Sunday, 4 September 2022

হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদিঃ)-এর বিরুদ্ধে সহীহ মুসলিমের হাদিস নিয়ে ভ্রান্তির নিরসন, ফজীলতের হাদিসকে বদ দুয়ার হাদিস বানানোর অপচেষ্টা

- মাহমূদ হাসান

(ফেইসবুক বন্ধু)

সহীহ মুসলিমের হাদিস রেফার করে হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃকে অভিশপ্ত বানানোর পায়তারা করে পথভ্রষ্ট শিয়ারা।
সহীহ মুসলিমের (২৬০৩ নং) হাদীসটি হচ্ছে, একদিন নবী কারীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) ওহী লিখার প্রয়োজনবোধ করলে (কেননা হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ অহী লিখকদের একজন) হাযরাত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিঃ)-এর বাল্যকাল বয়সে যখন তিনি বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন তখন নবী কারীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) এসে তাঁকে বললেন-
وقال اذهب وادع لي معاوية قال فجئت فقلت هو يأكل قال ثم قال لي اذهب فادع لي معاوية قال فجئت فقلت هو يأكل فقال لا أشبع الله بطنه
অর্থঃ যাও আমার জন্য মুয়াবিয়াকে (ওহী লিখার জন্য) ডেকে নিয়ে আস, ইবনু আব্বাস বলেন- আমি তাঁর নিকট গেলাম, আমি নবীর কাছে গিয়ে বললাম, সে খাচ্ছে। অতঃপর নবীজী ﷺ বললেন, যাও আমার জন্য মুয়াবিয়াকে (ওহী লিখার জন্য) ডেকে নিয়ে আস। আমি নবীজী ﷺ এর কাছে গিয়ে বললাম, সে তো খাচ্ছে!। তারপর নবী কারীম (আলাইহিস সালাম) বললেন- আল্লাহ তার পেটকে পরিতৃপ্ত করবেন না!
এ হাদিস থেকে কথিত শিয়া স্কলারদের আপত্তি গুলো হচ্ছে-
১/
এখানে হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদিঃ) নবীজী ﷺ এর ডাকে সাড়া না দিয়ে বে আদবী করেছে (নাউযুবিল্লাহ)!
২/
নবীজি ﷺ হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ এর জন্য বদ দুয়া করেছেন। (মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা'নাত)
১ম আপত্তির খন্ডনঃ
এ হাদিসে হাযরাত মুয়াবিয়া(রাদিঃ) এর বেয়াদবী কিভাবে প্রমানিত হবে? অথচ বালক সাহাবী হাযরাত ইবনু আব্বাস (রাদিঃ) হাযরাত মুয়াবিয়া(রাদিঃ)-কে নবীজী ﷺ যে তলব করেছেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন বলে কোন কথাই এ হাদিসে নেই। যদি হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদিঃ) জানতেন আল্লাহর রাসূল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে তলব করেছেন সে তো অবশ্যই তাঁর খাবার রেখে নবীজী ﷺ এর কাছে ছুটে যেতেন।
সুতরাং হাযরাত ইবনু আব্বাস (রাদিঃ) তাঁর খাওয়ার অসমাপ্তি দেখে তাঁকে জানান নি যে, রাসূলে আরাবী ﷺ তাঁকে তলব করেছেন। এখান থেকে মুয়াবিয়ার নির্দোষ হওয়া প্রমানিত হয়।
২য় আপত্তির জবাবঃ
নবীজি ﷺ হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ'কে বদ দুয়া করেছেন এটা গায়ের জোরের কথা। যে ব্যাক্তির কোন দোষই নেই আল্লাহর রাসূল ﷺ তাঁকে কি করে বদ দুয়া দিতে পারেন? যারা এ বদ দুয়ার পক্ষপাতি তারা নবী কারীম ﷺ এরও দুশমন!কেননা এখানে তারা বুঝাতে চাচ্ছে নবীজি (আলাইহিস সালাম) বে ইনসাফ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ) একজন নিরাপরাধ লোককে বদ দুয়া করে! (নাউযুবিল্লাহ)
মূলত এ হাদিসের ব্যাখ্যায় সকল মুহাদ্দিসগন বলেছেন রাসুলুল্লাল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) আমীরে মুয়াবিয়ার জন্য বদ দুয়া না, দুয়া করেছেন (কেননা পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়া মুমিনের সিফাত নয়, নিচে এ বিষয়ে হাদিস দেওয়া হবে)।
শিয়াদের জানা থাকার কথা যে আরবীদের কথার স্টাইলই এমন, তারা লা'নাতের (বদ দুয়ার) ক্ষেত্রে এভাবে বলে না, যেমন নবীজী ﷺ মাঝে মাঝে কোন কোন সাহাবী কে বলতেন, "রগিমা আনফুক (আল্লাহ তোমার নাক ধূলিমলিন করুক)"; সাকালাতকা উম্মুক (তোমার মা তোমাকে হারাক!); তারিবাত ইয়ামিনাক (তোমার ডান হাত ময়লা/মাটি যুক্ত হোক!)" এগুলা আদর করে বলা হয় মুখে একটা থাকে অন্তরে অন্যটা। আমরা আমাদের খুব কাছের মানুষকে অনেক সময় গালিগালাজ করে সম্বোধন করি (এটার উদাহরণ দেওয়া জরুরী মনে করছি না)।
ইমাম নববী রহঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ২ টি জবাব দিয়েছেন (যার একটি উপরে উল্লেখ করেছি, পুরো ইবারাত দিয়ে দিচ্ছি)-
