ দিতে গিয়ে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ) বলেন," হাশরের মাঠে পিয়ারা নবীর নির্দেশে নবীগণ তাদের উম্মতদের, আউলিয়াগণ তাদের মুরিদদের এবং শহীদগণ তাদের মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে।
(মসনদে গোয়ারভী শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬২)
অপর হাদিসে আছে :-
ﻭ ﺍﺫﺍ ﺭﺃﻭﺍ ﺍﻧﻬﻢ ﻗﺪ ﻧﺠﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﺧﻮﺍﻧﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﻌﻤﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﺍﺫﻫﺒﻮﺍ ﻓﻤﻦ ﻭﺟﺪﺗﻢ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﺜﻘﺎﻝ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻳﻤﺎﻥ ﻓﺎﺣﺮﺣﻮﻩ ﻭ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻮﺭﻫﻢ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﺎﺗﻮﻧﻬﻢ ﻭﺑﻌﻀﻬﻢ ﻗﺪ ﻏﺎﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺍﻟﻲ ﻗﺪﻣﻪ ﻭ ﺍﻟﻲ ﺍﻧﺼﺎﻑ ﺳﺎﻗﻪ ﻓﻴﺨﺮﺟﻮﻥ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﻮﺍ
যখন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল , তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে "হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত , আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সত্কাজ করত "। তখন আল্লাহ বলবেন "যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস । তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে " । অতঃপর তারা (অলীগণ) সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন । এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে । এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে ।
(সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১)
 সহিহ হাদিসে বর্নিত :-
ﻓﻮﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻣﺎ ﻣﻮﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﺑﺎﺷﺪ ﻣﻨﺎﺷﺪﺓ ﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﺳﺘﻘﺼﺎﺀ ﺍﻟﺤﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﻣﻨﻴﻦ ﻟﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻻﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﺤﺠﻮﻥ ﻓﻴﻘﺎﻝ ﻟﻬﻢ ﺍﺣﺮﺟﻮﺍ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﺘﻢ
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ (ওলীগন) তাদের ঐ সমস্ত মুমীন ভাইদের জন্য শুপারিস করবে যারা জাহান্নামে পড়ে থাকবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আল্লাহর দরবারে এমনভাবে আবদারের পর আবদার করতে থাকবে, যে রকম আবদার কোন ব্যক্তি তার নিজ হক আদায়ের জন্যও সাধারণত করে না । এবং তারা আল্লাহর দরবারে আবেদন করবেন হে আমাদের রব এ সমস্ত লোক আমাদের সাথে রোজা রাখত, নামাজ পড়ত, হজ্ব করত ।
(সহীহ মুসলিম । খন্ড ১
পৃষ্ঠা ১০৩ হাদিস ১৮৩)
আরো বর্নিত আছে :-
ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺽ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻗﺎﻻﻥ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻲ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻔﺌﺎﻡ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻘﺒﻴﻠﺔ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﻌﺼﺒﺔ ﻭ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﻳﺸﻔﻊ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﺣﺘﻲ ﻳﺪﺧﻠﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ
হযরত আবূ সাঈদ রঃ হতে বর্ণিত , রাসুল দঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আছেন যারা একটি বিরাট দল এর (বা তাদের সকল সমর্থক ও অনুসারীদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছেন যারা একটি দলের (বা আত্তীয় স্বজনদের) জন্য সুপারিশ করবে । আর কিছু লোক আছে যারা এক এক জনের জন্য সুপারিশ করবে । এভাবে তারা সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
[আল হাদিস, তিরমীযি খণ্ড ২ পৃঃ ৬৭ , হাদিস ২৪৪০,
মিশকাত শরীফ ৫৩২৬]

**সমাপ্ত**
[সম্পাদনা করা হয়নি]

Monday, 11 December 2017

১২-ই রবিউল আউয়াল কি মীলাদুন্নবী (দ:), না ওফাতুন্নবী (দ:)?


✍🏻 কৃত- মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান
বার(১২)ই রবিউল আউয়াল শরীফে বিশ্বের সমস্ত মুসলিম তাঁদের ত্রাণকর্তা ও দয়ালু আক্বা হযরত আহমদ মুজতাবা মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ]-এর বেলাদত শরীফের খুশী উদ্যাপন করে আসছেন। আর এ জন্যই আপন প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তিনি এ ঐতিহাসিক দিনে তাঁর সর্বাপেক্ষা বৃহৎ নি’মাতরূপে বিশ্বকুল সরদার [ﷺ]'কে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এর খুশী উদ্যাপনকে বিদ্‘আত মনে করে এবং ওই মহান দিনে ও মাসে ‘সিরাতুন্নবী’ ইত্যাদি বিকল্প নাম আবিষ্কার করে মিলাদুন্নবী’র গুরুত্বকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা চালায় এমন কিছুলোক গত কয়েক বছর ধরে এক্ষেত্রে আরেকটা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। তারা ১২ রবিউল আউয়ালকে ‘বিশ্বনবী [ﷺ]-এর ওফাত দিবস (ওফাতুন্নবী) হিসেবেও চিহ্নিত করে ‘মিলাদুন্নবী’র খুশী উদ্যাপনের দিক থেকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিকে অন্যদিকে ফেরানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোতেও ১২ রবিউলের ওই দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করতে গিয়ে ‘মিলাদুন্নবী’-এর সাথে ‘ওফাতুন্নবী’ (ওফাত দিবস) শব্দটার সংযোজন করতে দেখা ও শুনা যাচ্ছে। অথচ ওফাতুন্নবী [ﷺ] সর্বসম্মতভাবে সোমবার হলেও ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
এ নিবন্ধে আমি একথাই প্রমাণিত করার প্রয়াস পাচ্ছি, ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে বিশ্বনবী [ﷺ]-এর পবিত্র বেলাদতেরই দিন (মীলাদুন্নবী); ওফাতের তারিখ নয়। তাই ওই তারিখে আহলে সুন্নাত তথা বিশ্ব মুসলিম নবী করীম [ﷺ]-এর পবিত্র বেলাদত বা জন্মের খুশীই উদ্যাপন করে আসছেন। বস্তুত এটাই তাঁদের যথাযোগ্য পদক্ষেপ এবং পবিত্র ক্বোরআন, সুন্নাহ্, ইজমা এবং গ্রহণযোগ্য ক্বিয়াস সম্মত অতীব বরকতময় কাজ।
।।এক।।
□ ১২ রবিউল আউয়াল হচ্ছে ‘পবিত্র মিলাদ’-এর দিনঃ
সত্যের মাপকাঠি সাহাবা কেরাম থেকে বিশুদ্ধরূপে বর্ণিত হয়েছে, ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ বিশ্বনবী হুযূর আকরাম [ﷺ]-এর পবিত্র বেলাদতেরই দিন। যেমন হাফেয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ্ (ওফাত ২৩৫হিজরি) সহীহ্ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
[ عَنْ عَفَّانٍ عَنْ سَعِیْدِبْنِ مِیْنَا عَنْ جَابِرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ اَنَّہُمَا قَالاَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِیْلِ یَوْمَ الْاِثْنَیْنِ الثَّانِیْ عَشَرَ مِنْ شَہْرِ رَبِیْعِ الْاَوَّلِ ]
অর্থাৎ হযরত আফ্ফান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত সা‘ঈদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবের ও হযরত ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] বলেন, রসূলুল্লাহ্ [ﷺ]-এর বেলাদত শরীফ ঐতিহাসিক ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের’ (যে বছর আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ ধবংস করতে এসে নিজে ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো) ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার হয়েছিলো।
[(ক). ‘বুলূগুল আমানী ফী শরহিল ফাত্তিহর রব্বানী’: ২য় খণ্ডঃ ১৮৯ পৃ. বৈরুতে মুদ্রিত এবং (খ). ‘আল-বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্’: ২য় খণ্ডঃ ২৬০ পৃ. বৈরুতে মুদ্রিত ]
উক্ত বর্ণনার ‘সনদ’-এর মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফ্ফান সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন-
‘‘আফ্ফান একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’
[সূত্র: খোলাসাতুত্ তাহ্যীব’ ২৬৮পৃ. বৈরুত মুদ্রিত]
‘‘২য় বর্ণনাকারী সা‘ঈদ ইবনে মীনা। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।’’
[সূত্র: খোলাসাহ্ঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা এবং ‘তাক্বরীব’ ১২৬ পৃ.]
এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ্ সাহাবীর বিশুদ্ধ সনদসহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো, ১২ রবিউল আউয়াল হচ্ছে হুযূর [ﷺ]-এর পবিত্র ‘মিলাদ দিবস’। সুতরাং পরবর্তী যুগগুলোর কোন ইতিহাস লেখকের ভিন্নকথা এবং ধারণা বা অনুমান উক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনার মোকাবেলায় দৃষ্টিপাতযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
অতএব, হযরত যোবায়র ইবনে বাক্কার, ইমাম ইবনুল আসাকির, ইমাম জামাল উদ্দীন ইবনে জূযী এবং ইবনুল জায্যার প্রমুখ ১২ রবিউল আউয়াল ‘বিশ্বনবী [ﷺ]'র মিলাদ দিবস’ হওয়াই নির্ভরযোগ্য ও সেটার উপর গবেষক ইমামদের ‘ইজমা’ (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হবার কথা ঘোষণা করেছেন।
[(ক). ‘সীরাত-ই হালবিয়াহঃ ১ম খণ্ডঃ ৯৩ পৃ,
(খ). যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবঃ ১ম খণ্ডঃ ১৩২ পৃ,
(গ). ‘মা-সাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ্, কৃত. শায়খ আল-মুহাক্বক্বিক্ব দেহলভীঃ ৯৮পৃ,
(ঘ). ‘শামামাহ্-ই আম্বরিয়াহ্’ পৃ. -৭, কৃত. নাওয়াব সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী আহলে হাদীস]
‘‘আর এটাই হচ্ছে প্রায় সব ওলামা ও মুসলমানের অনুসৃত পথ ও মত। এটাই তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ।’’
[(ক). ‘আল-বিদায়া’: ২য় খণ্ডঃ ২৬০ পৃ,
(খ). ‘আল-ফত্হুর রব্বানী’: ২য় খণ্ডঃ ১৮৯ পৃ,
(গ). আল-মাওরেদ আর-রাভী; কৃত. মোল্লা আল-ক্বারীঃ পৃ. ৯৬, মক্কা মুকাররামায় মুদ্রিত,
(ঘ). ‘হাজ্জাতুল্লাহি আলাল্ আলামীন’, কৃত. আল্লামা নাবহানীঃ খণ্ড-১ ৭৩১ পৃ,
(ঙ). ‘মা-সাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ্’ ৯৮ পৃষ্ঠা,
(চ). ‘আল-মাওয়াহিব-আল-লাদুন্নিয়াহ’, কৃত. ইমাম ক্বাস্তলানী এবং এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘যারক্বানী’: ১ম খণ্ডঃ ১৩২পৃ.
(ছ). ‘মাদারিজুন্নবূয়ত’, ২য় খণ্ড ১৪পৃ.]
‘‘১২ রবিউল আউয়াল ‘মিলাদ দিবস’ হবার প্রাচীন ও আধুনিক উভয় যুগের মক্কাবাসী ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন। এ তারিখেই হুযূরের বেলাদতের পবিত্র স্থানে হাযির হয়ে মিলাদ শরীফ উদ্যাপনের নিয়ম প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।”
[সূত্র: ‘আল-মাওয়াহিব-আল-লাদুন্নিয়াহ’ ও ‘যারক্বানী’ ১ম খণ্ডঃ ১৩২ পৃঃ ‘সীরাতে হালবিয়াহ’, ১ম খণ্ডঃ ৯৩ পৃঃ ‘আল-মাওরেদ র্আ-রাভী’, কৃত. মোল্লা আলী আল-ক্বারীঃ ৯৫ পৃষ্ঠা, ‘মা-সাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ্ঃ ৯৮ পৃ, তাওয়ারীখ-ই হাবীব-ই ইলাহ্, যা মৌলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেবের নিকটও প্রশংসিত। ‘মাদারিজুন্নুবূয়ত’ ২য় খণ্ড ১৪ পৃ. ইত্যাদি]
১২ রবিউল আউয়াল শরীফ ‘মীলাদুন্নবী’ উদ্যাপনের রীতি মদীনাবাসীদের মধ্যেও চলে এসেছে।’’
[সূত্র: ‘তাওয়ারীখ-ই হাবীব-ই ইলাহ্’]