« وأما دعاؤه على معاوية أن لا يُشبع بطنه حين تأخر ففيه جوابان: أحدهما: أن المراء ليس بأهل لذلك عند الله تعالى وفي باطن الأمر، ولكنه في الظاهر مستوجبٌ له، فيظهر له استحقاقه لذلك بأمارة شرعية ويكون في باطن الأمر ليس أهلاً لذلك. وهو مأمورٌ بالحكم بالظاهر، والله يتولّى السرائر. الثاني: أن هذا ليس بمقصود وإنما هو مما جرت به عادة العرب في وصل كلامها بلا نيّة، كقوله تَرِبَتْ يمينك و [ثكلتك أمك] وفي حديث معاوية: « لا أشبع الله بطنه » ونحو ذلك لا يقصدون بشيء من ذلك حقيقة الدعاء، فخاف r أن يصادف شيء من ذلك إجابة، فسأل ربه سبحانه وتعالى ورغب إليه في أن يجعل ذلك رحمة وكفارة وقربة وطهورًا وأجرًا، وإنما كان يقع هذا منه في النادر والشاذ من الأزمان، ولم يكن r فاحشًا ولا متفحشًا ولا لعّانًا ولا منتقمًا لنفسه، وقد قالوا له: ادعُ على دَوس فقال: « اللهم اهد دوسًا » وقال: « اللهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون »
রেফারেন্স:
শরহুন নাবাবী আলা মুসলিম ৮/৩৮৭-৩৯০।
ইমাম ইবনু হাজার আল মক্কী আল হাইতামী(রহ) একই ব্যাখ্যা করেন।
দেখুন তার রচিত কিতাবঃতাতহীরুল জিনান পৃঃ১২,৩৭।
শিয়াদের দাবী আহলুস সুন্নাহর ইমাম নাসায়ি নাকি আমীরে মুয়াবিয়ার বিরোধী ছিলেন (যদিও এটা মিথ্যা)।
অথচ এ হাদিসটিকে ইমাম নাসায়ী রহঃ হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদিঃ) এর ফজীলত সংক্রান্ত হাদিস হিসেবে গন্য করেছেন।
শায়খ আব্দুল হাই ইবনু ইমাদ আল হাম্বলী তাঁর গ্রন্থে ইমাম নাসায়ী (রহ) যে এ হাদীসকে মুয়াবিয়ার ফজীলত মানতেন তা প্রমানে তিনি আল্লামা ইবনু খাল্লিকানের (রহ) সনদে বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺧﻠّﻜﺎﻥ: ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﻖ ﺍﻷ‌ﺻﺒﻬﺎﻧﻲ: ﺳﻤﻌﺖ ﻣﺸﺎﻳﺨﻨﺎ ﺑﻤﺼﺮ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ: ﺇﻥّ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻓﺎﺭﻕ ﻣﺼﺮ ﻓﻲ ﺀﺍﺧﺮ ﻋﻤﺮﻩ ﻭﺧﺮﺝ ﺇﻟﻰ ﺩﻣﺸﻖ, ﻓﺴﺌﻞ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻭﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻣﻦ ﻓﻀﺎﺋﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ: ﺃﻣﺎ ﻳﺮﺿﻰ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﺭﺃﺳًﺎ ﺑﺮﺃﺱ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﻀَّﻞ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ: ﻣﺎ ﺃﻋﺮﻑ ﻟﻪ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﺇﻻ‌: “ﻻ‌ ﺃﺷﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻄﻨﻪ”
এ ইবারতটি হুবহু পাওয়া যাবে ইমাম ইবনু খাল্লিকানের রচিত "ওফায়াতুল আ'ইয়ান"১/৭৭ এ।
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻮَﺯِﻳْﺮُ ﺍﺑْﻦُ ﺣِﻨْﺰَﺍﺑَﺔُ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻣُﺤَﻤَّﺪَ ﺑﻦَ ﻣُﻮْﺳَﻰ ﺍﻟﻤﺄَﻣﻮﻧِﻲَّ – ﺻَﺎﺣِﺐُ ﺍﻟﻨَّﺴَﺎﺋِﻲّ – ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﻗَﻮْﻣﺎً ﻳُﻨْﻜِﺮُﻭْﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺴَﺎﺋِﻲِّ ﻛِﺘَﺎﺏ ” ﺍﻟﺨَﺼَﺎﺋِﺺ ” ﻟِﻌَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺗَﺮْﻛَﻪُ ﺗَﺼْﻨِﻴْﻒَ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﺍﻟﺸَّﻴْﺨَﻴْﻦِ ، ﻓَﺬَﻛَﺮْﺕُ ﻟَﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺩَﺧَﻠﺖُ ﺩِﻣَﺸْﻖَ ﻭَﺍﻟﻤُﻨْﺤَﺮِﻑُ ﺑِﻬَﺎ ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﻛَﺜِﻴْﺮ، ﻓَﺼَﻨَّﻔْﺖُ ﻛِﺘَﺎﺏَ ” ﺍﻟﺨَﺼَﺎﺋِﺺِ ” ﺭَﺟَﻮْﺕُ ﺃَﻥْ ﻳَﻬْﺪِﻳَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ . ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻪُ ﺻَﻨَّﻒَ ﺑَﻌْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ، ﻓَﻘِﻴْﻞَ ﻟَﻪُ : ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺳْﻤَﻊُ ﺃَﻻ‌َ ﺗُﺨْﺮِﺝُ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻱُّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺃُﺧْﺮِﺝُ ؟ ﺣَﺪِﻳْﺚَ : ” ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻻ‌َ ﺗُﺸْﺒِﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” ﻓَﺴَﻜَﺖَ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻞُ
রেফারেন্স:
সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১৩/১৩০;
তাহযীবুল কামাল, ইমাম মিযযী ১/৩৩৮।
এ ইবারাত উল্লেখ করে ইমাম মিযযী (রহঃ) হাফেজ আবুল কাসেম ইবনু আসাকীরের থেকে এভাবে বর্ণনা করেন-
ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﺤﻜﺎﻳﺔ ﻻ‌ ﺗَﺪُﻝُ ﻋﻠﻰ ﺳﻮﺀ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺫﻛﺮﻩ ﺑﻜﻞ ﺣﺎﻝ. ﺛﻢ ﺭﻭﻯ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻘﺎﺑﺴﻲ ﻗﺎﻝ: “ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﻼ‌ﻝ ﻳﻘﻮﻝ: ﺳُﺌﻞ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺻﺎﺣﺐ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ: “ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﻛﺪﺍﺭ ﻟﻬﺎ ﺑﺎﺏ، ﻓﺒﺎﺏ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ، ﻓﻤﻦ ﺁﺫﻯ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺇﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻹ‌ﺳﻼ‌ﻡ ﻛﻤﻦ ﻧﻘﺮ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺮﻳﺪ ﺩﺧﻮﻝ ﺍﻟﺪﺍﺭ، ﻗﺎﻝ: ﻓﻤﻦ ﺃﺭﺍﺩ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ”
রেফারেন্স:
তাহযিবুল কামাল ১/৩৩৯।
অন্যান্য হাদিস থেকেও বুঝা যায় এটি ছিল হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদীঃ) এর জন্য দুয়া, বদ দুয়া নয়। কেননা বিভিন্ন সহীহ হাদিসে পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে।
আরেক সহীহ হাদিসে এসেছে- যারা দুনিয়ায় তৃপ্ত হয়ে খায় তারা কিয়ামতের দিন অধিকতর ক্ষুদামন্দ হবে! (সংক্ষিপতার জন্য অনুবাদ না করে নিচে কেবল এ বিষয়ক মূল হাদিসের ইবারাত গুলো দেওয়া হল)
ইবনু উমার(রাদিঃ) বলেন-
« تجشأ رجل عند النبي فقال كف عنا جشاءكفإن أكثرهم شبعا في الدنيا أطولهم جوعا يوم القيامة»
রেফারেন্স:
তিরমিযী ২/৭৮;
সুনানু ইবনু মাজাহ হা/৩৩৫০;
সিলসিলা সহীহা ১/৬৪, হা/৩৪৩।
অন্য বর্ণনায় অতিরিক্ত আসছে-
فما أكل أبو جحيفة ملء بطنه حتى فارق الدنيا». وفي لفظ آخر: « فما شبعت منذ ثلاثين سنة».
মুল্লাহ আলী কারী (রহ) ইমাম ত্বীবি(রহ)-এর ক্বওল নকল করে বলেন-
والنهي عن الجشاء هو النهي عن الشبع لأنه السبب الجالب له
রেফারেন্স:
মিরকাতুল মাফাতীহ ৯/৩৮৯।
মিকদাম ইবনু মা'দী (রাদিঃ) নবীজি থেকে বর্ণনা করেন-
ما ملأ آدمي وعاء شر من بطن، بحسب ابن آدم أكلات يقمن صلبه، فإن كان لا محالة فثلث لطعامه وثلث لشرابه وثلث لنفسه»
রেফারেন্স:
তিরমিযী ২/৬০;
সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৩৪৯;
মুসতাদরাকে হাকেম৪/১২১;
মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩২;
ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৭/৪১ হাঃ১৯৮৩।
এরপর যদি এ হাদিস প্রশ্নের খাতিরে ধরেও নিই বদ দুয়া, তবুও এটি বদ দুয়া হবে না। এটি হবে ব্যাক্তির জন্য দুয়া, রহমত পুরস্কার। কারন নবীজি (আলাইহিস সালাম) বলেন-
اللهم إنما أنا بشر، فأي المسلمين لَعنتُه أو سببتُهُ فاجعله له زكاة وأجرًا
অর্থ- "হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ! সুতরাং আমি কোন মুসলিম কে লানত করলে বা মন্দ বললে তাকে (এর জন্যে) পবিত্র কর ও পুরষ্কার প্রদান কর।"
রেফারেন্স:
সহীহ মুসলিম হা/২৬০০;
কিতাবু বিররি ওয়াস সিলাহ, বাবু-
باب من لعنه النبي صلى الله عليه وسلم أو سبه أو دعا عليه وليس هو أهلا لذلك كان له زكاة وأجرا ورحمة )
এ মর্মে বিভিন্ন শব্দে একই মতনে অনেক সহীহ হাদিস আছে, আলোচনা লম্বা হয়ে যেতে পারে বলে লিখলাম না।
অন্যান্য রেওয়াতে তার গুনাহের কাফফারা ও দরজা বুলুন্দির কথা আছে। তবে এটি অমুসলিমদের কিংবা রাসূলে পাক ﷺ কর্তৃক বড় গুনাহের কারনে বিশেষ কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জন্য লা'নতের বিষয়টি এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আচ্ছা এত আলোচনা বাদ, এ হাদিস যে সাহাবী (আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস) বর্ণনা করেছেন তাঁর নিকট এ হাদিসের মর্ম কি আসুন জেনে নিই।
হাযরাত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিঃ) হাযরাত মুয়াবিয়া(রাদিঃ)-কে একজন ফকীহ বলে সম্বোধন করেছেন-
"إنه فقيه"
রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী হা/ ৩৫৫৩।
অন্য বর্ণনায় ইবনু আব্বাস (রাদিঃ) হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ'কে রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আখলাক ওয়ালা বলেছেন-
ما رأيت رجلاً كان أخلق بالملك من معاوية
রেফারেন্স:
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৩৫।
উল্লেখিত হাদিসটির মর্ম যদি আলোচিত আপত্তি গুলো হতো তাহলে ইবনু আব্বাস নিজেই হাযরাত মুয়াবিয়া (রাদিঃ) এর এত প্রশংসা করতেন না, অথচ উল্লেখিত হাদিসটি তাঁর থেকেই বর্ণিত।
আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফীক আতা করুক।(আমীন)