‘‘এ তারিখেই সমস্ত শহরে মুসলমানদের ‘জশনে মিলাদ’ উদ্যাপনের নিয়ম রয়েছে।’’ [সূত্র: সীরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খণ্ডঃ ৯৩ পৃ, ‘যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব': ১ম খণ্ডঃ ১৩২ পৃষ্ঠা]
প্রাচীন যুগের মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
মুহাদ্দিস ইবনুল জূযী (ওফাতঃ ৫৯৭ হি.) বলেছেন
‘‘হেরমাঈন শরীফাঈন (মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ), মিশর, সিরিয়া, সমস্ত আরব দেশ এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলমানদের মধ্যে পুরানা যুগ থেকে এ নিয়মই চলে এসেছে যে, রবিউল আউয়ালের চাঁদ দেখতেই তাঁরা মিলাদ শরীফের মাহফিলসমূহ আয়োজন করতেন, খুশী উদ্যাপন করতেন, গোসল করতেন, উন্নত মানের পোশাক পরিধান করতেন, বিভিন্ন ধরনের সাজসাজ্জা করতেন, খুশ্বু লাগাতেন, এ দিনগুলোতে (রবিউল আউয়াল) খুব খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করতেন, সামর্থ্যানুসারে লোকজনের জন্য টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র খরচ করতেন এবং মিলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের প্রতি পূর্ণাঙ্গ গুরুত্ব দিতেন। এরই মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান প্রতিদান ও মহা সাফল্যাদি অর্জন করতেন।
মিলাদ শরীফের খুশী উদ্যাপনের পরীক্ষিত বিষয়াদির উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গোটা বছর অধিক পরিমাণে কল্যাণ ও বরকত, সুখ ও শান্তি, জীবিকা, মাল-দৌলত এবং আওলাদে আধিক্য লাভ হয়। আর শহরগুলোতে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এবং ঘর-বাড়িতে অনাবিল শান্তি জশনে মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এরই বরকতে বিরাজমান থাকে।’’
[সূত্র: ‘বয়ানুল মীলাদিন্নবভী’, কৃত. ইবনে জূযীঃ ৫৭ ও ৫৮ পৃ.]
ইমাম আহমদ ক্বাস্তলানী [رحمه الله عليه] বলেছেন-
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা অসংখ্য রহমত নাযিল করুন ওই ব্যক্তির উপর, যে মিলাদ-ই পাকের মাস রবিউল আউয়াল-এর রাতগুলোকে ঈদের এমন খুশীর রাতে পরিণত করে যে, যার অন্তরে শানে রেসালতের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষের রোগ-ব্যাধি রয়েছে তার অন্তরের উপর ক্বিয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়।’’
[সূত্র: ‘আল-মাওয়াহিব’ যারক্বানীসহ ১ম খণ্ড ১৩৯ পৃ.]
মোল্লা আলী ক্বারী (ওফাত ১০১৪ হিঃ) বলেছেন-
[ اَمَّا اَہْلُ مَکَّۃَ یَزِیْدُ اِہْتِمَامَہُمْ بِہٖ عَلٰی یَوْمِ الْعِیْدِ ]
অর্থাৎ ‘‘মক্কাবাসীগণ মীলাদুন্নবী [ﷺ] শরীফের প্রতি গুরুত্ব ঈদ অপেক্ষাও বেশী দিতেন।’’ [সূত্র: ‘আল-মাওরেদ-আর রাভী’, মক্কা মুকাররামাহ্য় মুদ্রিত:২৮ পৃ.]
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর পর্যবেক্ষণঃ
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেছেন-
‘‘আমি একবার মক্কা মু‘আয্যমায় মীলাদুন্নবী [ﷺ]-এর পবিত্র জন্মের স্থানে উপস্থিত ছিলাম। তখন লোকেরা হুযূরের ওই সব মু’জিযা বর্ণনা করছিলেন, যেগুলো হুযূরের শুভাগমনের পূর্বে ও হুযূরের নুবূয়ত প্রকাশের পূর্বে প্রকাশ পেয়েছিলো। তখন আমি হঠাৎ দেখতে পেলাম- সেখানে জ্যোতিসমূহেরই ছড়াছড়ি। তখন আমি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলাম ও বুঝতে পারলাম, ওই ‘নূর’ (জ্যাতি) হচ্ছে- ওইসব ফিরিশতারই, যাঁদেরকে এমন মাহফিলসমূহের (মীলাদ শরীফ ইত্যাদি) জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে। অনুরূপ, আমি দেখেছি ‘রহমতের নূর’ ও ‘ফিরিশ্তাদের নূর’ সেখানে মিলিত হয়েছে।’’
[সূত্রঃ ‘ফুয়ূযুল হেরমাঈন’, আরবী-উর্দুঃ ৮০-৮১পৃ.]
শীর্ষস্থানীয় দেওবন্দী ব্যক্তিবর্গের পীর-মুর্শিদের বাণীঃ
হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজির-ই মক্কী সাহেব বলেছেন-
‘‘মওলেদ শরীফ (মীলাদুন্নবী ﷺ) সমস্ত হেরমাঈন শরীফাঈনবাসীই উদ্যাপন করেন। আমাদের জন্য এতটুকু দলীলই যথেষ্ট।’’
[সূত্র: ‘আশ্মাম-ই ইমদাদিয়াহ ৪৭ পৃ.]
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর পুত্রের ফাতওয়াঃ
শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব নজদী লিখেছেন-
‘‘কট্টর কাফির আবূ লাহাব নবী করীম [ﷺ]-এর বেলাদতের খুশীতে তার ক্রীতদাসী সুয়ায়বাহ্কে আযাদ করার ফলে সে কবরে প্রতি সোমবার (বেলাদত শরীফের দিন) শান্তিদায়ক পানীয় (শোষণ) করার জন্য পেয়ে থাকে। সুতরাং ওই একত্ববাদী মুসলমানদের কী অবস্থা হবে (অর্থাৎ সে কী কী নি’মাত লাভ করবে), যে মীলাদুন্নবী [ﷺ]-এর খুশী উদ্যাপন করে থাকে!’’ (সংক্ষিপ্ত)
[সূত্র: ‘মুখতাসার সীরাতুর রসূল’ ১৩ পৃষ্ঠা, হাফেয আবদুল গফূর আহলে হাদীস, ঝীলাম কর্তৃক প্রকাশিত] আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আমল করারও তৌফিক দিন!]
সুতরাং এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল যে, ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এরই মহান দিবস।
।।দুই।।
❏ ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ কি
বিশ্বনবী [ﷺ] -এর ওফাত দিবসও �
□ নবী করিম[ﷺ] -এর ওফাত শরীফের তারিখ সম্পর্কে সাহাবা কেরাম থেকে ৪ ধরণের অভিমত বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
যেমনঃ→
রেওয়ায়েত-১||
১২-ই রবিউল আউয়াল। এটা হযরত আয়েশা [رضي الله عنها] ও হযরত ইবনে আব্বাস [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত।
রেওয়ায়েত-২||
১০-ই রবিউল আউয়াল। এটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] থেকে বর্ণিত।
রেওয়ায়েত-৩||
১৫-ই রবিউল আউয়াল। এটা হযরত আসমা বিনতে আবী বকর [رضى الله عنهما] থেকে বর্ণিত।
রেওয়ায়েত-৪||
১১-ই রমযান। এটা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত।
[সূত্রঃ রেওয়ায়েত নম্বর ১ ও ২ প্রসিদ্ধ কিতাব 'আল-বিদায়াহ্- ওয়ান নিহায়াহ্'; ৫ম খন্ড, ২৫৬ পৃষ্ঠা, আর রেওয়ায়েত ৩ ও ৪ নম্বর 'ওয়াফা আল্-ওয়াফা'; ১ম খন্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা]
১ম রেওয়ায়েত নিয়ে পর্যালোচনাঃ
_____________________________
উল্লেখিত ১ম রেওয়ায়েত, যাতে নবী করিম [ﷺ]-এর ওফাত দিবস ১২-ই রবিউল আউয়াল বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটার 'সনদ'(বর্ণনাকারীদের) মধ্যে "মুহাম্মদ ইবনে ওমর আল-ওয়াক্বেদী" নামক একজন (রাভী) 'বর্ণনাকারী' রয়েছেন।
তার সম্পর্কে:
ইমাম ইসহাক ইবনে রাহ্ওয়াইহ্, ইমাম আলী ইবনে মদীনী, ইমাম আবূ হাতেম আল রাযী এবং ইমাম নাসাঈ সর্বসম্মতভাবে বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী নিজ থেকেই হাদিসসমূহ রচনা করে নিতো।"
ইমাম ইয়াহিয়া ইবনে মু'ঈন বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী 'সিক্বাহ্' অর্থ্যাৎ নির্ভরযোগ্য নয়।"
ইমাম আহামদ ইবনে হাম্বল বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী কাযযাব (মিথ্যাবাদী), হাদিস সমূহের পরিবর্তন করে ফেলতো।"
ইমাম বুখারী ও আবূ হাতেম রাযী বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী মাতরুক (অর্থাৎ প্যরিত্যক্ত)।"
মুররাহ বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী'র হাদিস লিপিবদ্ধ (উদ্ধৃত) করার উপযোগী নয়।"
ইবনে আদী বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী'র হাদিসগুলো 'তাহরীফ' (মনগড়াভাবে লিখিত হওয়া) থেকে মুক্ত নয়।"
যাহাবী বলেছেন-
"ওয়াক্বেদী অত্যন্ত দূর্বল (রাভী) হওয়ার উপর গবেষক, অনুসন্ধিৎসু ও প্রসিদ্ধ সমালোচক ইমামদের 'ঐক্যমত্য' (اجماع) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। "
[সূত্রঃ 'মিযানুল ই'তিদাল' ২য় খন্ডন, ৪২৫-৪২৬ পৃষ্ঠা]
অতএব, ১২ রবিউল আউয়াল শরীফকে ‘ওয়াতুন্নবী’ (নবী করীম [ﷺ]-এর ওফাত দিবস) ব্যক্তকারী রেওয়ায়ত’ (বর্ণনা) মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া, সেটা এ কথার উপযোগীই নয় যে, দলীল হিসেবে গ্রহণ বা পেশ করা যাবে।
◇ রেওয়ায়েত নং-২ এর সনদের মধ্যে একজন রাভী 'সায়ফ ইবনে ওমর' হলেন 'দূর্বল'। অপর রাভী 'মুহাম্মদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ্ আল-আরযমী' হলেন 'মাতরুক' (পরিত্যক্ত)।"
[সূএঃ 'আত্ তাক্ববীর আত্-তাহযীব'; ১৪২ পৃষ্ঠা, 'খোলাসাতুত তাযহীব'; ১৬১ ও ৩৫০ পৃষ্ঠা, 'তাহযীব আল-কামাল' ; কৃত- আল্-খাযরাজী]
◇ আর রেওয়ায়েত নং ৩ ও ৪ এর সনদ-ই পাওয়া যায় না।
অবশ্য, শীর্ষস্থানীয় তাবে'ঈ ইবনে শেহাব যুহরী, সুলায়মান ইবনে তারখান, সা'দ ইবনে ইব্রাহিম যুহরী প্রমুখ থেকে নির্ভরযোগ্য সনদসমূহ সহাকারে ১লা ও ২ রবিউল আউয়ালই ওফাতের তারিখ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
মোট কথা, ১২-ই রবিউল আউয়ালকে ওফাত দিবস সাব্যস্ত করা না সাহাবায়ে কেরাম থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত, না তাবে'ঈন থেকে। কাজেই পরবর্তী কিছু সংখ্যক ইতিহাসবেত্তা কর্তৃক ১২-ই রবিউল আউয়াল কে ওফাত দিবস সাব্যস্ত করা কোন মতেই দূরস্ত হতে পারে না।
এখানে গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে-
যখন সাহাবায়ে কেরাম (যাঁরা হুজুরের ওফাত শরীফের চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন) এবং তাঁদের শাগরিদ তাবে'ঈগণ থেকে একথা প্রমাণিত নয়, তখন পরবর্তী ঐতিহাসিকগণ কিভাবে একথা জানতে পারলেন যে,
ওফাত শরীফ ১২ই রবিউল আউয়াল হয়েছে?
এ কারণেই প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য দেওবন্দী ইতিহাসবেত্তা শিবলী নো’মানীও ১ রবিউল আউয়ালকেই হুযূর করীম [ﷺ]-এর ওফাত দিবস সাব্যস্ত করেছেন। [সীরাতুন্নবী. ২য়ঃ খণ্ডঃ ১৭০ পৃ.]
আর মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর পুত্র শায়খ আবদুল্লাহ্ ৮ রবিউল আউয়াল'কে ‘ওফাত-দিবস’ লিখেছেন। [সূত্র : মুখতাসার সীরাতুর রসুলঃ ৯ পৃ.]
‘জ্যোতির্বিদ্যা’ ও বর্ষপঞ্জিকা নির্ণয় শাস্ত্র মতেও ১২ রবিউল আউয়ালকে নবী করীম [ﷺ]'র ওফাত দিবস সাব্যস্ত করা যায় না।
প্রসিদ্ধ গবেষক ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক ইমাম আবুল কাসেম আবদুর রহমান সোহায়লী (ওফাত ৫৮১ হিজরি) বলেছেন-
[ وَکَیْفَمَادَارَ الْحَالُ عَلٰی ہٰذَ االْحِسَابِ فَلَمْ یَکُنِ الثَّانِیْ عَشَرَ مِنْ رَبِیْعِ الْاَوَّّلِ یَوْمَ الْاِثْنَیْنِ بِوَجْہٍ ]
অর্থাৎ ‘‘এই হিসাবের উপর যে কোন অবস্থাই প্রদক্ষিণ করুক, কিন্তু (একই সাথে) ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার ‘ওফাত দিবস’ কোন মতেই আসতে পারে না।
এ বিষয়বস্তুটিই (অভিমত) অতি শক্তিশালী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ মুসলিম দার্শনিক ও ইতিহাসবেত্তা মুহাম্মদ শামসুদ্দীন আল-যাহাবী, ইবনে আসাকির, ইবনে কাসীর, ইমাম নূরুদ্দীন আলী ইবনে আহমদ আল-সামহুদী, আলী ইবনে বোরহান উদ্দীন আল-হালবী প্রমুখও বর্ণনা করেছেন।
[সুত্র: ইমাম যাহাবীকৃত ‘তারিখ-ই ইসলাম, ‘আস্-সীরাত আন্ নবভিয়্যাহ্’ অধ্যায়: পৃষ্ঠা-৩৯৯-৪০০ এবং ‘ওয়াফা আল-ওয়াফা’: ১ম খণ্ডঃ ৩১৮ পৃষ্ঠা, ‘আল-বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্, ৫ম খণ্ডঃ ২৫৬পৃ, ‘সীরাতে হালবিয়াহ’: ৩য় খণ্ডঃ ৪৭৩ পৃষ্ঠা ইত্যাদি]
মোটকথা, ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী [ﷺ]-এর পবিত্র ‘ওফাত-দিবস’ হওয়া কোন মতেই প্রমাণিত হতে পারে না; না যুক্তি-তর্কে, না কোন সুস্পষ্ট দলীলের উদ্ধৃতির ভিত্তিতে, না কোন ‘রাভী’র বর্ণনার ভিত্তিতে, না কারো চিন্তা-ভাবনা বা গবেষণার ভিত্তিতে। অবশ্য ‘সোমবার’ ওফাত শরীফ হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এর পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। [মাদারিজুন্ নুবূওয়াত ইত্যাদি]
আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা!
এ কারণেই সারা দুনিয়ার সুন্নী মুসলমান ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হুযূর পূরনুর [ﷺ]-এর মিলাদ শরীফ’-এর খুশীই উদ্যাপন করে থাকেন। এটা একদিকে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর মহান বাণীরই অনুসরণে তাঁরা করে থাকেন। যেমন- আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান-
[ قُلْ بِفَضْلِ اللّٰہِ وَبِرَحْمَتِہٖ فَبِذَالِکَ فَلْیَفْرَحُوْا ط ہُوَ خَیْرٌ مِمَّا یَجْمَعُوْنَ. ]
অর্থাৎ ‘(হে মাহবুব! আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া, এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়!’ [সূরা ইয়ূনুস, আয়াত ৫৮, তরজমা, কান্যুল ঈমান, (বঙ্গানুবাদ ৩৯৫পৃ.)]
কারণ, নবী করীম [ﷺ]-এর আবির্ভাব (বেলাদত শরীফ)’-ই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় নি’মাত বা অনুগ্রহ। এটা ১২ রবিউল আউয়াল শরীফেই অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে এ দিনে খুশী উদযাপন করা মুসলমানদের ঈমানেরই দাবি।
|| তিন।।
এখন যদি কেউ একথা বলে, ১২ রবিউল আউয়াল শুধু মিলাদুন্নবীর খুশী উদ্যাপন না করে, ‘ওফাতুন্নবী’র শোকও পালন করা চাই, কেউ যদি মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করাকে শির্ক ও বিদ‘আত ইত্যাদিও বলে বেড়ায়, আবার কেউ কেউ যদি মুসলমানদের মিলাদুন্নবী উদ্যাপনকে ওফাতুন্নবীর শোক দিবস হিসেবেও আখ্যায়িত করার প্রয়াস পায়, তবে ওদের উক্তিগুলো কতটুকু যুক্তিযুক্ত�
এর জবাব হচ্ছে- প্রথমত আমি প্রমাণ করেছি যে, ১২ রবিউল আউয়াল ‘মিলাদ-দিবস’ই; ‘ওফাত দিবস’ নয়। এতদ্সত্ত্বেও যদি ওই দিনকে ‘ওফাত-দিবস’ বলে কল্পনাও করা হয়, কিংবা যারা এরূপ বলে বেড়ায় তাদের কথা কিছুক্ষণের জন্য মেনেও নেয়া হয়, তবুও মিলাদ শরীফে-এর খুশী উদ্যাপন করাই ওইদিনে (তারিখে) জায়েয বা বৈধ থাকবে, আর ওফাতের শোক পালন করা নিষিদ্ধ হবে। কেননা, নি’মাত বা মহা অনুগ্রহের উপর খুশী উদ্যাপন করা শরীয়ত মতে, সর্বদা ও বারংবারই বৈধ, প্রশংসিত ও পছন্দনীয়। যেমন, হযরত ঈসা [عليه السلام] ‘মা-ইদাহ’ (খাদ্যভর্তি খাঞ্ছা) অবতীর্ণ হবার দিনকে আপন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য ‘ঈদ’ (খুশী) সাব্যস্ত করেছেন। (ক্বোরআন মজীদ, সূরা মাইদাহ্, আয়াত ১১৪ দ্রষ্টব্য।)
আর ওফাতের জন্য শোক প্রকাশ ওফাতের তিন(০৩) দিন পর অকাট্য ও সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও নাজায়েয। কিন্তু, আফসোস্! যারা মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এর খুশী উদ্যাপনের বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘ওফাতুন্নবী [ﷺ]-এর শোক পালন করার পক্ষে খোঁড়া যুক্তি দেখায় তারা যে শরীয়তের বিধান সম্পর্কেও অবগত নয়-তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর তাদের একথাও হৃদয়ঙ্গম করা উচিত যে, বিশ্বের কোথাও কোন মুসলমান ওফাতুন্নবী [ﷺ] এর শোক পালন না করার অন্যতম প্রধান কারণ এটাও।