Friday, 19 August 2022

মাযার, মসজিদ ও মাদ্রাসা - এই সুন্নী কাফেলা যেনো হাইজ্যাক না হয়

 -এডমিন

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীস শরীফে মুসলমানদের তিয়াত্তর দলবিভক্ত হবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন (সুনানুত্ তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৪১)। এর মধ্যে ৭২ দলই জাহান্নামী হবে (বদ-আকীদার কারণে); স্রেফ একটি দল হবে নাজাতপ্রাপ্ত। হাদীসে উল্লেখিত নাজাতপ্রাপ্ত দলটি হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত তথা সুন্নী মুসলমান সমাজ। আমরা সুন্নী মুসলমান। আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পরিচিতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে লিখতে হয় - ‘ইসলাম (সুন্নী)।’ অথচ সুন্নী বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে আমরা একেবারেই অনবধান। বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে সুন্নী কী তা সবার জানা অতীব জরুরি (এ বিষয়ে আমার বিভিন্ন লেখা অনলাইনে বিরাজমান)। তবে এই পোষ্টে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে না। কেবল শিরোনামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি আলোচিত হবে। এতদসংক্রান্ত লিঙ্কগুলো নিচে প্রদত্ত।

১/- মাযার

আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর সমাধিকে মাযার বলা হয়। শব্দটি আরবী যিয়ারত শব্দ হতে উদ্ভূত। রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাযার যিয়ারতের পক্ষে অনেক হাদীস ব্যক্ত করেছেন; এর ফযীলত তাতে বর্ণনা করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে, “মাযার যিয়ারত আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।” নিশ্চয় এতে গভীর অর্থ নিহিত রয়েছে, কেননা আমাদের ধর্ম চূড়ান্ত পর্যায়ে পরকালীন মুক্তি ও সাফল্যের দিকনির্দেশনা দেয়। অতএব, উক্ত হাদীসের নির্দেশনা সেদিকেই আলোকপাত করেছে; বিশেষ করে আউলিয়া কেরাম (রহ.)’মণ্ডলীর মাযার শরীফে তাঁদের রূহের ফয়েয-বরকত পাওয়া যায় মর্মে বিভিন্ন শরঈ দলিলে বর্ণনা এসেছে এবং এর পক্ষে ইমামবৃন্দ (রহ.) হতে ভাষ্যও লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু ইদানীং ৭২টি ভ্রান্ত দলের অন্তর্গত ওহাবী সম্প্রদায় সৌদি আরবের পেট্রো-ডলারের মদদপুষ্ট হয়ে মাযার-বিরোধী অপপ্রচার জোরদার করেছে। তারা দাবি করছে মাযার নিয়ে ’ব্যবসা’ হয় বিধায় মাযার ’অনৈসলামী’ বস্তু! ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখার অসৎ উদ্দেশ্যে এটা কতোখানি জঘন্য অপযুক্তি! আবার ভ্রান্ত শিয়া দলটি মাযারস্থ আউলিয়া কেরাম (রহ.)’বৃন্দের বর্তমান আওলাদ যারা ইসলামী (যাহেরী ও বাতেনী) জ্ঞানশূন্য, তাদেরকে ইরানী পেট্রো-ডলারের লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে। ফলশ্রুতিতে মাযার শরীফগুলোতে শিয়াপন্থীদের প্রভাব বেড়ে গিয়েছে। অথচ মাযারস্থ পূ্র্ববর্তী বুযূর্গানে দ্বীন (রহ.) সবাই হলেন সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী। অতএব, সুন্নী মুসলমানদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে এ মর্মে যে আমরা আমাদের পূর্ববর্তী আউলিয়া কেরাম (রহ.)’মণ্ডলীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছি না তো? আমাদের দ্বীন-ঈমান কিন্তু আমরা তাঁদের নিঃস্বার্থ ও নিরলস দ্বীনী খেদমতের খাতিরেই পেয়েছি। আজ যে আমরা মুসলিম পরিচয় বহন করছি, তাও তাঁদেরই অবদান।

২/ - মসজিদ

মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের উপাসনালয়। এতে এক, অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস থেকে আমরা জানি, মুসলমান আউলিয়া-দরবেশ যে দেশেই ধর্মপ্রচার করতে গিয়েছিলেন, সেখানেই তাঁরা নিজেদের আস্তানা/খানেকাহ’র পাশে মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে মুসলমানদের অনবধানতাহেতু মসজিদগুলোতে হাদীসে উল্লেখিত ৭২টি ভ্রান্ত দলের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে আরেকটি হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে; ঘোষিত হয়েছিলো - “(শেষ জমানায়) মসজিদগুলো হবে শান-শওকতপূর্ণ ইমারত, কিন্তু হেদায়াতশূন্য।” অর্থাৎ, উঁচু উঁচু বিল্ডিং হবে, টাইল্স, এসি সবই হবে, কিন্তু হেদায়াতের আলো থাকবে না, থাকবে গোমরাহীর অন্ধকার! আলো না থাকলে অন্ধকার অবশ্যই থাকবে। মসজিদ কি নিজে নিজে হেদায়াতের দ্যুতি ছড়াতে সক্ষম? না, হাদীসের উদ্দেশ্য মসজিদের ইমাম/খতীব/মোয়াযযিন/মুসল্লি কমিটি গং। তারা সবাই গোমরাহ হবে। আর আমরা জানি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মসজিদই ওহাবী, মওদূদী, সালাফী, তাবলীগী, শিয়া, কাদিয়ানী ইত্যাদি ৭২টি ভ্রান্ত ফিরকার দখলে চলে গেছে! সুন্নী মুসলমান সমাজের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এখন উপস্থিত। [নোট: শান-শওকতপূর্ণ অথচ হেদায়াতশূন্য মসজিদের হাদীসটি লিপিবদ্ধ আছে ‘বিহারুল আনওয়ার,’ ২য় খণ্ডে, ১৯০ পৃষ্ঠায়]

৩/ - মাদ্রাসা

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা আরম্ভ হয়। সূফী-বুযূর্গানে দ্বীন (রহ.) এই মহৎ কাজে ব্রত হন। সে সময় এসব মাদ্রাসায় ইসলামের যাহেরী/প্রকাশ্য ইলমের পাশাপাশি তাসাউফ-তরীক্কতের বাতেনী/আধ্যাত্মিক জ্ঞানেরও দরস তথা পাঠ দেয়া হতো। কেননা আমরা জানি, স্রেফ যাহেরী ইলম চর্চা করলেই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর উত্তরাধিকারী আলেমে হক্কানী/রব্বানী হওয়া যায় না। এর জন্য তাসাউফ/তরীক্বতের বাতেনী ইলম চর্চাও বাধ্যতামূলক। নতুবা কেউই পূর্ণতাপ্রাপ্ত (কামিল-মুকাম্মিল) হবেন না (এ বিষয়ে আমার অনূদিত ‘তাসাউফ প্রবন্ধ সমগ্র’ বইটির লিঙ্ক মন্তব্যে দেখুন)। কিন্তু মুসলমানদের দুরবস্থা এক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। ভ্রান্ত/পথভ্রষ্ট ৭২টি দল-উপদল এখানেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। উপরন্তু, আমাদের সুন্নী মাদ্রাসাগুলোতেও পূর্ববর্তী (গাউসে পাক বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহ প্রবর্তিত) দরসে নিজামী-জাতীয় শিক্ষাক্রমের অনুপস্থিতির দরুন তাসাউফ-তরীক্বতের বিভিন্ন সিলসিলার একে অপরের প্রতি যে সহিষ্ণু ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি তা এখন অনুপস্থিত। সুন্নী আলেম-উলামা পূর্ববর্তী সূফী-দরবেশ তথা বুযূর্গানে দ্বীনের জীবনাদর্শ অধ্যয়ন করে তা হতে শিক্ষা ও দীক্ষা নিতে পারেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