সুতরাং ইমামে দারুল হিজরত ইমাম মালেক ইবনে আনাস আস্ আসবাহী, ইমামে রব্বানী ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ-শায়বানী, ইমাম আবূ বকর আবদুর রায্যাক্ব, ইবনে হুমাম আস-সানা‘আনী, ইমাম হাফেয আবূ বকর আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবী শায়বাহ্, ইমাম আবূ বকর আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবায়র আল হুমায়দী, ইমামে জলীল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম আবূ জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আত্-তাহাভী, ইমাম আবূ আবদিল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-বোখারী, ইমাম মুসলিম ইবনুল হুজ্জাজ আল ক্বোশায়রী, ইমাম আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে সুরাহ্ আত্ তিরমিযী, ইমাম আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনে আশ‘আস আস-সাজিস্তানী, ইমাম আবু আবদির রহমান আহমদ ইবনে শো‘আয়ব আন-নাসাঈ, ইমাম আবূ আবদিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ্ আল-ক্বাযভীনী, ইমাম আবূ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবদির রহমান আদদারমী, ইমাম আবূ বকর আল্ বায্যায, ইমাম আবূ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ্ ইবনে আলী ইবনে জারূদ আন্-নিশাপূরী এবং ইমাম হাফেয আবূ বকর আহমদ ইবনে হোসাঈন আল-বায়হাক্বী (রাহিমাহুমুল্লাহ)- বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দেসীন-ই কেরাম (এর বিরাট জামাত) নির্ভরযোগ্য সহীহ্ সনদ সহকারে সাহাবায়ে কিরামের বিরাট জামাতের মধ্যে হযরত আনাস ইবনে মালেক, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর, উম্মাহাতুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ, হযরত উম্মে সালামাহ্, হযরত জয়নব বিনতে জাহ্শ, হযরত উম্মে হাবীবাহ্, হযরত হাফসাহ্, অনুরুপ উম্মে আতিয়্যাহ্ আল-আনসারিয়্যাহ্ ফারী'আহ্ বিনতে মালিক ইবনে সিনান, হযরত আবূ সা'ঈদ আল-খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আন্হুম ওয়া আনহুন্না) থেকে সরাসরি নবী করীম [ﷺ] -এর সূত্রে `مرفوع, প্রায় কাছাকাছি বচনে, একই বিষয়বস্তু (অভিমত) বর্ণনা করেছেন।
তা নিন্মরুপঃ
[ اُمِرْنَا اَنْ لاَ نَحُدَّ عَلٰی مَیِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ اِلاَّ لِزَوْجٍ ]
অর্থাৎঃ "আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন আমরা কোন ওফাত প্রাপ্তের উপর তিন(০৩)দিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি, কিন্তু স্বামীর জন্য (৪ মাস দশ দিন পর্যন্ত স্ত্রী শোক প্রকাশ করতে পারে)।"
উক্ত হাদিস বিভিন্ন সনদে যারা বর্ণনা করেছেনঃ
১| 'মুআত্তা-ই ইমাম মালেক': পৃষ্ঠা-২১৯ ও ২২০.
২| 'মুআত্তা-ই ইমাম মুহাম্মদ': পৃ-২৬৭.
৩| 'মুসান্নাফ-ই আব্দুর রাজ্জাক': খন্ড-৭, পৃ-৪৭,৪৮ ও ৪৯.
৪| 'মুসান্নাফ-ই ইবনে আবী শায়বাহ্': খন্ড-৫, পৃ-৪৭ ২৭৯, ২৮০ ও ২৮১.
৫| 'মুসনাদ-ই হুমায়দী': খন্ড-১, পৃ- ১১২ ও ১৪৬.
৬| 'মুসনাদ-ই আহমদ মুবাওয়াব': খন্ড-৭, পৃ-(১৪৭-১৫১).
৭| 'শরহে মা'আনী আল-আসার': খন্ড-২, পৃ- ৪৮ ও ৪৯.
৮| 'সহীহ্ বোখারী শরীফ': খন্ড-২, পৃ-৮০৪.
৯| 'সহীহ্ মুসলিম শরীফ': খন্ড-১, পৃ- (৮৮৬-৮৮৮).
১০| 'জামে' আত-তিরমিযী': খন্ড-১, পৃ- ২২৭.
১১| 'আবু দাউদ': খন্ড-১, পৃ-৩৩৪.
১২| 'সুনান-ই নাসাঈ': খন্ড-১, পৃ-(১১৬-১১৮).
১৩| 'সুনান-ই ইবনে মাজাহ্': খন্ড-১, পৃ-৫২.
১৪| 'সুনান-ই দারেমী': খন্ড-২, পৃ- ৭৯ ও ৮০.
১৫| 'মুসনাদ-ই ইমাম আল-বাযযায': 'মাজমা' আয্-যাওয়াহিদ' -এর বরাতে, খন্ড-৫, পৃ- ৩.
১৬| 'আল মুনতাক্বা' কৃত- ইবনে জারুদ: পৃ-২৫৮ ও ২৫৯.
১৭| 'সুনান আল কবীর' কৃত-ইমাম বায়হাকী: খন্ড-৭, পৃ- (৪৩৭-৪৪০ পর্যন্ত)
{বচনগুলো ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- এর}
আলহামদুলিল্লাহ, প্রমাণিত হল যে, তিন দিনের পর ওফাতের শোক প্রকাশ করা বৈধ নয়, বরং নিষিদ্ধ; কিন্তু নি'মাত বা অনুগ্রহ লাভের জন্য খুশি বারংবারই উদযাপন করা যেতে পারে, শরীয়ত মতে তা সর্বদা বৈধ ও পছন্দনীয়।
এ কারণে বিশ্ব মুসলিম ১২-ই রবিউল আউয়ালকে ওফাতের শোক দিবস হিসেবে উদযাপন করেন না; বরং 'মিলাদুন্নবী' [ﷺ] রুপী নি'মাতের খুশি উদযাপন করে থাকেন।
দ্বিতীয়ত ছরকারে দো'আলম, রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ ফরমানঃ
[ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَیَّامِکُمْ یَوْمُ الْجُمُعَۃِ فِیْہِ خُلِقَ اٰدَمُ وَفِیْہِ قُبِضَ ]
অর্থ্যাৎঃ "তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উৎকৃষ্ট দিন হচ্ছে - জুমু'আর দিন। ওই দিনে হযরত আদম [عليه السلام] জন্মগ্রগণ করেছেন, ওই দিনে তিঁনি ওফাত পান।"
[সূএঃ 'সুনান-ই নাসাঈ'; খন্ড-১, পৃ-১৫০ ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থাবলী]
অতঃপর হুজুর আকরাম [ﷺ] এরশাদ ফরমানঃ
[ اِنَّ ہٰذَا یَوْمُ عِیْدٍ جَعَلَہُ اللّٰہُ لِلْمُسْلِمِیْنَ ]
অর্থ্যাৎঃ "এ জুমু'আ-দিবস হচ্ছে ঈদের দিন। এটাকে আল্লাহ্ তা'আলা ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন।"
[সূত্রঃ 'সুনান-ই ইবনে মাজাহ্'; পৃ-৭৮, এই অর্থে বর্ণিত হয়েছে 'মুসনাদ-ই ইমাম আহমদ' ইত্যাদিতে]
সুতরাং বুঝা গেলো যে, জুমু'আর দিনটি হচ্ছে- একজন নবীর (হযরত আদম [عليه السلام]'র) 'মিলাদ' বা জন্মের দিনও, আবার ওফাতের দিনও।
এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা 'ওফাতের শোককে উপেক্ষা করে 'মিলাদ'- এর দিনের খুশিকেই স্থায়িত্ব দান করেছেন এবং প্রত্যেক জুমু'আ-দিবসে ঈদ বা খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তাছাড়া, মধ্যাহ্ন সূর্যের ন্যায় এ মাসআলাটাও সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, একই দিনে যদি শোক ও খুশির ঘটনাবলীর সমাবেশ ঘটে যায়, তবে শোক প্রকাশের বৈধতা তিন (৩) দিন পরে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু খুশিতে স্মরণ করা ও সেটার আনন্দ উদযাপন করার বৈধতা সর্বদাই থেকে যায়।
অতএব, যদি ১২ই রবিউল আউয়ালকে 'মিলাদ'-এর দিবসের সাথে 'ওফাত দিবস' হিসেবে মেনেও নেওয়া হয়ে, তবুও ওফাত দিবসের শোক-এর বৈধতা তিনদিনের পর নিঃশেষ হয়ে গেছে; কিন্তু মিলাদ-ই পাকের খুশী ক্বিয়ামত পর্যন্তই বাকী থাকবে। অতএব, এ দিনে শোক পালক করা বৈধ হবে না।
আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী [رحمه الله عليه] তাঁর 'আল-মলফূয'- এ মাসআলাটি বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
আর যারা মুসলমানদের মিলাদুন্নবীর [ﷺ] খুশি উদযাপনকে 'ওফাতুন্নবী [ﷺ] -এর শোক পালন' (!) বলে আখ্যায়িত করে তারা যে কতই জগন্য অপবাদ ও মিথ্যার আশ্রয় নেয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, যারা 'মিলাদুন্নবী' [ﷺ] -এর খুশি উদযাপন করাকে শির্কের বা বিদ'আত বলে, তারাও যে ভ্রান্তির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত তাও সুস্পষ্ট।
পরিশেষে, আমাদের আহবান হচ্ছে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফকে সর্বদা মিলাদুন্নবী [ﷺ] হিসেবেই আখ্যায়িত করা হোক; ‘ওফাতুন্নবী’ বা বিশ্বনবীর (ওফাত দিবস) হিসেবে নয়।

Saturday, 29 April 2017

মিসরীয় সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী আলী জুমুআ’র সঙ্গীতবিষয়ক ফতোয়া



[Bengali translation of the former Egyptian grand mufti Ali Gomaa's fatwa regarding music and singing, which is available at this website: https://archive.is/wBHuf; translator: Kazi Saifuddin Hossain] 

অনুবাদক: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা 

[
অনুবাদকের উৎসর্গ: পীর ও মুর্শীদ সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-ক্বাদেরী আল-চিশ্তী সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পুণ্যস্মৃতিতে.....]


প্রশ্নসঙ্গীত সম্পর্কে ইসলামের হুকুম কী?

উত্তর'Music' তথা সঙ্গীত (সেমা) শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন গ্রীস (রাজ্য) হতে এবং তা বলতে বোঝায়, “বিভিন্ন আওয়াজের নির্দিষ্ট এক বিন্যাসযুক্ত শিল্পকলা যার উদ্দেশ্য নান্দনিক প্রভাব বিস্তার।এটা এসব আওয়াজকে সুর-মূর্ছনায় পরিণত করে। অতএব, কোন্ কোন্ আওয়াজ একত্রে খাপ খায়, আর কোন্ কোন্ আওয়াজ খায় না, সে বিষয়ে সঙ্গীত গবেষণা করে থাকে। আর এটা অর্জিত হয়ে থাকে মানুষের কণ্ঠস্বর ও বাদ্যযন্ত্র উভয়েরই মাধ্যমে।

গান শোনা ইসলামী বিধানে এমন এক বিষয়, যার ব্যাপারে মতপার্থক্য বিরাজমান। এটা ধর্মীয় আক্বীদা-বিশ্বাস বা ধর্ম হতে অবশ্যম্ভাবীরূপে জ্ঞাত বিষয়গুলোর একটি নয়। তাই এ ধরনের বিষয়গুলোতে মুসলমানদের একে অপরকে নিন্দা করাটা বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়, কেননা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেবল সেগুলোর ব্যাপারেই (মানে সেগুলো হতে বিচ্যুতির ক্ষেত্রেই) সমালোচনা সাজে, মতপার্থক্যের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তা সাজে না। যেহেতু সঙ্গীত শোনা জায়েয/বৈধ বলে এর পক্ষে বেশ কিছু ফক্বীহ (ধর্মীয় আইনশাস্ত্রজ্ঞ) রায় দিয়েছেন এবং তাঁদের শরঈ-গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্তের অনুসরণ করাটা যেহেতু অনুমতিপ্রাপ্ত, সেহেতু যে সকল মুসলমান সেমাপন্থী ফক্বীহদের এ ধরনের রায়কে অনুসরণ করেন তাঁদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করার কোনো অনুমতি-ই নেই। এটা আরো জরুরি হয় তখন-ই, যখন দেখা যায় যে সঙ্গীতকে বিশেষতঃ হারাম বলার পক্ষে শরঈ একটি দলিল-ও নেই।