শেষ কথা

আমার এই পোষ্টের শিরোনামে একটি আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে। মাযার, মসজিদ ও মাদ্রাসার এই সুন্নী কাফেলা হাইজ্যাক করার চক্রান্ত চলছে। তাই আমাদের দেশের সুন্নী মুসলমান সমাজের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। নচেৎ বর্তমান ধারা চলতে থাকলে গোমরাহী সর্বগ্রাসী হবে এবং মুসলমানদের এর দরুন পস্তাতে হবে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন, আমীন।

Monday, 12 October 2020

আখেরী চাহার সোম্বা

খুশির দিন বা পবিত্র দিন

মূল: সৈয়দ নুরুজ্জামান হাশেমী
সম্পাদনা: আলহাজ্ব মুফতী এস এম সাকীউল কাউছার


পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা অর্থাৎ চন্দ্র মাস সফরের শেষ বুধবার।

ফারসী ভাষায় চাহার সোম্বা বলা হয় বুধবারকে।

আর আখের মানে শেষ, তা হলে আখেরী চাহার সোম্বা মানে হল শেষ বুধবার।

এ দিনে মহানবী (صلى اللّٰه عليه وسلم) জ্বরমুক্ত হয়ে সর্বশেষ গোসল করেন।

গোসল শেষে নাতিদ্বয় হযরত ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه), হযরত ইমাম হোসাইন (رضي اللّٰه عنه) এবং মা ফাতেমা (رضي اللّٰه عنها)’কে ডেকে এনে তাদের সাথে সকালের নাস্তা করেন।

হুজুরে পুর নুর (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর পাগল সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’বৃন্দ এ খবর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। যে যাঁর মত দান সদকা করতে লাগলেন।

হযরত বেলাল (رضي اللّٰه عنه) এবং সুফফাবাসীবৃন্দ বিদ্যুৎ বেগে এ সুসংবাদ মদিনার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেন। এ সুসংবাদে সাহাবায়ে কেরামের (رضي اللّٰه عنهم) মধ্যে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। তাঁরা বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো দলে দলে এসে হুজুর (صلى اللّٰه عليه وسلم)-কে এক নজর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। হুজুর (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর রোগমুক্তিতে সাহাবায়ে কেরাম (رضي اللّٰه عنهم) এতটাই খুশী হয়েছিলেন যে, হযরত আবুবকর সিদ্দিক (رضي اللّٰه عنه) তৎকালের ৫ হাজার দিরহাম গরীবদের মধ্যে বিলিবণ্টন করেছিলেন।

হযরত ওমর (رضي اللّٰه عنه) দান করেন ৭ হাজার দিরহাম।

হযরত ওসমান (رضي اللّٰه عنه) দান করেছিলেন ১০ হাজার দিরহাম ও হযরত আলী (كرم اللّٰه وجهه) দান করেছিলেন ৩ হাজার দিরহাম। ধনী ব্যবসায়ী হযরত আবদুর রহমান (رضي اللّٰه عنه), ইবনে আউফ (رضي اللّٰه عنه) ১০০ উট আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন।

রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর সামান্য আরামবোধের কারণে সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم) কীভাবে জান-মাল উৎসর্গ করতেন, এটাই তার সামান্য নমুনা। সুবহান-আল্লাহ! 

রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর সামান্য রোগমুক্তির দিবস আখেরি চাহার সোম্বার দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে পারস্যসহ এশিয়ার পাক-ভারত উপমহাদেশে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এ দিনটি পালন করা হয়। যারা এ দিবস পালনকে বিদ’আত বলে অপপ্রচার করে, তারা এ ঘটনাকে মুসলমানদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলার জন্যই তা করে। এটা সাহাবায়ে কেরামের (رضي اللّٰه عنهم) বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

ওই লোকেরা কেন এটাকে বিদয়াত বলে?

অথচ এখানে নিহিত রয়েছে রাসুল পাকের (صلى اللّٰه عليه وسلم) প্রতি সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’বৃন্দের মহব্বত, গোটা উম্মতেরই মহব্বত।

আমরা মানুষেরা ফেরাউনের ঘটনা, হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)’এর অগ্নিতে নিক্ষেপ ও মুক্তির পবিত্র ঘটনা স্মরণ করে হেদায়েতের আলো লাভ করে থাকি।

আখেরি চাহার সোম্বা’র দিনে অর্থাৎ আরবি সফর মাসের শেষ বুধবারে (সেদিন ৩০শে সফর ছিলো) গোসল শেষে শোকর গোজার হিসেবে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় শেষে রোগ থেকে শেফার দোয়া ও দান-খয়রাত হচ্ছে বুজুর্গানে দ্বীনের আমল। আখেরি চাহার সোম্বার দিনে বিভিন্ন দরবার, মাজার, খানকায় ওয়াজ-নসীহত, জিকির-আজকার, মিলাদ, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ণিত আছে, রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم) এই দিন রোগ থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং গোসল করেন।

এ দিনের পর তিনি আর গোসল করেননি। এরপর তাঁর রোগ বৃদ্ধি পায়। অতঃপর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে বেসালপ্রাপ্ত হন।

এই দিনটিতে মুসলমানবৃন্দ গোসল করেন, নতুন পোশাক পরিধান করেন এবং খোশবু লাগান। [ফারহাঙ্গ-ই-আসফিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬]।

দ্বিতীয় হিজরী সালের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক (১৫১ হিজরী/৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ) বলেন, রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم) যে অসুস্থতায় বেসালপ্রাপ্ত হন, তা শুরু হয়েছিল সফর মাসের কয়েক রাত বাকি থাকতে। [আস সিরাহ আন নববীয়্যাহ: ইবনু হিশাম]।

সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’বৃন্দ যদি প্রিয়নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর আরোগ্যতে খুশি হয়ে দিবসটি পালন করে থাকেন, এরপর ১৫০ হিজরীতেও যদি এটা পালিত হয়ে থাকে, তাহলে আজকে এরা কারা, যারা এই দিনে নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর উম্মতকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে নিষেধ করছে?

আপনি কেন খুশি হবেন? কারণ, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (صلى اللّٰه عليه وسلم) সফর মাসের শেষ বুধবার ভোর বেলায় উম্মুল মোমেনীন হযরত বিবি আয়েশা সিদ্দীকা (رضي اللّٰه عنها)’কে ডেকে বলেন, বিবি আমার কাছে আসেন। তখন মা আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) তাঁর কাছে আসলে তিনি ফরমান: “হে আয়েশা সিদ্দিকা, আমার মাথা ব্যথা যেন দূর হয়ে গেছে। শরীর হাল্কা মনে হচ্ছে। আমি আজকে সুস্থ বোধ করছি।” এই কথা শ্রবণ করে বিবি আয়েশা (رضي اللّٰه عنها) অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং তাড়াতাড়ি পানি দ্বারা হযরত রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর শির মোবারক ধুয়ে দেন এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ভালোভাবে গোসল করান।

এই গোসলের ফলে হুজুর পাকের (صلى اللّٰه عليه وسلم) শরীর মোবারক হতে বহুদিনের রোগজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ বহুলাংশে দূর হয়ে যায়। তখন তিনি বিবি আয়েশা (رضي اللّٰه عنها)’কে ঘরে কোনো খাবার আছে কি না জিজ্ঞাসা করেন। হযরত আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) উত্তর দেন, জি, ঘরে রুটি পাকানো আছে। রাসুল (صلى اللّٰه عليه وسلم) বলেন, ওগুলো নিয়ে এসো এবং মা ফাতেমাকে খবর দাও, দুই পুত্র হাসান ও হোসাইনকে নিয়ে আমার কাছে যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে। বিবি আয়েশা (رضي اللّٰه عنها) হযরত মা ফাতেমা (رضي اللّٰه عنها)’কে খবর দেন এবং ঘরে যে খাবার ছিল তা এনে রাসুলল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর সামনে হাজির করেন।

হযরত বিবি ফাতেমা (رضي اللّٰه عنها) আসার পর হযরত রাসূলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم) মেয়েকে আদর করেন এবং নাতি দুই জনের কপালে চুমু খেয়ে তাঁদের নিয়ে খেতে বসেন। খবর শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্যান্য বিবি ও ঘনিষ্ঠ সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’মণ্ডলী হাজির হন।

অতঃপর রাসূল (صلى اللّٰه عليه وسلم) মসজিদে নববীতে গমন করেন এবং নামাজের ইমামতি করেন। হযরত (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর শরীরের উন্নতি দেখে সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم) অত্যন্ত আনন্দিত হন। দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর সুস্থ দেহে হযরত (صلى اللّٰه عليه وسلم) মসজিদে নববীতে এসে ইমামতি করেন।

এই অপার আনন্দে সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’বৃন্দ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করতে থাকেন। 

আপনারা বলুন তো ওই দিন কি আবু জেহেল খুশি হয়েছিল? আজকে যারা খুশি হয় না তাদের কী বলে অভিহিত করবেন?

হে মো’মেন মুসলমানবৃন্দ,

আসুন, এই সফর মাসের শেষ বুধবার, যে দিনে হযরত মুহাম্মদ (صلى اللّٰه عليه وسلم)-সহ সাহাবা কেরাম (رضي اللّٰه عنهم)’মণ্ডলীর খুশির এই দিনে দরূদ, এবাদত-বন্দেগী করে দয়াময় আল্লাহ পাকের দরবারে আমরা দোয়া করি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের দেশ, জাতি ও সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে শান্তি ও মঙ্গল দান করেন, আমীন।

কিছু লোক বলে বেড়ায়, রাসুলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর (যাহেরী/প্রকাশ্য) জীবনে অনেক আনন্দের দিন বা মুহূর্ত এসেছে যখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন; শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সাজদায় অবনত হয়েছেন। কোনো কোনো ঘটনায় তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীবৃন্দ (رضي اللّٰه عنهم)-ও আনন্দিত হয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী কোনো সময়ে সেই দিন বা মুহূর্তকে তাঁরা বাৎসরিক ‘আনন্দ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেননি। এজন্য রাসুলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর নির্দেশ বা সাহাবী (رضي اللّٰه عنهم)’বৃন্দের কর্ম ছাড়া এইরূপ কোনো দিন বা মুহূর্ত পালন করা বা এইগুলিতে বিশেষ ইবাদতকে বিশেষ সওয়াবের কারণ বলে মনে করার কোনো সুযোগ নেই।
 
প্রশ্ন জাগে, প্রিয়নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم) কি ১৭ই রমজান বদর দিবস পালন করেছিলেন? ওই আপত্তি উত্থাপনকারীরা কিন্ত করে।

নবী পাক (صلى اللّٰه عليه وسلم) কি সিরাতুন্নাবী (দ:) দিবস পালন করেছিলেন? ওরা কিন্ত পালন করে!

নবী করীম (صلى اللّٰه عليه وسلم) কি হুদায়বিয়া দিবস, মক্কা বিজয় দিবস, খতমে বুখারী, দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছিলেন? এরা কিন্ত তা করে।

এর উত্তরে তারা বলে, না, নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم)’মণ্ডলী শোম্বা পালন করেছেন একদিন, প্রতি বছর তো করেননি!