সেমা ও এর শ্রবণকে জায়েয যে সকল হ্ক্কানী আলেম বলেছেন, তাঁদের মধ্যে ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন:
فَالْعُطَلَةُ مُعَوِنَةٌ عَلَىْ الْعَمَلِ وَالَّلهْوُ مُعَيِنٌ عَلَىْ الجْدِّ وَلَا يَصْبِرُ عَلَىْ الْجِدِّ المْحْضِ وَالْحَقِّ المْر إِلاَّ نُفُوْسِ الأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمْ السَّلَامُ فَالْلَهْوُ دَوَاءُ القَلْبِ مِنْ دَاءِ الإِعْيَاءِ وَالْمِلاَلِ فَيَنْبَغِيُ أَنْ يَكُوْنَ مُبَاحًا وَلَكِنَّ لَا يَنْبَغِي أَنْ يَسْتَكْثِرَ مِنْهُ كَمَا لَا يَسْتَكْثِرُ مِنَ الدَّوَاءِ فَإِذَا الَّلهْوِ عَلَىْ هَذِهِ النِّيَّةِ يَصِيْرُ قُرْبَةً هَذَا فِيْ حَقِّ مَنْ لَا يَحْرِكُ السِّمَاعَ مِنْ قَلْبِهِ صِفَةٌ مَحْمُوْدَةٌ يَطْلُبُ تَحْرِيْكُهَا بَلْ لَيْسَ لَهُ إِلاَّ الَّلذَّةُ وَاِلاِسْتِرَاحَةُ الْمُحْضَةُ فَيَنْبَغِي أَنْ يَسْتَحَبَّ لَهُ ذَلِكَ لِيَتَوَصَّلُ بِهِ إِلَى الْمَقْصُوْدِ الَّذِيْ ذَكَرَنَاهُ نَعَمْ هَذَا يَدِلُّ عَلَىْ نُقْصَان عَنْ ذَرْوَةِ الْكَمَالِ فَإِنَّ الْكَامَلَ هُوَ الَّذِيْ لَا يَحْتَاجُّ أَنْ يَرُوْحَ نَفْسَهُ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَلَكِنَّ حَسَنَاتُ الأَبْرَارِ سَيِّئَاتٌ الْمُقَرَّبيِنْ َوَمَنْ أَحَاطَ بِعِلْمٍ عِلَاجَ الْقُلُوْبِ وَوُجُوْهَ التَّلْطُفِّ بِهَا لِسَيَاقَتِهَا إِلْىْ الْحَقِّ عِلُمٌ قطعاً أَنْ تَرَوِيْحَهَا بِأَمْثَالِ هَذِهِ الأُمْوْرِ دَوَاءٌ نَافِعٌ لَا غِنَىْ عَنْهُ.
-      আনন্দ-বিনোদন কাউকে (জীবনের) গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুতর বিষয়গুলোতে সাহায্য করে; কেননা এ ধরনের সহায়ক বস্তু ছাড়া কারো পক্ষে তা (অর্থাৎ, গুরুতর বিষয়াদি) সহ্য করা অসম্ভব; এর ব্যতিক্রম শুধু পয়গম্বরবৃন্দ (আলাইহিমুস্ সালাম)। অতএব, ক্লান্তি-অবসাদ হতে অন্তরের ব্যাধির আরোগ্য হচ্ছে আনন্দ-বিনোদন, আর তাই তা সে অনুযায়ী জায়েয (অনুমতিপ্রাপ্ত)। তবে কেউ তাতে মাত্রাতিরিক্তভাবে জড়িত হতে পারবে না, ঠিক যেমনটি কেউ মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন করতে পারে না। এই নিয়্যতের (অর্থাৎ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুতর বিষয়গুলো হতে জিরানোর উদ্দেশ্যের) ওপর ভিত্তি করেই আনন্দ ও বিনোদন আল্লাহতালার নৈকট্যলাভের (পুণ্যদায়ক) কর্মে পরিণত হয়; আর এটা সে ব্যক্তির জন্যেই প্রযোজ্য যিনি সেমা শ্রবণে বিশেষ যে প্রশংসনীয় গুণ বিকাশের পথ অন্বেষণ করছেন, তা (তাঁর মাঝে) বিকশিত হয় না। বরঞ্চ এ ধরনের ব্যক্তি স্রেফ আনন্দ ও বিনোদন তালাশ করেন। তাই এ ধরনের আমল (কর্ম/অনুশীলন) তাঁর জন্যে প্রশংসনীয় হওয়া জরুরি যাতে তিনি সেটার অনুশীলন দ্বারা উপরোল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেন।

তবে এই পরিস্থিতি পূর্ণতা হতে নিম্নতর এক স্তরের ইঙ্গিত বহন করে। কেননা পূর্ণতাপ্রাপ্ত জন তিনি-ই, যাঁর সাহায্যের জন্যে সত্য ছাড়া অন্য কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। অবশ্য সাধারণ মানুষের সওয়াব তথা পুণ্যদায়ক কর্ম হচ্ছে আধ্যাত্মিকতায় উচ্চস্তরের সিদ্ধপুরুষদের জন্যে হারাম-কর্ম। অন্তরের ব্যাধি নিরাময় ও অন্তরকে (খোদার প্রতি) বিগলিত করার বিদ্যা যিনি রপ্ত করেছেন, তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন এ ধরনের আনন্দ-বিনোদন এমন-ই বিষয়াবলী যা কেউ পরিহার করতে পারে না।[১]

ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো লেখেন

-      বাদ্যযন্ত্র যদি মদ্যপায়ীদের বা লাম্পট্যের (সাথে সংশ্লিষ্টতার) চিহ্ন হয়, হারমোনিকা, ফুঁ দ্বারা বাজানো যন্ত্র, তারবিশিষ্ট বাদ্য, কিম্বা মদ্যপায়ীদের ব্যবহৃত ঢোল জাতীয় বাদ্য হয়, তাহলে তা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র, যেমন ঝুনঝুনির সাথে খঞ্জনি, (দফ), ঢোল, ডালপালা দ্বারা আঘাতকৃত ঢোল, তারবিশিষ্ট গিটার জাতীয় বাদ্য ও অনুরূপ বাজনা, এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র শোনা জায়েয।

অপরাপর উলামামণ্ডলী সঙ্গীত ও তা শ্রবণের মাঝে দেখতে পেয়েছেন সমঝদারদের এবং উচ্চ মক্বামের পুণ্যাত্মাদের জন্যে শিক্ষা ও পরোক্ষ (আধ্যাত্মিক) জ্ঞানের দিকনির্দেশনা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম কাজী আয়াজ শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি যাঁকে সঙ্গীত শ্রবণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি এর উত্তরে বলেন, “সঙ্গীতের স্পষ্ট প্রতীয়মান প্রকৃতি হচ্ছে চিত্তাকর্ষক ও প্রলুব্ধকর; পক্ষান্তরে দীক্ষিত ব্যক্তিদের (মানে আহলে সেমার) জন্যে এতে নিহিত রয়েছে পূর্ণ (আধ্যাত্মিক) শিক্ষা। অতএব, যাঁরা পরোক্ষ (আধ্যাত্মিক) জ্ঞানের দিকনির্দেশনাসমূহ বুঝতে সক্ষম, তাঁদের জন্যে সেমা শ্রবণ জায়েয।”

অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায় সুলতানুল উলামা ইমাম আল-ইযয ইবনে আবদ আল-সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছ থেকেও, যিনি বলেন, “অন্তরের ব্যাধি নিরাময়ের পথগুলো বহু, যেমন ক্বুরআন তেলাওয়াত শোনা, যেটা শ্রবণের বেলায় সেরা জিনিস; এটা আরো করা যায় উপদেশ ও যিকর-তাযকেরাসূচক ওয়ায-নসীহত শুনে, গান (সেমা) ও কবিতা আবৃত্তি শুনে; আরো করা যায় সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র শ্রবণ করে, তবে এর অনুমতি নিয়ে (উলামাদের মধ্যে) মতপার্থক্য বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, বাঁশি শ্রবণ জায়েয হলে এর শ্রোতার মাঝে উদ্ভূত হাল (আধ্যাত্মিক মত্ততা) প্রশংসাযোগ্য; আর যেসব (বাদ্যযন্ত্রের) ক্ষেত্রে মতপার্থক্য বিরাজমান, তা শ্রবণে ধর্মীয় সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।

ইমাম আল-কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ আল-জামেউ আল-আহকাম আল-ক্বুরআন শীর্ষক তাফসীরগ্রন্থে বর্ণনা করেন যে
ضُرِبَ بَيْنَ يَدَيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ دَخَلَ الْمَدِينَةَ، فَهَمَّ أَبُو بَكْرٍ بِالزَّجْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (دَعْهُنَّ يَا أَبَا بَكْرٍ حَتَّى تَعْلَمَ الْيَهُودُ أَنَّ دِينَنَا فَسِيحٌ) فَكُنَّ يَضْرِبْنَ وَيَقُلْنَ: نَحْنُ بَنَاتُ النَّجَّارِ، حَبَّذَا مُحَمَّدٌ مِنْ جَارِ. وَقَدْ قِيلَ: إِنَّ الطَّبْلَ فِي النِّكَاحِ كَالدُّفِّ، وَكَذَلِكَ الْآلَاتُ الْمُشْهِرَةُ لِلنِّكَاحِ يَجُوزُ اسْتِعْمَالُهَا فِيهِ بِمَا يَحْسُنُ مِنَ الْكَلَامِ وَلَمْ يَكُنْ فِيْهِ رَفَثُ.
-     মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে যেদিন মদীনা মোনাওয়ারায় প্রবেশ করেন, সেদিন কিছু ক্বুরাইশ বংশীয় (তরুণী) তাঁর উপস্থিতিতে গান গাইছিলেন। হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এতে বিরক্ত হন। এমতাবস্থায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন, “এদের ছেড়ে দাও, ওহে আবূ বকর, যাতে ইহুদী সম্প্রদায় দেখতে পায় যে আমাদের পথ ও মত প্রসারণশীল।ওই মেয়েরা দফ (ঢোল) বাজিয়ে গান করছিল এই বলে, “আমরা বনি নাজ্জার বংশের তরুণী, আর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়া পছন্দ করি।ইমাম আল-ক্বুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি অতঃপর বলেন, “কথিত আছে যে বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত দফ ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র জায়েয - যতোক্ষণ গানের কথা আদবশীল ও নির্ভরযোগ্য হয় এবং মন্দ/অশ্লীল না হয়।” []