তাই ওরা খুঁজে খুঁজে বের করে বলে, ইমাম ইবনে হাজর (رحمة اللّٰه عليه) বলেছেন যে রাসুল পাক (صلى اللّٰه عليه وسلم) বেসালপ্রাপ্ত হওয়ার ৫ দিন আগে হয়েছিলো সোম্বা [ইবনু হাজর, ফাতহুল বারী ৮/১৪২]। মানে ১২ই রবিউল আউয়াল বেসাল শরীফ হলে তা ঘটেছিল ৮ই রবিউল আউয়াল তারিখে।

এটা শুধু ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة اللّٰه عليه)’এর মত।
যারা ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বিবৃত নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم) নূর, তিনি এলমে গায়েব সম্পর্কে অবগত ও হাজির-নাজির মেনে নেয় না, তারাই আজ ’ফাতহুল বারী‘ গ্রন্থের শরণাপন্ন হওয়াটা মুনাফিকি নয় কি?

নবী পাক (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর কোনো দুশমন তো তাঁর সুস্থতায় আনন্দ করবে না! কিন্ত একজন মু‘মিনের কাছে রাসুল পাক (صلى اللّٰه عليه وسلم) অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার চেয়ে বেশি আর কি কোন আনন্দের দিন থাকতে পারে?

আপত্তিকারীরা কেন বলে নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم) করেননি, তাই প্রতি বছর আমাদের এই দিবস পালন করার দরকার নাই?

কারণ, প্রতি বছর এই কাজটা করলে মানুষের মনে নবী (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর প্রতি মহব্বত কমবে না, বরং বেড়ে যাবে। মানুষ নবী পাক (صلى اللّٰه عليه وسلم)’কে ভুলে যাবেন না; আরো বেশি মনে রাখবেন। তাই এ ফতওয়া - ‘এটা বিদয়াত!’

যে ব্যক্তি আখেরী চাহার শোম্বার দিনে চার রাকআত নফল নামাজ পাঠ করবেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে রক্ষা করবেন এবং হেফাজতে রাখবেন। [খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (رحمة اللّٰه عليه) কৃত ’রাহাতিল কুলূব,’ পৃষ্ঠা-১৩৯]

আজ যারা আখেরী চাহার শোম্বাকে বিদয়াত বলছে, তাদের এ কথা হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (رحمة اللّٰه عليه)’এর মোকাবিলায় কতোখানি গুরুত্ব বহন করে?

কর্জমুক্ত হবার দুআاللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ- উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসাল, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবন, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন গালাবাতিত দায়নি ওয়া কহরির- রিজাল।

Friday, 21 August 2020

একান্ত ভাবনা: আলা হযরত চেতনা!

 

📌📌📌📌📌📌📌📌📍📍📌📌📌📍📍
মুফতী আল্লামা আবুল ফজল সাইফুল্লাহ (মাঃজিঃআঃ)

মসলক শব্দের অর্থ রীতি আদর্শ, মতবাদ। মসলকে আ'লা হযরত অর্থ, মওলানা আহমদ রেজা বেরলবী নামক এক জন মওলানা তথা ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তির মতবাদ/আদর্শকে যারা অনুসরণ করে, তাদের মসলকে আলা হযরতের অনুসারী বলা হয়।

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’এর খোলফায়ে রাশেদার যুগ হতে চার মাজহাবের শেষ ইমাম আজম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) পর্যন্ত অসংখ্য মুজতাহিদ ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী (রহমতুল্লাহে আলাইহিম) প্রমুখ বড় বড় জ্ঞানীবৃন্দ ইজতিহাদ করেছেন। এঁদের অনেকে নিজেই নিজের ইজতিহাদের অনুসারী ছিলেন নতুবা নিজের চাইতে বড় জ্ঞানী কারো অনুসরণ করতেন। যেমন, সর্ব-হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উম্মুহাতুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর তাকলীদকে অপরাপর সাহাবী (রা:)’মণ্ডলী অনুসরণ করতেন। কিন্তু খাইরুল করণের পর এ তাকলীদি ইজতিহাদ আর বেশি দূর এগোয়নি। শেষ অবধি শাফেয়ী মালেকী হাম্বলী ও হানাফী মাযহাবে তাকলিদী ইজতিহাদ’কে সমসাময়িক উলামায়ে আহলে সুন্নাহ’বৃন্দের ইজমা বা ঐকমত্যে সীমাবদ্ধকরণ হয়। উসূলে দ্বীনের ভিত্তি চারটি। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাহ ও কিয়াস। চার মাজহাব চার উসূলে দ্বীনেরই সমন্বিত নাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। এজন্য ইজমায়ে উম্মাতের মাধ্যমে উসুল চতুষ্টয়ের ধারায় আজকের দিনে পঞ্চম কোনো মাজহাব গড়ার সুযোগ নেই। পঞ্চম মতবাদ, হোক সে লা মাজহাবী বা ভিন্ন নামে কোন মসলক, তা নিশ্চিত বিভ্রান্তি নয়তো গোমরাহী। চার মাজহাবের সন্মিলিত নাম মসলকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। যদি কেউ লা-মাজহাবীদের মতো চার মাজহাবের ওপর প্রতিষ্ঠিত ইজমায়ে উম্মাহ’কে অস্বীকার করে চুনের পানি দুধের ঘোলা বলে, তাহলে সাবধান! পানকারীর জিভে সেটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে। সূফীয়ায়ে কেরাম (রহ:)’মণ্ডলীর মধ্যে চিন্তাধারার ভিত্তিতে একেক জনের একেক ধরনের দর্শন দেখা যায়। তাই বলে সব মানতে হবে, বা একজন আরেক জনের সাথে চিন্তার বৈপরীত্য থাকার কারণে তাঁকে ভ্রষ্ট বলার রেওয়াজ কখনো ছিলনা, এখনো নেই। চার মাজহাবে উসূল তথা মৌলনীতিগতভাবে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত, আর ফুরূয়ি তথা কিছু ছোটখাটো বা আনুষঙ্গিক মাসআলায় বৈপরীত্যও দেখা যায়। তাই বলে অনুসারীদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্বও নেই।

সম্প্রতি একজন হুজূর নিজের পছন্দের মতবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতি কয়েকটি আপত্তি দেখা দিয়েছে। যেমন -

👉 আলা হযরতের মসলক অনুসরণ না করলে যদি সুন্নি না হয়, তাহলে আলা হযরত সাহেবের পূর্বেকার আলেম-উলামা, যথা - শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দেস দেহলভী, শাহ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী, আবদুল গনী নাবলুসী, ইসমাইল নাবহানী, খাজা গরীব নওয়াজ, মাহবূবে ইলাহী, ডঃ ইকবাল, ইমাম গাজ্জালী, মওলানা রুমী, শেখ সাদী, আমির খসরু, গাউসে পাক বড় পীর সাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-সহ সু্ন্নী সূফী-দরবেশবৃন্দ কি সবাই আপনার আলা হযরতের অনুসরণকারী? কারো সাথে সব মিল তো নাই, বরং এঁদের সাথে আলা হযরতের অনেক বিষয়ে দ্বিমত আছে। এমতাবস্থায় এ সকল হযরতে কেরাম (রহ:)’কে সুন্নী বলতে অস্বীকার করার অধিকার কে দিল?

👉 হযরত আবূল হাসান আশয়ারী ও হযরত আবুল মনসুর মাতরুদী (রহমতুল্লাহে আলায়হিমা) সময়কালীন সকল বদ মাজহাব ও আকায়েদকে খণ্ডন-পূর্বক আকায়েদে আহলে সুন্নাহকে মুসলিম মিল্লাতে উপস্থাপন করেন; তাই সর্বসন্মতিক্রমে এ দুজন-ই ইমামুল আক্বায়েদ ফী আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামাত। এ ইমাম দুজনের আকায়েদে বিশ্বাসীদের সুন্নী বলা হয়, আলা হযরতের মসলক না মানলে সুন্নী নয় বলাটা সহস্রাধিক বছরের সর্বজনস্বীকৃত আকায়েদে আহলে সুন্নাহকে অস্বীকার করার নামান্তর নয় কি?

👉বাগদাদ শরীফ, আজমীর শরীফ, ছরোয়ার শরীফ, মিশরে শাজলী, বদবী-সহ বিভিন্ন ত্বরীকার দরবারসমূহে আপনাদের আলা হযরতের মসলককে মান্য করা তো দুরের কথা, এসকল সূফী দরবারসমুহের ত্বরীকতের কার্যক্রমের সাথে রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব! তাই বলে এঁরা সুন্নী নয় কি? সুন্নী কি শুধু আপনারাই?

👉 আপনারা কি দ্বীনের ঠিকাদারী নিয়েছেন যে যাকে ইচ্ছা সুন্নী বানাবেন? আবার যে ব্যক্তি আপনাদের তালে নৃত্যরত হবেন না, তাঁকে সুন্নীয়ত থেকে বের করে দেবেন, এ দায়িত্ব আপনাদের কে দিলো?

👉বাংলাদেশে কাদ্বেরী, চিশতী, নকশবন্দী, কলন্দরী, আশরাফী, মুজাদ্দিদী, সোহরাওয়ার্দী, রেফায়ী, মাইজভাণ্ডারীসহ এমন অসংখ্য তরীকার দরবার রয়েছে, যে সব হক তরীকাহ ও দরবারের সাথে আপনাদের নতুন পঞ্চম মাজহাব তথা মসলকের সাথে ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। এই সকল দরবার হতে আপনার কাছে এ বিষয়ে কেউ ফতোয়া তলব করেছেন কি?

👉আপনাদের সাথে বসা নকশবন্দী, মির্জাখীল, জোহ্হাদীয়া, কানু শাহ দরবারী অনেক আওলাদ-বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, এঁদের কাছে জিজ্ঞেস করুন এঁরা মসলকে আলা হযরতের ওপর (ভিত্তি করে) দরবার পরিচালনা করেন কি-না?

👉আলা হযরত নামক নতুন আমদানীটা এদেশে আসছে মাত্র ২০ বছর আগে, এর আগে কি এদেশে কোন সুন্নী ছিলেন না?

👉পূর্ববর্তীগণ যদি সুন্নী না হন, তাহলে আপনাদের মতো নতুন সুন্নীর প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু?

👉আপনারা আলা হযরতের মসলক কতটুকু মান্য করেন? চলুন, একটু দেখা যাক -

★ আলা হযরত মসলক মতে, মহিলাদের দ্বারা মাজার জিয়ারত নিষেধ।

👉আপনাদের পীর সাহেব হুজুর তশরীফ আনলে হাজার হাজার মহিলা খানকায় হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। বিশেষ ব্যবস্থায় মহিলা বায়াত করানো হয়।

👉আলা হযরত মসলকে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) মহিলা লেখাপড়া হারাম।

★ আপনাদের মেয়েরা কেউ ভার্সিটিতে, কেউ মেডিকেলে লেখাপড়া করে। যিনি ফিৎনাযুক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর দুই মেয়ে ডাক্তারী লেখাপড়া করেছে।

👉 এসব মসলকে আলা হযরত বিরোধী নয় কি?

★আলা হযরত মসলক মতে, কোরআন খতম, বুখারী শরীফ খতম, কন্ট্রাক্ট করে ওয়াজে টাকা নেয়া হারাম।

👉 আপনারা কি ওয়াজ খতমের টাকায় পকেট পুরো করেন না?

★আলা হযরত ফতোয়া মতে, বর্তমান ব্যাংকিং লেনদেন হারাম।

👉আপনাদের কার ব্যাংক একাউন্ট নাই?

★আলা হযরত মসলক মতে, সামা’ তথা (আধ্যাত্মিক) গান-বাজনা হারাম।

👉 সূফী মিজান সাহেবের বাসায় টাকার বান্ডিলের জন্য নির্লজ্জের মতো সবাই লাইনবদ্ধ হয়ে ’ইয়া মিজান বাবা! ইয়া মিজান বাবা!’ বলে সামা’ শুনেন। ভিডিও ছবিগুলি অনলাইনে ভাইরাল।

👉তখন মসলকে আলা হযরত কোথায় থাকে?

আর বলতে চাইনা, বাকিটা ইতিহাস!

সময় থাকতে মুখে লাগাম লাগান! মসলকে আলা হযরত দাবিদার কিছু আলেম আছেন - আপনাদের কথাবার্তা, নীতি, আদর্শ আর চেহারা-শরীরের ভঙ্গিমা রাস্তার টোকাইদের মতো। তা সংশোধন করুন। নইলে পথে ঘাটে অপদস্থ আর অপমানিত হবেন।

আলা হযরত জিন্দাবাদ!

*সমাপ্ত*