আল-শওকানী তার কৃত নায়ল আল-আওতারগ্রন্থের সঙ্গীত ও আনন্দ-উল্লাসের বাদ্যযন্ত্রপরিচ্ছেদে সঙ্গীতকে জায়েয ও হারাম ঘোষণাকারী উলামাদের উভয় পক্ষের যুক্তিপূর্ণ ভাষ্যই উদ্ধৃত করেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই হাদীসটি নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে এরশাদ হয়েছে:
كُلُّ لَهْوٍ يَلْهُو بِهِ الْمُؤْمِنُ فَهُوَ بَاطِلٌ إلَّا ثَلَاثَةٌ: مُلَاعَبَةُ الرَّجُلِ أَهْلَهُ، وَتَأْدِيبُهُ فَرَسَهُ، وَرَمْيُهُ عَنْ قَوْسِهِ.
-      ঈমানদারের জন্যে ফুর্তির সকল ধরনই ফায়দাহীন, তিনটি ছাড়া: স্ত্রীর সাথে তার স্বামীর আনন্দ, কোনো লোকের দ্বারা আপন ঘোড়া নিয়ে খেলা, এবং তীরন্দাজের খেলা।[]

অতঃপর আল-শওকানী এ হাদীসের ব্যাপারে ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন,
قَالَ الْغَزَالِيُّ: قُلْنَا قَوْلَهُ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - " فَهُوَ بَاطِلٌ " لَا يَدُلُّ عَلَى التَّحْرِيمِ، بَلْ يَدُلُّ عَلَى عَدَمِ فَائِدَةٍ انْتَهَى.
-      হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিরর্থকমর্মে কথাটি ওই বিষয়ের হারাম হওয়াকে আবশ্যিক করে না, বরঞ্চ ইঙ্গিত করে যে এতে ফায়দা নিহিত নেই।এরপর আল-শওকানী যোগ করেন, “এটা বাস্তবিকই একটা নির্ভরযোগ্য বক্তব্য। কেননা সরাসরি ফায়দা নেই এমন যে কোনো বিষয়-ই জায়েয শ্রেণিভুক্ত।

আল-শওকানী এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য শরঈ দলিলও উপস্থাপন করেন; উদাহরণস্বরূপ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একটি জ্বেহাদ থেকে সহি-সালামতে প্রত্যাবর্তন করলে তাঁর সামনে দফ বাজিয়ে গান করার মানতকারিনী নারীর ঘটনাটি, যার অনুমতি তিনি নিরাপদে ফেরার পর কোনো ভর্ৎসনা ছাড়াই দিয়েছিলেন। এই অনুমতি প্রমাণ করে যে ওই ধরনের পরিস্থিতিতে মহিলাটি যা করেছিলেন, তা অবাধ্যতার কোনো অনুশীলন ছিল না।

ইবনে হাযম বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ: " إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْنِّيَاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ اِمْرِئٍ مَا نَوَىَ " فَإِذَا نَوَى المْرَْءُ بِذَلِكَ تَرْوْيْحِ نَفْسِهِ وَإِجْمَالِهَا (1) لِتَقَوْى عَلَىْ طَاعَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَا أَتِىْ ضَلَالاً.
-      সকল কর্ম-ই নিয়্যত তথা উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীল, আর সেটা প্রত্যেকের প্রতি তা-ই (বর্তায়) যা সে নিয়্যত করেছিল।অতএব, যে কেউ আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতার হাতিয়ারস্বরূপ গান শুনলে বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হলে, তা মন্দ কর্ম বলে সাব্যস্ত হবে; আর যে কেউ গান শোনার নিয়্যত যদি করেন এ মর্মে  যে এতে তাঁর আত্মার প্রশান্তি লাভ হবে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মের অনুশীলনের প্রতি তা এক হাতিয়ার হবে, তবে তিনি আনুগত্যপূর্ণ কর্মে লিপ্ত হবেন এবং এতে তিনি পুরস্কারও পাবেন, আর এ কাজটি প্রকৃত ও নির্ভরযোগ্য আমল বটে।[৪]

যে কেউ কোনো কাজে আনুগত্য বা অবাধ্যতার নিয়্যত না করলে তার এ কাজটি স্রেফ আনন্দ-ফুর্তি বলে সাব্যস্ত হবে। আর এতে কোনো (ধর্মীয়) ফায়দা নেই। বস্তুতঃ এ ধরনের কাজকে ক্ষমা করা হবে; যেমন - কেউ তার বাগানে হাঁটা, অথবা নিজ গৃহের দরজায় বসে থাকা ইত্যাদি।

সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, বাদ্যসহ বা বিহীন সেমা-কাওয়ালীর বিষয়টি এমন এক বিষয় যা সকল যুগেই উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এ সকল আলেম কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন, আবার অন্য বিষয়গুলোতে পারস্পরিক ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাঁরা ঐকমত্য পোষণ করেছেন এ মর্মে, (খোদায়ী) অবাধ্যতা সৃষ্টিকর বা তাতে সহায়ক যে কোনো ধরনের গান-বাদ্য হারাম। যেহেতু গানের মধ্যে কথা রয়েছে, সেহেতু ভালো কথা জায়েয এবং মন্দ/অশ্লীল কথা না-জায়েয। এই আলেমবৃন্দ আরো একমত হয়েছেন যে বিয়ে-শাদী, কারো গৃহে প্রত্যাবর্তন ও ঈদের দিনের মতো খুশির দিনগুলোতে আনন্দপূর্ণ গান পরিবেশনা জায়েয; তা অবশ্য বিশেষ শর্তসাপেক্ষে, যেমন কোনো নারী তাঁর অনাত্মীয় পুরুষদের সামনে গান পরিবেশন করতে পারবেন না।

উলামাবৃন্দের মতানৈক্যের ক্ষেত্রগুলো হলো বাদ্যযন্ত্র জায়েয, না হারাম এবং ইতিপূর্বে উল্লেখিত বিষয়াদি।

এই আলোচনার আলোকে আমরা দেখতে পাই, বাদ্যসহকারে বা বাদ্যবিহীন গান জায়েয এই শর্তে যে, তা (খোদার প্রতি) অবাধ্যতা, লাম্পট্য কিংবা শরীয়তবিরোধী কোনো বক্তব্যসহ হতে পারবে না। আরো উল্লেখ্য যে, সঙ্গীতের মাত্রাহীনতা এর অনুমতিকে নাকচ করে অপছন্দনীয় কাজে পরিণত করতে পারে, হয়তো বা হারামেও।

আল্লাহ তালাই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বজ্ঞানী।

আলী জুমুআ

তথ্যসূত্র
[১] গাযালী : ইহইয়া উলূমুদ্দীন, :২৮৭
[] কুরতুবী : আত তাফসীর, লুকমান, ৩১:
[] শাওকানী : নায়লুল আওতার, :১১৮
[] ইবনে হাযম : আর রাসায়িল, রিসালাতু ফিল গিনায়ী ১:৪৩৯